ঢাকার প্রবেশমুখে তল্লাশি, বিএনপি নেতাকর্মীদের গ্রেপ্তার
বিএনপি নেতাকর্মীদের বাসা, বাড়ি ও হোটেলে গিয়ে গ্রেপ্তার অভিযান, তল্লাশি চৌকি, রোবাস্ট পেট্রোল চালিয়ে যাচ্ছে তারা। ঢাকার প্রবেশমুখে তল্লাশি চালিয়ে বিএনপি’র নেতাকর্মীদের গ্রেপ্তার করা হয়েছে।
প্রথম নিউজ, অনলাইন ডেস্ক: নয়াপল্টনে বিএনপি’র মহাসমাবেশ ঘিরে সতর্ক অবস্থানে রয়েছে পুলিশ, র্যাব ও গোয়েন্দা পুলিশ। বিএনপি নেতাকর্মীদের বাসা, বাড়ি ও হোটেলে গিয়ে গ্রেপ্তার অভিযান, তল্লাশি চৌকি, রোবাস্ট পেট্রোল চালিয়ে যাচ্ছে তারা। ঢাকার প্রবেশমুখে তল্লাশি চালিয়ে বিএনপি’র নেতাকর্মীদের গ্রেপ্তার করা হয়েছে। এ ছাড়া গত কয়েকদিন ধরে তালিকা ধরে ধরে দলের বিভিন্ন ইউনিট, ওয়ার্ড, উপজেলা ও জেলাপর্যায়ের সম্মুখসারির অন্তত ৩৯৯ জন নেতাকর্মীকে গ্রেপ্তার করা হয়েছে। থানা পুলিশের পাশাপাশি মহানগর গোয়েন্দা পুলিশের একাধিক টিম গ্রেপ্তার করছে। সমাবেশ ঘিরে জননিরাপত্তার স্বার্থে পুলিশের পক্ষ থেকে নয়াপল্টন ও তার আশপাশের এলাকায় অন্তত ৬০টি উচ্চ ক্ষমতাসম্পন্ন সিসি ক্যামেরা লাগানো হয়েছে। এসব ক্যামেরা থেকে পাওয়া যাবে স্বচ্ছ ফুটেজ। এ ছাড়া সমাবেশের জন্য পুলিশ ও ডিবির অন্তত ২০ থেকে ২৫ হাজার সদস্যকে প্রস্তুত রাখা হয়েছে।
পুলিশের পক্ষ থেকে বলা হয়েছে, সমাবেশকে কেন্দ্র করে কোনো মহল যাতে অপ্রীতিকর কোনো পরিস্থিতি সৃষ্টি করতে না পারে। এ ছাড়া নাশকতার পরিকল্পনা করে সেটি বাস্তবায়নের জন্য কোনো ধরনের বিস্ফোরকদ্রব্য অবৈধ অস্ত্র নিয়ে ঢাকায় প্রবেশ করতে না পারে সেজন্য চেকপোস্ট বসিয়ে তল্লাশি চালানো হচ্ছে। আর যাদেরকে গ্রেপ্তার করা হচ্ছে তারা বিভিন্ন মামলা ও ওয়ারেন্টভুক্ত আসামি। এটি পুলিশের নিয়মিত কাজের অংশ। সমাবেশ ঘিরে বিএনপি নেতাকর্মীদের বিরুদ্ধে গণগ্রেপ্তার বা হয়রানিমূলক কিছু করা হচ্ছে না। বিএনপি বলছে, মহাসমাবেশে যাতে নেতাকর্মীরা অংশগ্রহণ না করে সেজন্যই উদ্দেশ্যপ্রণোদিতভাবে পুলিশ ও ডিবি গ্রেপ্তার অভিযান চালাচ্ছে। পথে পথে বাস থামিয়ে সাধারণ মানুষকে হয়রানি করছে।
