সড়কে ঝুঁকিপূর্ণ ১২২ স্পট, যানজট নজরদারিতে রাখবে ড্রোন

আসন্ন ঈদুল ফিতরেও দীর্ঘ যানজট হতে পারে, দেশজুড়ে সড়কপথের এমন শতাধিক স্পট চিহ্নিত করা হয়েছে।

সড়কে ঝুঁকিপূর্ণ ১২২ স্পট, যানজট নজরদারিতে রাখবে ড্রোন

প্রথম নিউজ, ঢাকা: প্রতি বছর ঈদ ঘিরে সবচেয়ে বেশি দুর্ভোগে পড়েন ঘরমুখো মানুষ। সারাদেশের সড়ক-মহাসড়কের বেশিরভাগ অবস্থা ভালো হলেও সাম্প্রতিক বছরগুলোতেও ঈদযাত্রায় জনদুর্ভোগের তেমন হেরফের হয়নি। বরং অধিকাংশ ক্ষেত্রে দ্বিগুণ সময়ে গন্তব্যে পৌঁছাতে হয় নাড়ির টানে বাড়ি ফেরা মানুষদের। আসন্ন ঈদুল ফিতরেও দীর্ঘ যানজট হতে পারে, দেশজুড়ে সড়কপথের এমন শতাধিক স্পট চিহ্নিত করা হয়েছে।

অন্যদিকে ঈদের ছুটির মধ্যে যদি বৃষ্টি হয় তবে যাত্রীভোগান্তি আরও বাড়তে পারে বলে আশঙ্কা করছেন বিশেষজ্ঞরা। এক্ষেত্রে ঈদযাত্রা নির্বিঘ্ন করতে যতটা সম্ভব যানজট নিরসনে বাড়তি ব্যবস্থা ও ভিন্ন কৌশল নেওয়ার কথা জানিয়েছেন সংশ্লিষ্টরা। আর এ কৌশলগুলো সংশ্লিষ্ট দপ্তর ও সংস্থাসমূহ যথাযথভাবে বাস্তবায়ন করলে দুর্ভোগের ঈদযাত্রা হয়ে উঠতে পারে অনেকটাই আরামদায়ক ও আনন্দঘন।

এরই অংশ হিসেবে এবারের ঈদযাত্রায় দূরপাল্লার সড়কগুলোতে যানজট সহনীয় রাখতে ড্রোনের সহায়তা নেবে হাইওয়ে পুলিশ। প্রথমবারের মতো ড্রোনের মাধ্যমে সরেজমিনের চিত্র দেখে তাৎক্ষণিক ব্যবস্থা নেওয়া হবে। অর্থাৎ, কোনো একটি মহাসড়কে হঠাৎ যানজট সৃষ্টি হলে আশপাশের সড়কের অবস্থা ড্রোনের মাধ্যমে লাইভ (সরাসরি) দেখে কমান্ড দেওয়া যাবে সেখানকার পুলিশ সদস্যদের।

পাঁচটি মহাসড়কের ১২২টি যানজটপ্রবণ স্পট চিহ্নিত করেছে হাইওয়ে পুলিশ। এর মধ্যে ঢাকার অন্তত ছয়টি পয়েন্ট নিয়ে রয়েছে সবচেয়ে বেশি দুশ্চিন্তা। অবশ্য এবারের ঈদে সরকারি চাকরিজীবীদের মাঝে একদিন বাদে টানা ১০ দিন ছুটি মিলতে পারে। ফলে ধাপে ধাপে যাত্রীরা গন্তব্যে যাবেন, এতে স্বস্তি মিলতে পারে ঈদযাত্রায়। তবে ভয় জাগাচ্ছে সেতুর টোলপ্লাজার জট

সারাদেশে গুরুত্বপূর্ণ পাঁচটি মহাসড়কের ১২২টি যানজটপ্রবণ স্পট চিহ্নিত করেছে হাইওয়ে পুলিশ। এর মধ্যে ঢাকার অন্তত ছয়টি পয়েন্ট নিয়ে রয়েছে সবচেয়ে বেশি দুশ্চিন্তা। অবশ্য এবারের ঈদে সরকারি চাকরিজীবীদের মাঝে একদিন বাদে টানা ১০ দিন ছুটি মিলতে পারে। ফলে ধাপে ধাপে যাত্রীরা গন্তব্যে যাবেন, এতে স্বস্তি মিলতে পারে ঈদযাত্রায়। তবে ভয় জাগাচ্ছে সেতুর টোলপ্লাজার জট। এলেঙ্গা এবং গাজীপুরের সড়ক আগের বছরগুলোর মতো দুশ্চিন্তার কারণ হয়েছে। ঢাকা ছাড়তে হানিফ ফ্লাইওভারেও রয়েছে তীব্র যানজটের আশঙ্কা।

