Ad0111

সংলাপের নাটক নয়, সংলাপের আগে পদত্যাগ করুন : মির্জা ফখরুল

বিএনপি চেয়ারপারসন  সাবেক প্রধানমন্ত্রী বেগম খালেদা জিয়ার মুক্তি ও সুচিকিৎসার জন্য বিদেশে পাঠানোর দাবিতে আয়োজিত সমাবেশে তিনি এসব কথা বলেন। 

সংলাপের নাটক নয়, সংলাপের আগে পদত্যাগ করুন : মির্জা ফখরুল

প্রথম নিউজ, গাজীপুর : বিএনপি মহাসচিব মির্জা ফখরুল ইসলাম আলমগীর বলেছেন, নির্বাচন কমিশন গঠনের জন্য সংলাপের নামে নতুন নাটক শুরু হয়েছে। এ সরকারের অধীনে কোন নির্বাচন কমিশন কাজ করতে পারে না। তাই সংলাপের নাটক নয়, সংলাপের আগে পদত্যাগ করুন। তিনি বিএনপি চেয়ারপারসন  সাবেক প্রধানমন্ত্রী বেগম খালেদা জিয়ার মুক্তি ও সুচিকিৎসার জন্য বিদেশে পাঠানোর দাবিতে আয়োজিত সমাবেশে তিনি এসব কথা বলেন। 