রাজধানীর প্রবেশমুখগুলোতে গতকাল সকাল থেকে চৌকি বসিয়ে তল্লাশি চালিয়েছে পুলিশ। তারা ঢাকার বাইরে থেকে আসা যানবাহনে ও সন্দেহভাজন ব্যক্তিদের তল্লাশি করেছে। সকালে ঢাকার প্রবেশপথ গাবতলী সেতুর মুখে নিরাপত্তা চৌকি বসিয়ে যানবাহন ও সন্দেহভাজনদের তল্লাশি করেছে দারুসালাম থানা পুলিশ। একইভাবে পুলিশের উত্তরা বিভাগের বিভিন্ন স্থানে তল্লাশি চালিয়েছে পুলিশ। পোস্তগোলা ব্রিজের মুখে নিরাপত্তা চৌকি বসিয়ে ঢাকার বাইরে থেকে আসা যানবাহন ও সন্দেহভাজন ব্যক্তিদের তল্লাশি চালিয়েছে শ্যামপুর থানা পুলিশ। র্যাবের আইন ও গণমাধ্যম শাখার পরিচালক কমান্ডার খন্দকার আল মঈন বলেছেন, নাশকতা রোধে র্যাবের দেড় হাজারের বেশি সদস্য রাজধানীতে মোতায়েন করা হয়েছে। র্যাব সদস্যরা রাজধানীর বিভিন্ন জায়গায় চেকপোস্ট পরিচালনা, টহল কার্যক্রম, সাদা পোশাকে গোয়েন্দা নজরদারি করছে। রাজধানীর আব্দুল্লাহপুর, রামপুরা, পূর্বাচল ৩০০ ফিট, আমতলী, মোহাম্মদপুরের বসিলা, আগারগাঁও শিশুমেলা, কমলাপুর, সচিবালয়, নটর ডেম কলেজের সামনে, কচুক্ষেত, টেকনিক্যাল, মিরপুর, কাজীপাড়া, সাভার, মানিকগঞ্জ, ডেমরা, পোস্তগোলা, সায়েদাবাদে চেকপোস্ট কার্যক্রম পরিচালনা করছে।
সরজমিন রাজধানীর গাবতলী এলাকায় গিয়ে দেখা যায়, দেশের উত্তর ও দক্ষিণ-পশ্চিমাঞ্চলের প্রায় ৩৫ থেকে ৪০টি জেলার মানুষের ঢাকায় প্রবেশ ও বাহিরের এই আন্তঃজেলা বাস টার্মিনালে অন্য সময়ের মতো ব্যস্ততা নেই। বাস কাউন্টার কর্মীদের ছিল না কোনো হাঁক-ডাক। হাতেগোনা কয়েকজন ছাড়া তেমন কোনো বাসযাত্রীদেরও চোখে পড়েনি। কিছুটা অলস সময় পার করতে দেখা গেছে পরিবহন সংশ্লিষ্টদের। দীর্ঘসময় অপেক্ষার পর একটি-দুটি করে ঢাকায় প্রবেশ করছে দূরপাল্লার বাস। সেগুলোতেও যাত্রী পর্যাপ্ত নয়। তাদের মধ্যেও রাজধানীর সমাবেশকে কেন্দ্র করে ছিল নানা শঙ্কা-আতঙ্ক। মিরাজ হোসেন নামে রয়েল পরিবহনের এক যাত্রী বলেন, শনিবার রাজধানীর এক বেসরকারি হাসপাতালে ডাক্তার দেখানোর সিরিয়াল নেয়া ছিল। তাই অসুস্থ বাবাকে নিয়ে মেহেরপুর থেকে ঢাকায় এসেছি। নিরাপত্তাজনিত কারণে পথে অন্তত ৫ জায়গায় গাড়িতে তল্লাশি করা হয়েছে। তেজগাঁও কলেজের ৪র্থ বর্ষের শিক্ষার্থী সজীবও ওই একই বাসে ঢাকায় এসেছেন। তিনি বলেন, পূজার ছুটিতে বাড়িতে গিয়েছিলাম। রোববার পরীক্ষা রয়েছে কলেজে। কিন্তু দুই দলের সমাবেশকে কেন্দ্র করে ঢাকার যেই পরিস্থিতি তাতে এখন রাস্তায় চলতেই ভয় লাগছে। আসার