কুষ্টিয়ায় বাড়ছে প্রসূতি মৃত্যু ও এতিম শিশু

কুষ্টিয়া সিভিল সার্জন কার্যালয়ের পরিসংখ্যান সূত্রে জানা যায়, চলতি বছরের প্রথম ৫ মাসে ৬৩১২টি জীবিত শিশু জন্মদিতে গিয়ে প্রসবকালীন সময়ে ৭জন মায়ের মৃত্যু হয়েছে।

কুষ্টিয়ায় বাড়ছে প্রসূতি মৃত্যু ও এতিম শিশু
প্রথম নিউজ, কুষ্টিয়া: কুষ্টিয়ায় ব্যাঙের ছাতার মত গড়ে ওঠা ক্লিনিক গুলো যেন মৃত্যু ফাঁদ হয়ে উঠেছে। চিকিৎসা সেবা কে কেবলমাত্র মুনাফা আয়ের সহজ পথ হিসেবে বেছে নিয়েছে এ জেলার অধিকাংশ প্রাইভেট ক্লিনিক।একের পর এক মৃত্যুর ঘটনা ঘটলেও এসব ক্লিনিক বন্ধে দায় নিচ্ছে না কেউ। ফলে প্রসূতি মৃত্যু মিছিল মায়ের হাতের ছোঁয়া না পাওয়া শিশুর সংখ্যা বেড়েই চলেছে। কুষ্টিয়া সিভিল সার্জন কার্যালয়ের পরিসংখ্যান সূত্রে জানা যায়, চলতি বছরের প্রথম ৫ মাসে ৬৩১২টি জীবিত শিশু জন্মদিতে গিয়ে প্রসবকালীন সময়ে ৭জন মায়ের মৃত্যু হয়েছে। ২০২২ সালে মৃত্যুর সংখ্যা ছিল ২৭ জন।২০২১ সালে প্রসবকালীন সময়ে মা মৃত্যুর সংখ্যা ছিলো ২৫জন। এসব মৃত্যুর ঘটনার ৯০% ভাগই ছিলো প্রাইভেট ক্লিনিকগুলিতে ভুল চিকিৎসা বা অবহেলা জনিত কারনে ঘটেছে বলে ক্ষতিগ্রস্ত পরিবার গুলির অভিযোগ।
২০২০ সাল থেকে চলতি বছরের জুন মাসের ৩  তারিখ পর্যন্ত বিভিন্ন ক্লিনিকে ৮ জন প্রসূতি মায়ের  মৃত্যুর ঘটনা পর্যালোচনা করে এ জেলার স্বাস্থ্য সেবার ভয়াবহ চিত্র পাওয়া গেছে। এর মধ্যে ৭জন মা সিজারের সময় সন্তান রেখে মারা গেছেন আর অপরজন সন্তানসহ মৃত্যুর কোলে ঢোলে পড়েছেন।অনুসন্ধানে জানা গেছে, চলতি বছরের  ৩ জুন কুষ্টিয়া মিরপুর উপজেলার পোড়াদহ নাহার ক্লিনিকে সিজার অপারেশন করতে গিয়ে শিল্পী খাতুন (২২) নামের একজন  প্রসূতি মায়ের মৃত্যু হয়েছে। সিজার অপারেশনের মাধ্যমে একটি পুত্র সন্তান লাভ করার পর প্রচুর রক্ত ক্ষরণে রাতেই মৃত্যুর কোলে ঢোলে পড়ে শিল্পী খাতুন। নাহার(প্রাঃ) ক্লিনিকে সার্বক্ষনিক ডাক্তার হিসেবে কাজ করে থাকেন ২০১৫ সালে কুষ্টিয়ার মিরপুর থেকে ২হাজার পিচ ইয়াবাসহ আটক ডাক্তার আসাদুজ্জামান ফিরোজ। 
