এমপি’র সামনেই আ’লীগ সভাপতিকে লাঞ্ছিতের অভিযোগ, ফাঁকা গুলি আহত ১৩

রোববার বিকালের দিকে উপজেলার মোহাম্মদপুর জনতা বাজার সরকারি প্রাথমিক বিদ্যালয়ের নতুন ভবন উদ্বোধনী অনুষ্ঠানে এ ঘটনা ঘটে।

এমপি’র সামনেই আ’লীগ সভাপতিকে লাঞ্ছিতের অভিযোগ, ফাঁকা গুলি আহত ১৩

প্রথম নিউজ, নোয়াখালী: নোয়াখালী-১ (চাটখিল-সোনাইমুড়ী) আসনের এমপি এইচএম ইব্রাহিমের সামনেই তার অনুসারীদের হাতে উপজেলার মোহাম্মদপুর ইউনিয়ন আওয়ামী লীগের সভাপতি জহির উদ্দিন স্বপন ও উপজেলা আওয়ামী লীগের সাবেক বিজ্ঞান ও প্রযুক্তি বিষয়ক সম্পাদক আনোয়ার হোসেনকে লাঞ্ছিত করার অভিযোগ উঠেছে। পরে ১০ রাউন্ড ফাঁকা গুলি ও টিয়ারশেল নিক্ষেপ করে পুলিশ পরিস্থিতি নিয়ন্ত্রণে আনে। এ সময় ৩ পুলিশ সদস্য আহত হন। রোববার বিকালের দিকে উপজেলার মোহাম্মদপুর জনতা বাজার সরকারি প্রাথমিক বিদ্যালয়ের নতুন ভবন উদ্বোধনী অনুষ্ঠানে এ ঘটনা ঘটে। মোহাম্মদপুর ইউনিয়ন আওয়ামী লীগের সভাপতি জহির উদ্দিন স্বপন অভিযোগ করে বলেন, বিকালে স্থানীয় এমপি এইচএম ইব্রাহিম মোহাম্মদপুর জনতা সরকারি প্রাথমিক বিদ্যালয় উদ্বোধনী অনুষ্ঠানে আসেন। উদ্বোধনী অনুষ্ঠানে আমরা এমপি’র পাশে দাঁড়ানো ছিলাম।

ওই সময় এমপি’র সামনেই তার অনুসারী মোহাম্মদপুর ইউনিয়ন পরিষদ চেয়ারম্যান মো. মেহেদী হাসান বাহলুল উপজেলা আওয়ামী লীগের সাবেক বিজ্ঞান ও প্রযুক্তি বিষয়ক সম্পাদক আনোয়ার হোসেনকে ধাক্কা দেন। বিষয়টি আমি দেখতে পেয়ে চেয়ারম্যানকে প্রবীণ আওয়ামী লীগ নেতাকে ধাক্কা দেয়ার কারণ জিজ্ঞাসা করি এবং তার হাত ধরে ফেলি। এরপর বাহলুল চেয়ারম্যান তার হাত চেপে ধরার কারণ জিজ্ঞাসা করে এমপি’র সামনেই আমাকে লাঞ্ছিত করে। একপর্যায়ে এমপি চলে গেলে স্কুলের প্রধান শিক্ষক আমাদেরকে তার কক্ষে বসায়। সেখানে বাহলুল চেয়ারম্যান অনুসারীরা তার নেতৃত্বে স্কুলে হামলা চালায় এবং আমাদের অশ্লীল ভাষায় গালমন্দ করে। 

খবর পেয়ে চাটখিল থানার ওসি স্কুল থেকে আমাদের উদ্ধার করেন। ওই সময় বাহলুল চেয়ারম্যানের সমর্থকরা পুলিশের গাড়িতে ইটপাটকেল নিক্ষেপ করে। খবর পেয়ে ওসি সেখানে গিয়ে বাহলুল চেয়ারম্যানের সঙ্গে কথা বলে।  একপর্যায়ে সেখানে ওসিকে ধাক্কা দেয় বাহলুল চেয়ারম্যান। এরপর পুলিশ রাবার বুলেট, টিয়ারশেল নিক্ষেপ করে পরিস্থিতি নিয়ন্ত্রণে আনে। চাটখিল উপজেলা আওয়ামী লীগের সাবেক বিজ্ঞান ও প্রযুক্তি বিষয়ক সম্পাদক এডভোকেট আনোয়ার হোসেন অভিযোগ করে বলেন, ইউনিয়ন আওয়ামী লীগের নেতৃবৃন্দ প্রাথমিক বিদ্যালয় উদ্বোধনী অনুষ্ঠানে উপস্থিত ছিল।

উদ্বোধনী অনুষ্ঠানে আমি এমপি’র পাশে দাঁড়ানো ছিলাম। ওখানে বাহলুল চেয়ারম্যান প্রথমে আমাকে ধাক্কা দেয়। এ নিয়ে ইউনিয়ন আওয়ামী লীগের সভাপতি স্বপন প্রতিবাদ করলে চেয়ারম্যানের সঙ্গে বাকবিতণ্ডার ঘটনা ঘটে। ওই ঘটনার জের ধরে বাহলুল চেয়ারম্যান এমপি’র সামনেই তার অনুসারীদের ইউনিয়ন আওয়ামী লীগের সভাপতিকে ধরতে আদেশ দেন। 

পরে আমি এমপি সাহেবকে বলি বাহলুলের লোকজন ইউনিয়ন আওয়ামী লীগের সভাপতির ওপর হামলা করছে। অভিযোগের বিষয়ে জানতে একাধিকবার মোহাম্মদপুর ইউনিয়ন পরিষদ চেয়ারম্যান মো. মেহেদী হাসান বাহলুলের মুঠোফোনে কল করা হলে তার ফোন বন্ধ পাওয়া যায়।  তাই এ বিষয়ে তার কোনো বক্তব্য পাওয়া যায়নি। এ বিষয়ে জানতে চাইলে নোয়াখালী-১ (চাটখিল-সোনাইমুড়ী) আসনের এমপি এইচএম ইব্রাহিম অভিযোগ নাকচ করে দিয়ে বলেন, তার সামনে কোনো ঘটনা ঘটেনি। তিনি চলে আসার পর কি ঘটনা ঘটেছে, ওই বিষয়ে তিনি কিছু জানেন না। অপর এক প্রশ্নের জবাবে এমপি বলেন, স্কুল কমিটি নিয়ে তাদের মধ্যে পূর্ব বিরোধ ছিল।

চাটখিল থানার ভারপ্রাপ্ত কর্মকর্তা (ওসি) মো. গিয়াস উদ্দিন বলেন, খবর পেয়ে পুলিশ ঘটনাস্থলে গিয়ে পরিস্থিতি নিয়ন্ত্রণে আনে। এ সময় তিন পুলিশ সদস্য আহত হন। তবে এমপি’র সামনে কোনো ঘটনা ঘটেনি। অপর এক প্রশ্নের জবাবে ওসি বলেন, বাহলুল চেয়ারম্যানের সঙ্গে তার কোনো অপ্রীতিকর ঘটনা ঘটেনি।  

এদিকে এ ঘটনায় চাটখিল থানার এস আই আল-আমিন বাদী হয়ে ১৫০ জনের নামে মামলা করেছেন। মামলাটির তদন্তকারী কর্মকর্তা টিপু সুলতান বলেন, ঘটনার ভিডিও ফুটেজ দেখে অভিযুক্তদের বিরুদ্ধে ব্যবস্থা নেয়া হবে।