পথেই জায়গায় জায়গায় বাসে তল্লাশি চলেছে। অনেক ভয় লাগছিল। ঢাকায় প্রবেশের পরও র্যাব-পুলিশের বাড়তি নজরদারি। মিজানুর রহমান নামে এক বাসযাত্রী বলেন, মেয়েটা ঢাকায় পড়ালেখা করে। গতকাল রাত থেকে বেশ অসুস্থ। তাই ওকে দেখতে সকালে ঝিনাইদহ থেকে বাসে উঠি। আসার সময় অন্যদিনের মতো বাসও পর্যাপ্ত ছিল না। অনেকক্ষণ দাঁড়িয়ে থাকার পর একটা বাস পাই। সাভার আমিন বাজারসহ রাস্তায় বেশ কয়েক জায়গায় বাসে তল্লাশি হয়েছে।
এদিকে আবদুস সবুর নামে গাবতলী টার্মিনালের এক বাস মালিক বলেন, মূলত গাবতলী থেকে একটি বাসযাত্রী দেশের বিভিন্ন স্থানে যায়। ফিরতি ট্রিপে যাত্রী নিয়ে আবারো গাবতলীতে প্রবেশ করে। কিন্তু গতকাল থেকে যাত্রীর অভাবে সেই ফিরতি ট্রিপের সংখ্যা কমে এসেছে। গাবতলী থেকে বাস ছেড়ে যাওয়ার বিষয়ে তিনি বলেন, আমাদের বাস আছে। তবে টার্মিনালে যাত্রীর সংখ্যা খুবই সীমিত। সমাবেশ ঘিরে আতঙ্কে মানুষ ঘর থেকে বের হচ্ছে না।
নারায়ণগঞ্জ থেকে জানান, নারায়ণগঞ্জের বিভিন্ন স্থানে ১২ ঘণ্টা অভিযান চালিয়ে বিএনপি ও সহযোগী সংগঠনের ৪৫ নেতাকর্মীকে গ্রেপ্তার করেছে পুলিশ। বৃহস্পতিবার সন্ধ্যা থেকে শুক্রবার ভোর ৬টা পর্যন্ত জেলা গোয়েন্দা (ডিবি) পুলিশসহ বিভিন্ন থানার সদস্যরা যৌথভাবে এসব অভিযান চালায়। বিএনপি নেতাদের অভিযোগ, সমাবেশে যোগ দিতে বাধা দেয়ার জন্য পুলিশ তাদের লোকজনকে ধারাবাহিকভাবে আটক করছে। বৃহস্পতিবার রাতে আটককৃতদের মধ্যে ৩৪ জনের নাম জানা গেছে। তারা হলেন- ফতুল্লা থানার কাশীপুর ইউনিয়নের ৭নং ওয়ার্ড যুবদল নেতা জাহাঙ্গীর হোসেন, আড়াইহাজার উপজেলা যুবদলের যুগ্ম আহ্বায়ক মাহাবুব রহমান, আড়াইহাজার উপজেলা বিএনপিকর্মী জাকির হোসেন, সোনারগাঁও উপজেলার পিরোজপুর ইউনিয়ন শ্রমিক দলের সভাপতি আনসার আলী মিয়া, রূপগঞ্জের কাঞ্চন পৌরসভার ৫নং ওয়ার্ড যুবদলের সাধারণ সম্পাদক মো. মোমেন, সোনারগাঁও পৌরসভা বিএনপি’র সহ-সভাপতি মো. জাহাঙ্গীর আলম, রূপগঞ্জ থানা শ্রমিক দলের যুগ্ম আহ্বায়ক আমির হোসেন, ভুলতা ইউনিয়ন ৪নং ওয়ার্ড বিএনপি’র সাধারণ সম্পাদক ইসমাইল হোসেন, ফতুল্লা থানার কাশীপুর ইউনিয়ন বিএনপি’র সাংগঠনিক সম্পাদক ডালিম সিকদার, আড়াইহাজার থানা যুবদলকর্মী মো. আলামিন মিয়া, ফতুল্লা থানা বিএনপি’র