খালেদা জিয়া-দুর্নীতি-চুক্তির ইস্যুতে রোডমার্চ, লংমার্চ ও সমাবেশের প্রস্তাব

সমমনাদের সঙ্গে বিএনপির বৈঠক

খালেদা জিয়া-দুর্নীতি-চুক্তির ইস্যুতে রোডমার্চ, লংমার্চ ও সমাবেশের প্রস্তাব

প্রথম নিউজ, অনলাইন: বিএনপি চেয়ারপারসন বেগম খালেদা জিয়ার মুক্তি, দুর্নীতিবিরোধী, নিত্যপ্রয়োজনীয় দ্রব্যাদির মূল্যবৃদ্ধি এবং ভারতের সঙ্গে চুক্তি ও সমঝোতাসহ জনসম্পৃক্তমূলক ইস্যুতে রোডমার্চ, লংমার্চ ও সমাবেশের প্রস্তাব দিয়েছে সমমনা দল ও জোটগুলো। বাংলাদেশের ভূখণ্ডে যেসব এলাকা দিয়ে ভারতের রেলগাড়ি চলাচল করবে-সেসব এলাকায় এই রোডমার্চ ও লংমার্চ কর্মসূচি দেয়ার জন্য সমমনা দলগুলোর নেতারা মতামত দিয়েছেন। চলতি মাসেই এই কর্মসূচিতে যাওয়ার কথা রয়েছে। তবে এটা এখনো চূড়ান্ত হয়নি। পাশাপাশি এই কর্মসূচিগুলো যুগপৎভাবে কিংবা একমঞ্চে করার জন্যও প্রস্তাত দিয়েছে তারা। তবে এটা কিভাবে হবে তা এখনো ঠিক হয়নি। সামনে যুগপৎ আন্দোলনের অন্য শরিক দল ও জোটগুলোর সঙ্গে বৈঠক হবে। সমমনা দল ও জোটগুলোর বৈঠকের আলোচনায় বিষয়বস্ত নিয়ে বিএনপির স্থায়ী কমিটির সভা অনুষ্ঠিত হবে। সেখানে চূড়ান্ত কর্মসূচি নির্ধারিত হবে। এরপর সব দল ও জোটের শীর্ষ নেতাদের নিয়ে কর্মসূচি ঘোষণা করা হবে বলে জানা গেছে।

শুক্রবার দলের চেয়ারপারসনের গুলশান রাজনৈতিক কার্যালয়ে সমমনা দল ও জোটের সঙ্গে বিএনপির লিয়াজোঁ কমিটির বৈঠকে এসব বিষয়ে আলোচনা হয় বলে বৈঠক সূত্রে জানা গেছে।

এসব বৈঠকে বিএনপির পক্ষে দলটির স্থায়ী কমিটির সদস্য নজরুল ইসলাম খান, বেগম সেলিমা রহমান, ভাইস চেয়ারম্যান মোহাম্মদ শাহজাহান, আবদুল আউয়াল মিন্টু উপস্থিত ছিলেন। এরই ধারাবাহিকতায় শনিবার বিকালে নুরুল হক নুরের নেতৃত্বাধীন গণঅধিকার পরিষদের সঙ্গে বৈঠক হওয়ার কথা রয়েছে। এরআগে গত ১১ জুলাই গণফোরাম ও পিপলস পার্টি, গণতান্ত্রিক বাম ঐক্য, এনডিএম’র সঙ্গে পৃথক পৃথকভাবে বৈঠক করে বিএনপি। 

যুগপৎ আন্দোলনের শরিক দলের দু’জন শীর্ষ নেতা নাম প্রকাশ না করার শর্তে মানবজমিনকে বলেন, ভারতের সঙ্গে রেল করিডোর চুক্তির ইস্যুতে রোডমার্চ কর্মসূচি দেয়ার বিষয়ে আলোচনা হয়েছে। এই কর্মসূচি জুলাই মাসেই দেয়ার কথা রয়েছে। এই কর্মসূচি যুগপৎভাবে হবে কি না, সেবিষয়ে এখনো কোন সিদ্ধান্ত হয়নি। এতে যুগপৎ আন্দোলনের বাইরে অন্য রাজনৈতিক দলগুলোকে, বিশেষ করে জামায়াত নেয়ার জন্য বিএনপিকে পরামর্শ দেয়া হয়েছে। তবে এবিষয়ে বিএনপি তাদের পক্ষ থেকে কিছু বলেনি। দলটি স্থায়ী কমিটির বৈঠকে এবিষয়ে আলোচনা করবে বলে জানা গেছে।

বৈঠক প্রসঙ্গে বিএনপির স্থায়ী কমিটির সদস্য নজরুল ইসলাম খান বলেন, আগামীদিনে কি কর্মসূচি পালন করা যায়, সেবিষয়ে আমরা মতবিনিময় করেছি। আর এসব বৈঠকের পর আগামী দুই থেকে তিনদিনের মধ্যে এসব দল ও জোটের শীর্ষ নেতাদের সঙ্গে বসে আমরা পরবর্তী কর্মসূচি ঘোষণা করবো ইনশাআল্লাহ। দেশ ও দেশের মানুষ যেসব সঙ্কটের মোকাবেলা করছে, তার প্রধান হলো গণতন্ত্রের সঙ্কট। এদেশে গণতন্ত্র নাই। এই গণতন্ত্র পুনরুদ্ধারের জন্য যে একদফা আন্দোলন, মূলত সেই আন্দোলনেই আমরা আছি। এই আন্দোলনের অংশ হিসেবেই আমরা বিএনপি চেয়ারপারসন বেগম খালেদা জিয়ার মুক্তি চাই, এই আন্দোলনের অংশ হিসেবেই আমরা একটি অবাধ ও সুষ্ঠু নির্বাচন চাই, দ্রব্যমূল্যের দাম বৃদ্ধি এবং দুর্নীতির অবসান চাই। এই আন্দোলনের অংশ হিসেবেই আমরা দেশের স্বার্থবিরোধী চুক্তি বাতিল চাই।

