ঐক্যচেষ্টার মধ্যেই আবার ভাঙছে জাতীয় পার্টি!

ঐক্যচেষ্টার মধ্যেই আবার ভাঙছে জাতীয় পার্টি!
ঐক্যচেষ্টার মধ্যেই আবার ভাঙছে জাতীয় পার্টি!

প্রথম নিউজ, অনলাইন: ফের উত্তপ্ত হয়ে উঠেছে জাতীয় পার্টির (জাপা) রাজনীতি। থাইল্যান্ডে চিকিৎসা শেষে নভেম্বরে দেশে ফেরার পর দলটির প্রধান পৃষ্ঠপোষক ও সংসদে বিরোধীদলীয় নেতা রওশন এরশাদের ঐক্যের ডাক, হোটেল ওয়েস্টিনে দেবর-ভাবির প্রাতরাশ কিংবা প্রধানমন্ত্রীর আহ্বান, কোনো কিছুই এখনো এক করতে পারেনি রওশন ও জাপা চেয়ারম্যান গোলাম মোহাম্মদ (জিএম) কাদেরকে । দলটিতে ‘রওশনপন্থী’ ও ‘কাদেরপন্থী’ গ্রুপের কোন্দল স্পষ্ট হয়েছে আরো। জাগো নিউজ। আদালতের আদেশে দায়িত্ব পালন থেকে বিরত রয়েছেন জিএম কাদের। এরই মধ্যে রওশনকে ভারপ্রাপ্ত চেয়ারম্যান ঘোষণা করে তা আবার স্থগিতও করা হয়েছে। নেতাকর্মীরা বলছেন, দুই পক্ষের কিছু বিতর্কিত নেতার কারণে দলটিতে ভাঙনের আশঙ্কা বাড়ছে। যারা দেবর-ভাবির সম্পর্ক জোড়া লাগাতে চান না, তারা ঐক্য প্রক্রিয়াকে বাধাগ্রস্ত করছেন। এমন অবস্থায় জনসমর্থন হারাচ্ছে দলটি। ঘরে-বাইরে, রাজনীতির অঙ্গনে জোগাচ্ছে হাসির খোরাক।

গত মঙ্গলবার দুপুরে প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনার সাথে সাক্ষাৎ হয় রওশন এরশাদ ও জিএম কাদেরের। প্রধানমন্ত্রীর হস্তক্ষেপে দেবর-ভাবির মিটমাট হয়ে গেছে বলে গুঞ্জন ছড়ায়। বুধবার জাপা চেয়ারম্যান হিসেবে জিএম কাদেরের দায়িত্ব পালন-সংক্রান্ত হাইকোর্টের আদেশের বিরুদ্ধে করা আবেদন নিষ্পত্তি করে দেন আপিল বিভাগ। এতে চেয়ারম্যান হিসেবে সাংগঠনিক কাজ করতে বাধা থেকেই যায় কাদেরের। এরপর ওই রাতেই রওশন এরশাদকে জাতীয় পার্টির (জাপা) ভারপ্রাপ্ত চেয়ারম্যান ঘোষণা করে রওশনপন্থী কিছু নেতা। ঘোষণার দেড় ঘণ্টা পর তা আবার স্থগিতও করা হয়।

ফেসবুক ও হোয়াটস অ্যাপ গ্রুপে জাতীয় পার্টি ও বিরোধী দলীয় নেতার মুখপাত্র কাজী মো: মামুনুর রশীদ এবং বিরোধী দলীয় নেতার প্রেস উইংয়ের পক্ষে কাজী লুৎফুল কবীরের বরাত দিয়ে বলা হয়, দলীয় কার্যক্রম পরিচালনায় আইনি জটিলতা নিরসন না হওয়া পর্যন্ত রওশন এরশাদ জাতীয় পার্টির ভারপ্রাপ্ত চেয়ারম্যানের দায়িত্ব পালন করবেন। সংখ্যাগরিষ্ঠ কো-চেয়ারম্যানদের মতামত ও সিদ্ধান্ত মোতাবেক এ দায়িত্ব দেয়া হয়। বিজ্ঞপ্তিতে ছয়জন নেতার নাম উল্লেখ করা হয়। অন্য একটি মেসেজে জানানো হয়, সভায় উপস্থিত নেতাদের স্বাক্ষরপত্রসহ বিস্তারিত আসছে। কিন্তু রাত সাড়ে ১০টায় ভিন্ন মেসেজে বলা হয়, রওশন এরশাদকে দলের ভারপ্রাপ্ত চেয়ারম্যানের দায়িত্ব দেয়ার আদেশ স্থগিত করা হয়েছে।

