ঢাকা মেডিক্যালে এমআরআই, সিটি স্ক্যান যন্ত্র নষ্ট, রোগীদের দুর্ভোগ

তবে হাসপাতাল কর্তৃপক্ষ বলছে, সিটিস্ক্যান যে মেশিনটি বিকল হয়েছিল তা বুধবার থেকে সচল হয়েছে। আর এমআরআই’র বিষয়টি মন্ত্রণালয়কে অবহিত করা হয়েছে।

ঢাকা মেডিক্যালে এমআরআই, সিটি স্ক্যান যন্ত্র নষ্ট, রোগীদের দুর্ভোগ

প্রথম নিউজ, অনলাইন: ঢাকা মেডিকেল কলেজ ও হাসপাতালে দুটি এমআরআই ও একটি সিটিস্ক্যান মেশিন নষ্ট। এতে চরম ভোগান্তিতে পড়েছেন রোগীরা। এই সুযোগে আশপাশের বেসরকারি ডায়াগনস্টিক  সেন্টারগুলো হাতিয়ে নিচ্ছে মোটা অঙ্কের টাকা। তবে হাসপাতাল কর্তৃপক্ষ বলছে, সিটিস্ক্যান যে মেশিনটি বিকল হয়েছিল তা বুধবার থেকে সচল হয়েছে। আর এমআরআই’র বিষয়টি মন্ত্রণালয়কে অবহিত করা হয়েছে।

দেশের সাধারণ রোগীদের অন্যতম ভরসার জায়গা ঢাকা মেডিকেল কলেজ হাসপাতাল। বৃহৎ সেই চিকিৎসাকেন্দ্রের দুটি এমআরআই ও একটি সিটিস্ক্যান যন্ত্র বিকল থাকায় রোগীদের ভোগান্তি চরমে উঠেছে। বিভিন্ন জেলা থেকে প্রতিদিন অসংখ্য রোগী আসেন এখানে। তাদের অনেকের জরুরি পরীক্ষাও করাতে হয়। হাসপাতালটি রেডিওলজি বিভাগ সূত্র জানায়, মেশিনগুলো অদক্ষ লোক দিয়ে চালানোর কারণে নষ্ট হয়েছে। এক্ষেত্রে রেডিওলজি বিভাগের অফিস সহকারী (ইনচার্জ) হানিফের ভাড়া করা বেসরকারি লোক হেলাল ও কাসেমকে দিয়ে মেশিন পরিচালন করার অভিযোগ উঠেছে।

আর মেশিন বিকল হওয়ার ফলে বাধ্য হয়েই রোগীদের নিয়ে স্বজনরা কেউ ছুটছেন পাশের শেখ হাসিনা জাতীয় বার্ন অ্যান্ড প্লাস্টিক সার্জারি ইনস্টিটিউটে। কেউবা যাচ্ছেন বাইরের বিভিন্ন বেসরকারি হাসপাতাল কিংবা ডায়াগনস্টিক সেন্টারে। এতে বাড়তি টাকা গুনতে হচ্ছে স্বজনদের। রেডিওলজি বিভাগের টেকনোলজিস্টরা বলছেন, একটি যন্ত্র দিয়ে এতদিন দুই শিফটে ২০-৩০টি এমআরআই করানো হয়েছে। সেটিও বিকল হওয়ায় রোগীরা এখন শেখ হাসিনা বার্ন ইনস্টিটিউটে যাচ্ছেন। কেউবা বেসরকারিভাবে করে আনছেন। আরেকজন রোগীর স্বজন জানান, ঢাকা মেডিকেলে এমআরআই করাতে তিন থেকে সাড়ে তিন হাজার টাকা লাগে। বাইরে খরচ পড়ে দ্বিগুণেরও বেশি। সঙ্গে রোগী টানাটানির কষ্ট আর যাতায়াতে আরও এক হাজার টাকা খরচ আছে।

