আওয়ামী লীগের আমলে ৫০  সাংবাদিককে হত্যা করা হয়েছে : ডা.জাহিদ 

এ সরকারের আমলে  দেশে কারো জীবনের কোন নিরাপত্তা নেই বলে মন্তব্য করেছেন বিএনপির ভাইস চেয়ারম্যান প্রফেসর ডাঃ এ জেড এম জাহিদ হোসেন

আওয়ামী লীগের আমলে ৫০  সাংবাদিককে হত্যা করা  হয়েছে : ডা.জাহিদ 
বক্তব্য রাখছেন বিএনপি মহাসচিব মির্জা ফখরুল ইসলাম আলমগীর---সংগৃহীত

প্রথম নিউজ, নীলফামারিঃ এ সরকারের আমলে  দেশে কারো জীবনের কোন নিরাপত্তা নেই বলে মন্তব্য করেছেন বিএনপির ভাইস চেয়ারম্যান প্রফেসর ডাঃ এ জেড এম জাহিদ হোসেন। তিনি বলেন আওয়ামী লীগের আমলে ৫০ জন সাংবাদিককে হত্যা করা হয়েছে। আজ সোমবার সৈয়দপুর এয়ার সেন্টারে সৈয়দপুর জেলা বিএনপির দ্বিবার্ষিক সম্মেলনে তিনি এসব কথা বলেন। 
ডাঃ এ জেড এম জাহিদ হোসেন বলেন, আজকের সভায় ভার্চুয়ালী সংযুক্ত হয়ে প্রধান অতিথি হিসেবে উপস্থিত ছিলেন দলের ভারপ্রাপ্ত চেয়ারম্যান তারেক রহমান। সভার উদ্বোধক হিসেবে উপস্থিত ছিলেন দলের সম্মানিত মহাসচিব মির্জা ফখরুল ইসলাম আলমগীর। 

আওয়ামী লীগ সব সময় মিথ্যা কথা বলে: মির্জা ফখরুল
তত্ত্বাবধায়ক সরকারের ধারণা আওয়ামী লীগ নিয়ে এসেছিল উল্লেখ করে বিএনপির মহাসচিব মির্জা ফখরুল ইসলাম আলমগীর বলেছেন, ‘আওয়ামী লীগ ক্ষমতায় এসেই সংবিধান পালটে দিল। কারণ কিছু দিনের মধ্যেই দেখল তারা নিরপেক্ষ নির্বাচনে জয়ী হতে পারবে না। সেই জন্য তারা দলীয় সরকারের অধীনে নির্বাচনের ব্যবস্থা করেছে।’
‘এখনো তারা চিৎকার করছে, সংবিধানের আলোকে নির্বাচন হবে। কোন সংবিধান? এই সংবিধান তো সেই সংবিধান নেই! এটা তারা পরিবর্তন করেছে গায়ের জোরে।’
সোমবার দুপুরে সৈয়দপুরে আয়োজিত নীলফামারী জেলা বিএনপির সম্মেলনের উদ্বোধনী অনুষ্ঠানে তিনি এসব কথা বলেন।
ফখরুল বলেন, ‘এই কথাটা আমরা বিএনপিকে ক্ষমতায় নেওয়ার জন্য বলছি না। আমরা বলছি মানুষের অধিকার প্রতিষ্ঠার জন্য। মানুষ যেন ভোট দিতে পারে। তাদের আমলে তো মানুষ ভোটই দিতে পারে না! ভোট জিনিসটা তারা (আওয়ামী লীগ) তুলে দিয়েছে কিন্তু দেখাতে চায় তারা একটা ভোট করছে।’এ সময় নির্দলীয় তত্ত্বাবধায়ক সরকার ব্যবস্থা ছাড়া আগামী জাতীয় সংসদ নির্বাচনে বিএনপি যাবে না বলেও পুনর্ব্যক্ত করেন দলটির মহাসচিব। তিনি বলেন, ‘আওয়ামী লীগ সব সময় মিথ্যা কথা বলে, প্রতারণা করে। ভণ্ড রাজনীতি করে মানুষকে ভুল পথে পরিচালিত করে তারা বারবার ক্ষমতায় যেতে চায়।

