ঈদ হবে আষাঢ়ে, আবহাওয়া দেখে নদীপথে বের হওয়ার অনুরোধ নৌ-পুলিশের

গুলশানের পুলিশ প্লাজা কনকর্ডের নৌ-পুলিশ কনফারেন্স রুম আয়োজিত এক সংবাদ সম্মেলনে সংশ্লিষ্টদের প্রতি এই অনুরোধ জানান নৌ-পুলিশের প্রধান অতিরিক্ত আইজিপি মো. শফিকুল ইসলাম।

ঈদ হবে আষাঢ়ে, আবহাওয়া দেখে নদীপথে বের হওয়ার অনুরোধ নৌ-পুলিশের

প্রথম নিউজ, ঢাকা: আসন্ন পবিত্র ঈদুল আজহা আষাঢ় মাসে অনুষ্ঠিত হতে যাচ্ছে। এই মাসে ঝড়-বৃষ্টি বেশি হয় বলে ঈদযাত্রা থেকে শুরু করে নৌপথে কোরবানির পশু নিয়ে আসতে অতিরিক্ত সতর্কতা অবলম্বনের অনুরোধ জানিয়েছে নৌ-পুলিশ।

আজ বৃহস্পতিবার (১৫ জুন) দুপুরে গুলশানের পুলিশ প্লাজা কনকর্ডের নৌ-পুলিশ কনফারেন্স রুম আয়োজিত এক সংবাদ সম্মেলনে সংশ্লিষ্টদের প্রতি এই অনুরোধ জানান নৌ-পুলিশের প্রধান অতিরিক্ত আইজিপি মো. শফিকুল ইসলাম। ঈদুল আজহা উপলক্ষ্যে নৌপথের আইনশৃঙ্খলা ও নৌ-ট্রাফিক ব্যবস্থাপনা সংক্রান্ত বিষয়ে সংবাদ সম্মেলন অনুষ্ঠিত হয়।

অতিরিক্ত আইজিপি মো. শফিকুল ইসলাম বলেন, ঢাকার বাইরে থেকে লাখ লাখ কোরবানির পশু নৌপথে ঢাকায় আসবে। এসব পশু যেন কোনো ধরনের বাধা ছাড়া ব্যবসায়ীরা ঢাকায় নিয়ে আসতে পারেন সেই লক্ষ্যে আমরা কাজ করব। পশু বিক্রির পর নিরাপদে ব্যবসায়ীরা নিজ গন্তব্যে যেন ফিরতে পারেন সেই লক্ষ্যেও আমরা কাজ করব। এছাড়া কোরবানি পরবর্তী পশুর চামড়াও যেন নিরাপদে সড়কে পথে নিয়ে যাওয়া যায় সেই বিষয়ে আমরা কাজ করব।

ঈদযাত্রায় যেন নৌ-দুর্ঘটনা না ঘটে সেই লক্ষ্যে নৌ-পুলিশ কাজ করবে বলে জানিয়েছেন নৌ-পুলিশ প্রধান। তিনি বলেন, গত বারের ঈদে কোনো ধরনের বড় দুর্ঘটনা ঘটেনি। এবারও সমন্বিতভাবে কাজ করব, যাতে কোনো ধরনের নৌ-দুর্ঘটনা না ঘটে। যেহেতু এবারের ঈদ অনুষ্ঠিত হবে আষাঢ় মাসে, সেহেতু ঝড়-বৃষ্টির আশঙ্কা বেশি হয়ে থাকে। তাই অতিরিক্ত সাবধানতা অবলম্বন করতে হবে।

তিনি বলেন, আবহাওয়া যখন খারাপ থাকবে তখন নৌযান চালানো যাবে না। যাত্রীবাহী হোক কিংবা পশুবাহী হোক আবহাওয়ার অবস্থা জেনেই যেন নৌযান নিয়ে রওনা হই। সারা দেশে আমাদের ১৪২টি ইউনিট আছে। আবহাওয়ার অবস্থা জানা থেকে শুরু করে ঈদযাত্রার নৌযান ও পশুবাহী নৌ-যানকে আমরা সাহায্য করব। এছাড়া জাতীয় জরুরি সেবা নম্বর ৯৯৯-এ যোগাযোগ করেও সাহায্য নেওয়া যাবে।

ঈদে লাখ লাখ যাত্রী নৌ-পথে যাতায়াত করবে উল্লেখ করে তিনি বলেন, ঢাকা, নারায়ণগঞ্জ ও বরিশালের নৌঘাট দিয় ঈদযাত্রায় লাখ লাখ যাত্রী যাতায়াত করবেন। লঞ্চ মালিক ও শ্রমিকদের বলব সবাই যেন অতিরিক্ত যাত্রী নিয়ে নৌ-পথে ঈদ যাত্রা শুরু না করেন। এছাড়া ফিটনেসবিহীন লঞ্চ নিয়ে যেন কোনো মালিক ঈদযাত্রা না করেন এবং প্রতিটি লঞ্চে যাত্রীদের জন্য পর্যাপ্ত নিরাপত্তা ব্যবস্থা গ্রহণ করতে হবে। একই লঞ্চে মাল ও যাত্রী পরিবহন করা যাবে না। মালবাহী ও যাত্রীবাহী লঞ্চ আলাদা। এছাড়া লঞ্চে অতিরিক্ত ভাড়া নিলে আমরা ব্যবস্থা নেব।

