৮৫ বছরের বেশি গড় আয়ু যেসব দেশে, রহস্যময় জীবন

৮৫ বছরের বেশি গড় আয়ু যেসব দেশে, রহস্যময় জীবন

প্রথম নিউজ, অনলাইন:  পৃথিবীতে এমন কিছু দেশ রয়েছে, যেখানকার মানুষ অন্য দেশের তুলনায় বেশি দিন বাঁচে। যেখানকার মানুষ ৮০ বছর বা তার বেশি বয়স পর্যন্ত বেঁচে থাকাটা আদপেই আশ্চর্যজনক নয়; তাও আবার সুস্থ শরীরে।

দীর্ঘ ও সুস্থ জীবনের রহস্য কী? যদিও অনেকাংশে আসল ভূমিকা পালন করে জিন। কিন্তু তারপরও জীবনধারা, খাদ্যাভ্যাস, শারীরিক এবং মানসিক স্বাস্থ্যও সমানভাবে গুরুত্বপূর্ণ। মানুষভেদে যেমন এ বিষয়গুলো বদলে যায়, দেশ, গোষ্ঠীভেদেও পালটে যায় সবটাই। তাই দীর্ঘায়ু হওয়ার কারণ হিসেবে অনেক ক্ষেত্রে ভৌগোলিক অবস্থানকেও দেখা হয়। আর তাই পৃথিবীতে এমন কিছু দেশ রয়েছে, যেখানে মানুষ অন্য দেশের তুলনায় বেশি দিন বাঁচেন। 

৮০ বছর বা তার বেশি বয়স পর্যন্ত বেঁচে থাকা আশ্চর্যজনক কোনো ঘটনা নয়। রহস্যভেদে জানা গেল কয়েকটি মূল কারণ—

পুষ্টিগুণসমৃদ্ধ খাবার, দৈনন্দিন জীবনের রুটিন এবং উন্নত চিকিৎসা ও সেবার বন্দোবস্ত— এ বিষয়গুলো স্বাস্থ্যকর ও সুখীজীবন গড়ে তুলতে সাহায্য করে। তা হলে কোন দেশের কোন শহরের মানুষেরা সবচেয়ে বেশি দিন বাঁচেন, তা আমাদের জানা উচিত। এবং তারা কীভাবে জীবনযাপন করে দীর্ঘায়ু জীবন লাভ করে। যে ১০ দেশ ও শহরের মানুষ দীর্ঘায়ুর কারণ ব্যাখ্যা করা হলো। 

এখানে রাষ্ট্রপুঞ্জের বিশ্লেষক সংস্থার ২০২৩ সালের রিপোর্টে কেবল সেসব দেশকে এ তালিকাভুক্ত করা হয়েছে, যেগুলোর জনসংখ্যা ৫০ হাজারের ওপর। ফলে মোনাকো (জনসংখ্যা ৩৯,০০০), সান মারিনো (জনসংখ্যা ৩৪,০০০) ও সেন্ট বার্থেলেমি (জনসংখ্যা ১১,০০০) বাদ দিয়ে দেওয়া রয়েছে।

১. মোনাকো, গড় আয়ু ৮৭ বছর। এ তালিকার শীর্ষেই মোনাকো। ফরাসি রিভেরার এই ক্ষুদ্র ও ধনী রাজ্যে উন্নত মানের স্বাস্থ্য পরিষেবার বন্দোবস্ত রয়েছে। তাজা সামুদ্রিক খাবার এবং অলিভ অয়েলে ভরা ভূমধ্যসাগরীয় খাদ্য সেখানকার মানুষের সুস্বাস্থ্যের চাবিকাঠি। জীবনযাত্রায় মানসিক চাপ খুব বেশি প্রভাবিত করতে পারে না বাসিন্দাদের। অপূর্ব প্রাকৃতিক দৃশ্য এবং অবসরের অবকাশ এখানকার মানুষের সুস্থজীবন দিয়েছে। এখানে মানুষ বৃদ্ধ বয়স পর্যন্ত সক্রিয় থাকতে পছন্দ করেন।

