নিজেকে অপরাধী মনে করেন না ডনাল্ড ট্রাম্প
স্থানীয় সময় মঙ্গলবার দুপুর আড়াইটার আদালতে প্রবেশ করেন ট্রাম্প। এ সময় তার চারপাশে ঘিরে ছিল সিক্রেট সার্ভিসের সদস্যরা।
প্রথম নিউজ, ডেস্ক : এ এক নতুন ইতিহাস। এই প্রথম অভিযুক্ত হিসেবে আদালত কক্ষে প্রবেশ করলেন সাবেক কোনো মার্কিন প্রেসিডেন্ট। নিজেকে অবশ্য অপরাধী মনে করেন না ডনাল্ড ট্রাম্প। তার দাবি, এভাবে তার বিরুদ্ধে অভিযোগ গঠনের অর্থ হচ্ছে গোটা জাতিকে অপমান করা। স্থানীয় সময় মঙ্গলবার দুপুর আড়াইটার আদালতে প্রবেশ করেন ট্রাম্প। এ সময় তার চারপাশে ঘিরে ছিল সিক্রেট সার্ভিসের সদস্যরা। ট্রাম্পের পরনে ছিল চিরপরিচিত নীল স্যুট আর লাল টাই। বিবিসি জানিয়েছে, আদালত কক্ষের সামনের দিকে ট্রাম্পের জন্য নির্ধারিত জায়গার দিকে যখন তিনি হেঁটে যাচ্ছিলেন, তখন তার চেহারা ছিল বিষণ্ন আর পদক্ষেপ ছিল ভারী। যেখানে তার আইনজীবীরা অপেক্ষা করছিলেন। আদালতের মধ্যে মাত্র পাঁচ ফটোসাংবাদিককে প্রবেশ করতে দেয়া হয়েছিল। কেউ কোনো ভিডিও ধারণ করতে পারে নি। এই সাংবাদিকরাই জানিয়েছেন যে, ট্রাম্প গোটা সময়ে তাদের সঙ্গে কখনোই কোন কথা বলেননি। এমনকি অভিব্যক্তি বা শারীরিক ভাষার মাধ্যমেও কিছু প্রকাশ করেননি।
ট্রাম্পই হচ্ছেন প্রথম কোন মার্কিন প্রেসিডেন্ট যার বিরুদ্ধে আনুষ্ঠানিকভাবে কোন ফৌজদারি অভিযোগ আনা হলো। বিচারক মার্চিন জানিয়েছেন, সামনের বছর জানুয়ারি মাস নাগাদ তার বিচার কার্যক্রম শুরু হতে পারে। এর অর্থ হচ্ছে, সামনের বছর যখন প্রেসিডেন্ট নির্বাচনের জন্য লড়বেন ট্রাম্প, তখন তাকে আবার আদালতে হাজিরা দিতে হবে। তার বিরুদ্ধে ৩৪টি অপরাধমূলক অভিযোগ আনা হয়েছে। এসব অভিযোগের মধ্যে রয়েছে, ২০১৬ সালের নির্বাচনের সময় ক্ষতি হতে পারে, এমন তথ্য লুকাতে তিনি নকল কাগজপত্র তৈরি করেছেন। তার বিরুদ্ধে অভিযোগ, তিনি ২০১৬ সালের নির্বাচনের আগে এক পর্ন তারকার মুখ বন্ধ করার জন্য তাকে অর্থ ঘুষ দিয়েছিলেন। পর্ন ছবির ওই তারকা স্টর্মি ড্যানিয়েলসের দাবি, ট্রাম্পের সঙ্গে তার যৌন সম্পর্ক ছিল। এই অভিযোগ স্পষ্টভাবে অস্বীকার করেছেন ট্রাম্প। মঙ্গলবার তিনি আদালত থেকে সরাসরি ফ্লোরিডায় ফিরে যান। সেখানে মার-এ লাগোর বাড়িতে ফিরে গিয়ে অভিযোগ করেন, এসব মামলার মানে হচ্ছে পুরো জাতিকে অপমান করা।
তবে আদালতে ডনাল্ড ট্রাম্প একেবারেই শান্ত ছিলেন বলে জানা গেছে। যখন বিচারক জুয়ান মার্চান আদালতে আসেন, তখন ট্রাম্পসহ সবাই উঠে দাঁড়ান। বহুতল এই আদালত ভবনের ১৫ তলা নীচে গণমাধ্যম এবং রাজনৈতিক হল্লা চললেও বিচারক মার্চান ঠাণ্ডা একরকম সুরেই আদালত পরিচালনা করছিলেন। এমনকি তিনি আওয়াজও বৃদ্ধি করেননি। শুনানির সময় বেশিরভাগ সময় জুড়ে আইনজীবীদের সময়সীমা এবং আদালতের পরবর্তী তারিখ নির্ধারণের প্রক্রিয়া নিয়েই আলোচনা হয়েছে। কিন্তু এই মামলার তাৎপর্য আদালত কক্ষে উপস্থিত কারও বুঝতে ভুল হয়নি।
যখন ট্রাম্পের বিরুদ্ধে আনা ৩৪টি অভিযোগ পড়ে শোনানো হয়, তখন ট্রাম্প বলেন ‘নট গিল্টি’। অর্থাৎ তিনি কোনো অভিযোগই মেনে নেননি। এরপর একপর্যায়ে বিচারক মার্চান সরাসরি ডনাল্ড ট্রাম্পকে উদ্দেশ্য করে বলেন, আদালতের সকল প্রক্রিয়ায় উপস্থিত থাকার অধিকার আছে, তিনি সেটা বুঝতে পারছেন কিনা? ট্রাম্প বলেন, হ্যা। এরপর বিচারক বলেন, অন্য যেকোন অভিযুক্তের মতো তিনি যদি আদালতে অবাধ্য বা বিঘ্ন সৃষ্টিকারী আচরণ করেন, তাহলে তিনি বিচার প্রক্রিয়ায় উপস্থিত থাকার অধিকার হারাতে পারেন। প্রায় এক ঘণ্টা পর শুনানি শেষ করেন বিচারক। এরপর ট্রাম্প উঠে দাঁড়ালে সিক্রেট সার্ভিসের সদস্যরা তাকে ঘিরে ধরে। আইনজীবীদের সঙ্গে শান্তভাবে তিনি কথা বলছিলেন। তবে তার কয়েক সারি পেছনে বসে থাকা সাংবাদিকরা সেসব কিছুই শুনতে পাননি। এরপর তিনি ঘুরে আদালতের মধ্যে প্যাসেজে চলে যান এবং পেছনের দরজা দিয়ে বেরিয়ে যান। বাইরে অসংখ্য টেলিভিশন ক্যামেরা দাঁড়িয়ে থাকলেও তিনি কিছু বলেননি। তার অভিব্যক্তি ছিল বেশ গম্ভীর।
https://apps.apple.com/de/app/prothomnews/id1588984606?l=en, https://play.google.com/store/apps/details?id=com.prothomnews, https://youtube.com/protho