অন্যদিকে কোরবানির পশু পরিবহনের ক্ষেত্রেও নিরাপদ নৌযান ব্যবহার করতে হবে। কোনোভাবেই যেন অনিরাপদ নৌযান দিয়ে কোরবানির পশু পরিবহন না করা হয়। এসব বিষয় তদারকি করতে প্রতিটি ঘাটেই আমাদের পর্যাপ্ত সংখ্যক নৌ-পুলিশ সদস্য মোতায়েন থাকবে।

বালুবাহী বাল্কহেডের বিষয়ে নৌ-পুলিশ প্রধান বলেন, নৌ দুর্ঘটনার অধিকাংশ ঘটে বালুবাহী বাল্কহেডের সঙ্গে সংঘর্ষের কারণে। ঈদের কয়েক দিন আগে ও পরে বাল্কহেড চলাচল সম্পূর্ণ রূপে বন্ধ রাখতে হবে, এটি সরকারি নির্দেশ। সরকারি নির্দেশনা অনুযায়ী, এ সময়ে কোনোভাবেই বাল্কহেড চালানো যাবে না। মনে রাখতে হবে সারা বছর কোনোভাবেই রাতের বেলায় বাল্কহেড চালানো যাবে না।

নৌ-পথে পশুবাহী নৌযান যেন ডাকাতির শিকার না হয় সেই লক্ষ্যে নৌ-পুলিশ কাজ করে যাবে জানিয়ে অতিরিক্ত আইজিপি বলেন, দেশের বিভিন্ন জেলা থেকে দেশের বিভিন্ন বড় হাটে নৌ-পথে পশু পরিবহন করে নিয়ে আসা হবে। নৌপথে যেন এসব পশুবাহী নৌযান ডাকাতির শিকার না হয় সেই লক্ষ্যে আমরা কাজ করব। নৌপথে ডাকাতি বন্ধে ও আইনি প্রক্রিয়া গ্রহণের সক্ষমতা আমাদের রয়েছে। আমাদের ২০০ হর্সপাওয়ারের স্প্রিট বোট রয়েছে, তাই নৌপথে ডাকাতদের ধরতে আমরা সক্ষম। আর কোরবানির পশু বিক্রির টাকা ব্যাংকের মাধ্যমে নিয়ে যাওয়ার অনুরোধ করছি ব্যবসায়ীদের। তারপরেও যদি কোনো ব্যবসায়ী নগদ টাকা নিয়ে যেতে চান তারা আমাদের সহায়তা চাইলে আমরা সাহায্য করব।

ঘাট ও পশুর হাট হকারমুক্ত রাখতে নৌপুলিশ কাজ করবে জানিয়ে তিনি বলেন, এসব হকাররা বিভিন্ন খাবারের সঙ্গে নেশা জাতীয় ওষুধ মিশিয়ে যাত্রী ও ব্যবসায়ীদের অজ্ঞান করে সর্বস্ব নিয়ে যাচ্ছে। এসব জায়গায় আমরা চেষ্টা করব নৌ-পুলিশ রাখার এবং হকারমুক্ত রাখার।

সাংবাদিকদের এক প্রশ্নের জবাবে নৌ পুলিশ প্রধান বলেন, নদীর পাড়ে আশপাশে যে গরুর হাটগুলো বসবে যেগুলো গুরুত্বপূর্ণ সেটা ছোট হোক বড় হোক। যেখানে মনে হবে নিরাপত্তা বাড়ানো প্রয়োজন সেখানে আমাদের বিশেষ নিরাপত্তা ব্যবস্থা থাকবে। অব্যবস্থাপনা চাঁদাবাজি ঠেকাতে আমাদের বিভিন্ন টিম কাজ করবে, সিভিলে থাকবে, পেট্রোল টিম থাকবে এবং জেলা পুলিশের সঙ্গে মিলে কাজ করবে।

আরেক প্রশ্নেফ জবাবে তিনি বলেন, আমাদের কতজন পুলিশ কাজ করবে সেটা বিষয় নয়। প্রয়োজন অনুযায়ী বাড়বে কমবে,  সেখানে নিরাপত্তার জোরদার করার প্রয়োজন আমাদের সর্বোচ্চ নজর থাকবে। ঈদে যারা নৌপথে বাড়ি ফিরবেন কিছু ঘাটে ঈদের তিন চারদিন আগে প্রচণ্ড ভিড় থাকবে সেগুলোতে আমাদের নিরাপত্তা বাড়ানো হবে। পাশাপাশি নদী অঞ্চলের প্রতিটি জায়গায় আমাদের ফোর্স কাজ করবে।