কোম্পানীগঞ্জে বিএনপির ৩৪৩ নেতাকর্মীর বিরুদ্ধে মামলা
প্রথম নিউজ, নোয়াখালী : নোয়াখালীর কোম্পানীগঞ্জে বিএনপির দুই পক্ষ ও আওয়ামী লীগের মধ্যে সংঘর্ষের ঘটনায় বিএনপি ও সহযোগী সংগঠনের ৩৪৩ নেতাকর্মীর বিরুদ্ধে স্বেচ্ছাসেবকলীগ নেতার ওপর হামলার অভিযোগে মামলা হয়েছে। মামলায় বিএনপি ও সহযোগী সংগঠনের ৯৩ নেতাকর্মীর নাম উল্লেখ করে অজ্ঞাত পরিচয়ে আরও ২৫০ জনকে আসামি করা হয়েছে। শুক্রবার (১৬ জুন) রাতে ঢাকা পোস্টকে বিষয়টি নিশ্চিত করেন কোম্পানীগঞ্জ থানা পুলিশের ভারপ্রাপ্ত কর্মকর্তা (ওসি) মো. সাদেকুর রহমান। এর আগে গতকাল বৃহস্পতিবার (১৫ জুন) রাতে হামলার শিকার উপজেলা স্বেচ্ছাসেবকলীগের যুগ্ম-সাধারণ সম্পাদক মো. আলমগীর হোসেন বাদী হয়ে কোম্পানীগঞ্জ থানায় মামলাটি করেন।
মামলায় এজাহার সূত্রে জানা যায়, কোম্পানীগঞ্জ উপজেলায় বিএনপির হাসনা মওদুদ ও ফখরুল গ্রুপ আলাদাভাবে বিভক্ত হয়ে নিজেদের কর্তৃত্ব প্রতিষ্ঠার জন্য গত কিছু দিন ধরে দফায় দফায় মারামারিতে লিপ্ত হয়ে কোম্পানীগঞ্জ এলাকায় ভীতিকর পরিবেশ সৃষ্টি করছেন। বৃহস্পতিবার বিকেল ৫টার দিকে স্বেচ্ছাসেবকলীগ নেতা আলমগীর হোসেন বাড়ি থেকে ওষুধ কিনতে বসুরহাট বাজারে যান। বাড়ি থেকে বাজারে যাওয়ার পথে বিএনপির নেতাকর্মীরা বহুদিন আওয়ামী লীগের লোককে পেটানো হয় না বলে তার ওপর হামলা চালায়। ওই সময় হামলাকারীরা তাকে লোহার রড, হকিস্টিক ও লাঠিসোঠা দিয়ে পিটিয়ে আহত করে। তার পকেটে থাকা ২৩ হাজার ৫০০ টাকা ছিনিয়ে নেয়। একপর্যায়ে স্বেচ্ছাসেবকলীগ নেতা আলমগীরের চিৎকার শুনে স্থানীয় লোকজন এগিয়ে এলে বিএনপি নেতাকর্মীরা কয়েক রাউন্ড ফাঁকা গুলি ছোঁড়ে ও ককটেল বিস্ফোরণ করে আতঙ্ক সৃষ্টি করে পালিয়ে যায়।
কোম্পানীগঞ্জ উপজেলা স্বেচ্ছাসেবকলীগের সাধারণ সম্পাদক সাইফুল হাসান রনি বলেন, বিএনপির দুই গ্রুপের মধ্যে সংঘর্ষের ঘটনা ঘটে। পরে ওই সংঘর্ষের জেরে উপজেলা স্বেচ্ছাসেবক লীগের যুগ্ম-সাধারণ সম্পাদক আলমগীর হোসেনের ওপর বিএনপির নেতা-কর্মীরা হামলা চালায়। বিএনপির দুই গ্রুপের মধ্যে সংঘর্ষের জেরে বিএনপির নেতাকর্মীরা তাদের নেতাদের ওপর হামলা চালায়। উপজেলা বিএনপির আহ্বায়ক নুরুল আলম শিকদার বলেন, আমাদের নেতাকর্মীদের অতর্কিতে হামলা করে আহত করে। এরপরও আওয়ামী লীগ আমাদের নেতাকর্মীদের বিরুদ্ধে মিথ্যা মামলা করেছে। আমরা মিথ্যা মামলায় নেতাকর্মীদের গ্রেপ্তার ও হয়রানি না করা এবং এ মামলা প্রত্যাহারের দাবি জানাচ্ছি।
কোম্পানীগঞ্জ থানা পুলিশের ভারপ্রাপ্ত কর্মকর্তা (ওসি) মো. সাদেকুর রহমান বলেন, বৃহস্পতিবার রাতে মো. আলমগীর হোসেন বাদী হয়ে ৯৩ জনের নাম উল্লেখ করে এ মামলা করেন। তদন্তপূর্বক পরবর্তীতে আইনানুগ ব্যবস্থা গ্রহণ করা হবে। এদিকে সংঘর্ষের ঘটনায় ৮ বিএনপি নেতাকর্মীর আহত হওয়ার ঘটনায় বিএনপির মহাসচিব মির্জা ফখরুল ইসলাম আলমগীর নিন্দা ও প্রতিবাদ জানিয়ে একটি প্রেস বিজ্ঞপ্তি দেন। মির্জা ফখরুলের প্রেস বিজ্ঞপ্তিটিকে মিথ্যা, বানোয়াট তথ্যের ভিত্তিতে দেওয়া হয়েছে বলে পাল্টা প্রতিবাদে একটি প্রেস বিজ্ঞপ্তি দিয়েছে কোম্পানীগঞ্জ উপজেলা আওয়ামী লীগ।