নজরুল ইসলাম খান জানান, এখনো কোন কর্মসূচি নির্ধারণ করা হয়নি। এখন মতামত নেয়া হচ্ছে। সব মতামত নেয়ার পরে কর্মসূচি গ্রহণ করা হবে। তবে খুব শিগগিরই কর্মসূচি ঘোষণা করা হবে বলেও জানান তিনি। এনপিপির চেয়ারম্যান ড. ফরিদুজ্জামান ফরহাদ  বলেন, দুর্নীতি, ভারতের সঙ্গে চুক্তি, দ্রব্যমূল্যের দাম বৃদ্ধি এবং বিএনপি চেয়ারপারসন বেগম খালেদা জিয়ার মুক্তির বিষয়ে আলোচনা হয়েছে। সামনে এসব বিষয়ে কর্মসূচি দেয়া হবে। তবে কর্মসূচি এখনো চূড়ান্ত হয়নি।

বাংলাদেশ লেবার পার্টি চেয়ারম্যান ডা.  মোস্তাফিজুর রহমান ইরান বলেন, বৈঠকে বিএনপি চেয়ারপারসন বেগম খালেদা জিয়ার মুক্তি, দ্রব্যমূল্যের ঊর্ধ্বগতি, গণতন্ত্র ও ভোটাধিকার প্রতিষ্ঠার আন্দোলনকে গতিশীল ও বেগবান করার বিষয়ে আলোচনা হয়েছে। বলা হয়েছে, আওয়ামী দুঃশাসন ও লুটপাটের বিরুদ্ধে রাজপথে আন্দোলন-সংগ্রামে সকল রাজনৈতিক শক্তিকে একমঞ্চে এনে বিএনপির নেতৃত্বে পরিকল্পিত ও ধারাবাহিক কর্মসূচি গ্রহণ ও বাস্তবায়ন করতে পারলে দেশকে ফ্যাসিবাদের কবল থেকে মুক্ত করা সম্ভব হবে। স্ব স্ব অবস্থান বা যুগপৎ আন্দোলন দিয়ে আন্দোলনে সফলতা সম্ভব নয় বলেও বৈঠকে আলোচনা হয় বলে জানান ইরান।

বৈঠকে প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা ট্রানজিটের মোড়কে ভারতকে করিডোর দিয়ে দেশের সার্বভৌমত্ব খর্ব করেছেন বলেও উল্লেখ করা হয় বলে জানিয়ে লেবার পার্টির চেয়ারম্যান বলেন, এজন্য বৈঠকে বলা হয়- ভারতীয় আধিপত্য আগ্রাসনের বিরুদ্ধে প্রতিরোধ সংগ্রাম জোরদার করার কোন বিকল্প নাই। 

জাগপার সভাপতি খন্দকার লুৎফর রহমান বলেন, বেগম খালেদা জিয়ার মুক্তিসহ বিভিন্ন বিষয়ে আলোচনা হয়েছে। খুব অল্প সময়ের মধ্যে এসব বিষয়ে কর্মসূচি দেয়া হবে।

বৈঠকে জাতীয়তাবাদী সমমনা জোটের পক্ষে এনপিপির চেয়ারম্যান ড. ফরিদুজ্জামান ফরহাদ, জাগপার একাংশের সভাপতি খন্দকার লুৎফর রহমান, গণদলের চেয়ারম্যান এটিএম গোলাম মাওলা চৌধুরী, বাংলাদেশ ন্যাপের চেয়ারম্যান এম এন শাওন সাদেকী, ন্যাশনাল ডেমোক্রেটিক পার্টির চেয়ারম্যান ক্বারী মো. আবু তাহের, বাংলাদেশের সাম্যবাদী দলের সাধারণ সম্পাদক কমরেড. ডা. সৈয়দ নুরুল ইসলাম, এনপিপির মহাসচিব মোস্তাফিজুর রহমান মোস্তফা, এনডিপির মহাসচিব আব্দুল্লাহ আল হারুন সোহেল, জাগপার সাধারণ সম্পাদক এস এম শাহাদাত হোসেন উপস্থিত ছিলেন।

এলডিপির সঙ্গে বৈঠকে দলটির প্রেসিডিয়াম সদস্য নুরুল আলম তালুকদার, ড. নেয়ামূল বশির, ড. আওরঙ্গজেব বেলাল, উপদেষ্টা মন্ডলীর সদস্য অধ্যক্ষ মো. মাহবুবুর রহমান, যুগ্ম মহাসচিব মো. বিল্লাল হোসেন উপস্থিত ছিলেন।
বাংলাদেশ লেবার পার্টি চেয়ারম্যান ডা.  মোস্তাফিজুর রহমান ইরানের নেতৃত্বে বৈঠকে দলটির ভাইস চেয়ারম্যান এস এম ইউসুফ আলী, হিন্দুরত্ম রামকৃষ্ণ সাহা, এডভোকেট জহুরা খাতুন জুঁই ও মহাসচিব খন্দকার মিরাজুল ইসলাম উপস্থিত ছিলেন।