দাবি মেনেও গণপরিবহনে মামলা দিচ্ছে তেজগাঁও ট্রাফিক বিভাগ

হরতাল-অবরোধ

দাবি মেনেও গণপরিবহনে মামলা দিচ্ছে তেজগাঁও ট্রাফিক বিভাগ

প্রথম নিউজ, ঢাকা: হরতাল-অবরোধে সড়কে যাত্রী পরিবহন স্বাভাবিক রাখতে ঢাকাসহ সারাদেশে গণপরিবহন চালাচ্ছেন মালিকরা। যদিও দূরপাল্লার বাস প্রায় বন্ধই বলা যায়। মনে আতঙ্ক থাকলেও রাজধানী ও আন্তঃজেলার নিজ গন্তব্যে যাতায়াত করতে পারছেন যাত্রীরা। এর মধ্যেও প্রায় প্রতিদিনই ঢাকাসহ দেশের বিভিন্ন এলাকায় গণপরিবহনে ভাঙচুর, অগ্নিসংযোগ করছে দুর্বৃত্তরা। এতে বিপুল পরিমাণ আর্থিক ক্ষতির সম্মুখীন হচ্ছেন পরিবহন মালিক-শ্রমিকরা।

এমন পরিস্থিতিতে যানবাহনের কাগজপত্র যাচাইয়ের ক্ষেত্রে কিছুটা ছাড় দেওয়ার সিদ্ধান্ত নেয় পুলিশ হেডকোয়ার্টার্স। মালিকপক্ষের সঙ্গে আলোচনা করেই নেওয়া হয় এ সিদ্ধান্ত। সে অনুযায়ী মূল কাগজ রক্ষায় ফটোকপি দিয়ে গাড়ি পরিচালনা করা হচ্ছে। কিন্তু মালিকপক্ষের দাবি মানার পরও ফের জরিমানা শুরু করেছে তেজগাঁও ট্রাফিক পুলিশ। যেসব যানবাহনের মূল কাগজপত্র নেই, সেগুলোর বিরুদ্ধে মামলা হচ্ছে। এতে পরিবহন মালিক-শ্রমিকেরা ক্ষোভ প্রকাশ করেছেন।

পরিবহন মালিক-শ্রমিকদের অভিযোগ, হরতাল-অবরোধে প্রতিদিনই ঢাকাসহ সারাদেশে যানবাহন ভাঙচুর, অগ্নিসংযোগ করছে দুর্বৃত্তরা। এতে বহু গণপরিবহনের মূল কাগজপত্র আগুনে পুড়ে গেছে। এমন অবস্থায় দেশে রাজনৈতিক পরিস্থিতি স্বাভাবিক না হওয়া পর্যন্ত মালিক-শ্রমিকদের ফটোকপি দিয়ে যাত্রী পরিবহন করতে বলেছে পুলিশ হেডকোয়ার্টার্স। কিন্তু এ নিময় মানছে না পুলিশের তেজগাঁও বিভাগ। তারা প্রতিদিনই গণপরিবহনের বিরুদ্ধে মামলা দিচ্ছে। এতে আর্থিকভাবে আরও ক্ষতির মুখে পড়ছেন মালিক-শ্রমিকেরা।

তবে ট্রাফিক পুলিশের তেজগাঁও বিভাগের সংশ্লিষ্টরা বলছেন, হরতাল-অবরোধে তারা গণপরিবহনের বিরুদ্ধে মামলা দেন না। যেসব গণপরিবহন সড়কে বিশৃঙ্খলা সৃষ্টি করে, ট্রাফিক পুলিশের নির্দেশনা মানে না সেগুলোর বিরুদ্ধে নিয়মমাফিক মামলা দেওয়া হচ্ছে। এসব মামলার সংখ্যা স্বাভাবিক সময়ের তুলনায় অনেক কম।

ঢাকা সড়ক পরিবহন মালিক সমিতি সূত্র জানায়, গত ২৮ অক্টোবর ঢাকায় বিএনপির মহাসমাবেশের পর থেকে সারাদেশে টানা হরতাল-অবরোধ শুরু হয়। তখন থেকেই গণপরিবহন ভাঙচুর ও অগ্নিসংযোগ করছে দুর্বৃত্তরা। এতে বহু যানবাহনের মূল কাগজপত্র আগুনে পুড়ে গেছে। তাই নভেম্বরের শুরুতেই বিষয়টি নিয়ে পুলিশ হেডকোয়ার্টার্সে আইজিপিসহ ট্রাফিকের সংশ্লিষ্টদের সঙ্গে বৈঠক করে ঢাকা সড়ক পরিবহন মালিক সমিতি ও বাংলাদেশ সড়ক পরিবহন মালিক সমিতি। তখন মূল কাগজের ফটোকপি দিয়েই গণপরিবহন চলতে পারবে বলে জানান পুলিশের ঊর্ধ্বতন কর্মকর্তারা। তবে জাতীয় নির্বাচনের পর দেশের পরিস্থিতি স্বাভাবিক হলে মূল কাগজপত্র গাড়িতে রাখতে হবে।

