উত্তরা-গুলিস্তান ও যাত্রাবাড়ী রুট গণপরিবহন শূন্য
প্রথম নিউজ, ঢাকা : রাজধানীর আবদুল্লাপুর-উত্তরা থেকে গুলিস্তান যাওয়ার রাস্তায় গণপরিবহন শূন্য। একইভাবে উত্তরা থেকে প্রগতিসরণি-বাড্ডা হয়ে যাত্রাবাড়ী যাওয়ার রাস্তায়ও গণপরিবহন শূন্য। রাজধানীর গুরুত্বপূর্ণ এই দুই রুটে সকাল থেকে গণপরিবহন শূন্য হওয়ায় নগরবাসীকে পড়তে হয়েছে সীমাহীন ভোগান্তিতে।
ঘণ্টার পর ঘণ্টা রাস্তায় দাঁড়িয়ে বাস না পাওয়ায় নির্দিষ্ট গন্তব্যে যেতে পারছেন না যাত্রীরা। ফলে বাধ্য হয়ে যাত্রীদের সিএনজিচালিত অটোরিকশা কিংবা রিকশা করে অতিরিক্ত ভাড়া দিয়ে যেতে হচ্ছে।
রাস্তায় গণপরিবহন না থাকার বিষয়ে হাতেগোনা কয়েকটি বাসের চালক ও হেলপারদের সঙ্গে কথা বলে জানা যায়, রাজনৈতিক কর্মসূচির কারণে উত্তরার দিকে বাস নিয়ে যাওয়া যাচ্ছে না। অন্যদিকে বাস নিয়ে রামপুরা হয়ে গুলিস্তান কিংবা যাত্রাবাড়ী যাওয়া যাচ্ছে না। ফলে রাস্তায় খুব কম গণপরিবহন নেমেছে। এই কারণে রাস্তায় যাত্রী বেশি।
বুধবার (১৯ জুলাই) রাজধানীর কুড়িল থেকে প্রগতি সরণি হয়ে রামপুরা-গুলিস্তান ও যাত্রাবাড়ী রুটে এ চিত্র দেখা গেছে।
দুপুর ২টার দিকে সরেজমিনে দেখা যায়, কুড়িল, বাড্ডা, রামপুরা আবুল হোটেল, শান্তিনগর, কাকরাইল, নাইটিঙ্গেল মোড়, বিজয় নগর পর্যন্ত রাস্তায় কোনো গণপরিবহন নেই। দীর্ঘ অপেক্ষা করেও যাত্রীরা রাস্তায় কোনো বাস পাচ্ছে না। হাতে গোনা যে কয়েকটি বাস চলছে তাতেও যাত্রী ঠাসা, আবার অনেক বাসের গেট বন্ধ। এসব বাসে যাত্রীরা চাইলেই অতিরিক্ত চাপের কারণে উঠতে পারছেন। প্রচণ্ড গরমে রাস্তায় এ গণপরিবহন শূন্যতা যাত্রীদের চরম ভোগান্তিতে ফেলেছে।
রাস্তায় গণপরিবহনের জন্য ভোগান্তিতে পড়া এমনই এক যাত্রী মো. ইসমাইল হোসেন। তিনি শান্তিনগর যাবে বলে দুপুর ১টায় উত্তর বাড্ডায় বাসের জন্য দাঁড়িয়েছেন। কিন্তু বেলা ২টার পরেও বাসের কোনো দেখা পাননি ইসমাইল।
তিনি বলেন, প্রতিদিন আমি এই রুট দিয়ে চলাচল করি। মিনিটে মিনিটে আকাশ, রাইদা, তুরাগ ও ভিক্টর ক্লাসিক পরিবহনের বাস পাওয়া যায়। এসব বাস উত্তরা থেকে গুলিস্তান বা যাত্রাবাড়ী যায়। কিন্তু আজ এক ঘণ্টায়ও একটি বাসের দেখা পাওয়া মুশকিল। মাঝখানে একটি ভিক্টর বাস এসেছিল, কিন্তু ভেতরে এতো যাত্রী দেখে আর ওঠার সাহস হয়নি। এই প্রচণ্ড গরমে রাস্তায় দাঁড়িয়ে থাকতে থাকতে গলা শুকিয়ে যাচ্ছে।
রাজধানীর রামপুরা আবুল হোটেলের সামনে সাইফুল ইসলাম নামে এক যুবক দাঁড়িয়ে আছেন রাইদা বাসের জন্য। তিনি দিয়াবাড়ি যাবেন বলে অপেক্ষা করছেন। আবুল হোটেলের পাশেই বিএনপির পদযাত্রার বিশাল মিছিল। এইপাশ দিয়ে যানচলাচল অনেকটা নাই বললেই চলে মিছিলের কারণে। বাস না পাওয়ায় আক্ষেপ জানিয়ে সাইফুল বলেন, আবুল হোটেলের পাশে মিছিল থাকলেও বাকি রাস্তা ফাঁকা। তার পরেও বাসের কোনো দেখা নাই।
এদিকে রাজনৈতিক কর্মসূচি চললেও রাস্তায় যানজট দেখা যায়নি। উল্টো রাস্তা গাড়ি পরিবহন শূন্য। কুড়িল থেকে পল্টন পর্যন্ত রাস্তায় একদম ফাঁকা বলেই চলে। এই ফাঁকা রাস্তায় দাপিয়ে বেড়াচ্ছে সিএনজিচালিত অটোরিকশা ও রিকশা। গণপরিবহন রাস্তায় না থাকার সুযোগে কয়েকগুণ বেশি ভাড়া চাচ্ছেন তারা।
রামপুরা ব্রিজে যাত্রাবাড়ীগামী বাসের জন্য অপেক্ষমান মো. বকুল বলেন, বাস না পেয়ে সিএনজিত করে যাত্রাবাড়ী যেতে চেয়েছিলাম। কিন্তু স্বাভাবিক ভাড়া থেকে কয়েকগুণ বেশি চাচ্ছে সিএনজি চালকরা। ২০০ টাকা ভাড়া চাচ্ছে ৪০০-৫০০ টাকা।
এদিকে গণপরিবহনের সংকটের বিষয়ে সদরঘাট থেকে উত্তরাগামী ভিক্টর ক্ল্যাসিক বাসের চালক জাহাঙ্গীর বলেন, বাস নিয়ে উত্তরার যাওয়া যাচ্ছে না, এদিকে আবার গুলিস্তানের পরে যাওয়া যাচ্ছে না। আমরা যে কয়েকটি বাস আজ নেমেছি, তারা পড়েগেছি মাঝখানে। কোনো দিকেই যেতে পারছি না। এই পরিস্থিতি দেখে কোনো চালকরা আজ বাস নিয়ে নামছে না। আজ এই অবস্থায় চলবে। আগামীকাল থেকে আবার স্বাভাবিক অবস্থায় গাড়ি চলবে।