২. হংকং। গড় আয়ু ৮৫ বছর। গড় আয়ু বেশি এই দেশে। সৌজন্যে স্বাস্থ্যকর খাবার এবং দুর্দান্ত চিকিৎসা পরিষেবা। ঐতিহ্যবাহী ক্যান্টোনিজ খাবার, মাছ ভাপা, শাকসবজি এবং স্যুপ ইত্যাদির ওপরেই থাকেন সেই দেশের মানুষ। এ ছাড়া হাঁটাহাঁটির দিকে ঝোঁক রয়েছে বাসিন্দাদের, যা সামগ্রিক স্বাস্থ্য ভালো রাখতে সাহায্য করে।

৩. সান মারিনো। গড় আয়ু ৮৪ বছর। ইতালির সান মারিনোর উন্নত জীবনযাত্রা, নিম্ন দূষণের মাত্রা এবং ভূমধ্যসাগরীয় খাদ্যাভ্যাস স্বাস্থ্যের যত্ন নিতে সাহায্য করে। তারা জীবন কাটান আনন্দে। ফলে মানসিক স্বাস্থ্যও অনেক জায়গার মানুষের তুলনায় ভালো।

৪. জাপান। গড় আয়ু ৮৪ বছর। জাপানের ওকিনাওয়া থেকেই শতোর্ধ্ব মানুষের জীবনকাহিনি বেশি শোনা যায়। মাছ, টোফু ও নির্ভেজাল খাবার জাপানিদের সুস্থ রাখায় বড় ভূমিকা পালন করে। কায়িক শ্রমের মাধ্যমে জীবন ধারণ করার চল বেশি বলে অনেক বয়স পর্যন্ত সক্রিয় থাকতে পারেন মানুষ।

৫. দক্ষিণ কোরিয়া। গড় আয়ু ৮৩ বছর। স্বাস্থ্য ও পুষ্টির ক্ষেত্রে বিশেষ নজর দেয় এই দেশ। কিমচির মতো খাবার খেয়েই প্রতিদিনের দিনযাপন। আর কিমচি অত্যন্ত পুষ্টিগুণসমৃদ্ধ একটি খাবার। এ ছাড়া খাদ্যতালিকায় এমন কিছু পদ থাকে, যা অন্ত্রের স্বাস্থ্যের দিকে খেয়াল রাখে। ত্বকচর্চা এই দেশের মানুষের কাছে অত্যন্ত গুরুত্বপূর্ণ। জীবনযাপনের গতি দ্রুত হওয়া সত্ত্বেও সমাজের সঙ্গে মিলেমিশে থাকতে পারেন দক্ষিণ কোরিয়াবাসীরা।

৬. স্পেন। গড় আয়ু ৮৩ বছর। স্প্যানিশ জীবনযাত্রার মূল নীতি হলো ভারসাম্য বজায় রাখা। স্বাস্থ্যকর খাবার খাওয়া, সমাজের সঙ্গে মানিয়ে নেওয়া এবং শরীরকে সচল রাখা। প্রয়োজনে বিশ্রাম করার পাশাপাশি সেই দেশের মানুষের কাছে কোনো কিছুই অতিরিক্ত ভালো নয়। তাজা ফল, অলিভ অয়েল ও সামুদ্রিক খাবারের চল বেশি। জীবনের প্রতি ইতিবাচক দৃষ্টিভঙ্গি মানসিক স্বাস্থ্যকে ক্ষতির হাত থেকে বাঁচায়।

৭. সুইৎজারল্যান্ড। গড় আয়ু ৮৩ বছর। পরিষ্কার বাতাস, উন্নত স্বাস্থ্য পরিষেবা, কায়িক শ্রম, প্রকৃতিনির্ভর জীবনযাপন এই দেশের মানুষের মধ্যে বেশি দিন বাঁচার ইচ্ছাশক্তি জোগায়। খাদ্যতালিকায় প্রচুর পরিমাণে দুগ্ধজাত পণ্য, গোটা শস্য এবং তাজা ফলমূল থাকে। কর্ম ও জীবনের মধ্যে ভারসাম্য রাখতে সক্ষম দেশবাসী। আনন্দে বাঁচতে ভালোবাসেন তারা।