আবার রাত ১০টা ৩৬ মিনিটে ‘ডিপিএস টু এইচএম এরশাদ (অনলাইন)’ নামক চ্যাটগ্রুপে জাপার দফতর সম্পাদক মাহমুদ আলম জানান, রওশন এরশাদের ভারপ্রাপ্ত চেয়ারম্যান হিসেবে দায়িত্ব পালনের কোনো এখতিয়ার নেই। দলের গঠনতন্ত্রের ধারা উল্লেখ করে তিনি বলেন, অদ্য বিভিন্ন সংবাদমাধ্যমে জাতীয় পার্টির ভারপ্রাপ্ত চেয়ারম্যান হিসেবে রওশন এরশাদকে নিয়োগের যে বিভ্রান্তিকর খবর প্রকাশিত হয়েছে, তা পার্টির গঠনতন্ত্রের ধারা ২০, উপধারা ২ (খ) এর পরিপন্থী। তাতে আরো বলা হয়, জাতীয় পার্টির চেয়ারম্যান পদের উপর কোনো আদালত কর্তৃক কোনো নিষেধাজ্ঞা জারি হয় নাই। অস্থায়ীভাবে চেয়ারম্যানের গঠনতান্ত্রিক দায়িত্ব পালনে নিষেধাজ্ঞা আছে। উপরোক্ত কারণে জাতীয় পার্টির চেয়ারম্যান হিসেবে গোলাম মোহাম্মদ কাদের স্বপদে বহাল আছেন। বিধায় অন্য কারো ভারপ্রাপ্ত চেয়ারম্যান হওয়ার কোনো এখতিয়ার বা সুযোগ নেই। এ ব্যাপারে জাতীয় পার্টির সর্বস্তরের নেতাকর্মীদের বিভ্রান্ত না হওয়ার আহ্বান জানানো হলো।

এ বিষয়ে কথা হয় জাপার মহাসচিব মো. মুজিবুল হক চুন্নু বলেন, ওটা কি আছে (রওশন এরশাদের ভারপ্রাপ্ত হওয়ার সিদ্ধান্ত)? এখন তো নাই। হবে তো অনেক কিছুই বলা হয়। এমন কোনো সিদ্ধান্ত হয় নাই। কো-চেয়ারম্যানদের কাছে জানতে চান তারা সিদ্ধান্ত নিয়েছেন কি না। তবে আমি এতটুকু জানি, কো-চেয়ারম্যান বা আরো কেউ চেয়ারম্যানের দায়িত্ব দেয়ার ক্ষমতা রাখেন না। ইভেন প্রেসিডিয়ামও না। গঠনতন্ত্র অনুযায়ী, অসুস্থতা বা অন্য কারণে এই দায়িত্ব শুধু চেয়ারম্যানই সিনিয়র কো-চেয়ারম্যান, কো-চেয়ারম্যান অথবা প্রেসিডিয়ামের মধ্যে কাউকে ভারপ্রাপ্ত চেয়ারম্যানের দায়িত্ব দিতে পারেন। এর বাইরে কেউ দেয়ার এখতিয়ার নাই। আমার দলে কেউ এটা করছে বলে আমার জানা নেই। ওই ঘোষণা দেয়া কাজী মামুনুর রশীদ বলেন, সিনিয়র নেতাদের সিদ্ধান্ত অনুযায়ী রওশন এরশাদ ভারপ্রাপ্ত চেয়ারম্যান হবেন। এ ধরনের একটা সিদ্ধান্ত হয়েছিল। পরে আমাদের বিরোধী দলের নেতা জানিয়েছেন, জেলার প্রেসিডেন্ট, সেক্রেটারিদের সাথে কথা বলে সিদ্ধান্ত নেবেন। আলোচনা আরো হবে, সবার সাথে আলোচনা করে তিনি সিদ্ধান্ত নেবেন। অন্তর্বর্তীকালীন নিষেধাজ্ঞা নিষ্পত্তি না হওয়া পর্যন্ত পার্টি কীভাবে চলবে, রওশন এরশাদ সিদ্ধান্ত নেবেন। উনি নিজেও এই দায়িত্বপালন করতে পারেন। আমাদের নেতাকর্মীদের দাবি হলো, রওশন এরশাদ যেন অন্তর্বর্তীকালীন চেয়ারম্যানের দায়িত্ব পালন করেন। উনি জিএম কাদের সাহেবকে বাদ দিতে চান না, তাকে রাখতে চান।

