গাজায় নৃশংস হত্যকাণ্ড বন্ধে আন্তর্জাতিক আদালতের রায়ও মানবে না ইসরাইল

ক্ষুধা ও তৃষ্ণায় মৃত্যুর মুখোমুখি ৮ লাখ মানুষ

গাজায় নৃশংস হত্যকাণ্ড বন্ধে আন্তর্জাতিক আদালতের রায়ও মানবে না ইসরাইল

প্রথম নিউজ, অনলাইন ডেস্ক: গাজায় নৃশংস হত্যকাণ্ড বন্ধে আন্তর্জাতিক আদালতের রায়ও মানবে না ইসরাইল। গাজা হামলার শততম দিনের ঠিক আগের সন্ধ্যাতে সে ইঙ্গিতই দিলেন মধ্যপ্রাচ্যে যুক্তরাষ্ট্রের ‘কুসন্তান’ ইসরাইলের প্রধানমন্ত্রী বেনিয়ামিন নেতানিয়াহু। আগামী দিনগুলোতে গাজা ধ্বংসে নতুন কর্মসূচির ঘোষণায় বললেন, পুরোপুরি বিজয় অর্জন না হওয়া পর্যন্ত হামাসের বিরুদ্ধে যুদ্ধ চালিয়ে যাবে ইসরাইল। বিশ্ব আদালত বা অন্য কোনো শক্তি ইসরাইলকে থামাতে পারবে না। শনিবার এক টেলিভিশনে ভাষণে এ ‘চরম বক্তব্য’ দেন নেতানিয়াহু। আলজাজিরা, এএফপি।

বক্তব্যে ইরান ও তার সমর্থন দেওয়া অন্যান্য দলের কথা উল্লেখ করে নেতানিয়াহু বলেন, ‘দ্য হেগ, শয়তানের অক্ষ অথবা অন্য কেউ আমাদের থামাতে পারবে না। বিজয় অর্জন না হওয়া পর্যন্ত যুদ্ধ চালিয়ে যেতে প্রয়োজনীয় সবকিছু আমরা করব।’ বক্তৃতায় তিনি আরও বলেন, ‘গাজায় সামরিক হামলায় ইতোমধ্যেই অবরুদ্ধ ফিলিস্তিনি ভূখণ্ডে বেশিরভাগ হামাস সদস্যকে নির্মূল করেছে।’ ‘তবে উত্তর গাজা থেকে যারা বাস্তুচ্যুত হয়েছে তারা শিগগিরই নিজেদের বাড়িতে ফিরে যেতে পারবে না’ বলেও উল্লেখ করেন তিনি। নেদারল্যান্ডসের হেগে আন্তর্জাতিক আদালতে ইসরাইলের বিরুদ্ধে দক্ষিণ আফ্রিকার করা মামলার ২ দিনের শুনানি ইতোমধ্যেই শেষ হয়েছে (১১ ও ১২ জানুয়ারি)।

বিশ্ব আদালতে মামলাটি বছরের পর বছর চলতে পারে। তবে আদালতের অন্তর্র্বর্তী পদক্ষেপের অধীনে ইসরাইলকে আকাশ ও স্থল আক্রমণ বন্ধের নির্দেশ দিয়ে একটি রায় কয়েক সপ্তাহ বা কয়েক দিনের মধ্যে আসতে পারে বলে ধারণা করা হচ্ছে। তবে বিশ্ব আদালতের সেই রায় যে মানতেই হবে- কোনো দেশেই এমন বাধ্যবাধকতা নেই।

