কুষ্টিয়ায় তিনজনকে পুড়িয়ে হত্যা মামলায় আরও ৪০ আসামি কারাগারে

কুষ্টিয়ায় তিনজনকে পুড়িয়ে হত্যা মামলায় আরও ৪০ আসামি কারাগারে

প্রথম নিউজ, কুষ্টিয়া : কুষ্টিয়ার দৌলতপুরে জমিজমা সংক্রান্ত বিরোধ এবং আধিপত্য বিস্তারকে কেন্দ্র তিনজনকে পুড়িয়ে হত্যা মামলার আরও ৪০ আসামির জামিন নামঞ্জুর করে কারাগারে পাঠিয়েছেন আদালত।

বুধবার (২১ জুন) বিকেলে কুষ্টিয়ার জেলা ও দায়রা জজ আদালতের বিচারক রুহুল আমিন তাদেরকে কারাগারে পাঠানোর নির্দেশ দেন। আদালতের সরকারি কৌঁসুলি (পিপি) অনুপ কুমার নন্দী ঢাকা পোস্টকে বিষয়টি নিশ্চিত করেছেন।

কারাগারে প্রেরণকৃত ৪০ আসামি হলেন- দৌলতপুর উপজেলার চিলমারী গ্রামের শাহাদত খাঁ, আশিক শিকদার, জলিল খাঁ, হালিম শিকদার, মোশাররফ শেখ, শুকুর মোল্লা, রাজ্জাক শিকদার, আব্দুর রহিম শিকদার, মোমিন খাঁ, আলমগীর শিকদার, জুরান খাঁ, ওমর আলী, মেহের আলী, মঙ্গল মোল্লা, বাক্কার শিকদার, বছির খাঁ, আকলাম খাঁ, বিল্লাল শিকদার, রুবেল খাঁ, শিপন শিকদার, নুর আলম শিকদার, বাবলু খাঁ, সিদ্দিক খাঁ, আবু তালেব খাঁ, রনি খাঁ, সেকেন্দার শিকদার, বাধন খাঁ, জলিল খাঁ (২), দীন মোহাম্মদ, আরিফ, সানা খাঁ, সামছুল খাঁ, নাসির শেখ, সিদ্দিক আলম শিকদার, মেহেদী খাঁ, রবিউল খাঁ, জনি খাঁ, আলী আকবর, হাদী খাঁ ও সজীব খাঁ।

এর আগে রোববার (১৮ জুন) দুপুরে এ মামলায় আরও ১৯ আসামির জামিন নামঞ্জুর করে কারাগারে পাঠিয়েছেন আদালত।

তারা হলেন- দৌলতপুর উপজেলার চিলমারী গ্রামের হোসেন খাঁ, বাবু, ছাহের শেখ, ইমদাদ, আকতার, কালাম, সজল, মোক্তার, বাবলু, মনির, ইকবাল, বিপ্লব, আমজাদ, নাজমুল, কুদ্দুস, ছানোয়ার, নান্নু, রাজ্জাক ও নজরুল ইসলাম।


এর আগে উক্ত মামলায় নারী আসামি শিখা বাদে অপর আসামিরা হাইকোর্ট থেকে ৬ সপ্তাহের জামিনে ছিলেন। পরে জামিনের মেয়াদ শেষ হলে পুনরায় জামিনের জন্য আবেদন করলে কুষ্টিয়ার জেলা ও দায়রা জজ আদালতের বিচারক জামিন নামঞ্জুর করে এই আদেশ দেন।

জানা গেছে, গত ২৭ এপ্রিল দুপুর থেকে বিকেল পর্যন্ত উপজেলার চিলমারী ইউনিয়নের চিলমারী বাজারপাড়ায় জমি সংক্রান্ত বিরোধ, পূর্ব শত্রুতা ও আধিপত্য বিস্তারকে কেন্দ্র করে মণ্ডল গ্রুপের লোকজনের ওপর হামলা করে খাঁ ও শিকদার গ্রুপের লোকজন। ওই সময় মণ্ডল গ্রুপের লোকজনদের পাঁচটি বাড়িতে পেট্রোল ঢেলে আগুন দেওয়া হয়। আগুনে অগ্নিদগ্ধ হয়ে দিনু মণ্ডল, ফারুক ও আকতার মণ্ডল নামে তিনজন মারা যান। এ ঘটনায় গুরুতর জখম ও দগ্ধ হয়েছেন প্রায় ২৫ জন। হামলার খবর পেয়ে দৌলতপুর থানা পুলিশ ঘটনাস্থলে উপস্থিত হয়ে পরিস্থিতি নিয়ন্ত্রণে আনে।

এ ঘটনার পরের দিন ২৮ এপ্রিল মোজাম মণ্ডল বাদী হয়ে ৭৩ জনের নাম উল্লেখসহ ১০০-১২০ জনকে আসামি করে দৌলতপুর থানায় মামলা দায়ের করেন।

নিহতদের পরিবার সূত্রে জানা যায়, রাস্তার জমি নিয়ে বিরোধের জেরে পূর্বপরিকল্পিতভাবে খাঁ ও শিকদার গ্রুপের শতাধিক লোকজন নির্মমভাবে মণ্ডল বংশের লোকজনদের বসতঘরে পেট্রোল ঢেলে আগুন ধরিয়ে দেয় এবং অস্ত্রশস্ত্র নিয়ে হামলা করে। এতে মণ্ডল বংশের প্রায় ২৫ জন গুরুতর আহত হন। তাদের দেওয়া আগুনে অগ্নিদগ্ধ হয়ে চিকিৎসাধীন অবস্থায় ফারুক, আকতার মণ্ডল ও দিনু মণ্ডল ঢাকায় মারা যান।

নিহত দিনু মণ্ডলের ভাই মাহবুব মণ্ডল ঢাকা পোস্টকে বলেন, আসামিপক্ষের লোকজন আমাদের ক্ষতি করার চেষ্টা করছে, বিভিন্নভাবে হুমকি-ধমকি দিচ্ছে। হত্যাকারীদের দৃষ্টান্তমূলক শাস্তির দাবি জানাচ্ছি।

এ বিষয়ে মামলার বাদী মোজাম মণ্ডল বলেন, আমি আইনের প্রতি শ্রদ্ধাশীল। তিনজনকে নির্মমভাবে পুড়িয়ে হত্যাকাণ্ডের ঘটনায় জড়িতদের দৃষ্টান্তমূলক শাস্তি চাই। কিন্তু মামলার তদন্তকারী কর্মকর্তা দায়সারাভাবে তদন্ত করছে। আসামিদের সঙ্গে যোগসাজশে মামলার তদন্ত কার্যক্রম ভিন্নখাতে প্রবাহিত হচ্ছে। সুষ্ঠু ও নিরপেক্ষ তদন্তের স্বার্থে মামলাটি পিবিআইতে স্থানান্তরিত করার দাবি জানাচ্ছি।