৮. অস্ট্রেলিয়া।  যে দেশের মানুষের গড় আয়ু ৮৩ বছর। চিকিৎসার সুব্যবস্থা, উন্নত জীবনযাত্রায় অভ্যস্ত এই দেশের মানুষের। সাঁতার, হাঁটাচলা, রান্নাবান্না করা, সবাই মিলে বাড়ির উঠোনে বারবিকিউ করা এবং এগুলো খুব চেনা দৃশ্য। অস্ট্রেলিয়ার মানুষেরা খুবই জীবনমুখী। শান্ত মনোভাব ও স্বভাব মানসিক চাপ নিয়ন্ত্রণে রাখতেও সাহায্য করে।

৯. ইতালি। যে দেশের মানুষের গড় আয়ু ৮৩ বছর, সেটি হচ্ছে ইতালি। এ দেশের মানুষ দীর্ঘায়ুর রহস্য লুকিয়ে ‘দোলচে ভিতা’ জীবনধারার মধ্যে। দলচে ভিটা শব্দটিকে অনুবাদ করলে দাঁড়ায়— ‘মধুর জীবন’। ইতালীয়দের কাছে ভালো ভালো খাবার, পরিবারের সান্নিধ্য, শরীরকে সচল রাখা খুবই গুরুত্বপূর্ণ। তাজা শাকসবজি, চর্বিহীন প্রোটিন এবং অলিভ অয়েল তাদের মূল খাদ্যাভ্যাসের সঙ্গে অঙ্গাঙ্গীভাবে জড়িয়ে। এই দেশই গোটা বিশ্বকে সুস্বাদু ও স্বাস্থ্যকর খাবারের সঙ্গে পরিচয় করিয়েছে। এদের জীবন চলে ধীরগতিতে। ফলে শরীর ও মনের দিকে নজর দেওয়ার সময়ও অঢেল।

১০. সিঙ্গাপুর। যে দেশের মানুষের গড় আয়ু ৮৩ বছর। সিঙ্গাপুর মানেই সেরা স্বাস্থ্য পরিষেবা আর উন্নত জীবনযাত্রা। শহরটি এমনভাবেই বানানো হয়েছিল, যাতে মানুষ হাঁটাচলায় আগ্রহী হন। প্রযুক্তি-চালিত চিকিৎসা পরিষেবার ওপর জোর দিয়ে সিঙ্গাপুর এখন দীর্ঘায়ুকে স্বাভাবিক করে তুলেছে।

এই দেশগুলো থেকে যা শেখা উচিত আমাদের, তা হচ্ছে— 

পুষ্টিগুণ সমৃদ্ধ ডায়েট: প্রচুর স্বাস্থ্যকর, চর্বিহীন প্রোটিন এবং ন্যূনতম প্রক্রিয়াজাত উপাদান ও তাজা খাবার।

সক্রিয় জীবনধারা: হাঁটাচলা, সাঁতার ও প্রতিদিনের শারীরিক কার্যকলাপের মধ্যে হালকা চালে যুক্ত হয়ে থাকে শরীরচর্চা।


সামাজিক বন্ধন: পরিবার, বন্ধুবান্ধব এবং পাড়া-প্রতিবেশীদের সঙ্গে সুসম্পর্ক বজায় রাখা।

মানসিক চাপ মুক্তি: জীবনের প্রতি ইতিবাচক দৃষ্টিভঙ্গি আরও বেশি বছর বেঁচে থাকার ইচ্ছা বাড়িয়ে তোলে।

উন্নত স্বাস্থ্য পরিষেবা: উচ্চমানের চিকিৎসা ব্যবস্থা মানুষের মধ্যে নিরাপত্তার বোধ তৈরি