ইসরাইলের হামলায় গাজায় নিহতের সংখ্যা প্রতিদিনই বাড়ছে। রোববার ফিলিস্তিনের স্বাস্থ্য মন্ত্রণালয় জানিয়েছে, এ পর্যন্ত নিহতের সংখ্যা ২৩ হাজার ৯৬৮ জনে দাঁড়িয়েছে। আহত হয়েছেন ৬০ হাজার ৫৮২ জন। এর মধ্যে শুধু গত ২৪ ঘণ্টায় ১২৫ জন নিহত ও ২৬৫ জন আহত হয়েছেন। গাজা যুদ্ধে দিন দিন বিশ্বের সমর্থন হারাচ্ছে ইসরাইল। এমন অবস্থায়ও যুক্তরাষ্ট্র ও যুক্তরাজ্য দেশটির প্রতি সমর্থন বজায় রেখেছে। শনিবার যুদ্ধের ৯৯তম দিনে ইসরাইলের প্রতি যুক্তরাষ্ট্র ও যুক্তরাজ্যের সমর্থনের বিরুদ্ধে বিক্ষোভ অনুষ্ঠিত হয়েছে। এদিন ওয়াশিংটনে বিক্ষোভকারীদের অনেকে ফিলিস্তিনি পতাকা ওড়াচ্ছিলেন। বিক্ষোভকারীদের মধ্যে একটা বড় অংশই ছিলেন তরুণ। বিক্ষোভ চলাকালীন তাদের অনেকেই ঐতিহ্যবাহী কেফিয়াহ পড়েছিলেন। ‘এখনই যুদ্ধবিরতি কার্যকর করুন’ স্লোগান দিচ্ছিলেন বিক্ষোভে অংশ নেওয়া মানুষেরা। তাদের হাতে থাকা ব্যানার-ফেস্টুনে লেখা ছিল, ‘ফিলিস্তিনকে মুক্ত করুন, গাজায় যুদ্ধের অবসান করুন।’ ইসরাইলকে সামরিক ও আর্থিক সহায়তা বন্ধ করে দিতে মার্কিন প্রেসিডেন্ট জো বাইডেনের প্রতি অনুরোধ জানিয়েছেন তারা। একইদিনে গাজায় যুদ্ধবিরতির দাবিতে লন্ডনেও বিক্ষোভ অনুষ্ঠিত হয়েছে। লন্ডনের বিক্ষোভে নিরাপত্তা নিশ্চিত করতে শনিবার সেখানে প্রায় ১ হাজার ৭০০ পুলিশ সদস্যকে মোতায়েন করা হয়েছিল।

হামাসের অভিযানে জিম্মিদের অপহরণের ১০০ দিন পূর্তি উপলক্ষ্যে শনিবার তেল আবিবে একটি বিক্ষোভ অনুষ্ঠিত হয়েছে। এ দিনের ২৪ ঘণ্টার সমাবেশের শুরুতে আনুমানিক ১ লাখ ২০ হাজার মানুষ অংশগ্রহণ করেন। একইদিনে দেশটিতে সরকারবিরোধী বিক্ষোভও অনুষ্ঠিত হয়। 

গাজা সিটি ও উত্তর গাজায় ক্ষুধা ও তৃষ্ণায় ৮ লাখ ফিলিস্তিনি মৃত্যুর মুখোমুখি হচ্ছেন। শনিবার এক বিবৃতিতে এই তথ্য জানিয়েছে গাজা মিডিয়া অফিস। এই দুই অঞ্চলে ক্ষুধার সংকট কাটিয়ে উঠতে দৈনিক ১৩০০ ট্রাক খাদ্যের প্রয়োজন বলে জানানো হয়। এর মধ্যে উত্তর গাজার জন্য ৬০০ ট্রাক এবং ৭০০ ট্রাক খাদ্য শুধু গাজা সিটির জন্যই প্রয়োজন। চলমান এ যুদ্ধের শততম দিন উপলক্ষ্যে জাতিসংঘ বলেছে, ‘গাজায় ইসরাইল ও হামাসের মধ্যে যুদ্ধ মানবতাকে কলঙ্কিত করছে।’

ফিলিস্তিনি শরণার্থীদের জন্য জাতিসংঘের সংস্থার প্রধান ফিলিপ লাজারিনি এদিন গাজা উপত্যকা পরিদর্শনের সময় এ মন্তব্য করেন। বিবৃতিতে লাজারিনি বলেন, ‘গত ১০০ দিনে ব্যাপক মৃত্যু, ধ্বংস, বাস্তুচ্যুতি, ক্ষুধা, ক্ষতি এবং শোক আমাদের ভাগ করা মানবতাকে কলঙ্কিত করছে।’