২০২২ সালের ৩১ ডিসেম্বর কুষ্টিয়া ইসলামিয়া  এন্ড ডায়াগনস্টিক হাসপাতালে ওয়ার্ডবয় এবং আয়া মিলে সন্তান ভূমিষ্ট করানোর সময় সন্তানসহ ওটিতেই মারা যান রিমা খাতুন নামক একজন প্রসূতি। সে বটতৈল এলাকার জহুরুল ইসলামের স্ত্রী। ২০২২সালের ২ মার্চ বিকেলে ভেড়ামারার সাদিয়া ক্লিনিকে নাসিমা খাতুন নামক একজন প্রসূতি সিজার অপারেশনের মাধ্যমে সন্তান লাভ করার কয়েক ঘন্টার মধ্যে  মৃত্যুবরণ করেন। 
২০২১ সালের ৯ জুন নাসরিন নাহার রিপা(২০) নামক একজন প্রসূতি কুষ্টিয়া সনো হাসপাতালে সিজারের মাধ্যমে একটি পুত্র সন্তান লাভ করেন।এরপরই অবস্থার অবনতি হতে থাকলে ১৩ই জুন সনো হাসপাতালেই মৃত্যুর কোলে ঢোলে পড়ে। ২০২১সালের ১আক্টোবর ইবি থানার সেবা ক্লিনিকে তুলিকা বেগম(২৫) নামের একজন প্রসূতি সিজারের মাধ্যমে একটি কন্যা সন্তান লাভ করে।অপারেশনের সময় পেটের নাড়ী কেটে যাওয়ায় তার মৃত্যু হয়। 
২০২০ সালের ১ আগষ্ট কুমারখালির বাঁশগ্রামের আকবরের স্ত্রী তানিয়া খাতুন (২২) কুষ্টিয়া ইসলামিয়া হাসপাতালে সিজার অপারেশনের মাধ্যমে একটি পুত্র সন্তান লাভ করে। ঞ্জান না ফেরায় অপারেশনের টেবিলেই মৃত্যুর কোলে ঢোলে পড়ে। ২০২০ সালের ১ সেপ্টেম্বর কুমারখালি উপজেলার সোন্দাহ গ্রামের শাপলা খাতুন (২২) শহরের কাষ্টমস মোড়ের শাপলা ক্লিনিকে ভর্তি হয়ে সিজারের মাধ্যমে একটি পুত্র সন্তান লাভ করার পর অতিরিক্ত রক্তক্ষরণে তার মৃত্যু হয়। 
২০২০ সালের ৯ মার্চ দুপুর ২টায় কুষ্টিয়া শহরের পেয়ারাতলায় পদ্মা প্রাইভেট হাসপাতালে ভূল সিজার অপারেশনে নব জাতক পুত্র সন্তান রেখে প্রসূতি ফাতেমা খাতুন মৃত্যুর কোলে ঢলে পড়ে। সে কুমারখালী উপজেলার সাওতা গ্রামের আব্দুর রশিদের স্ত্রী। ফাতেমা খাতুনের সিজার একজন মেডিক্যাল এ্যাসিসটেন্ট করেছে বলে অভিযোগ আছে।
কুষ্টিয়ার সিভিল সার্জন ডঃ এইচ এম আনোয়ারুল ইসলাম বলেন, কুষ্টিয়ায় বেসরকারী ক্লিনিকে প্রসূতি মৃত্যুর ঘটনা ঘটেছে। তাৎক্ষণিক ভাবে আমরা ব্যবস্হা গ্রহন করেছি। নাহার ক্লিনিকের অনুমোদন নেই। প্রসূতি মৃত্যুর ঘটনার পর আমরা বন্ধ করে দিয়েছি। স্বাস্থ্য বিভাগের অনুমোদন ছাড়া ক্লিনিক কিভাবে চলে এমন প্রশ্নের সদুত্তর পাওয়া যায় নি।
 শিল্পী খাতুনের নবজাতক নাসরিন নাহার রিপার নবজাতক তানিয়া খাতুনের নবজাতক