এক নজরে প্রধান উপদেষ্টার সপ্তাহব্যাপী কাতার ও ভ্যাটিকান সফর

প্রথম নিউজ, অনলাইন: কাতারের রাজধানী দোহা ও ভ্যাটিকান সিটিতে সপ্তাহব্যাপী সরকারি সফর শেষে সোমবার (২৮ এপ্রিল) ভোর ৩টায় দেশে ফিরেছেন অন্তর্বর্তী সরকারের প্রধান উপদেষ্টা ড. মুহাম্মদ ইউনূস। ২১ এপ্রিল থেকে ২৭ এপ্রিল পর্যন্ত এ দুটি দেশে সফরকালে তিনি বিভিন্ন আন্তর্জাতিক ইভেন্ট ও উচ্চ পর্যায়ের বৈঠকে অংশ নেন।
২১ এপ্রিল সন্ধ্যা ৭টায় শাহজালাল আন্তর্জাতিক বিমানবন্দর থেকে বিমান বাংলাদেশ এয়ারলাইন্সের একটি ফ্লাইটযোগে কাতারের রাজধানীর দোহায় যান প্রধান উপদেষ্টা। দোহা সফরে তার সফরসঙ্গী হিসেবে ছিলেন চারজন নারী ক্রীড়াবিদ।
পরদিন ২২ এপ্রিল আর্থনা সম্মেলন ২০২৫-এ অংশ নেন ড. ইউনূস। সেখানে তিনি সোশ্যাল বিজনেস ফর এ সাসটেইনেবল ওয়ার্ল্ড' শীর্ষক সেশনে মূল বক্তা হিসেবে বক্তব্য রাখেন।
বিশ্ব সম্প্রদায়কে সামাজিক ব্যবসার মাধ্যমে জলবায়ু পরিবর্তন মোকাবিলা এবং দারিদ্র্য দূরীকরণের আহ্বান জানান প্রধান উপদেষ্টা।সম্মেলনে তিনি তরুণদের নেতৃত্ব বিকাশ এবং শূন্য বর্জ্য, শূন্য কার্বন ও শূন্য বেকারত্বের ধারণা বাস্তবায়নের জন্য আন্তর্জাতিক সমন্বয়ের ওপর গুরুত্ব দেন। বক্তব্যকালে তিনি বলেন, যুব সমাজই টেকসই বিশ্বের নেতৃত্ব দেবে। সামাজিক ব্যবসার মাধ্যমে আমরা দারিদ্র্য, কার্বন নিঃসরণ ও বৈষম্য শূন্য করতে পারব।
সম্মেলনের ফাঁকে কাতারের আমির শেখ তামিম বিন হামাদ আল থানির সঙ্গে সৌজন্য সাক্ষাৎ করেন ড. ইউনূস। সাক্ষাৎকালে বাণিজ্য, বিনিয়োগ, নবায়নযোগ্য জ্বালানি ও শিক্ষা সহযোগিতা নিয়ে আলোচনা হয়। এ ব্যাপারে বাংলাদেশ-কাতার যৌথ টাস্কফোর্স গঠনেরও প্রস্তাব দেওয়া হয়।
কাতার ফাউন্ডেশনের সঙ্গে শিক্ষা ও গবেষণায় যৌথ উদ্যোগ নিয়ে আলোচনা হয়। কাতার চেম্বার অব কমার্সের সঙ্গে ক্ষুদ্র ও মাঝারি শিল্প খাতে বিনিয়োগ নিয়ে আলোচনা হয়। তারা বাংলাদেশে পণ্যের বাজার সম্প্রসারণে আগ্রহ দেখান।
২৩ এপ্রিল প্রধান উপদেষ্টা দোহায় প্রবাসী বাংলাদেশি কমিউনিটির নেতাদের সঙ্গে মতবিনিময় করেন। সেখানে তিনি দেশের অন্তর্বর্তীকালীন সরকারের লক্ষ্য ও পরিকল্পনা তুলে ধরেন এবং প্রবাসীদের বিভিন্ন সমস্যা মনোযোগ দিয়ে শোনেন। এ সময় প্রধান উপদেষ্টা বলেন, প্রবাসীরা আমাদের অর্থনীতির অদৃশ্য নায়ক। তাদের সমস্যার সমাধান করা সরকারের অগ্রাধিকার।
২৪ এপ্রিল ড. ইউনূস ভ্যাটিকান সিটিতে পৌঁছান। ২৬ এপ্রিল সেন্ট পিটার্স স্কয়ারে পোপ ফ্রান্সিসের শেষকৃত্যের প্রার্থনায় বিশ্বের শতাধিক দেশের রাষ্ট্রনেতাদের সঙ্গে তিনিও উপস্থিত ছিলেন।
পোপের প্রতি নিজের অনুভূতি প্রকাশ করতে গিয়ে ইউনূস বলেন, পোপ ফ্রান্সিস ছিলেন ধর্ম-বর্ণ নির্বিশেষে সব মানুষের আলোর দিশারী। আমি তাকে একজন আশ্চর্যজনক মানবিক নেতা হিসেবে মনে করি।
এ সময় প্রধান উপদেষ্টা বলেন, আমি ব্যাংকের পরিবর্তনের আহ্বান জানিয়ে চিঠি লিখেছিলাম। পোপ তা লুকাননি, বরং প্রকাশ করেছিলেন। এটা তার উদারতার বড় দৃষ্টান্ত
সফরে ড. ইউনূসের সঙ্গে পৃথক বৈঠক করেন উরুগুয়ের পররাষ্ট্রমন্ত্রী মারিও লুবেতকিন। উভয় নেতা লাতিন আমেরিকা ও এশিয়ার মধ্যে বাণিজ্য সম্প্রসারণ ও যুব বিনিয়োগ বাড়ানোর ওপর গুরুত্ব দেন।
এছাড়াও, ভ্যাটিকানের দুই শীর্ষ ধর্মীয় নেতা কার্ডিনাল সিলভানো মারিয়া তোমাসি ও কার্ডিনাল জ্যাকব কুভাকাদ ড. ইউনূসের সঙ্গে আলাদা বৈঠক করেন। বৈঠকে ভ্যাটিকান ব্যাংকের স্বচ্ছতা, শান্তি প্রচেষ্টা, এবং আন্তঃধর্ম সংলাপের প্রসারে সহযোগিতার নতুন পরিকল্পনা নিয়ে আলোচনা হয়।
কার্ডিনাল কুভাকাদ জানান, আগামী সেপ্টেম্বরে ঢাকায় একটি আন্তর্জাতিক আন্তঃধর্ম সংলাপ অনুষ্ঠানের আয়োজন করবে ক্যাথলিক চার্চ। এতে বাংলাদেশ সরকারের সহযোগিতা প্রত্যাশা করেন তিনি।
পরে রোববার (২৭ এপ্রিল) রাতে রোম ত্যাগ করে ড. মুহাম্মদ ইউনূস সোমবার ভোর ৩টায় ঢাকার হযরত শাহজালাল আন্তর্জাতিক বিমানবন্দরে অবতরণ করেন।