বিএনপি মহাসচিব বলেন, ‘এবার ভিন্নভাবে আবারো তারা (আওয়ামী লীগ) একদলীয় শাসন ব্যবস্থা বাকশাল প্রতিষ্ঠা করতে চায়। ২০১৪ সালে তারা নির্বাচন করেছে, কোনো নির্বাচনই হয়নি। ১৫৪ জনকে ঘোষণা করে দিয়েছে বিনা প্রতিদ্বন্দ্বিতায় নির্বাচিত। ২০১৮ সালে নির্বাচন করেছে, কোনো নির্বাচনই হয়নি। আগের রাতে সবাইকে নির্বাচিত ঘোষণা করে দিয়েছে। আর ক্ষমতায় গিয়ে তারা একে একে রাষ্ট্রের সব প্রতিষ্ঠানকে ধ্বংস করে দিয়েছে।’

আওয়ামী লীগ জুডিশিয়ারি সম্পূর্ণভাবে নিয়ন্ত্রণ করছে মন্তব্য করে তিনি বলেন, সংসদে কোনো জবাবদিহিতা নেই। সেখানে কোনো বিতর্ক, দেশের সম্পর্কে কোনো আলোচনা হয় না। শুধুমাত্র দুটি কাজই তারা সফলভাবে করতে পেরেছে- চুরি; রাষ্ট্রের সমস্ত সম্পদ তারা লুট করে নিয়ে যাচ্ছে এবং সেটাকে পাচার করে দিচ্ছে দেশের বাইরে। আরেকটা হচ্ছে- সন্ত্রাস সৃষ্টি করে ভয় দেখাচ্ছে, মানুষ প্রতিবাদ করার সাহস পাচ্ছে না।’ দলের নেতাকর্মীদের উদ্দেশে বিএনপি মহাসচিব বলেন, ‘আওয়ামী লীগ আবারো একটি নতুন নির্বাচনের পাঁয়তারা শুরু করেছে। এই নির্বাচন আমাদেরকে অবশ্যই প্রতিহত করতে হবে, এই দেশের স্বার্থে। আমরা কোনো মতেই আওয়ামী লীগ সরকারের অধীনে এই দেশে কোনো নির্বাচন হতে দেব না। যেখানে ভোটের অধিকার থাকে না, জনগণ সেই ভোট মানে না। আমাদের কথা খুব পরিষ্কার, আওয়ামী লীগের অধীনে এই দেশের মানুষ কোনো নির্বাচনে যাবে না।’