যুগ্ম সম্পাদক মতিউর রহমান ফকির, রূপগঞ্জের চনপাড়া ১নং ওয়ার্ড যুবদলের সক্রিয়কর্মী মো. আলামিন, চনপাড়া ইউনিয়ন ছাত্রদলের সাংগঠনিক সম্পাদক মোহাম্মদ মাহিনের বাবা (রাতে তার বাসায় পুলিশ মাহিনকে না পেয়ে তার বাবাকে নিয়ে যায় বলে অভিযোগ), সোনারগাঁও জামপুর ইউনিয়ন বিএনপি’র সহ-সভাপতি আব্দুল লতিফ মেম্বার, সোনারগাঁও উপজেলা বিএনপির সহ-স্বাস্থ্য বিষয়ক সম্পাদক আবুল কাসেম, বারদী ইউনিয়ন যুবদল নেতা মো. শামীম মিয়া, পিরোজপুর ইউনিয়ন যুবদল নেতা মো. আবুল হোসেন, বৈদ্যেরবাজার ইউনিয়নের ৫নং ওয়ার্ড বিএনপি’র সভাপতি মো. নবী হোসেন, রূপগঞ্জের কাঞ্চন পৌরসভা যুবদল নেতা মোক্তার হোসেন, কাঞ্চন পৌরসভার ৫নং ওয়ার্ড যুবদল নেতা সোলাইমান মিয়া, রূপগঞ্জের ভুলতা ইউনিয়ন ৭নং ওয়ার্ডের সাবেক সাধারণ সম্পাদক মো. আলমগীর হোসেন, আড়াইহাজার উপজেলা যুবদলকর্মী মো. সাজোয়ার, চনপাড়া ইউনিয়ন বিএনপি নেতা হানিফ, চনপাড়া ৮নং ওয়ার্ড স্বেচ্ছাসেবক দল নেতা জুলহাস, সিএনজি চালক নুরুল হক (সাধারণ চালক), ফতুল্লা থানা কৃষক দলের যুগ্ম আহ্বায়ক মামুন, কুতুবপুর ইউনিয়ন বিএনপি নেতা জাহাঙ্গীর, সিদ্ধিরগঞ্জ থানা বিএনপি নেতা এনায়েত বিন আমান, শহিদুল ইসলাম, আবু জোবায়ের আরিয়ান, ছালাউদ্দিন, জেলা স্বেচ্ছাসেবক দলের সাবেক স্বাস্থ্য বিষয়ক সম্পাদক হারুনুর রশিদ হারুন, বিএনপি নেতা আরিফ প্রধান, মহানগর যুবদলের সাবেক নেতা মনোয়ার হোসেন শোখন।
শুক্রবার নারায়ণগঞ্জের সাইনবোর্ড, চিটাগাং রোড, কাঁচপুর, মদনপুর, মেঘনা, গাউছিয়া, মণ্ডলপাড়া এলাকায় তল্লাশি চৌকি দেখা গেছে। এসব স্থানে সতর্ক অবস্থানে রয়েছে পুলিশ ও র্যাব সদস্যরা। আজ বিকাল পর্যন্ত এই সকল চেকপোস্ট সক্রিয় থাকবে।
ময়মনসিংহ: থেকে জানিয়েছেন, ময়মনসিংহ জেলাজুড়ে বৃহস্পতিবার রাতে পুলিশ অভিযান চালিয়ে বিএনপি’র ৩৩ জন নেতাকর্মীকে গ্রেপ্তার করেছে। তাদেরকে সাম্প্রতিক সময়ের বিভিন্ন মামলায় গ্রেপ্তার দেখানো হয়েছে। শুক্রবার জেলার বিভিন্ন থানার ওসিদের সঙ্গে কথা বলে জানা গেছে, মুক্তাগাছায় ৭ জন, কোতোয়ালি মডেল থানা, ফুলবাড়িয়া ও ফুলপুর থানায় ২ জন করে, নান্দাইল ও ভালুকায় ৫ জন করে, হালুয়াঘাট, ধোবাউড়া, তারাকান্দা ও গফরগাঁও থানায় ১ জন করে, ত্রিশাল ও