আজ শুক্রবার বিকালে গাজীপুরের ঐতিহ্যবাহী শহীদ বরকত স্টেডিয়ামে গাজীপুর মহানগর ও জেলা বিএনপি যৌথভাবে সমাবেশের আয়োজন করে। এতে সভাপতিত্ব করেন জেলা বিএনপি'র আহবায়ক এ কে এম মোঃ ফজলুল হক মিলন। মির্জা ফখরুল আরো বলেন, এ সরকারের সময় শেষ হয়েগেছে। তাদের বিদায় ঘন্টা বেজে গেছে। আমেরিকা র্যা বকে স্যাংসান (নিষেধাজ্ঞা) দিয়েছে। তারা র্যা বের কর্মকর্তাদের বিরুদ্ধে নিষেধাজ্ঞা দিয়েছে। তিনি আরো বলেন, কয়েকদিন আগে আমেরিকায় গণতন্ত্র সম্মেলন হয়ে গেল। আমেরিকা ডেকেছিলে শতাধিক রাষ্ট্রকে। সেখানে ভারতের মালদ্বীপের পাকিস্তানের নাম আছে কিন্তু সেখানে বাংলাদেশের নাম নেই। এ সময় তিনি প্রশ্ন করে বলেন, কেন? কারণ বাংলাদেশে এখন গণতান্ত্রিক রাষ্ট্র নয়, এটি এখন একনায়কতন্ত্র। তিনি, বলেন দেশে এখন একনায়ক ছাড়া আর কেউ নাই, এক নেতা এক দেশ। আমি ছাড়া এখন আর আর কেউ নাই, আওয়ামী লীগের অবস্থা তেমনই হয়েছে, সেখানে শেখ হাসিনা ছাড়া আর কিছুই নাই। তিনি দলীয় নেতাকর্মীদের উদ্দেশ্যে বলেন, কেউ কাউকে কিছু দিয়ে দেয় না, সবকিছু আদায় করে নিতে হয়। আওয়ামী লীগ এদেশের প্রভু বা মালিক নয়, এই দেশের মালিক জনগণ। তিনি সরকারি চাকরিজীবীদের উদ্দেশ্যে বলেন, আপনারা কখনো আইন এবং সংবিধান লঙ্ঘন করবেন না। আপনারা জনগনের কথা বুঝেন, জনগনের পাশে দাঁড়ান। জনগণ আজ মুক্তি চায়, জনগণ আজ বেগম খালেদা জিয়ার সুচিকিৎসা চায়। তিনি আরো বলেন, বেগম খালেদা জিয়া প্রথম নারী মুক্তিযোদ্ধা। তিনি গণতান্ত্রিক আন্দোলন সংগ্রাম করে যাচ্ছেন, এখনো দেশকে বাঁচানোর জন্য বন্দি হয়ে আছেন। এসময় তিনি বেগম খালেদা জিয়ার জন্য দোয়া কামনা করে বলেন, আপনার জন্য দোয়া করবেন উনি যেন সুস্থ হয়ে ওঠে আমরা যেন তাকে মুক্ত করে চিকিৎসা করতে পারি এজন্য সুস্থ হয়ে ওঠেন আসুন আমরা ঐক্যবদ্ধ হই একটা আন্দোলনের মাধ্যমে সরকারকে পরিবর্তন করে একটি গণতান্ত্রিক সরকার প্রতিষ্ঠা করতে পারি।
তিনি বলেন, একটা আন্দোলন গড়ে তোলার জন্য আমরা এখানে এসেছি। যারা জোর করে আগের রাতে ভোট নিয়ে জনগণের উপর স্টীম রোলার চালিয়ে দিয়ে রাষ্ট্রযন্ত্র পুলিশ র্যা ব ও অন্যান্য আইনশৃঙ্খলা বাহিনীকে ব্যবহার করে আজকে যারা জনগণের উপর নিপীড়ন অত্যাচার নির্যাতন চালাচ্ছে, তাদের হাত থেকে দেশকে রক্ষার জন্য আমাদের একমাত্র নেত্রী বেগম খালেদা জিয়ার মুক্তির দাবি নিয়ে আমরা আপনাদের সামনে এসেছি। আজকে একটি বিশাল সংকট এই জাতির সামনে। শুধু বিএনপি নয়, সমগ্র জাতি তাদের স্বাধীনতা থাকবে কিনা, তাদের সার্বভৌমত্ব থাকবে কিনা, তাদের ভোটের অধিকার থাকবে কিনা, জনগণের নির্বাচিত প্রতিনিধিকে ক্ষমতায় পাঠাতে পারবে কিনা, জনগণের সরকার গঠন হবে কিনা সেই জন্য আমাদের আজকের এই সভা।