অন্যদিকে, ঢাকা মেডিকেলের যন্ত্র নষ্ট হওয়ায় চাপ পড়েছে পাশের শেখ হাসিনা জাতীয় বার্ন অ্যান্ড প্লাস্টিক সার্জারি ইনস্টিটিউটের এমআরআই যন্ত্রে। তাও সেখানে দু’দিন আগে থেকে সিরিয়াল দিয়ে রাখতে হয়। শেখ হাসিনা বার্ন ইনস্টিটিউটের সহকারী অধ্যাপক সাজ্জাদ জালাল সাংবাদিকদের বলেন, এখানে একটি এমআরআই ও দুটি সিটিস্ক্যান মেশিন রয়েছে। এখানে ইনস্টিটিউটের রোগীর বাইরে ঢাকা মেডিকেলের রোগীদের চাপ বেড়েছে। সকাল থেকে বিকাল ৩টা পর্যন্ত এক শিফটে প্রতিদিন গড়ে ১০/১২টি এমআরআই করানো যাচ্ছে। রোগীর চাপ বাড়ায় সিরিয়াল দিয়ে করাতে হচ্ছে।

এ প্রসঙ্গে ঢাকা মেডিকেল কলেজ হাসপাতালের পরিচালক ব্রিগেডিয়ার জেনারেল নাজমুল হক  বলেন, হাসপাতালের দুটো এমআরআই যন্ত্রের একটি বিকল হয় বছর দেড়েক আগে। দ্বিতীয়টি বিকল হওয়ারও ৩ মাস পার হচ্ছে। হাসপাতালের তথ্য বলছে, ২০১৭ সালের শেষের দিকে দুটো এমআরআই এবং একটি সিটিস্ক্যান যন্ত্র মেশিন বসানো হয়েছে। পরিচালক নাজমুল হক বলেন, এমআরআই মেশিন দুটির পাঁচ বছর ওয়ারেন্টি ছিল। সে সময়ের মধ্যে কোনো ত্রুটি দেখা দিলে কোম্পানি মেরামত করে দেবে, এমন চুক্তি ছিল। ওয়ারেন্টির মেয়াদ শেষ হয়ে গেছে। এখন তা কোম্পানি থেকে মেরামত করাতে হলে নতুন করে চুক্তি করতে হবে। বিষয়টি মন্ত্রণালয়কে জানানো হয়েছে। মন্ত্রণালয়ে যোগাযোগ করা হচ্ছে।

 এ বিষয়ে এখনো কোনো সিদ্ধান্ত হয়নি। হাসপাতালের সিটিস্ক্যান কক্ষের কর্মীরা জানিয়েছেন, দুটি যন্ত্রের একটি রয়েছে জরুরি বিভাগে, অন্যটি নতুন ভবনের নিচ তলায়। দুই শিফটে সকাল ৮টা থেকে রাত ৮টা পর্যন্ত চলতো যন্ত্রগুলো। দুই যন্ত্রে সকালের শিফটে গড়ে ৯০ থেকে ১২০টি স্ক্যান করা হতো। বিকালে করা হতো ৫০ থেকে ৬০টি। এ ছাড়া রাতেও জরুরি প্রয়োজনে চালানো হতো যন্ত্র। চার দিন আগে একটি যন্ত্র নষ্ট হওয়া নতুন ভবনের যন্ত্রটির ওপর চাপ বেড়ে যায়। তারা বলছেন, কিছু রোগী বার্ন ইনস্টিটিউটে যাচ্ছেন, তারপরও অনেক চাপ। এভাবে চললে এই যন্ত্রটিও যেকোনো সময় বিকল হতে পারে। নষ্ট সিটিস্ক্যান যন্ত্র মেরামত করা হয়েছে জানিয়ে ঢামেক পরিচালক ব্রিগেডিয়ার জেনারেল নাজমুল হক বলেন, বুধবার নষ্ট সিটিস্ক্যান মেশিনটি ঠিক করা হয়েছে। এখন আর কোনো সমস্যা নেই।