গৌরীপুরে ৩ জন করে মোট ৩৩ জন নেতাকর্মীকে গ্রেপ্তার করা হয়। সাম্প্রতিক বিভিন্ন মামলায় তাদেরকে গ্রেপ্তার করা হয় বলে জানান পুলিশ কর্মকর্তারা। এ বিষয়ে বিএনপি’র কেন্দ্রীয় সাংগঠনিক সম্পাদক (ময়মনসিংহ বিভাগ) সৈয়দ এমরান সালেহ প্রিন্স বলেন, পুলিশ প্রতিটি নেতাকর্মীর বাড়িতে তল্লাশি চালাচ্ছে। নেতাকর্মীদের গ্রেপ্তার করছে। কিন্তু যারা সমাবেশে যোগ দেয়ার তারা ঢাকায় চলে এসেছে। এসব করে সমাবেশ ঠেকানো যাবে না।
মানিকগঞ্জ: থেকে জানান, মানিকগঞ্জে দলীয় নেতাকর্মীদের বাড়ি বাড়ি তল্লাশি ও গ্রেপ্তারের অভিযোগ উঠেছে। পাশাপাশি মানিকগঞ্জে ঢাকা-আরিচা মহাসড়ক ও মানিকগঞ্জ-হেমায়েতপুর আঞ্চলিক মহাসড়কে তল্লাশি চৌকি বসিয়ে তল্লাশি চালাচ্ছে পুলিশ। জেলা বিএনপি’র অভিযোগ বৃহস্পতিবার রাতে তাদের দলের বেশ কয়েকজন নেতৃবৃন্দকে পুলিশ আটক করেছে। মহাসমাবেশে যোগ দিতে বাধা ও হয়রানি করতে আটক এবং পথেঘাটে তল্লাশি করা হচ্ছে বলে বিএনপি’র অভিযোগ। আটককৃতরা হলেন- মানিকগঞ্জের সাটুরিয়া উপজেলার ফুকুরহাটি ইউনিয়ন বিএনপি’র সহ-সভাপতি তমিজ উদ্দিন, যুবদল কর্মী মোতালেব হোসেন, ফুকুরহাটি ইউনিয়ন ছাত্রদলের সাধারণ সম্পাদক রাইসুল ইসলাম, উপজেলার হরগজ ইউনিয়ন বিএনপি’র ত্রাণ ও পুনর্বাসন সম্পাদক শহিদুল ইসলাম, একই ইউনিয়নের ২নং ওযার্ড বিএনপি’র সাবেক সভাপতি বাদশা মিয়া, সিংগাইর উপজেলা বিএনপি’র প্রবাসীকল্যাণ বিষয়ক সম্পাদক আব্দুস সালাম, সদর উপজেলা শ্রমিক দলের সভাপতি জিয়াউর রহমান। এদিকে খোঁজ নিয়ে জানা যায়, ঢাকার অন্যতম প্রবেশমুখ মানিকগঞ্জ-হেমায়েতপুর আঞ্চলিক মহাসড়কের ধল্লা এলাকাতেও তল্লাশি চৌকি বসিয়েছে পুলিশ।
সাভার: থেকে জানান, ঢাকার প্রবেশদ্বার ঢাকা-আরিচা মহাসড়কের আমিনবাজারে চেকপোস্ট বসিয়ে তল্লাশি পরিচালনা করেছে ঢাকা জেলা পুলিশ। এ সময় যানবাহন তল্লাশির পাশাপাশি জিজ্ঞাসাবাদে যাত্রীর পরিচয় নিশ্চিতের প্রয়োজনে যাচাই করা হচ্ছে পরিচয়পত্রও। গতকাল সকাল ৮টা থেকে বিপুলসংখ্যক পুলিশের উপস্থিতিতে সাভারের আমিনবাজার এলাকায় ঢাকাগামী বিভিন্ন যানবাহন থামিয়ে যাত্রীদের জিজ্ঞাসাবাদ ও তাদের সঙ্গে থাকা ব্যাগ তল্লাশি করছে পুলিশ। এ সময় সাদা পোশাকে থাকা গোয়েন্দা সদস্যদেরকেও গাড়িতে উঠে যাত্রীদের তল্লাশিসহ বিভিন্ন বিষয়ে জিজ্ঞাসাবাদ করতে দেখা গেছে। যাত্রীদের কাছে জানতে চাওয়া হয় তারা কোথা থেকে এসেছেন, কোথায় যাচ্ছেন এবং তাদের পেশাগত পরিচয়সহ অনেকের পরিচয়পত্রও দেখতে চাওয়া হয়। আমিনবাজার ২০ শয্যা হাসপাতালের সামনে ঢাকা জেলা পুলিশ চেকপোস্ট বসিয়ে ঢাকাগামী বিভিন্ন দূরপাল্লার যাত্রীবাহী বাস, গণপরিবহন, প্রাইভেট কার, মাইক্রোবাস, মোটরসাইকেল থামিয়ে সন্দেহভাজন যাত্রীদের জিজ্ঞাসাবাদ ও যাত্রীদের সঙ্গে থাকা ব্যাগও তল্লাশি করছে পুলিশ। সাভার মডেল থানার পুলিশ পরিদর্শক (তদন্ত) আবদুর রাশিদ বলেন, শনিবার ঢাকায় দুটি বড় দলের সমাবেশকে কেন্দ্র করে কেউ যেন কোনো ধরনের বিশৃঙ্খল পরিবেশ সৃষ্টি করে আইনশৃঙ্খলার অবনতি ঘটনাতে না পারে, সে জন্য সন্দেহভাজনদের তল্লাশি করা হচ্ছে। এটা আমাদের নিয়মিত কার্যক্রমেরই অংশ।
খুলনা: থেকে জানান, ঢাকার সমাবেশকে কেন্দ্র করে গত বৃহস্পতিবার রাতে খুলনা মহানগরীতে ২০ জনকে আটক করেছে পুলিশ। এ নিয়ে গত দুই রাতে বিএনপি’র ৬৭ নেতাকর্মীকে আটক করা হয়েছে। আটককৃতদের মধ্যে খুলনা সদর থানায় ৬ জন, সোনাডাঙ্গা মডেল থানায় ৩ জন, খালিশপুর থানায় ৩ জন, দৌলতপুর থানায় ৩ জন, লবণচরা থানায় ২ জন ও হরিণটানা থানায় ৩ জনকে আটক করা হয়েছে।
এর আগে ২৫শে অক্টোবর থেকে ২৬শে অক্টোবর সকাল ১১টা পর্যন্ত খুলনা মহানগরীর ৭টি থানায় গ্রেপ্তারকৃতরা হলেন-মহানগর বিএনপি যুগ্ম আহ্বায়ক আবুল কালাম জিয়া, খানজাহান আলী থানা স্বেচ্ছাসেবক দলের সহ-সভাপতি মো. ফারুক হোসেন, ১নং ওয়ার্ড যুবদলের সাবেক সভাপতি মো. হাদিউজ্জামান, আটরা গিলাতলা ইউনিয়ন বিএনপি’র সাবেক ভারপ্রাপ্ত সভাপতি ও শ্রমিক নেতা সরদার নজরুল ইসলাম, সদর থানা স্বেচ্ছাসেবক দলের ২৮নং ওয়ার্ডের সাধারণ সম্পাদক মো. কবির হোসেন, ২২নং ওয়ার্ডের সদস্য সচিব মো. জহির শেখ, ২৭নং ওয়ার্ড বিএনপি’র যুগ্ম আহ্বায়ক মো. সাইদুল ইসলাম সাঈদ, সোনাডাঙ্গা থানা স্বেচ্ছাসেবক দলের যুগ্ম আহ্বায়ক নজরুল ইসলাম বাবু, ১৭নং ওয়ার্ড যুবদলের প্রচার সম্পাদক মো. আলমগীর মোল্লা, দৌলতপুর থানা ছাত্রদলের সাবেক প্রচার সম্পাদক আসাদুর রহমান, ৫নং ওয়ার্ড সাবেক সভাপতি জাকির হোসেন; লবণচরা থানার ৩১নং ওয়ার্ড যুবদলের জিএম রফিকুল ইসলাম, খালিশপুর থানার ১৪নং ওয়ার্ড