ধর্মঘটে ইন্টার্ন চিকিৎসকরা, শিক্ষার্থীদের ক্লাস ও পরীক্ষা বর্জন

ওসমানীতে ছাত্রলীগের বহিরাগতদের হামলা

ধর্মঘটে ইন্টার্ন চিকিৎসকরা, শিক্ষার্থীদের ক্লাস ও পরীক্ষা বর্জন
ধর্মঘটে ইন্টার্ন চিকিৎসকরা, শিক্ষার্থীদের ক্লাস ও পরীক্ষা বর্জন

প্রথম নিউজ, সিলেট : সিলেট ওসমানী মেডিকেল কলেজ হাসপাতালে আন্দোলনে ইন্টার্ন চিকিৎসক ও মেডিকেল কলেজের শিক্ষার্থীরা। গতকাল বিকাল থেকে তারা বহিরাগত হামলাকারীদের গ্রেপ্তার দাবিতে আন্দোলনে নামে। এরআগে সিলেট আওয়ামী লীগের নেতৃবৃন্দ, হাসপাতাল ও মেডিকেল কলেজ কর্তৃপক্ষ ও পুলিশের সঙ্গে প্রায় আড়াই ঘণ্টাব্যাপী সমঝোতা বৈঠক করেন। সব হামলাকারীদের গ্রেপ্তার না করায় বৈঠক থেকে উঠে এসে শিক্ষার্থীরা আন্দোলন শুরু করে। একইসঙ্গে জরুরি বিভাগ ও হৃদরোগ ওয়ার্ড ছাড়া হাসপাতালের আইসিইউসহ সব ওয়ার্ডে চিকিৎসা সেবা বন্ধ রেখেছে ইন্টার্ন চিকিৎসকরা। আর অনির্দিষ্টকালের জন্য ক্লাস ও পরীক্ষা বর্জনের ঘোষণা দিয়েছে শিক্ষার্থীরা। এ ঘটনায় বিকালে পুলিশ হাসপাতাল ও মেডিকেল কলেজ কর্তৃপক্ষের দায়ের করা দুটি মামলা রেকর্ড করেছে এবং আটককৃত ছাত্রলীগ নেতা সাঈদ হাসান রাব্বী ও তার সহযোগী এহসান আহমদকে গ্রেপ্তার করেছে। স্থানীয়রা জানিয়েছেন- গ্রেপ্তার হওয়া রাব্বি ও এহসানের নেতৃত্বে নগরের ৩নং ওয়ার্ড ছাত্রলীগের একটি বলয় দুই বছর ধরে নানা ভাবে মেডিকেল কলেজ এবং হাসপাতালে প্রভাব বিস্তারের চেষ্টা করছিলো। এরইমধ্যে তারা একাধিক বিতর্কিত ঘটনা ঘটিয়েছে। তারা ক্যাম্পাসের ১নং ফটকের অভ্যন্তরে নিয়মিত আড্ডা দিতো। তাদের কাছে অসহায় হয়ে পড়েছিলো কলেজ ও হাসপাতালের সবাই। গত রোববার মেডিকেল হাসপাতালে একটি ওয়ার্ডে রোগী নিয়ে যান ছাত্রলীগের ওই অংশের কর্মীরা। 

এ নিয়ে নারী ইন্টার্ন চিকিৎসকদের সঙ্গে তাদের বাকবিতণ্ডা হয়। এ সময় নাজেহালও হন ওই চিকিৎসক। ওই ঘটনার সময় পুলিশ গিয়ে বহিরাগত ছাত্রলীগের দু’কর্মীকে আটক করে। পরে হাসপাতাল কর্তৃপক্ষের সমঝোতায় বিষয়টির নিষ্পত্তি ঘটিয়ে ছাত্রলীগের ওই দুই কর্মীকে ছেড়ে দেয়া হয়। এবং পরিস্থিতি স্বাভাবিক করা হয়। এদিকে সোমবার রাত সাড়ে ৯টার দিকে ক্যাম্পাসের ১নং ফটকের রাস্তা দিয়ে যাচ্ছিলেন মেডিকেল কলেজের শেষ বর্ষের শিক্ষার্থী নাইমুর রহমান ইমন ও তৃতীয় বর্ষের শিক্ষার্থী রুদ্রনাথ। এ সময় ক্যাম্পাসের ভেতরেই তাদের ওপর হামলা করে বহিরাগত ছাত্রলীগের ওই কর্মীরা। তাদের বেধড়ক মারধরে আহত হন ইমন ও রুদ্র। তাদের সিলেট ওসমানী মেডিকেল কলেজ হাসপাতালে ভর্তি করা হয়। 

এ ঘটনা জানাজানি হলে ক্ষুব্ধ হন ইন্টার্ন চিকিৎসক ও মেডিকেল কলেজের শিক্ষার্থীরা। ইন্টার্ন চিকিৎসকরা রাত ১১টার পর থেকে তারা হাসপাতালের সেবা বন্ধ রেখে বিক্ষোভ করে। তাদের সঙ্গে এসে যোগ দেয় মেডিকেল কলেজের শিক্ষার্থীরা। রাত ১২ টা থেকে হাসপাতালের সামনে রিকাবীবাজার-মদিনা মার্কেট সড়ক অবরোধ করে শতাধিক শিক্ষার্থী। একদিকে হাসপাতালে বন্ধ হয়ে যায় চিকিৎসাসেবা, অন্যদিকে রাস্তা অবরোধ দেয় শিক্ষার্থীরা। এতে করে পরিস্থিতি উত্তেজনাকর হয়ে ওঠে। অবরোধের কারণে ওই সড়কের যানবাহন চলাচল বন্ধ হয়ে পড়ে। রাতে পুলিশ প্রশাসনের কর্মকর্তারা গিয়ে হামলাকারীদের গ্রেপ্তারের আশ্বাস দিলেও শিক্ষার্থীরা মানেনি। সড়ক অবরোধ অব্যাহত রাখে। 

ঘটনার খবর পেয়ে হাসপাতালে আসেন পরিচালক ব্রিগেডিয়ার জেনারেল মাহবুবুর রহমান ভূঁইয়া। ইন্টার্ন চিকিৎসকরা রাতে তাকে অবরুদ্ধ করে রাখে। এই অবস্থায় রাত ১টার দিকে হামলাকারী দুইজনকে আটক করে পুলিশ। এরা হচ্ছে রাব্বি ও এহসান। তাদেরকে হামলাকারী হিসেবে চিহ্নিত করেছে পুলিশ। রাব্বি মেডিকেল এলাকার মুন্সিপাড়ার রানা মিয়ার ছেলে ও এহসান কাজলশাহ এলাকার আব্দুল হান্নানের ছেলে। আন্দোলনরত ইন্টার্ন চিকিৎসক ও শিক্ষার্থীরা জানিয়েছেন- প্রশাসনের তরফ থেকে গতকাল বেলা ২টার মধ্যে হামলাকারী সকলকে গ্রেপ্তারের আশ্বাস প্রদান করলে ভোররাত ৩টার দিকে তারা অবরোধ প্রত্যাহার করে চলে যায়। এদিকে- বেলা আড়াইটার দিকে আন্দোলনরত ইন্টার্ন চিকিৎসক ও শিক্ষার্থীদের নিয়ে বৈঠকে বসে কর্তৃপক্ষ। 

এতে হাসপাতালের ব্রিগেডিয়ার জেনারেল মাহবুবুর রহমান ভূঁইয়া, কলেজের প্রিন্সিপাল ময়নুল হক, সিলেট জেলা আওয়ামী লীগের সভাপতি শফিকুর রহমান চৌধুরী, সাধারণ সম্পাদক নাসির উদ্দিন খান, মহানগর সভাপতি মাসুক উদ্দিন আহমদ, সাধারণ সম্পাদক জাকির হোসেনসহ নেতারা উপস্থিত ছিলেন। এ ছাড়া পুলিশ প্রশাসনের কর্মকর্তারাও উপস্থিত ছিলেন। বৈঠকে উপস্থিত ইন্টার্ন চিকিৎসক ও শিক্ষার্থীরা ক্যাম্পাসে নিরাপত্তা জোরদার, হামলাকারীদের গ্রেপ্তারসহ ৫ দফা দাবি তুলে ধরে। বৈঠকে তাদের ফের দাবি পূরণের আশ্বাস প্রদান করলে শিক্ষার্থী ও ইন্টার্ন চিকিৎসকরা সেটি মানেনি। তারা বৈঠক শেষ করে উঠে এসে ফের আন্দোলন শুরু করেন। 