গত ২ ডিসেম্বর তেজগাঁও সাতরাস্তায় আজমেরী পরিবহনের একটি বাসের বিরুদ্ধে মামলা দেয় ট্রাফিক পুলিশ। বাসটির বিরুদ্ধে অভিযোগ, বাসচালক মো. মনিরের কাছে বাসের মূল কাগজপত্র নেই। এজন্য তাকে দুই হাজার টাকা জরিমানা করা হয়। একই দিন মহাখালীতে বলাকা পরিবহনের আরেকটি বাসকে এক হাজার টাকা জরিমানা করা হয়। এই বাসের চালক রিপনের কাছেও বাসের মূল কাগজপত্র ছিল না। এভাবে গত ২ ডিসেম্বর থেকে বুধবার (৬ ডিসেম্বর) পর্যন্ত তেজগাঁও ট্রাফিক বিভাগ এলাকায় গণপরিবহনের বিরুদ্ধে নিয়মিত মামলা দেওয়া হচ্ছে বলে জানা যায়।

জানতে চাইলে ঢাকা সড়ক পরিবহন মালিক সমিতির কোষাধ্যক্ষ ভূইয়া হুমায়ুক কবির বলেন, ‘হরতাল-অবরোধে দুর্বৃত্তরা গণপরিবহন ভাঙচুর, অগ্নিসংযোগ করলে চালক এবং তার সহকারী আগেই জানালা দিয়ে পালান। বাসের কাগজপত্র নিয়ে বের হওয়ার সময়-সুযোগ পান না। এতে সাময়িক ফটোকপি দিয়েই গণপরিবহন চালাতে বলেছেন পুলিশ হেডকোয়ার্টার্সের ঊর্ধ্বতন কর্মকর্তারা। কিন্তু পুলিশের তেজগাঁও ট্রাফিক বিভাগ প্রতিদিনই গণপরিবহনের বিরুদ্ধে মামলা দিচ্ছে।.তিনি বলেন, ‘গত ২৮ অক্টোবর বিএনপির মহাসমাবেশ ও পরে চারদিন হরতাল এবং ১৯ দিন অবরোধে ঢাকায় ১০৪টি বাসে অগ্নিসংযোগ করা হয়েছে। একইভাবে ঢাকার বাইরে আরও ৫০টি বাসে আগুন দেওয়া হয়েছে। এসব বাসের মূল কাগজপত্রও আগুনে পুড়ে গেছে। তাই দেশের পরিস্থিতি স্বাভাবিক না হওয়া পর্যন্ত ট্রাফিক পুলিশকে মামলা, রেকিং না করার আহ্বান জানাই।’

এ বিষয়ে তেজগাঁও ট্রাফিক বিভাগের উপ-পুলিশ কমিশনার (ডিসি) মোস্তাক আহমেদ বলেন, ‘হরতাল-অবরোধে সাধারণত কোনো যানবাহনকে মামলা দেওয়া হয় না। তবে গত কিছুদিন ধরে সড়কে যানবাহনের চাপ বেড়েছে। অনেক বাস সড়কে শৃঙ্খলা মানে না। এতে সড়কে যানজটসহ বিশৃঙ্খলা সৃষ্টি হয়। তখন যে বাসগুলো ধরা হয়, দেখা যায় তাদের বিরুদ্ধে আগে আরও চার থেকে পাঁচটি মামলা রয়েছে। এমন পরিস্থিতিতে মিনিমাম জরিমানা বা মামলা দিয়ে তাদের ছেড়ে দেওয়া হয়।,‘আবার কিছু বাসকে আগের মামলাগুলো নিষ্পত্তি করে আসতে বলা হয়। হরতাল-অবরোধে অনেক বাস এক রুট ছেড়ে আরেক রুটে ঢুকে পড়ে। এ বিষয় দেখা যায়, মালিক সমিতির সদস্যরাই অভিযোগ দেন। তখন এসব বাসকে নিজ রুটে চলতে বাধ্য করা হয়। অন্যথায় হরতাল-অবরোধে যান চলাচলে ট্রাফিক কোনো ব্যবস্থা নেয় না।’