বিএনপি’র সদস্য শেখ ইসলাম, ১১নং ওয়ার্ড বিএনপি’র সদস্য শহিদুল আলম বাবুল, খুলনা মহানগর স্বেচ্ছাসেবক দলের সদস্য মো. ফারুক আলীসহ আড়ংঘাটা থানা থেকে আরও ২ জনকে আটক করা হয়েছে। এ ছাড়া বটিয়াঘাটা উপজেলার ১নং জলমা ইউনিয়নের বিএনপি’র রাজ্জাক আকন, মো. আজাদ শেখ, মো. মোতাহার শেখ, মো. মুজিবর, ৭নং আমিরপুর ইউনিয়নের মোজাফফর শেখ, ডুমুরিয়া উপজেলার শরাপপুর ইউনিয়নের শাহিন শেখ, রূপসা উপজেলার ৩নং নৈহাটী ইউনিয়নের যুবদলের মো. রাজু শেখ এবং ৪নং টিএসবি ইউনিয়ন যুবদলের মো. আশিকুর রহমান।
গাজীপুর: থেকে জানান, গত দুইদিনে গাজীপুরের টঙ্গী, কালিয়াকৈর ও জয়দেবপুর থানা এলাকা থেকে পুলিশ অন্তত ৬৫ জন নেতাকর্মীকে গ্রেপ্তার করেছে বলে গাজীপুর বিএনপি’র নেতাদের দাবি। গাজীপুর বিএনপি’র সাবেক সাধারণ সম্পাদক ও কেন্দ্রীয় নির্বাহী সদস্য কাজী সাইয়েদুল আলম বাবুল বলেন, পুলিশ গত রাতে অনেক নেতাকর্মীর বাসাবাড়িতে অভিযান চালিয়েছে। যাদের বাড়িতে পেয়েছে, তাদেরই ধরে নিয়ে গেছে। তবে গাজীপুর বিএনপি’র বেশির ভাগ নেতাকর্মীই সমাবেশে যোগ দিতে এখন ঢাকায় অবস্থান করছেন।
কিশোরগঞ্জ: জানান, কিশোরগঞ্জের কুলিয়ারচরে বিএনপি’র নেতাকর্মীদের বাড়িতে বাড়িতে রাতভর পুলিশ অভিযান পরিচালনা করে তাদেরকে গ্রেপ্তারের চেষ্টা করা করেছে বলে অভিযোগ উঠেছে। গত বৃহস্পতিবার দিবাগত রাতে কুলিয়ারচর থানা পুলিশ উপজেলার ছয়সূতী, গোবরিয়া আব্দুল্লাহপুর, ফরিদপুর ও উছমানপুর ইউনিয়নের বিভিন্ন নেতাকর্মীদের বাড়িতে পৃথক পৃথকভাবে এই পুলিশি অভিযান পরিচালনা করে। এ সময় কুলিয়ারচর থানা পুলিশ ছয়সূতী ইউনিয়ন বিএনপি’র সভাপতি ছালাউদ্দিন মুর্শেদ বাবুল নিজামি ও উপজেলা মৎস্যজীবী দলের আহ্বায়ক ও উসমানপুর ইউনিয়ন পরিষদের সাবেক চেয়ারম্যান মো. আসাদ মিয়া, গোবরিয়া-আব্দুল্লাহপুর ইউনিয়ন বিএনপি’র সভাপতি মো. মহসিন রানা, ফরিদপুর ইউনিয়ন বিএনপি’র সাধারণ সম্পাদক আনোয়ার হোসেনের বাড়িতে অভিযান পরিচালনা করে তাদেরকে গ্রেপ্তারের চেষ্টা করে।