বিশেষজ্ঞরা বলছেন, পুলিশের পক্ষ থেকে সারাদেশে যানজটপ্রবণ জায়গাগুলোতে নিতে হবে বিশেষ ব্যবস্থা। দ্রুত শেষ করতে হবে সড়কের সংস্কার কাজ। বাড়াতে হবে বাসের ট্রিপ সংখ্যা। রেশনিং পদ্ধতিতে ছুটি দিতে হবে গার্মেন্টস শ্রমিকদের। বাড়তি মুনাফার লোভে সড়কে লক্কড়ঝক্কড় ও ফিটনেসবিহীন যানবাহনে যাত্রী পরিবহন বন্ধ করতে হবে। পণ্যবাহী যানে যাত্রী বহন করতে দেওয়া যাবে না। বাড়তি ভাড়া আদায় বন্ধের পাশাপাশি সব পথেই সঠিক নজরদারি হলে পথের দুর্ভোগ কম হবে।

ঈদে নিরাপদে ঘরে ফেরার জন্য সড়কপথে মুখ্য ভূমিকা পালন করে সড়ক ও জনপথ অধিদপ্তর। সংস্থাটির কর্মকর্তারা বলছেন, ২০ রোজার মধ্যে সড়ক সংস্কারের নির্দেশ দেওয়া হয়েছে। এর বাইরে হাইওয়ে পুলিশ, বিআরটিএ, পরিবহন মালিক ও শ্রমিক সংগঠন, ট্রাফিক বিভাগ, ঢাকা সিটি করপোরেশন সক্রিয় ভূমিকা পালন করলে এবারের ঈদযাত্রা অনেকটাই নিরাপদ ও নির্বিঘ্ন হবে বলে মনে করেন সংশ্লিষ্টরা। হাইওয়ে পুলিশের পক্ষ থেকে বলা হচ্ছে, সারাদেশে ১২২টি যানজটপ্রবণ এলাকার মধ্যে ঢাকা-চট্টগ্রাম মহাসড়কে ৪১টি, ঢাকা-আরিচা মহাসড়কে ৫টি, ঢাকা-সিলেট মহাসড়কে ৩৬টি স্পট, ঢাকা-ময়মনসিংহ মহাসড়কে ৩টি স্পট ও ঢাকা-উত্তরবঙ্গ মহাসড়কে রয়েছে ৩৭টি স্পট।

ঢাকা-চট্টগ্রাম মহাসড়কের ৪১ স্পট: অধিক গুরুত্বপূর্ণ ১৫ স্পট: সাইনবোর্ড বাসস্ট্যান্ড, শিমরাইল বাসস্ট্যান্ড, আদমজী রোড, ভবেরচর বাসস্ট্যান্ড, কলেজ গেট (চড়ুইবাতি হেটেল), আনারপুরা, বলদাখাল বাসস্ট্যান্ড, গৌরীপুর বাসস্ট্যান্ড, আলেখারচর কাটা, ক্যান্টনমেন্ট মোড় (উভয়মুখী), নিমসার বাজার ও ইউটার্ন, বিসিক মোড়, লালপোল, ভাটিয়ারী পয়েন্ট ও ফৌজদারহাট ইউটার্ন। ঈদের আগের তিনদিন ও পরের তিনদিন মহাসড়কে ট্রাক, ক্যাভার্ডভ্যান ও লরি চলাচল বন্ধ থাকবে। তবে নিত্যপ্রয়োজনীয় খাদ্যদ্রব্য, পচনশীল দ্রব্য, গার্মেন্ট সামগ্রী, ওষুধ, সার এবং জ্বালানি সরবরাহকারী যানবাহগুলো এর আওতামুক্ত থাকবে। ঈদযাত্রা নির্বিঘ্ন করতে ঈদের দিনসহ আগের ৭ দিন এবং পরের ৫ দিন সিএনজি ফিলিং স্টেশনগুলো সার্বক্ষণিক খোলা রাখতে হবে

কম গুরুত্বপূর্ণ ২৬ স্পট: মদনপুর মোড়, মোগড়াপাড়া মোড়, সানারপাড় ইউটার্ন, মৌচাক স্ট্যান্ড, দশতলা ভবন, পাখির মোড়, ওয়াটার পার্ক, ভাটেরচর নতুন রাস্তা, হাঁস পয়েন্ট, শহীদনগর বাসস্ট্যান্ড, আমিরাবাদ বাসস্ট্যান্ড, চান্দিনা বাসস্ট্যান্ড, মাধাইয়া বাসস্ট্যান্ড, ইলিয়টগঞ্জ বাসস্ট্যান্ড, সুয়াগাজী বাজর (উভয়মুখী), সদর দক্ষিণ থানার সামনের কাটা, নুরজাহান হোটেলের সামনের কাটা, কোটবাড়ী ইউটার্নের উভয় পাশ, জাগুরঝুলি কাটা, নাজিরা বাজার ইউটার্ন, চৌদ্দগ্রাম বাজার, বারবকুন্ড বাজার, ছোট কুমিরা, কেডিএস মোড়, ফুটলিং এবং সীতাকুন্ড বাসস্ট্যান্ড/বড় দারোগারহাট স্কেল।

ঢাকা-আরিচা মহাসড়কের ৫ স্পট: অধিক গুরুত্বপূর্ণ ৪টি: আমিন বাজার, আমিন বাজার সালেহপুর, নয়ার হাট ব্রিজ ও জাগীর ধলেশ্বরী ব্রিজ। কম গুরুত্বপূর্ণ ১টি স্পট হলো কালামপুর বাসস্ট্যান্ড।

ঢাকা-সিলেট মহাসড়কের ৩৬ স্পট: অধিক গুরুত্বপূর্ণ ২৪টি: মাধবদী বাসস্ট্যান্ড, শেখেরচর (বাবুরহাট), পাঁচদোনা মোড়, ভোলানগর, ইটাখোলা মোড়, রূপসী বাসস্ট্যান্ড, রবিন টেক্স গার্মেন্টস, ছনপাড়া, দুর্জয় মোড় বাসস্ট্যান্ড (পৌরসভা এলাকা), মরজাল বাজার, বারৈচা বাজার, যাত্রামুড়া ব্রিজ, তারাব বাসস্ট্যান্ড, বরাব স্ট্যান্ড, আশুগঞ্জ রেলগেট, খড়িয়ালা বাসস্ট্যান্ড, বেড়তলা বাসস্ট্যান্ড, কুট্টাপাড়া, শ্বরোড় মোড়, শাহবাজপুর, মাধবপুর বাজার, অলিপুর বাজার, শায়েস্তাগঞ্জ গোল চত্বর এবং গোয়ালাবাজার।

কম গুরুত্বপূর্ণ ১২টি: সাহেপ্রতাব, বরপা বাসস্ট্যান্ড, পাকিস্তানি (এসিএস) গার্মেন্টস, ভুলতা মোড়, গোলাকান্দাইল মোড়, বান্টি বাজার, পাঁচরুখী, পুরিন্দা বাজার, নারায়ণপুর বাজার, পৌরসভা গেট, রুস্তমপুর টোল প্লাজা ও শেরপুর টোল প্লাজা।

ঢাকা-ময়মনসিংহ মহাসড়কের ৩ স্পট: অধিক গুরুত্বপূর্ণ একমাত্র স্পটটি হলো হোতাপাড়া বাস স্টপেজ। তুলনামূলক কম গুরুত্বপূর্ণ ২টি স্পট হলো ভবানীপুর বাজার বাসস্ট্যান্ড ও বাঘের বাজার বাসস্ট্যান্ড। তবে ঢাকা-মাওয়া মহাসড়কে কোনো যানজটপ্রবণ স্পট নেই।

ঢাকা-উত্তরবঙ্গ মহাসড়কের ৩৭ স্পট: অধিক গুরুত্বপূর্ণ ১৫টি: চন্দ্রা মোড়, সম্ভার সিএনজি ফিলিং স্টেশন, নতুন ইপিজেড, পুরোনো ইপিজেড, বলিভদ্র এলাকা, গোড়াই মিলগেট, ভূয়াপুর লিংক রোড থেকে বঙ্গবন্ধু সেতু পূর্ব থানাধীন ঢাকা-উত্তরবঙ্গ মহাসড়ক, ঝাউল ব্রিজের সামনে থেকে হাটিকুমরুল বাজারের দক্ষিণপাশে, সাহেবগঞ্জ দাউদপুর দ্বি-মুখী উচ্চ বিদ্যালয়ের সামনে, ঘোলমাইল বাজারের সামনে, ধন কুন্ডি, ছোনকা বাজার, মাটিডালি বিমান মোড়, মায়ামনি চৌরাস্তা এবং পলাশবাড়ী চৌরাস্তা মোড়।

কম গুরুত্বপূর্ণ ২২টি: পল্লী বিদ্যুৎ বাসস্ট্যান্ড, শ্রীপুর কাঁচা বাজার, হানিফ হোটেলের সামনে, কামারপাড়া ব্রিজের পশ্চিম, হাটিকুমরুল গোলচত্বর থেকে ধোপাকান্দি ব্রিজ পর্যন্ত, হাটিকুমরুল বাজার আন্ডারপাস ঢাকামুখী মহাসড়ক পর্যন্ত, হাটিকুমরুল গোলচত্বর থেকে বগুড়ামুখী চায়না ব্রিজ পর্যন্ত, ঘুড়কা বেলতলা শ্মশান ঘাটের সামনে, ভূইয়াগাতী বাসস্ট্যান্ড, পিংকি পাম্প, অভিভিলা হোটেলের সমানে, রাজাপুর এস আর কেমিক্যালের সামনে ঢাকামুখী লেন, ফুড ভিলেজ, ঘোগা বটতলা, পেন্টাগন হোটেল, সততা হোটেল, মোমেন লিমিটেড মির্জাপুর বাজার, সিপিসিএল, সি-ব্লক আন্ডারপাস, ফুটকি ব্রিজ থেকে লিচুতলা বাইপাস পর্যন্ত, বনানীর মোড় ও শঠিবাড়ী বাজার।

যানজট নিরসনের ৭ কৌশল: ঈদযাত্রায় সড়কপথে যানজট সহনীয় পর্যায়ে রাখতে আন্তঃসংস্থার সভায় সাতটি কৌশল নির্ধারণ করা হয়েছে। সেগুলোর মধ্যে রয়েছে- ঈদের আগের তিনদিন ও পরের তিনদিন মহাসড়কে ট্রাক, ক্যাভার্ডভ্যান ও লরি চলাচল বন্ধ থাকবে। তবে নিত্যপ্রয়োজনীয় খাদ্যদ্রব্য, পচনশীল দ্রব্য, গার্মেন্ট সামগ্রী, ওষুধ, সার এবং জ্বালানি সরবরাহকারী যানবাহগুলো এর আওতামুক্ত থাকবে। ঈদযাত্রা নির্বিঘ্ন করতে ঈদের দিনসহ আগের ৭ দিন এবং পরের ৫ দিন সিএনজি ফিলিং স্টেশনগুলো সার্বক্ষণিক খোলা রাখতে হবে।

ঈদযাত্রা স্বস্তিদায়ক করতে দফায় দফায় সভা-সেমিনার হয়েছে। হাইওয়ে পুলিশের সব সদস্যের ছুটি বাতিল করা হয়েছে। ঈদযাত্রায় কোনোভাবেই যেন ঝুঁকিপূর্ণ কোনো যানবাহন সড়কে চলতে না পারে এজন্য নির্দেশনা দেওয়া হয়েছে। যানজট কমাতে এবার প্রথমবারের মতো ড্রোন ব্যবহার করা হবে। ড্রোনে লাইভ ভিডিও দেখে সংশ্লিষ্ট স্থানের নির্দেশনা পাঠানো হবে

এছাড়া গার্মেন্টসহ অন্য শিল্প-কলকারখানার শ্রমিকদের একসঙ্গে ছুটি না দিয়ে ধাপে ধাপে ছুটি দেওয়ার বিষয়ে কার্যকর ব্যবস্থা নিতে হবে। জাতীয় মহাসড়ক ও করিডরগুলোর রক্ষণাবেক্ষণ কাজ ঈদের সাত দিন আগেই শেষ করা। সারাদেশের মহাসড়কের চিহ্নিত যানজট স্পট ঈদের আগে ও পরে নিবিড় মনিটরিংয়ের আওতায় আনা। পণ্যবাহী যানবাহনে ঈদের সময় কোনো যাত্রী পরিবহন করা যাবে না এবং নির্দিষ্ট ২২টি সড়ক ও মহাসড়কে থ্রি-হুইলার চলাচল বন্ধ করতে হবে।

৬ দিন বন্ধ ট্রাক-কাভার্ডভ্যান: ঈদের আগে ও পরের তিন দিন করে মোট ছয় দিন মহাসড়কে ট্রাক, কাভার্ডভ্যান ও লরি চলাচল বন্ধ রাখার বিষয়ে প্রস্তাব দেওয়া হয়। তবে নিত্যপ্রয়োজনীয় খাদ্যদ্রব্য, পচনশীল দ্রব্য, তৈরি পোশাকসামগ্রী, ওষুধ, সার এবং জ্বালানি বহনকারী যানবাহন এর আওতামুক্ত থাকবে।

২৪ ঘণ্টা সিএনজি-ফিলিং স্টেশন খোলা: ঈদের দিনসহ আগের সাত দিন ও পরের পাঁচ দিন সার্বক্ষণিক (২৪ ঘণ্টা) সিএনজি গ্যাস ও জ্বালানি বিক্রির (পেট্রল-ডিজেল-অকটেন) ফিলিং স্টেশন খোলা রাখার প্রস্তাব করা হয়। এর বাইরে মহাসড়ক ও করিডরগুলোতে ঈদের সময় মেরামত ও রক্ষণাবেক্ষণের কাজ না করা, তৈরি পোশাক কারখানার কর্মীদের পর্যায়ক্রমে ছুটির ব্যবস্থা করা, পণ্য পরিবহনের গাড়িতে যাত্রী পরিবহন না করার বিষয়ে প্রস্তাব করা হয়।

গত ২১ মার্চ রাজধানীর বনানীতে সড়ক পরিবহন কর্তৃপক্ষের (বিআরটিএ) সদর কার্যালয়ে ঈদ প্রস্তুতি সভায় সড়ক পরিবহন ও সেতুমন্ত্রী ওবায়দুল কাদের বলেন, আমি দীর্ঘদিন ধরে এ সেক্টরের মন্ত্রী। প্রতিবছর ঈদযাত্রার সভা হয়। তবে সভায় যেসব সিদ্ধান্ত নেওয়া হয়, তা ঠিকভাবে পালন হচ্ছে কি না, তা আর পরে মূল্যায়ন হয় না। ঈদে কিছুটা যানজট হবে। একদম যানজটমুক্ত দাবি করা সমীচীন নয়। তিনি বলেন, হাইওয়ে পুলিশের সক্ষমতা আরও বাড়াতে হবে। হাইওয়ে পুলিশ ও বিআরটিএর সক্ষমতা বাড়াতে না পারলে কোনো ভালো সিদ্ধান্ত কার্যকর হবে না। উত্তরবঙ্গের প্রবেশপথ এবং গাজীপুর ঠিক থাকলে, ঈদযাত্রার সব ঠিক থাকবে। হানিফ ফ্লাইওভার থেকে ঢাকায় নির্বিঘ্নে প্রবেশের ব্যবস্থা করতে হবে।

বাংলাদেশ যাত্রীকল্যাণ সমিতির মহাসচিব মো. মোজাম্মেল হক চৌধুরী বলেন, ঈদের আগে ছুটি না বাড়ালে সড়ক ও মহাসড়ক ঘরমুখো মানুষের চাপে স্থবির হয়ে পড়বে। অন্তত ঈদের আগে দুদিন ছুটি বাড়ানো দরকার। এতে মানুষের ঈদযাত্রা নির্বিঘ্ন হবে এবং অনেক মানুষকে দুর্ঘটনার হাত থেকে বাঁচানো যাবে। সরকারের নির্দেশনা অনুসরণ করে ভাগে ভাগে গার্মেন্টস শ্রমিকদের ছুটির সিদ্ধান্ত কার্যকরে সংশ্লিষ্টদের সক্রিয় থাকতে হবে। তিনি বলেন, সড়ক ও মহাসড়কে যানজটপ্রবণ স্পটগুলো বেহাল। যেসব স্পটের তালিকা প্রকাশ করা হয়েছে বাস্তব অবস্থা তার চেয়েও অনেক বেশি। সেসব স্পট ব্যবস্থাপনা করতে সংশ্লিষ্টরা প্রতিবছর ব্যর্থ হন, এবারও তার ব্যতিক্রম হবে না হয়তো।

সড়ক পরিবহন ও মহাসড়ক বিভাগের সচিব এবিএম আমিন উল্লাহ নুরী  বলেন, গত দুটি ঈদ সবার সহযোগিতায় অনেকটাই যানজটমুক্ত রাখতে পেরেছিলাম। এবারও আমরা অনুরোধ করেছি, কিছু স্পট চিহ্নিত করে ঈদযাত্রা নির্বিঘ্ন করতে। আমরা সব জেলা প্রশাসক, বিভাগীয় কমিশনার, পুলিশসহ অংশীজনের সমন্বয়ে একটা সভা করেছি। উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তা, সহকারী কমিশনার (ভূমি), নির্বাহী ম্যাজিস্ট্রেট ও জেলা প্রশাসনের অন্য ম্যাজিস্ট্রেটদের যেন সড়কে রাখা হয় সে অনুরোধ আমরা জেলা প্রশাসকদের করেছি। তারা এ বিষয়ে সম্মতি দিয়েছেন।

হাইওয়ে পুলিশের ডিআইজি (অপারশেনস) শ্যামল কুমার মুখার্জি  বলেন, গুরুত্বপূর্ণ ছয়টি মহাসড়কে যানজট নিরসনে বিশেষ পদক্ষেপ নেওয়া হয়েছে। এরই মধ্যে সংশ্লিষ্টদের সঙ্গে বৈঠক করে নিরাপদ ঈদযাত্রা নিশ্চিত করতে সহযোগিতা চাওয়া হয়েছে। যানজট কমাতে হাইওয়ে পুলিশের একাধিম টিম মহাসড়কে ঈদের আগে থেকে কাজ শুরু করেছে।

ঢাকা রেঞ্জের ডিআইজি সৈয়দ নুরুল ইসলাম বলেন, ঢাকা বিভাগের মধ্যে যানজট কমাতে পুলিশ বিভিন্ন পদক্ষেপ নিয়েছে। বিশেষত, এলেঙ্গায় দেড় কিলোমিটার রাস্তার অবস্থা খারাপ। সেখানে দীর্ঘ যানজট হতে পারে। ঈদের আগে চন্দ্রা এলাকায় গাড়ির তীব্র চাপ সৃষ্টি হয়। কলকারখানার শ্রমিকদের ধাপে ধাপে ছুটি হলে সড়কে চাপ কমানো সম্ভব হবে।

হাইওয়ে পুলিশের প্রধান অতিরিক্ত আইজিপি মো. শাহাবুদ্দিন খান  বলেন, এবারের ঈদযাত্রা স্বস্তিদায়ক করতে দফায় দফায় সভা-সেমিনার হয়েছে। এরই মধ্যে হাইওয়ে পুলিশের সব সদস্যের ছুটি বাতিল করা হয়েছে। ঈদযাত্রায় কোনোভাবেই যেন ঝুঁকিপূর্ণ কোনো যানবাহন সড়কে চলতে না পারে এজন্য নির্দেশনা দেওয়া হয়েছে। যানজট কমাতে এবার প্রথমবারের মতো ড্রোন ব্যবহার করা হবে। ড্রোনে লাইভ ভিডিও দেখে সংশ্লিষ্ট স্থানের নির্দেশনা পাঠানো হবে।

থ্রি-হুইলারকে মহাসড়কের বড় সমস্যা উল্লেখ করে তিনি বলেন, যানজট ও দুর্ঘটনার বড় কারণ এসব গাড়ি। উচ্চ আদালত এসব নছিমন, করিমন, ভটভটি মহাসড়কে চলাচল নিষিদ্ধ করেছেন। তবে অনেক চেষ্টায়ও আমরা মহাসড়ক থেকে এসব গাড়ি প্রত্যাশিত মাত্রায় কমাতে পারিনি। এরমধ্যে যদি ঈদযাত্রায় এসব যানবাহন মহাসড়কে নামে তবে তা হবে ঝুঁকির। এজন্য প্রত্যেক জেলার পুলিশ সুপার ও পরিবহন মালিক-শ্রমিকদের দায়িত্ব নিতে হবে।