খুলনা সমাবেশে ‘কোনো অঘটন হলে এর দায় সরকারকেই নিতে হবে: মির্জা ফখরুল
আজ শুক্রবার সকালে গুলশানে চেয়ারপারসনের কার্যালয়ে এক সংবাদ সম্মেলনে তিনি এই হুশিয়ারি দেন।
প্রথম নিউজ, ঢাকা: খুলনার বিভাগীয় সমাবেশে ‘কোনো অঘটন হলে এর সম্পূর্ণ দায় সরকারকেই নিতে হবে’ বলে হুশিয়ারি দিয়েছেন বিএনপি মহাসচিব মির্জা ফখরুল ইসলাম আলমগীর।
আজ শুক্রবার সকালে গুলশানে চেয়ারপারসনের কার্যালয়ে এক সংবাদ সম্মেলনে তিনি এই হুশিয়ারি দেন।
মির্জা ফখরুল ইসলাম আলমগীর বলেন, ‘‘ আগামীকাল খুলনায় আমাদের বিভাগীয় সমাবেশ আছে। এই সমাবেশকে কেন্দ্রে করে সরকার ইতিমধ্যে একটা সন্ত্রাসের রাজত্ব সৃ্ষ্টি করে্ছে খুলনায়। তারা পথে পথে নেতা-কর্মীদেরকে, সাধারণ মানুষকে গ্রেফতার করছে। খুলনার সমাবেশে যেন বাধা সৃষ্টি করা না হয় তার জন্য আমি আহবান জানাচ্ছি। যদি কোনো রকম সমস্যা তৈরি হয় তার সকল দায়-দায়িত্ব সম্পূর্ণভাবে সরকারকে নিতে হবে।এটা প্রমানিত হবে যে, এই সরকার আসলে গণতন্ত্রে বিশ্বাস করে না, আমাদের সভা-সমাবেশ তারা করতে দিতে চায় না।”
মির্জা ফখরুল অভিযোগ করে বলেন, শুধু তাই নয়, গতকাল রাতে তারা আমাদের স্থায়ী কমিটির সদস্য গয়েশ্বর চন্দ্র রায় যেখানে তিনি এটার দায়িত্বপ্রাপ্ত উপদেষ্টা হিসেবে গিয়েছেন, তিনি যে বাসায় অবস্থান করছেন সেখানে পুলিশ রেইট করেছে এবং সেখান থেকে ১৯জনকে গ্রেফতার করেছে। আমি কিছুক্ষন আগে খবর নিয়েছি যে,এখন নির্দেশ দিয়েছে যে, পথে পথে যাকে যেখানে পাওয়া যাবে তাকে সেখানে গ্রেফতার করার জন্য। গতকাল তারা রামদা, লাঠি-সোঠা অস্ত্র নিয়ে সো-ডাউন করেছে, মোটর সাইকেল নিয়ে বিভিন্নভাবে আওয়ামী লীগের সন্ত্রাসীরা সন্ত্রাস সৃষ্টি করার চেষ্টা করছে। আমি এই গ্রেফতার এবং এই সন্ত্রাস সৃষ্টি করবার যে প্রচেষ্টা তার তীব্র নিন্দা জানাচ্ছি, প্রতিবাদ করছি এবং অবিলম্বে গ্রেফতারকৃতদের মুক্তি দেয়ার দাবি জানাচ্ছি।
জ্বালানি তেল ও নিত্য প্রয়োজনীয় দ্রব্যের মূল্য বৃদ্ধি, ভোলা-মুন্সিগঞ্জ-নারায়নগঞ্জ-যশোরের পুলিশের গুলিতে ৫জন নিহত এবং সারাদেশে আওয়ামী লীগের সন্ত্রাসী হামলার প্রতিবাদে শনিবার দুপুরে খুলনায় সোনালী ব্যাংক চত্বরে বিভাগীয় সমাবেশ হবে। সমাবেশ উপলক্ষে শুক্রবার ও শনিবার গণপরিবহন ধর্মঘটের পেছনে সরকারের হাত রয়েছে অভিযোগ করে বিএনপি মহাসচিব বলেন, ‘‘ আজ যেটা হয়েছে যে, সমস্ত গণপরিবহন তারা বন্ধ করে দিয়েছে এবং কথা আছে যে, ট্রেন তারা …., লঞ্চও বন্ধ করছে।কিন্তু এটাতে সাধারণ মানুষের যে জীবন-যাত্রা তাকে সম্পূর্ণ ভাবে পরিকল্পিতভাবে ব্যাহত করছে।”
‘‘ এখানে প্রমাণিত হয়েছে যে, সরকার চায় না যে, মানুষ একটা গণতান্ত্রিক উপায়ে তাদের যে কথা, তাদের যে বক্তব্য, তাদের যে প্রতিবাদ সেটা প্রকাশ করুক। তারা একটা সংঘাতে দিতে চলে যাওয়ার জন্য প্রচেষ্টা চালাচ্ছে। আমরা এর তীব্র নিন্দা জানাচ্ছি। আমরা সরকারকে এই রাস্তা থেকে ফিরে এসে গণতান্ত্রিক পরিবেশ তৈরি করার জন্য আহবান জানাচ্ছি।”
‘সরকার জনভীতি রোগে আক্রান্ত: মির্জা ফখরুল বলেন, ‘‘ খুলনায় নিশ্চয় আপনাদের প্রতিনিধিরা আছেন তাদের কাছ থেকে জানতে পারবেন। আজকের পত্র-পত্রিকায় রিপোর্ট আপনারাই করেছেন। প্রত্যেকটা পত্র-পত্রিকায় যে কিভাবে তারা একটা রেইন অব ট্রেরর সৃষ্টি করতে চাচ্ছে। এটা তারা ময়মনসিংহে করেছিলো, চট্টগ্রামে করেছিলো। বাট নাথিং ওয়াট। কারণ তো একটাই্। এরা(সরকার) জনভীতি রোগে ভোগে। এটা হচ্ছে পিপলস ফোবিয়া রোগ হয়েছে তাদের। মানুষ দেখলেই ভয় পায়। যে কারণে তারা নির্বাচনগুলো ওইভাবে করে যাতে করে জনগনকে বাদ দিয়ে করা যায় সেই পদ্ধতিতে তারা নির্বাচন করছে।রাষ্ট্র চালাতে চায় তারা মানুষকে বাদ দিয়ে। এটা তাদের অসুখটাই তাই, রোগটাই তাই।”
প্রশ্ন রেখে তিনি বলেন, ‘‘ ভয়টা কিসের তাদের? কি কারণে তারা সমস্ত কিছু বন্ধ করে দিয়ে সমাবেশগুলো বন্ধ করতে চাচ্ছে। একটাই তো কারণ। যে মানুষ যদি বাড়তে থাকে তাদের ক্ষমতায় টিকে থাকা সম্ভব হবে না। জনগণের উত্তাল তরঙ্গে তাদের ভেসে যেতে হবে, এভাবে যদি জনগন জেগে উঠে, গণঅভ্যুত্থান সৃষ্টি হবে তখন তাদেরকে অত্যন্ত ধিকৃত অবস্থায় সরে যেতে হবে। এটাই তাদের ভয়।
গুলশানে চেয়ারপারসনের কার্যালয়ে এই সংবাদ সম্মেলন।
‘দুর্নীতি-অব্যবস্থাপনার কারণেই দুর্ভিক্ষের পদধবনি বলে মন্তব্য করে মির্জা ফখরুল বলেন, আপনারা নিশ্চয় অমর্ত্য সেনের বইটা পড়েছেন। যেখানে উনি ৭৪ সালের দুর্ভিক্ষের পর্যালোচনা করতে গিয়ে স্পষ্ট করেই বলেছেন, ’৭৪ সালে দুর্ভিক্ষটা ছিলো মানবসৃষ্ট, মানুষদের দ্বারা তৈরি করা। অর্থাত তখন যারা ক্ষমতাসীন ছিলেন তাদের অব্যবস্থাপনা, তাদের দুর্নীতি, তাদের অযোগ্য, তাদের অদক্ষতার কারণে সেই দুর্ভিক্ষ সৃষ্টি হয়েছিলো। আজকে সেই একই ঘটনা বাংলাদে্শে ঘটছে। এটা আমরা বার বার করে বলে আসছি। দুর্ভিক্ষ তো আগাম পদধবনি শুনতে তো পাওয়া যাচ্ছেই। আমরা কিছুদিন আগেও বলেছি যে, আগাম পদধবনি শোনা যাচ্ছে। নিশ্চয়ই আপনাদের মনে আছে। তখনও তারা আমাদেরকে …। এখন প্রধানমন্ত্রী নিজেই বলছেন সেটা। এই যে ব্যর্থতা খাদ্য নিরাপত্তা নিশ্চিত করার ক্ষেত্রে এটা এখান থেকে প্রমাণিত হয়।”
‘কৃষকদের গোল্ড মেডেল দেয়া উচিত বলে জানিয়ে মির্জা ফখরুল বলেন, ‘‘ আমাদের তো বাংলাদেশের কৃষকদের প্রত্যেককে একটা করে সোনার মেডেল দেওয়া উচিত। তারা দিবারাত্র পরিশ্রম করে যে ফসল ফলায় তার জন্য বাংলাদেশের মানুষ কোনো রকমের খেয়ে বেঁচে থাকে। এরা মুখে বলে যে, আমরা খাদ্যে স্বয়ং সম্পূর্ণ হয়ে গেছি। আর অন্যদিকে লক্ষ লক্ষ টাকার খাদ্য বিদেশ থেকে আমদানি করছে। কয়েকদিন আগেও দেখেছেন বিদেশ থেকে আমদানি করার ব্যবস্থা করা হয়েছে। এদের পুরো লক্ষ্যটা হচ্ছে- লুট করা, চুরি করা সবখানে।”
সরকার প্রজাতন্ত্রের কর্মকর্তা-কর্মচারি যাদেরকে বাধ্যতামূলক অবসর দিচ্ছে তাদের প্রতি যদি অবিচার করা হয় তাহলে আপনারা ক্ষমতায় গেলে তারা ন্যায় বিচার পাবেন কিনা প্রশ্ন করা হলে বিএনপি মহাসচিব বলেন, ‘‘ আমরা তো সবসময় ন্যায় বিচার প্রতিষ্ঠার কথা বলছি। আমরা তো স্পষ্ট করে বলছি, আমরা সামাজিক ন্যায় বিচার, মূল্যবোধ, মানবিক মূল্যবোধ ইত্যাদি প্রতিষ্ঠা করবো। অবশ্যই আমরা এগুলো যেন… সকলে সমান বিচার পায় এটা আমরা দেখবো।”
সংবাদ সম্মেলনে বিএনপির স্থায়ী কমিটির সদস্য আমীর খসুর মাহমুদ চৌধুরী ও ইকবাল হাসান মাহমুদ টুকু উপস্থিত ছিলেন।
Download করুন আমাদের App এবং Subscribe করুন আমাদের YouTube Channel:
https://apps.apple.com/de/app/prothomnews/id1588984606?l=en
https://play.google.com/store/apps/details?id=com.prothomnews