ডা. জাহিদ হোসেন বলেন, আপনারা ইতোমধ্যেই দলের মহাসচিবসহ নেতৃবৃন্দের বক্তব্য শুনেছেন। আমাদের বক্তব্য অত্যন্ত সুস্পষ্ট, বাংলাদেশ জাতীয়তাবাদী দল সবসময় জনগণের অধিকারে বিশ্বাস করে। সেজন্য এই দলের প্রতিষ্ঠাতা শহীদ রাষ্ট্রপতি জিয়াউর রহমান যখন এদেশে একদলীয় শাসনব্যবস্থা বাকশাল প্রতিষ্ঠিত হয়েছিল সেই সময় তিনি বহুদলীয় গণতন্ত্র প্রতিষ্ঠা করেছিলেন। আর তারই ধারাবাহিকতায় বিএনপি চেয়ারপার্সন ‘গণতন্ত্রের মা’ দেশনেত্রী বেগম খালেদা জিয়া সংসদীয় গণতন্ত্র প্রবর্তন করেছেন। আওয়ামী লীগ জনগণের মত প্রকাশের স্বাধীনতায় বিশ্বাস করে না। তাদের পূর্ব পুরুষরাও দেশের চারটি সংবাদপত্র রেখে বাকী সব সংবাদপত্র বন্ধ করে দিয়েছিলেন। শহীদ রাষ্ট্রপতি জিয়াউর রহমান ক্ষমতায় এসে সকল সংবাদ পত্র চালু করেছিলেন। ‘৭৪ এর কালাকানুন সেটিও কিন্তু দেশনেত্রী বেগম খালেদা জিয়ার আমলে বাতিল করা হয়েছিল। বিএনপি সংবাদপত্রের স্বাধীনতায় বিশ্বাস করে বলেই মত প্রকাশের দ্বার উন্মোচিত হয়েছিল। এবার আওয়ামী লীগ ক্ষমতায় এসে দিগন্ত টেলিভিশন, ইসলামী টেলিভিশন, আমার দেশ পত্রিকা দিনকাল পত্রিকাসহ অসংখ্য অনলাইন নিউজ পোর্টাল বন্ধ করে দিয়েছে। তিনি বলেন, বিএনপি নেতাকর্মীরাই কেবল নয়, নির্যাতনের শিকার হয়েছে অসংখ্য সংবাদকর্মী। সাংবাদিকদের মধ্যে কমপক্ষে ৫০ জনকে হত্যা, কিংবা গুম করা হয়েছে।  আমরা যেমন এম ইলিয়াস আলীকে খুঁজে পায়নি, চৌধুরী আলমসহ অসংখ্য নেতাকর্মীকে এখনও খুঁজে পায়নি। নিত্য প্রয়োজনীয় দ্রব্যমূল্যের উর্ধ্বগতির বিরুদ্ধে, দুর্নীতির বিরুদ্ধে, অপশাসনের বিরুদ্ধে আন্দোলন করতে গিয়ে ইতোমধ্যে আমাদের দলের ১৭ জন নেতাকর্মীকে হারিয়েছি, পুলিশ তাদেরকে নির্মমভাবে গুলি করে হত্যা করেছে। বিএনপি নেতাকর্মীদের বিরুদ্ধে মিথ্যা মামলা দায়ের, হামলা, গ্রেফতার, রিমান্ডে নিয়ে নির্যাতন আওয়ামী লীগের এক ধরণের খেলায় পরিণত হয়েছে। দেশে কারো জীবনের কোন নিরাপত্তা নেই, নারীরা সম্ভ্রম হারাচ্ছে, শিশুরা নির্যাতনের শিকার হচ্ছে। 
বিএনপির ভাইসচেয়ারম্যান বলেন, আওয়ামী নেতারা দুর্নীতির মাধ্যমে টাকার পাহাড় গড়েছে, কানাডায় বেগমপাড়া এবং মালেশিয়ায় সেকেন্ড হোম বানিয়েছে। আওয়ামী লীগের নেতাকর্মীরাই কেবল নিরাপদ। দেশে যত মেগা প্রকল্প ততই মেগা দুর্নীতি। এ অবস্থার মধ্যে ২০১৪ সালের ভোটে দেখা গেল চতুস্পদ জন্তুকে, আর ২০১৮ সালের ভোটে দেখা গেল আগের রাতে ভোট চুরি করে ব্যালট বাক্স ভর্তি।

সৈয়দপুর বিএনপির সভাপতি আবদুল গফুর, সাধারণ সম্পাদক শাহীন আকতার
দীর্ঘ ৯ বছর পর নীলফামারীর সৈয়দপুর রাজনৈতিক জেলা বিএনপির সম্মেলন অনুষ্ঠিত হয়েছে। এতে আবদুল গফুর সরকার সভাপতি ও পৌরসভার কাউন্সিলর শাহীন আকতার সাধারণ সম্পাদক নির্বাচিত হয়েছেন। সাংগঠনিক সম্পাদক হয়েছেন জেলা যুবদলের সভাপতি আনোয়ার হোসেন প্রামাণিক। সোমবার শহরের পৌরসভা সড়কের পৌর কমিউনিটি সেন্টারে দিনব্যাপী এ সম্মেলন অনুষ্ঠিত হয়। এতে শীর্ষ তিন পদের জন্য কাউন্সিলরদের সরাসরি ভোট নেওয়া হয়।

Download করুন আমাদের App এবং Subscribe করুন আমাদের YouTube Channel: