৮ বছরেও চূড়ান্ত নিষ্পত্তি হয়নি নারায়ণগঞ্জের ৭ খুন মামলা

উচ্চ আদালত রায় দেন ২০১৭ সালের ২২ আগস্ট। সেই রায়ের পর ইতোমধ্যে প্রায় পাঁচ বছর কেটে গেছে। এখন অপেক্ষা সর্বোচ্চ আদালতের রায়ের।

৮ বছরেও চূড়ান্ত নিষ্পত্তি হয়নি নারায়ণগঞ্জের ৭ খুন মামলা
ফাইল ফটো

প্রথম নিউজ, নারায়ণগঞ্জ: নারায়ণগঞ্জের বহুল আলোচিত সাত খুনের ঘটনায় হওয়া মামলার চূড়ান্ত নিষ্পত্তি এখনও হয়নি। এই মামলায় বিচারিক আদালত ২৬ জনকে মৃত্যুদণ্ড ও নয় জনকে বিভিন্ন মেয়াদে কারাদণ্ড দিয়ে রায় দিয়েছিলেন ২০১৬ সালের ১৬ জানুয়ারি। আর উচ্চ আদালত রায় দেন ২০১৭ সালের ২২ আগস্ট। সেই রায়ের পর ইতোমধ্যে প্রায় পাঁচ বছর কেটে গেছে। এখন অপেক্ষা সর্বোচ্চ আদালতের রায়ের।

মামলায় সুপ্রিম কোর্টের হাইকোর্ট বিভাগ ২০১৭ সালের রায় দেওয়ার পর পূর্ণাঙ্গ রায় প্রকাশিত হয় ২০১৮ সালে। পরে হাইকোর্টের দেওয়া দণ্ডাদেশের বিরুদ্ধে আসামিরা সুপ্রিম কোর্টের আপিল বিভাগে আবেদন করেন। এরপর ২০২২ সালের মাঝামাঝি সময় পেরিয়ে গেলেও এ যাবত মামলাটির শুনানিই শুরু হয়নি।

অবশ্য চলতি বছরের শেষ দিকে এই মামলার শুনানি হতে পারে বলে আশা করছেন রাষ্ট্রের সর্বোচ্চ আইন কর্মকর্তা অ্যাটর্নি জেনারেল আবু মোহাম্মদ আমিন উদ্দিন (এ এম আমিন উদ্দিন)। জানতে চাইলে বৃহস্পতিবার (৭ জুলাই) ঢাকাপ্রকাশ’কে তিনি বলেন, আপিল বিভাগে এখন ২০১৩–১৪ সালে হওয়া আপিলের শুনানি চলছে। সে হিসেবে আশা করছি চলতি বছরের শেষ দিকে এই মামলার শুনানি হতে পারে। এক প্রশ্নের জবাবে জ্যেষ্ঠ এই আইনজীবী বলেন, শুনানি যদি আরও আগে চায় তাহলে আপিলকারীদেরই আবেদন করতে হবে।

আপিলকারীরা আবেদন করতে পারে, রাষ্ট্রপক্ষও তো করতে পারে– এই কথার পরিপ্রেক্ষিতে অ্যাটর্নি জেনারেল বলেন, আমরা তো বলতে পারি না যে, তাদের ফাঁসি এগিয়ে আনুন। আপিল শুনানি এগিয়ে আনতে চাইলে তাদের আবেদন করতে হবে।

এই মামলায় হাইকোর্টে মৃত্যুদণ্ড বহাল থাকা রায়ের বিরুদ্ধে অন্যতম আপিলকারী নূর হোসেনের আইনজীবী এস আর এম লুৎফর রহমান আকন্দ বলেন, এখন ২০১৩-২০১৪ সালের আপিল শুনানি চলছে। আপিল বিভাগে এসব মামলার শুনানি সাধারণত বছর বিবেচনায় ধারাবাহিকভাবে হয়ে থাকে। সেই ধারাবাহিকতা অনুসারে এই মামলার আপিল শুনানি শুরু হতে সময় লাগারই কথা। এই মামলার শুনানি তো মৃত্যুদণ্ডপ্রাপ্ত আসামির জন্য জীবন–মরণের ব্যাপার। তাই আমাদের দিক থেকে কোনো তাড়াহুড়া নেই। আদালতের নিয়ম অনুসারে যখন শুনানির জন্য উঠবে, তখন তো শুনানিতে অংশগ্রহণ করতে আমরা বাধ্য।

 এই বিষয়ে জানতে চাইলে সুপ্রিম কোর্টের আপিল বিভাগের রেজিস্ট্রার মোহাম্মদ সাইফুর রহমান বলেন, আপিল বিভাগে এখন ২০১৪ সালের আপিল শুনানি চলছে। নারায়ণগঞ্জের সাত খুন মামলার আপিল হয়েছে ২০১৮ সালে। মামলার শুনানি কখন হবে, তা আদালতের এখতিয়ার।

উল্লেখ্য, এই মামলায় নিম্ন আদালতের (বিচারিক আদালত) দেওয়া মৃত্যুদণ্ড উচ্চ আদালতে বহাল থাকা আসামিদের মধ্যে রয়েছেন র্যাব-১১-এর সাবেক অধিনায়ক লেফটেন্যান্ট কর্নেল (অব.) তারেক সাঈদ মোহাম্মদ, সাবেক কোম্পানি কমান্ডার মেজর (অব.) আরিফ হোসেন, লে. কমান্ডার (চাকরিচ্যুত) এম মাসুদ রানা এবং নারায়ণগঞ্জ সিটি করপোরেশনের সাবেক কাউন্সিলর ও আওয়ামী লীগের বহিষ্কৃত নেতা নূর হোসেন।

প্রসঙ্গত, আট বছর আগে ২০১৪ সালের ওই ঘটনায় করা মামলায় ২০১৬ সালের ১৬ জানুয়ারি রায় দেন নারায়ণগঞ্জের জেলা ও দায়রা জজ আদালত। বিচারিক আদালতের ওই রায়ে ২৬ জনকে মৃত্যুদণ্ড এবং ৯ জনকে বিভিন্ন মেয়াদে কারাদণ্ড দেওয়া হয়। পরে আসামিদের ডেথ রেফারেন্সের (মৃত্যুদণ্ড অনুমোদন) জন্য মামলার নথিপত্রসহ রায় হাইকোর্টে পৌঁছায়, যা ডেথ রেফারেন্স হিসেবে নথিভুক্ত হয়।

ওই সময়ের প্রধান বিচারপতির নির্দেশে অগ্রাধিকার ভিত্তিতে ওই মামলার পেপারবুক প্রস্তুত করে সুপ্রিম কোর্টের সংশ্লিষ্ট শাখা। নিম্ন আদালতের দেওয়া দণ্ডাদেশের রায়ের বিরুদ্ধে উচ্চ আদালতে ২৮ আসামি আপিল করেন। বাকি সাত আসামি পলাতক ছিলেন।

পরে ২০১৭ সালের ২২ আগস্ট আসামিদের ডেথ রেফারেন্স ও আপিলের উপর রায় দেন হাইকোর্ট। উচ্চ আদালতের দেওয়া ওই রায়ে ১৫ আসামির মৃত্যুদণ্ডাদেশ বহাল এবং অপর ১১ আসামির দণ্ড পরিবর্তন করে যাবজ্জীবন কারাদণ্ড দেওয়া হয়। তাছাড়া বিভিন্ন মেয়াদে কারাদণ্ডাদেশ পাওয়া ৯ আসামির দণ্ড বহাল থাকে।

পরের বছর ২০১৮ সালের নভেম্বরে হাইকোর্টের পূর্ণাঙ্গ রায় প্রকাশিত হয়। এরপর ২০১৯ সালে র্যাবের সাবেক কর্মকর্তা তারেক সাঈদ মোহাম্মদ, আরিফ হোসেন, এম মাসুদ রানা এবং সাবেক কাউন্সিলর ও আওয়ামী লীগের বহিষ্কৃত নেতা নূর হোসেনসহ দণ্ডিত আসামিরা পৃথক আপিল করেন। মৃত্যুদণ্ড বহাল রেখে হাইকোর্টের রায়ের বিরুদ্ধে খালাস চেয়ে নূর হোসেন ২০১৯ সালে আপিল করেন। এই আপিল বিচারাধীন।

মামলা সূত্রে জানা যায়, ২০১৪ সালের ২৭ এপ্রিল ঢাকা-নারায়ণগঞ্জের লিংক রোডের লামাপাড়া এলাকায় চেকপোস্ট বসিয়ে কাউন্সিলর নজরুলের গাড়ি থামায় র্যাব। সেখান থেকে র্যাব নজরুল, তার তিন সহযোগী ও গাড়িচালককে তুলে নিয়ে যায়। সে সময়ে ওই পথ দিয়ে যাচ্ছিলেন আইনজীবী চন্দন সরকার। তিনি অপহরণের বিষয়টি দেখে ফেলায় তাকে এবং তার গাড়িচালককেও র্যাব তুলে নিয়ে যায়। পরে তাদের সবাইকে হত্যা করে ওই রাতেই পেট কেটে এবং ইটের বস্তা বেঁধে লাশ শীতলক্ষ্যা নদীতে ডুবিয়ে দেওয়া হয়।

২০১৪ সালের ৩০ এপ্রিল ছয় জন ও পরের দিন একজনের লাশ ভেসে উঠে। এই সাতজন হলে— নারায়ণগঞ্জ সিটি করপোরেশনের ২ নম্বর ওয়ার্ডের তৎকালীন কাউন্সিলর ও প্যানেল মেয়র-২ নজরুল ইসলাম, তার বন্ধু মনিরুজ্জামান স্বপন, তাজুল ইসলাম, লিটন, নজরুলের গাড়িচালক জাহাঙ্গীর আলম, আইনজীবী চন্দন কুমার সরকার ও তার গাড়িচালক ইব্রাহিম। ওই ঘটনায় দুটি মামলা হয়, একটির বাদী নজরুলের স্ত্রী সেলিনা ইসলাম এবং অপরটির বাদী আইনজীবী চন্দন সরকারের জামাতা বিজয় কুমার পাল। পরে বিচারিক আদালত এই দুই মামলার রায় দেন।

Download করুন আমাদের App এবং Subscribe করুন আমাদের YouTube Channel:

news.google.com

https://apps.apple.com/de/app/prothomnews/id1588984606?l=en

https://play.google.com/store/apps/details?id=com.prothomnews

https://youtube.com/prothom