‘দাদা দৌড় দেন, জান বাঁচান’

বৃহস্পতিবার রাতে নগরীর প্রাণকেন্দ্র জিন্দাবাজার লাগোয়া দাড়িয়াপাড়ায় হঠাৎ ছাত্রলীগের মিছিল থেকে কয়েক রাউন্ড গুলিবর্ষণ।

‘দাদা দৌড় দেন, জান বাঁচান’

প্রথম নিউজ, সিলেট: বৃহস্পতিবার রাতে নগরীর প্রাণকেন্দ্র জিন্দাবাজার লাগোয়া দাড়িয়াপাড়ায় হঠাৎ কয়েক রাউন্ড গুলিবর্ষণ। ককটেল বিস্ফোরণের শব্দও শোনা যায়। এতে আতঙ্ক দেখা দেয় ওই এলাকায়। এ সময় ওই এলাকা দিয়ে ছাত্রলীগের একটি মিছিলও চলে যেতে দেখেন স্থানীয়রা। এ ঘটনায় গুলিবিদ্ধ হয়েছেন ছাত্রলীগের সাবেক কেন্দ্রীয় নেতা এডভোকেট প্রবাল চৌধুরী পুজন। তাকে তাৎক্ষণিক স্থানীয়রা উদ্ধার করে সিলেট ওসমানী মেডিকেল কলেজ হাসপাতালে ভর্তি করেন। 

গতকাল পুজন সামাজিক যোগাযোগমাধ্যমে তার আইডিতে এ ঘটনার জন্য ছাত্রলীগের নেতাকর্মীদের দায়ী করেছেন। তিনি মামলা করবেন বলে জানান। প্রত্যক্ষদর্শীরা জানিয়েছেন, বৃহস্পতিবার রাত ৮টার দিকে পুরাতন মেডিকেল এলাকা দিয়ে ছাত্রলীগের একটি মিছিল দাড়িয়াপাড়া এলাকায় ঢোকে। মিছিলে হেলমেট পরিহিত ছিলেন কয়েকজন। মিছিল চলাকালে বাসার সামনের নার্সারিতে অবস্থান করছিলেন সাবেক ছাত্রলীগ নেতা ও প্রবাল চৌধুরী পুজন। ছাত্রলীগের মিছিলটি তার কাছাকাছি আসা মাত্র উত্তেজনা ছড়িয়ে পড়ে। পরপর দু’রাউন্ড গুলি ছোড়া হয় এবং কয়েকটি ককটেলের বিস্ফোরণ ঘটালে এলাকায় আতঙ্ক ছড়িয়ে পড়ে। স্থানীয় লোকজন ভয়ে দোকানপাট বন্ধ করে দেন। 

এ সময় একটি দোকানে ভাঙচুর করা হয়। মিছিলটি চলে যাওয়ার পর সাবেক ছাত্রলীগ নেতা পুজনকে একটি বাসার ভেতরে তারা পায়ে গুলিবিদ্ধ অবস্থায় দেখনে পান। তাৎক্ষণিক তাকে উদ্ধার করে হাসপাতালে ভর্তি করা হয়। এ সময় মিছিলকারী ছাত্রলীগকর্মীরা দাড়িয়াপাড়ায় এক জনপ্রতিনিধির বাসায়ও ভাঙচুর করেন বলে স্থানীয়রা জানিয়েছেন। গুলিবিদ্ধ পুজন গতকাল বিকালে মানবজমিনকে জানিয়েছেন, শতাধিক ছাত্রলীগকর্মী আচমকা মিছিল নিয়ে এসে তার উপর হামলা চালায়। এ সময় তাকে উদ্দেশ্য করে পর পর দু’রাউন্ড গুলি ছোড়ে। 

এরমধ্যে এক রাউন্ড গুলি তার মাথার উপর দিয়ে ও আরেক রাউন্ড গুলি তার পায়ে লাগে। কয়েকটি ককটেল ছোড়া হয়। তিনি দাবি করেন- তাকে হত্যার উদ্দেশ্যে ছাত্রলীগের পদবিধারী নেতাদের নেতৃত্বে এ হামলার ঘটনা ঘটেছে। সামাজিক যোগাযোগ মাধ্যমে জকিগঞ্জ ও কোম্পানীগঞ্জ ছাত্রলীগের বিতর্কিত কমিটি এবং সীমান্তের চিনি চোরাচালানে ছাত্রলীগ জড়িত থাকার বিষয়টি প্রকাশ করার কারণে তার উপর এই হামলা হয়েছে। কয়েকদিন ধরে আওয়ামী লীগের নেতারা বিষয়টি নিয়ে তার সঙ্গে কথা বলছিলেন। 

তিনি পোস্টটি সরিয়ে নিলেও তার উপর ক্ষোভ কমেনি অপরাধে জড়িত থাকা ছাত্রলীগ নেতাদের। তিনি জানান, তিনি থানায় মামলা করবেন এবং আসামিদের নাম উল্লেখ করেই এজাহার দাখিলের প্রস্তুতি নিচ্ছেন। এদিকে, রাতে ঘটনার বিবরণ তুলে ধরে সামাজিক যোগাযোগ মাধ্যমে স্ট্যাটাস দিয়েছেন পুজন। সেখানে তিনি উল্লেখ করেছেন, ‘মিছিলের সামনে জেলা ছাত্রলীগের সেক্রেটারি রাহেল, সভাপতি নাজমুল, মহানগর সেক্রেটারি নাঈম। তাদের মাথায় হেলমেট, হাতে অস্ত্র! আমি বললাম কি বিষয়? তোরা গালি দিচ্ছিস কেন? সঙ্গে সঙ্গে আমাকে উদ্দেশ্য করে এক রাউন্ড গুলি করা হলো। তখন টিটু আর দিপু আমাকে বলছে, দাদা দৌড় দেন, জান বাঁচান। তখন আমি দৌড়ে পার্শ্ববর্তী এক বাসায় ঢুকলাম। বাসায় ঢোকার পর সেই বাসার ভাবি বললেন তোমার পায়ে কি হয়েছে? পা দিয়ে রক্ত পড়ছে! তখন খেয়াল করলাম আমার ডান পায়ের হাঁটুর নিচে স্প্লিন্টার। 

অন্যদিকে সেই মিছিল থেকে জয় বাংলা স্লোগান দিয়ে আমাকে গালিগালাজ করা হচ্ছে। পরবর্তীতে আমি ওসমানী এবং পার্কভিউ হাসপাতালে চিকিৎসা করাচ্ছি।’ আরেকটি পোস্টে প্রবাল চৌধুরী লেখেন- ‘আমার উপর হামলা করে, সিলেট জেলা-মহানগর ছাত্রলীগের শীর্ষ নেতাদের কর্মীরা বুনো উল্লাসে মেতেছে। আপনাদের এই উল্লাস অব্যাহত থাকুক। আগস্ট মাস তো। আপনারা উল্লাস করুন। আমাদের রক্তই এক সময় শিবিরমুক্ত ক্যাম্পাস উপহার দিয়েছিল আপনাদের। এখন আমাদের রক্তের উপর দিয়েই আপনারা আরও বড় নেতা হন। 

রক্ত ঝড়ানোর জন্য ধন্যবাদ আপনাদের। আমি মরে গেলে আপনারা হয়তো আরও খুশি হতেন। মরতে পারি নাই দেখে দুঃখিত। আপনাদের বুনো উল্লাসের মাত্রা বাড়াতে পারি নাই দেখে আমি দুুঃখিত। রাজনীতিটা এখন আপনারা করেন, আমরা না হয় দলের দুঃসময়ে আবার কামলা দেবো।’ এদিকে- দাড়িয়াপাড়ার পুজনের উপর হামলার ঘটনা অস্বীকার করেছেন জেলা ছাত্রলীগের সভাপতি। তিনি জানিয়েছেন, ২নং ওয়ার্ড ছাত্রলীগের কমিটি গঠনকে কেন্দ্র করে স্থানীয় দু’পক্ষের মধ্যে সংঘর্ষ হয়েছে বলে শুনেছি। এর বেশিকিছু জানি না।’ সিলেটের কোতোয়ালি থানার ওসি মোহাম্মদ আলী মাহমুদ সাংবাদিকদের জানিয়েছেন, ঘটনা শুনেছি। অভিযোগ পেলে পরবর্তী ব্যবস্থা গ্রহণ করা হবে।