এ সময় মেডিকেলের ইন্টার্ন চিকিৎসকদের সভাপতি মতিউর রহমান সাংবাদিকদের জানিয়েছেন- যাদের আটক করা হয়েছে তারা আমাদের মূল আসামি না। এর বাইরেও আরও কয়েকজন আসামি রয়েছে। সিসিটিভির ফুটেজ দেখে তাদের গ্রেপ্তারের দাবি জানিয়েছি। কিন্তু হামলাকারীদের উল্লেখযোগ্য কেউ গ্রেপ্তার না হওয়ায় আমরা মেডিকেলে আইসিইউসহ সব ওয়ার্ডে চিকিৎসা সেবা বন্ধ রেখেছি। তবে- জরুরি বিভাগ ও হার্ট বিভাগে চিকিৎসা সচল রয়েছে। তিনি জানান- দাবি পূরণ না হওয়া পর্যন্ত তারা কাজে ফিরবে না। পরে সিওমেক ছাত্রলীগের সাধারণ সম্পাদক নাজমুল ইসলাম জানিয়েছেন- আসামি গ্রেপ্তার, ক্যাম্পাসে নিরাপত্তা জোরদার না করা পর্যন্ত অনির্দিষ্টকালের জন্য ক্লাস ও পরীক্ষা বর্জনের ঘোষণা দেয়া হয়েছে। শিক্ষার্থীরা নিজেদের স্বার্থে কঠিন এই সিদ্ধান্তে পৌঁছেছে বলে জানান তিনি। 

শিক্ষার্থীরা ক্যাম্পাসে অবস্থান নিয়ে বিক্ষোভ করছে। সব আসামি গ্রেপ্তার হলে তবেই শিক্ষার্থীরা হলে ফিরবে। বৈঠক শেষে হাসপাতালের পরিচালক ব্রিগেডিয়ার জেনারেল মাহবুবুর রহমান জানিয়েছেন- শিক্ষার্থীদের দাবির প্রেক্ষিতে আমরা হাসপাতাল ও ক্যাম্পাসে নিরাপত্তা জোরদার করছি। প্রধান ফটকে পুলিশ ক্যাম্প বসানো হবে। কলেজের অভ্যন্তরে বহিরাগতদের প্রবেশ নিষিদ্ধ করা হবে। একইসঙ্গে সব আসামিদের গ্রেপ্তার করার আশ্বাস দেয়া হয়েছে। মেডিকেল এবং কলেজ কর্তৃপক্ষ যৌথভাবে ইন্টার্ন চিকিৎসক ও শিক্ষার্থীদের এসব দাবি পূরণে সম্মতি হয়েছি। আমরা আশা করছি; ইন্টার্ন চিকিৎসক ও শিক্ষার্থীরা আমাদের ওপর ভরসা রাখবেন। আমরা তাদের সব দাবি মেনেও নেবো। মহানগর ছাত্রলীগের নেতারা জানিয়েছেন- গ্রেপ্তার হওয়া রাব্বি পদবিধারী কোনো নেতা নয়। তবে- সিলেট ছাত্রলীগের দর্শন দেউরী গ্রুপের নেতা বলে সক্রিয় রয়েছে। তার নেতৃত্বে মেডিকেল এলাকায় ছাত্রলীগের একটি গ্রুপ রয়েছে। 

দুই মামলা: সিলেট এমএজি ওসমানী মেডিকেল কলেজ হাসপাতালের দুই শিক্ষার্থীকে বহিরাগতদের মারধরের ঘটনায় দুটি মামলা করা হয়েছে। গতকাল দুপুরে কোতোয়ালি মডেল থানায় পৃথক দুটি মামলা করা হয়। কোতোয়ালি থানার ওসি তদন্ত মো. ইয়াছিনুর রহমান জানিয়েছেন- সিলেট ওসমানী মেডিকেল কলেজ ও হাসপাতালের পক্ষ থেকে এ পৃথক দু’টি মামলা করা হয়েছে। পৃথক দু’টি মামলার বাদীরা হলেন কলেজ ও হাসপাতালের প্রশাসনিক কর্মকর্তা মোহাম্মদ হানিফ ও মাহমুদুল রশিদ। মামলা দু’টিতে এজাহারনামীয় ৮ জন আসামি ছাড়াও আরও কয়েকজনকে অজ্ঞাত রাখা হয়েছে।

 Download করুন আমাদের App এবং Subscribe করুন আমাদের YouTube Channel:

news.google.com

https://apps.apple.com/de/app/prothomnews/id1588984606?l=en

https://play.google.com/store/apps/details?id=com.prothomnews

https://youtube.com/prothom