এবার জেগে উঠেছে ছাত্র সমাজ, সফল হবে একদফার আন্দোলন

এবার জেগে উঠেছে ছাত্র সমাজ, সফল হবে একদফার আন্দোলন

প্রথম নিউজ, অনলাইন ডেস্ক: ভোটাধিকার আদায়ের জন্য এবার ছাত্রসমাজ পথে নেমেছে। গতকাল বৃহস্পতিবার বিকেলে রাজধানীর শাহবাগে জাতীয় জাদুঘরের সামনে ‘ভোটাধিকারের দাবিতে ছাত্রসমাজ’–এর ব্যানারে বিভিন্ন বিশ্ববিদ্যালয় ও কলেজের শিক্ষার্থীরা সমাবেশ করেছে।তারা বলেছে,২০১৪ ও ২০১৮ সালের জাতীয় নির্বাচনে মানুষের ভোটাধিকার নিশ্চিত হয়নি।দেশে একটি ভয়ের সংস্কৃতি গড়ে উঠেছে। মানুষ সাহস করে সত্যি কথা বলতে পারছেন না।আসন্ন নির্বাচনে ভোটাধিকার নিয়ে মানুষ শঙ্কিত। ভোটের অধিকার নিশ্চিত করার জন্য ঐক্যবদ্ধভাবে সবাইকে রাজপথে নামতে হবে।

ছাত্রসমাজের সমন্বয়ক ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের ছাত্র আরমানুল হকের সভাপতিত্বে সমাবেশে ভোটাধিকার প্রতিষ্ঠার জন্য নির্দলীয় সরকারের অধীন নির্বাচনের দাবি করে বক্তব্য দেন ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের আকিব হাসান, জাহাঙ্গীরনগর বিশ্ববিদ্যালয়ের আরিফ সোহেল, জাতীয় বিশ্ববিদ্যালয়ের তবিবুর রহমান, বেসরকারি বিশ্ববিদ্যালয়ের তাইরান আবাবিল ও লামিয়া ইসলাম, বরিশাল বিশ্ববিদ্যালয়ের জামান কবির, ঢাকার সাত কলেজের শিক্ষার্থীদের পক্ষে মাহমুদুল হাসান, পলিটেকনিক ইনস্টিটিউটের সাকিবুল ইসলাম প্রমুখ।
সমাবেশে শিক্ষার্থীরা বলেন, বর্তমান সরকারের অধীন অনুষ্ঠিত বিগত দুটি নির্বাচনে তাঁরা ভোট দিতে পারেননি। তাঁদের অনেকে ২০১৮ সালের নির্বাচনে প্রথম ভোটার হয়েছিলেন কিন্তু ভোট দিতে গিয়ে দেখেন, অন্য কেউ তাঁর ভোট দিয়েছেন। এবারও অনেকে নতুন ভোটার হয়েছেন। তাঁরা নিজেদের ভোটের অধিকার ফেরত চান। বিগত দুটি নির্বাচনের অভিজ্ঞতায় দলীয় সরকারের অধীন সুষ্ঠু নির্বাচন সম্ভব নয় মনে করেন তাঁরা। তাই তাঁরা নির্দলীয় সরকারের অধীন নির্বাচন চান।
সমাবেশে ছাত্রদের প্রতি সংহতি জানিয়ে বক্তব্য দিয়েছেন ছাত্রলীগ (জেএসডি) সভাপতি তৌফিক উজ জামান, ছাত্র ফেডারেশনের সভাপতি মশিউর রহমান খান, বিপ্লবী ছাত্র মৈত্রীর সভাপতি সাদেকুল ইসলাম, গণতান্ত্রিক ছাত্র কাউন্সিলের সাধারণ সম্পাদক ফাহিম আহমেদ চৌধুরী, ছাত্র ইউনিয়নের দপ্তর সম্পাদক মঈন আহমেদ।
ছাত্র সমাজের ব্যানারে এমন সমাবেশ বিগত ১৫ বছরের মধ্যে প্রথম চোখে পড়লো। সমাজের সবচেয়ে সচেতন এবং সংগ্রামী ছাত্র সমাজের এই সমাবেশ অত্যন্ত আশা জাগানিয়া একটা দৃশ্য। কেবলমাত্র নিজের ভোট নিজে দেওয়া এবং পছন্দের নেতাকে ভোট দেওয়ার অধিকারের জন্য আজ তারা পথে নেমেছে। এই একটি দাবিত বিএনপিসহ ৩৬টি রাজনৈতিক দল গত ১২টি বছর রাজপথে আন্দোলন করে আসছে। এরসঙ্গে সরকারের লুটপাট,দূর্নীতি, অনিয়ম, অপশাসনের বিরুদ্ধে এবং নিত্যপণ্যের লাগামহীন মূল্যবৃদ্ধির প্রতিবাদে আন্দোলন করছে।প্রথম দিকে এই আন্দোলন কেবল বিএনপির মধ্যে সীমাবদ্ধ ছিল। ধীরে ধীরে সমমনা রাজনৈতিক দল যুক্ত হয়েছে, কিছু কিছু সমাবেশ-মহাসমাবেশে জনগণও নেমেছে।বিভিন্ন শ্রেণি পেশার মানুষ ব্যানার ফেস্টুন হাতে নিয়ে সোচ্চার হয়েছে। সর্বশেষ গত বৃহস্পতিবার শাহবাগে ছাত্র সমাজের ব্যানারে ভোটের অধিকার আদায়ের জন্য মাঠে নেমেছে। দেশের প্রতিটা মানুষ এমনকি আওয়ামী লীগের ৯০ শতাংশ কর্মী সমর্থক মনে করে ২০১৪ সালে মানুষ ভোট দিতে পারে নাই এবং ২০১৮ সালের নির্বাচনে দিনের ভোট আগের রাতেই হয়ে গেছে।
তবে প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা বলেন, জনগণ আওয়ামী লীগ সরকারের সময় ভোট দিতে পারে।তাঁর এই নির্লজ্জ মিথ্যাচার এখন কেউ আর বিশ্বাস করে না। মানুষের ভোটের অধিকার আদায়ের জন্য তিনি আজীবন লড়াই করেছেন বলে দাবি করেন সেই তিনি ২০০৯ সালে ক্ষমতায় এসে সংবিধান থেকে নির্দলীয় তত্ত্বাবধায়ক সরকার বিধান বাতিল করে মানুষের ভোটের অধিকার হরণ করেছেন। তার অধীনে নির্বাচনে কেউ এখন আর ভোট দিতে চায় না। এটা শুধুমাত্র দেশের জনগণ নয় গোটা বিশ্বের মানুষ জানে শেখ হাসিনার অধীনে ভোটদান নিরাপদ নয়। সে কারণে নির্বাচনকালীন তত্ত্বাবধায়ক সরকার প্রতিষ্ঠার দাবি জোরদার হয়েছে। সর্বস্তরের মানুষ এখন এই আন্দোলনে শরিক হচ্ছে। যুক্তরাষ্ট্র, যুক্তরাজ্য, ইউরোপীয় ইউনিয়নসহ গণতন্ত্র মনা দেশগুলো বাংলাদেশে একটি অবাধ সুষ্ঠু নিরপেক্ষ এবং অংশগ্রহণমূলক নির্বাচন দেখতে চায় সেজন্য তারা বিভিন্ন সময় ভিসা নীতি সহ বেশ কিছু পদক্ষেপ গ্রহণ করেছে।
গত মে মাসে যুক্তরাষ্ট্র যখন এই ভিসা নীতি ঘোষণা করে তখন আওয়ামী লীগের পর্যায় থেকে বলা হয়েছিল এটা তাদের জন্য কোন বাধা নয়। কিন্তু প্রশাসনের কতিপয় কর্মকর্তার উপর যখন স্যাংশন আরোপ করা হয়েছে তখন সচিব, অতিরিক্ত সচিব, যুগ্ম সচিব, পুলিশের এসপি ওসি আইজি,এডিজি সবাই এখন ভয়ে কম্পমান। কেননা তাদের পরিবারের সদস্যরা উচ্চ শিক্ষার্থে এবং উন্নত জীবনযাপন করার জন্য আমেরিকা কানাডা এবং ইউরোপের অনেক দেশে স্বর্গীয় আরাম আয়েশে জীবনযাপন করছে। তারা এদেশে টেলিফোন করে চাপ দিচ্ছে তারা যদি নির্বাচনে কোনরকম কারচুপিতে সহায়তা করে তাহলে তাদের ঐসব দেশ থেকে বের করে দেওয়া হবে। এটা যে শুধু কথার কথা নয় সেটা তারা হাড়ে হাড়ে বুঝে। সেজন্য তারা উদ্বিগ্ন -এই বার্তা তারা তাদের অভিভাবকদের কাছে পৌঁছে দিয়েছেন।এর কিছু কিছু প্রভাব চোখে পড়বে সচিবালয় পরিদর্শন করলে।
বিএনপির এবারের আন্দোলনের বিশাল অর্জন হচ্ছে ;অত্যন্ত শান্তিপূর্ণ কর্মসূচি পালনের মধ্য দিয়ে সাধারণ জনগণের অকুন্ঠ ভালোবাসা প্রাপ্তি। শেখ হাসিনার সরকার যে অবৈধ এবং চরম ফ্যাসিবাদী এবং তাঁর অধীনে নিরপেক্ষ সুষ্ঠু নির্বাচন আদৌ সম্ভব নয় সেটা বুঝাতে সক্ষম হয়েছে বিএনপি। এখন বলা যায় রাজনৈতিক দলগুলো ছাড়াও ছাত্র সমাজের এই স্বতঃস্ফূর্ত অংশগ্রহণ বিএনপির চলমান একদফার আন্দোলন সাফল্যের সোনালী সূর্য স্পর্শ করবেই।
লেখক: আমিরুল ইসলাম কাগজী, বিশিষ্ট সাংবাদিক, কলামিষ্ট ও লেথক  (ফেইসবুক ওয়াল থেকে)