তিনি বলেন, রওশন এরশাদের উপস্থিতিতে, সিনিয়র যারা ছিলেন কো-চেয়ারম্যান, একজন প্রেসিডিয়াম মেম্বারও ছিলেন। তারা উনাকে অনুরোধ করেছেন দায়িত্ব নিতে। এজন্য মিডিয়ায় সেটা এসেছে। প্রেস উইং-এ আসার পর উনি সেটা বন্ধ করার কথা বলেছেন। অন্যদিকে চুন্নু বলেন, আমরা খুব ভালো অবস্থানে আছি। আইনি জটিলতা দ্রুতই সমাধান হবে। মামলা কিছুই না। মামলা টিকবেও না একদম, আমি গ্যারান্টি দিয়ে বলছি। একটু সময় লাগবে। এতে চেয়ারম্যানের কোনো কাজ আটকে থাকবে না। উপ-নির্বাচন, রংপুরের মেয়র নির্বাচন এসবে চেয়ারম্যান বা মহাসচিব দেয়া আছে। চেয়ারম্যানের অনুপস্থিতিতে দলে প্রভাব পড়বে। ঐক্যে বাধা দিচ্ছেন কারা
মঙ্গলবার প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনার সাথে রওশন এরশাদসহ জিএম কাদেরের সাক্ষাতে জাপার যুগ্ম মহাসচিব ও এরশাদপুত্র সাদ এরশাদ উপস্থিত ছিলেন। জাতীয় নির্বাচনকে সামনে রেখে বিভেদ ভুলে দেবর-ভাবিকে একসঙ্গে কাজ করার আহ্বান জানান প্রধানমন্ত্রী। তবে দলটির নেতাকর্মীরা বলছেন, রওশন ও জিএম কাদেরের ঘনিষ্ঠ কিছু নেতা ঐক্যে প্রধান বাধা। নাম প্রকাশে অনিচ্ছুক এক শীর্ষ নেতা জাপা মহাসচিবকে ইঙ্গিত করে বলেন, উনাকে রওশন ম্যাডাম নিজ হাতে নেতা বানাইছেন। উনি বিএনপি থেকেও নমিনেশন চেয়েছিলেন। অন্যদিকে, জিএম কাদেরপন্থীরা মনে করেন, জাপা থেকে বহিষ্কৃত নেতারা রওশন এরশাদের কান ভারি করে দূরত্ব তৈরি করছে।

রওশনপন্থী হিসেবে পরিচিত নেতা ইকবাল হোসেন রাজু বলেন, সিনিয়র কো-চেয়ারম্যান ও প্রেসিডিয়াম সদস্যরাও যোগাযোগ করছে। একমাত্র চুন্নু সাহেব ছাড়া সবাই যোগাযোগ করছে। কেবল তিনিই করেন নাই। প্রধানমন্ত্রীর সাথে বৈঠকে যেটা হয়েছে, তিনি দু’জনকে একত্রে কাজ করতে বলেছেন। মিলেমিশে কাজ করেন, দলে কোনো ভাঙন সৃষ্টি না হয়, সেটা মাথায় রাখেন। সামনে নির্বাচন, নির্বাচনের জন্য প্রস্তুত হতে হবে। এ ধরনের কথা হয়েছে বৈঠকে। এসব নিয়ে চুন্নু বলেন, ঐক্য প্রক্রিয়া বলতে কিছু নাই। ঐক্যে-তো আমরা আছি। যে এটা করছে, সে দলের কেউ না। প্রধান পৃষ্ঠপোষক কিছু বলেনি। কারো স্টেটমেন্টে আমার কিছু যায় আসে না। জিএম কাদের আমার চেয়ারম্যান। আমার দলে কোনো অনৈক্য নাই। কিছু লোক, যারা দলের বিরুদ্ধে কাজ করছে, তাদের বহিষ্কার করে দিয়েছি। তারা কেউ যদি কিছু করে, সেটা দলের কিছু না। পথ হারিয়েছে কাউন্সিল
গত ৩১ আগস্ট হঠাৎ কাউন্সিল করার ঘোষণা আসে রওশনের নামে। নভেম্বরের শেষ সপ্তাহে ওই কাউন্সিল করার কথা ছিল। নানা ঘটনায় শেষ পর্যন্ত জাপার কাউন্সিল স্থগিত করা হয়। যদিও রওশনপন্থীরা জানিয়েছিলেন, প্রস্তুতি নিয়ে তারা কাউন্সিল করবেন। তবে সে ঘোষণা থেকে পিছু হটেছেন তারা।

এ নিয়ে কাজি মামুন বলেন, কাউন্সিল রাজনৈতিক দলের কার্যক্রমের চূড়ান্ত অংশ। সেক্ষেত্রে তারিখ ঘোষণা করেছিলাম, সেটা স্থগিত হয়েছে। আমাদের জেলা কমিটিগুলো পূর্ণাঙ্গ হয়নি। দ্রুত সময়ের মধ্যে সেটা হবে। ইকবাল হোসেন রাজু বলেন, কাউন্সিল হবে। তবে আপাতত তা নিয়ে আমরা চিন্তা করছি না।

Download করুন আমাদের App এবং Subscribe করুন আমাদের YouTube Channel:

news.google.com

https://apps.apple.com/de/app/prothomnews/id1588984606?l=en

https://play.google.com/store/apps/details?id=com.prothomnews

https://youtube.com/prothom