আজ পবিত্র ঈদে মিলাদুন্নবী
৫৭০ খ্রিস্টাব্দের আজকের এদিনে খাতেমুন্নাবিয়্যিন, সাইয়্যেদুল মুরসালীন, শাফিউল মুজনিবীন, আনিসুল গারেবীন হজরত মুহম্মদ মুস্তফা (সা.) দুনিয়াতে এসেছিলেন

প্রথম নিউজ, ঢাকা: সৃষ্টির ইতিহাসে সর্বশ্রেষ্ঠ দিবস ১২ রবিউল আউয়াল আজ। ৫৭০ খ্রিস্টাব্দের আজকের এদিনে খাতেমুন্নাবিয়্যিন, সাইয়্যেদুল মুরসালীন, শাফিউল মুজনিবীন, আনিসুল গারেবীন হজরত মুহম্মদ মুস্তফা (সা.) দুনিয়াতে এসেছিলেন।
হজরত মুহম্মদ মুস্তফা (সা.)-এর ধরাধামে আগমন মানব ইতিহাসে এক অবিস্মরণীয় ঘটনা। হজরত মুহম্মদ মুস্তফা (সা.) কে দুনিয়াতে প্রেরণ সম্পর্কে পরম করুণাময় মহান আল্লাহ পাক পবিত্র কোরআনে বলেছেন, ‘অমা আরসালনাকা ইল্লা রাহমাতাল্লিল আলামীন’। অর্থাৎ আপনাকে প্রেরণ করেছি আমি বিশ্ব জগতের কল্যাণের প্রতীক রূপে। হজরত মুহম্মদ মুস্তফা (সা.)-এর আগে বহু নবী-রাসুলকে আল্লাহ পাক দুনিয়াতে প্রেরণ করেছেন। তাঁদের প্রেরণ করা হয়েছিল নির্দিষ্ট এলাকার, নির্দিষ্ট গোত্র-সম্প্রদায় বা কাওমের জন্য। হজরত মুহম্মদ মুস্তফা (সা.) কে আল্লাহ পাক প্রেরণ করেছেন রোজ কিয়ামত পর্যন্ত বিশ্ব জগতের সকল মানুষের জন্য।
ভারতের প্রখ্যাত হিন্দু পণ্ডিত সাগর ত্রিপাঠি সম্প্রতি বলেছেন, ‘নবী মুহম্মদ শুধু মুসলমানদের নন, তিনি বিশ্ব মানবতার।’ হজরত মুহম্মদ মুস্তফা (সা.) হলেন শেষ নবী-বিশ্বনবী। আল্লাহ রাব্বুল আলামীনের প্রিয় হাবিব (বন্ধু) হজরত মুহম্মদ মুস্তফা (সা.)। আল্লাহ পাক হজরত মুহম্মদ মুস্তফা (সা.)-এর মর্যাদা তাঁর আগে যত নবী-রাসুল দুনিয়াতে এসেছেন তাদের সবার উপরে দিয়েছেন। হজরত মুহম্মদ মুস্তফা (সা.) হলেন নবীকুলের শিরোমণি, মহানবী। আখেরি নবী যখন দুনিয়াতে আবির্ভূত হন তখন দুনিয়া জাহেলিয়াতের মধ্যে নিমজ্জিত ছিল। কোথাও শান্তি-স্বস্তি ছিল না। জাহেলিয়াতে নিমজ্জিত দুনিয়ায় শান্তি-ইনসাফ, ন্যায় বিচার প্রতিষ্ঠার জন্য আল্লাহ রাব্বুল আলামিন তাঁর প্রিয় হাবিব হজরত মুহম্মদ মুস্তফা (সা.) কে সিরাজুল মুনিরা বা প্রদীপ্ত চেরাগরূপে প্রেরণ করেন।
মহানবী (সা.) মাত্র ৬৩ বছর দুনিয়ায় ছিলেন। ৬৩ বছরের দুনিয়াবী জীবন শেষে ৬৩২ খ্রিস্টাব্দের ১২ রবিউল আউয়াল দুনিয়া থেকে বিদায় নেন। ৬৩ বছরের ক্ষুদ্র জীবনে মহানবী (সা.) রেখে গেছেন আলোকিত জীবনাদর্শ। নবীকরিম (সা.) নিজের সম্পর্কে বলেছেন, ‘সুন্দর আখলাকের পরিপূর্ণ রূপ দিতে আমি প্রেরিত হয়েছি।’ ইংরেজ কবি জন কিটস আখেরি নবী সম্পর্কে বলেছেন, পৃথিবীর যা কিছু মঙ্গলময়, যা কিছু মহৎ ও সুন্দর সবই নবী মুহম্মদ।’ মহানবী (সা.)-এর সুবিস্তৃত, মহিমাময় ও সুদূরপ্রসারী জীবনীর বর্ণনা বিশ্লেষণ মহাসাগর মন্থনের ন্যায়ই কষ্টসাধ্য ও দুরূহ। হজরত মুহম্মদ মুস্তফা (সা.) বিশ্ব মানবতার অনুপম আদর্শ। পৃথিবীর ইতিহাসে প্রথম লিখিত শাসনতন্ত্র মদীনা সনদ প্রণীত হয়েছে বিশ্ব নবীর হাতে। হজরত মুহম্মদ (সা.) ব্যতীত আর কেউই একটি সার্বজনীন ও যুগোপযোগী পরিবর্তন আনতে পারেননি।
বিশ্বের শ্রেষ্ঠ দার্শনিক, কবি, রাজনীতিবিদ, বিজ্ঞানী, সমাজ সংস্কারকগণ একথা একবাক্যে স্বীকার করেছেন, সর্বকালের সর্বশ্রেষ্ঠ মহামানব হলেন হজরত মুহম্মদ মুস্তফা (সা.)। সর্বকালের সর্বশ্রেষ্ঠ মহামানব হজরত মুহম্মদ মুস্তফা (সা.)-এর জন্ম ও ওফাত দিবস ১২ রবিউল আউয়ালের তাৎপর্য অনুধাবন করে দিবসটি উদযাপন করা দরকার। বিশেষ করে আখেরি নবীর উম্মত মুসলমানদের এ দিবসের তাৎপর্য অনুধাবন জরুরি।
আজকে বিশ্বে হানাহানি, অনাচার, অবিচার, ব্যভিচার, জুলুম, অত্যাচার যে রূপ নিয়েছে তার সাথে আইয়্যামে জাহেলিয়াতের যুগের তেমন একটা পার্থক্য নেই। এ অবস্থা থেকে উত্তরণ নবীকরিম (সা.)-এর দেখানো পথেই সম্ভব। মহানবী (সা.) সাম্য, মানবতা ও ভ্রাতৃত্বের ভিত্তিতে একটি উন্নত ও আদর্শ সমাজ গঠনের পথ বাতলে দিয়ে গেছেন। আজকে সারা বিশ্বে আখেরি নবীর উম্মতরা নিপীড়ন, নির্যাতন, জুলুম, অবিচারের শিকার হচ্ছে। এর জন্য দায়ী আখেরি নবীর উম্মতদের নবী করিম (সা.)-এর দেখানো পথ থেকে যোজন যোজন দূরে অবস্থান।
মহাকবি আল্লামা ইকবাল বলেছেন, ‘কি মুহম্মদ সে ওয়াফা তুনে তু হাম তেরে হ্যাঁয়/ইয়েহ জমিন চিজ হ্যাঁয় কেয়া লওহ করম তেরে হ্যাঁয়। অর্থাৎ মুহম্মদের (সা.) সাথে সম্পর্ক পুনঃস্থাপন করলে ভূমণ্ডল কোনো ছার, নভোমণ্ডলের কর্তৃত্ব এসে যাবে তোমার কব্জায়। মহানবী (সা.)-এর সাথে সম্পর্ক স্থাপন তখনই হবে যখন মহানবী (সা.)-এর বাতলানো পথ হবে পাথেয়। নবীকুলের শিরোমণি, বিশ্ব জগতের রহমত মহানবী (সা.)-এর জন্ম ও ওফাত দিবসের অঙ্গীকার হোক পারিবারিক, সামাজিক, রাষ্ট্রীয় জীবনে মহানবী (সা.)-এর বাতলানো পথ অনুসরণের।
মহানবী (সা.) মানব জাতির জন্য এক আলোক অনুসরণীয় আদর্শ। নিজ যোগ্যতা, সততা, মহানুভবতা, সহনশীলতা, কঠোর পরিশ্রম, আত্মপ্রত্যয়, অসীম সাহস, ধৈর্য, সৃৃষ্টিকর্তা আল্লাহ রাব্বুল আলামীনের প্রতি অগাধ বিশ্বাস, নিষ্ঠা ও অপরিসীম দুঃখ যন্ত্রণা ভোগ করে তাঁর ওপর অবতীর্ণ সর্বশ্রেষ্ঠ মহাগ্রন্থ আল- কোরআনের বাণী তথা তওহীদ প্রতিষ্ঠার মহান দায়িত্ব পালন করেন। পবিত্র ঈদে মিলাদুন্নবী (সা.) উপলক্ষে বিএনপির ভারপ্রাপ্ত চেয়ারম্যান তারেক রহমান এক বাণীতে এসব কথা বলেন।