সিরাজগঞ্জ: জানান, সিরাজগঞ্জে গত ২৪ ঘণ্টায় বিভিন্ন থানায় অভিযান চালিয়ে নাশকতার মামলায় বিএনপি ও জামায়াতের ১৩ জন নেতাকর্মীকে গ্রেপ্তার করেছে পুলিশ। গত বৃহস্পতিবার রাত থেকে গতকাল সকাল পর্যন্ত অভিযান চালিয়ে সিরাজগঞ্জ সদরে ৬ জন, তাড়াশে ২ জন এবং রায়গঞ্জ, বেলকুচি, কাজিপুর, এনায়েতপুর ও চৌহালী থানায় একজন করে গ্রেপ্তার করা হয়েছে। সিরাজগঞ্জ সদর থানার ওসি মো. সিরাজুল ইসলাম জানান, বৃহস্পতিবার রাত থেকে বিভিন্ন এলাকায় অভিযান চালিয়ে ৬ জনকে গ্রেপ্তার করা হয়েছে। গ্রেপ্তারকৃতরা হলেন- সিরাজগঞ্জ সদর থানা বিএনপি’র সহ-সভাপতি ছানোয়ার হোসেন (৬০), শিয়ালকোল ইউনিয়ন বিএনপি’র সভাপতি আব্দুস সালাম টুপা (৬৫), বিএনপিকর্মী সুমন সরকার (৩৯), রতনকান্দির বিএনপি’র কর্মী নয়ন (৩৯) ও মানিক (২২) ও জামায়াতের কর্মী আশরাফুল আলম (৩৫)।
তারাকান্দা (ময়মনসিংহ) প্রতিনিধি জানান, ময়মনসিংহের তারাকান্দা ও ফুলপুরে বিএনপি’র ৩ নেতাকর্মীকে পুলিশ গ্রেপ্তার করেছে। গত বৃহস্পতিবার রাতে পুলিশ থানা পুলিশ উপজেলা বিএনপি’র সাবেক যুগ্ম সাধারণ সম্পাদক আমজাত হোসেন সরকার (৬৫) ও বওলা ইউনিয়ন বিএনপি’র নেতা সোলাইমান হোসেন ফকিরের পুত্র সোহাগ ( ৩৫) এবং তারাকান্দা থানা পুলিশ বালিখা ইউনিয়ন পরিষদের সাবেক সদস্য বিএনপি নেতা মো. আব্দুল মতিন (৪৫)কে গ্রেপ্তার করে।
বাগেরহাট: জানান, বাগেরহাটের বিভিন্ন উপজেলা থেকে বিএনপির ১৫ নেতাকর্মীকে গ্রেপ্তার করেছে পুলিশ। গ্রেপ্তারকৃতদের মধ্যে বিএনপি ও তার অঙ্গ সংগঠনের ১০ নেতা রয়েছেন। তারা হলেন- জেলা বিএনপি’র আহ্বায়ক কমিটির সদস্য সরদার ওয়াহিদুল ইসলাম পল্টু, মোরেলগঞ্জ পৌর বিএনপি’র যুগ্ম আহ্বায়ক বাগেরহাট জেলা মুক্তিযোদ্ধা সংসদের সাবেক ডেপুটি কমান্ডার বীর মুক্তিযোদ্ধা মো. রুহুল আমীন ফকির, বারইখালী ইউনিয়নের শ্রমিক দলের ২নং ওয়ার্ড সভাপতি আজম খান ওরফে পান্না, মোংলা পোর্ট পৌরসভার সাবেক কাউন্সিলর জেলা যুবদলের সদস্য নেতা মো. আলাউদ্দিন, মোংলা উপজেলা যুবদল নেতা মো. মোরতাজ আলী, মোংলা পৌর স্বেচ্ছাসেবক দলের যুগ্ম আহ্বায়ক মো. সেলিম রেজা, মোংলা উপজেলা ছাত্রদলের যুগ্ম আহ্বায়ক শেখ মো. ইমরান, মিঠাখালী ইউনিয়ন বিএনপি’র সহ সভাপতি মো. ইয়াসিন ফকির, মিঠাখালী ইউনিয়ন ওয়ার্ড বিএনপি’র যুগ্ম সাধারণ সম্পাদক মো. মেহেদী হাসান সবুজ, কচুয়ার মঘিয়া ইউনিয়ন বিএনপি’র যুগ্ম সাধারণ সম্পাদক সাইফুল ইসলাম শাহিন। গ্রেপ্তারকৃত অন্যরা বিএনপি’র বিভিন্ন ইউনিয়ন ও ওয়ার্ড কমিটির সদস্য।