বিবৃতিতে বলা হয়, গত ১৫ জুন ২০২৩ তারিখ বিএনপি মহাসচিব মির্জা ফখরুল ইসলাম আলমগীরের দেওয়া একটি প্রেস বিজ্ঞপ্তি কোম্পানীগঞ্জ উপজেলা আওয়ামী লীগের নজরে আসে। উক্ত প্রেস বিজ্ঞপ্তিতে মির্জা ফখরুল ইসলাম আলমগীর দাবি করেন, কোম্পানীগঞ্জে আওয়ামী সন্ত্রাসী কর্তৃক বিএনপির কতিপয় নেতাকে হমলা করা হয়। উক্ত তথ্য সম্পূর্ণ মিথ্যা ও বানোয়াট।
বিবৃতিতে আরও বলা হয়, প্রকৃত ঘটনা হলো এই যে, কোম্পানীগঞ্জে বিএনপির দুইটি পক্ষ হাসনা মওদুদ ও ফখরুল ইসলাম গ্রুফের মধ্যে চট্টগ্রামের একটি সমাবেশ নিয়ে গত কয়েকদিন যাবৎ মারামারি হানাহানি চলতেছে। তাদের দুটি গ্রুফের বিরাজমান মারামারি হানাহানি চলাকালীন ১৫ জুন ২০২৩ তারিখে বসুরহাট পৌরসভা ৭ নং ওয়ার্ডে কোম্পানীগঞ্জ উপজেলা স্বেচ্ছাসেবকলীগ নেতা আলমগীর তার বাড়ি থেকে বের হয়ে বাজারের উদ্দেশ্যে আসার সময় অতর্কিতভাবে বিএনপির উভয় গ্রুপ আলমগীরের উপর হামলা চালায়। বর্তমানে সে বসুরহাটে একটি হাসপাতালে মৃত্যুর সঙ্গে পাঞ্জা লড়ছে।" অথচ এই ঘটনাটিকে বিকৃত করে বিএনপি মহাসচিব আলমগীর মিথ্যা ও বানোয়াট তথ্য দিয়ে প্রেস বিজ্ঞপ্তি প্রচার করে। বিবৃতির সত্যতা নিশ্চিত করে মির্জা কাদের বলেন, বিএনপি একটি মিথ্যাবাদীর দল। আমরা কোম্পানীগঞ্জ উপজেলা আওয়ামী লীগ কোনো বিএনপি নেতার উপর হামলা করিনি। বিএনপির দুইটি পক্ষ নিজেদের মধ্যে সংঘর্ষ করে আহত হয়েছে। কিন্তু মির্জা ফখরুল ইসলাম না জেনে মিথ্যাচার করছেন।
প্রসঙ্গত, গত ১৪ জুন চট্টগ্রামের তারুণ্যের সমাবেশকে কেন্দ্র করে কোম্পানীগঞ্জ উপজেলা বিএনপির আহ্বায়ক নুরুল আলম শিকদার ও সদস্য সচিব মাহমুদুর রহমান রিপনের সমর্থকদের মধ্যে কথা কাটাকাটি হয়। এরই সূত্র ধরে বৃহস্পতিবার (১৫ জুন) সন্ধ্যা ৬টার দিকে সরকারি মুজিব কলেজ গেট এলাকায় বিএনপির দুই পক্ষের মধ্যে সংঘর্ষে পৌরসভা যুবদলের আহ্বায়ক ওবায়দুল হক রাফেল, ছাত্রদল নেতা সাইমুন আহত হন। এই ঘটনার পর আওয়ামী লীগের নেতাকর্মীরা বসুরহাট বাজারে শোডাউন করে। সন্ধ্যায় সাড়ে ৬টার দিকে থানার সামনে প্রধান সড়কে বিএনপি ও আওয়ামী লীগের নেতাকর্মীরা মুখোমুখি হলে উভয় পক্ষের মধ্যে সংঘর্ষ বাধে। এতে উপজেলা বিএনপির সদস্য সচিব মাহমুদুর রহমান রিপন ও উপজেলা স্বেচ্ছাসেবক লীগের যুগ্ম সাধারণ সম্পাদক আলমগীর আহত হন। আহত রাফেলকে চিকিৎসার জন্য ঢাকা মেডিকেল কলেজ হাসপাতাল, রিপনকে নোয়াখালী জেনারেল হাসপাতাল ও বাকি দুইজনকে কোম্পানীগঞ্জ উপজেলা স্বাস্থ্য কমপ্লেক্সে ভর্তি করা হয়েছে।
এ বিষয়ে কোম্পানীগঞ্জ উপজেলা আওয়ামী লীগের সভাপতি ও বসুরহাট পৌরসভার মেয়র আবদুল কাদের মির্জা বলেন, বিএনপির দুই গ্রুপের দলীয় কোন্দলে একে অপরের ওপর হামলা করে। পরে তারা অতর্কিত ছাত্রলীগ ও স্বেচ্ছাসেবক লীগের নেতাকর্মীদের ওপর আক্রমণ করে। এতে আমার দলের কয়েকজন আহত হয়েছেন। এ ব্যাপারে মামলার প্রস্তুতি নেওয়া হচ্ছে।