পবিত্র ঈদে মিলাদুন্নবী (সা.) উপলক্ষে অপর এক বাণীতে বিএনপি মহাসচিব মির্জা ফখরুল ইসলাম আলমগীর বলেছেন, “আজ ঈদে মিলাদুন্নবী (সা.) এক মহামানবের জন্ম দিন। ঈদে মিলাদুন্নবী (সা.) উপলক্ষে আমি দেশবাসীসহ মুসলিম উম্মাহর শান্তি ও কল্যাণ কামনা করছি। তাদের জানাই আন্তরিক শুভেচ্ছা ও অভিনন্দন। বিশ্বমানবের নিকট এক আলোকিত বিস্ময় হজরত মুহম্মদ (সা.)।
দিনটি সমগ্র বিশ্বে মুসলমানদের কাছে অত্যন্ত গুরুত্বপূর্ণ ও তাৎপর্যপূর্ণ। পরম সত্যের সন্ধানে নিজেকে নিয়োজিত রেখে তিনি ৪০ বছর বয়সে নবুয়াত লাভ করেন। কঠোর সংগ্রামের মধ্যে দিয়ে তিনি তাওহিদের বাণী সারা বিশ্বে ছড়িয়ে দেন। অনন্য সাধারণ ব্যক্তিত্ব, অনুপম আচরণ, সৃষ্টির প্রতি অগাধ প্রেম ও ভালোবাসা, অতুলনীয় বিশ্বস্ততা, সীমাহীন দয়া ও ক্ষমার জন্য তিনি মানবজাতির এক অনুকরণীয় আদর্শ। আল্লাহ তা’আলা পবিত্র মহাগ্রন্থ আল-কোরআন মহানবী (সা.) ওপর অবতীর্ণ করেন, যা মানব জাতির পূর্ণাঙ্গ জীবন বিধান হিসাবে ইহলৌকিক ও পারলৌকিক মুক্তির যাবতীয় নির্দেশাবলী অনুসরণের মাধ্যমে মানুষকে পরিপূর্ণ ও মর্যাদাশীল করে তোলে।
আমরা যেন সবাই নিজেদের জীবনে তাঁর আদর্শ ও কর্মজীবন অনুসরণ করে সত্যিকার মোমিন-মুসলমান হিসেবে নিজেদের গড়ে তুলতে পারি, এই জন্য আল্লাহ রাব্বুল আল-আমিনের নিকট মুনাজাত করি। পবিত্র ঈদে মিলাদুন্নবী (সা.) উপলক্ষে বাংলাদেশসহ সারাবিশ্বের মুসলিম ভাই- বোনদের প্রতি জানাই আন্তরিক শুভেচ্ছা ও অভিনন্দন। আজকের এই দিনে আমি মুসলিম উম্মাহর ঐক্য, শান্তি এবং সমৃদ্ধি কামনা করি। আমি শেষনবী সাইয়েদুল মুরসালিন হজরত মুহম্মদ ((সা.)-এর প্রতি সালাম জানাই।
বিএনপির কর্মসূচি : আজ বুধবার সকাল ১১টায় নয়াপল্টনস্থ বিএনপি কেন্দ্রীয় কার্যালয়ের নিচতলায় বাংলাদেশ জাতীয়তাবাদী দল-বিএনপির উদ্যোগে পবিত্র ঈদে মিলাদুন্নবী (সা.) উপলক্ষে মিলাদ ও দোয়া মাহফিল অনুষ্ঠিত হবে। মিলাদ ও দোয়া মাহফিলে প্রধান অতিথি হিসেবে উপস্থিত থাকবেন বিএনপির সিনিয়র যুগ্ম মহাসচিব অ্যাডভোকেট রুহুল কবির রিজভী। অনুষ্ঠানে বিএনপির কেন্দ্রীয় নেতৃবৃন্দ উপস্থিত থাকবেন। বিএনপি এবং এর অঙ্গ ও সহযোগী সংগঠনের সকল পর্যায়ের নেতাকর্মীকে যথাসময়ে বিএনপি কেন্দ্রীয় কার্যালয়ের নিচতলায় মিলাদ ও দোয়া মাহফিলে শরিক হওয়ার জন্য অনুরোধ করা হয়েছে।