এসময় তিনি আরো বলেন, আপনারা যদি সত্যি স্বাধীন থাকতে চান, আপনারা যদি গণতান্ত্রিক অধিকার ফিরে পেতে চান, তাহলে আপনাদের অবশ্যই শৃংখলার মধ্যে থাকতে হবে, শৃঙ্খলার মধ্যে না থাকলে কোন আন্দোলন সফল হবে না। আপনাদের মধ্যে শৃঙ্খলা না থাকলে শুধু আবেগ দিয়ে, স্লোগান দিয়ে নেত্রীকে মুক্ত করা যাবে না। কোন আন্দোলনে সফল করা যাবে না। আমাদের আন্দোলনের জন্য ত্যাগ স্বীকার করতে হবে। আজকের এই সংকট বিএনপি'র একার নয়, খালেদা জিয়া-তারেক রহমানের নয়, এই সংকট দেশের জনগণের। এইসব মনে রেখে, দেশের সমস্ত মানুষকে ঐক্যবদ্ধ হতে হবে। আমাদের অধিকার প্রতিষ্ঠা করার জন্য, আমাদের ঐক্যবদ্ধ থাকতে হবে। তিনি আরো বলেন, আমরা কথা বলতে পারি না।  কমপক্ষে ৪৪ জন সাংবাদিকের বিরুদ্ধে ডিজিটাল নিরাপত্তা আইনে মামলা হয়েছে, নির্যাতন করা হয়েছে অনেককে। গুম করা হয়েছে আমাদের নেতা ইলিয়াস আলীকে। তিনি ফিরে আসলেন না, তার মেয়ে আজও অপেক্ষা করে, হয়তো তার বাবা ফিরে আসবে।
তিনি বলেন, মাত্র দুই কোটি টাকার মিথ্যা মামলায় দেশনেত্রীকে কারাগারে বন্দি করে রাখা হয়েছে। অথচ গত ১০ বছরে বছরে ৪ লাখ কোটি টাকা বিদেশে পাচার হয়েছে, পৃথিবীর অনেক দেশে বেগম পাড়া তৈরি হয়েছে। তিনি বলেন, ১৯৭১ সালে আমরা মহান মুক্তিযুদ্ধের মাধ্যমে যা অর্জন করেছিলাম, সেই গণতন্ত্র, সকল প্রতিষ্ঠানকে ধ্বংস করা হয়েছে। ভোটাধিকার কেড়ে নেওয়া হয়েছে। ভোটাররা কেন্দ্রে গিয়ে দেখতে পান, ভোট দেওয়া হয়ে গেছে। অথচ আমরা বলেছিলাম, আমার ভোট আমি দেব, যাকে খুশি তাকে দেব। এখন কি সেই ব্যবস্থা আছে? এখন আপনারা কি ভোট দিতে পারেন? এই নির্বাচন হচ্ছে। তিনি বলেন, মানুষ কোথাও নিরাপদ নয়, কক্সবাজারে পর্যটক ধর্ষণের উদাহরণ দিয়ে তিনি বলেন, আমাদের এক বোন স্বামী সন্তান নিয়ে গিয়েছিলেন কক্সবাজারে, সেখানে তিনি ধর্ষিত হয়েছেন। এসময় তিনি বলেন, এই সরকার যতদিন ক্ষমতায় থাকবে, ততদিন এদেশ পুরোপুরি ধ্বংস হয়ে যাবে। ব্যাংক লুট হচ্ছে, আজকে সরকার অর্থনীতির মেগা প্রজেক্ট করছে। তিনি অভিযোগ করে বলেন, এসব প্রকল্প থেকে সরকারের লোকজন কমিশন নিচ্ছে। এ সময় তিনি জনতার উদ্দেশে জানতে চালের দাম এখন কত? ৭০ টাকা। অথচ বলেছিল ১০ টাকা কেজি চাউল দিবে, বিনামূল্যে সার দেবে, আর আজকে তিনগুণ বেশি দামে এসব কিনতে হচ্ছে। তিনি বলেন, এই সরকার সুপরিকল্পিতভাবে আমাদের মুক্তিযুদ্ধের যে অর্জন, স্বাধীনতা আর গণতন্ত্র ধ্বংস করে দিচ্ছে। আমরা যুদ্ধ করেছিলাম গণতন্ত্রের জন্য, একদলীয় শাসন ব্যবস্থার জন্য নয়। আমার দলের প্রতিষ্ঠাতা শহীদ প্রেসিডেন্ট জিয়াউর রহমান স্বাধীনতার ঘোষণা দিয়েছিলেন। দেশে
একদলীয় শাসন ব্যবস্থার বদলে বহুদলীয় গণতান্ত্রিক ব্যবস্থা প্রবর্তন করেছিলেন। তিনি নির্বাচন কমিশন গঠনের চলমান সংলাপের সমালোচনা করে বলেন, এখন চলছে সংলাপ। রাষ্ট্রপতি সাহেব বিভিন্ন দলের নেতাদের দাওয়াত দিচ্ছেন, দাওয়াত দিয়ে বঙ্গভবনে খাওয়া-দাওয়া করাচ্ছেন। তারা নির্বাচন কমিশন গঠন করে। নির্বাচন কমিশন কাজ করতে পারে না। প্রধান নির্বাচন কমিশনারের সমালোচনা করে তিনি বলেন, কে এম নুরুল হুদাকে অনেক বলে-বেহুদা। কোনো নির্বাচনের পরে তিনি বলেন, সকল নির্বাচন অবাধ সুষ্ঠু নিরপেক্ষ হয়েছে। তিনি বলেন, তত্ত্বাবধায়ক সরকারের অধীনে আয়োজিত নির্বাচন সুষ্ঠু এবং নিরপেক্ষ হয়েছিল। যখন আওয়ামী লীগ ক্ষমতায় আসলো, তখন তারা দেখল নিরপেক্ষ সরকারের অধীনে নির্বাচন হলে, তারা ক্ষমতায় ফিরে আসতে পারবো না। তাই তারা দলীয় সরকারের অধীনে নির্বাচন করার লক্ষ্যে তারা তত্ত্বাবধায়ক সরকার বাতিল করে দিল। তাই নির্বাচন কমিশন গঠনের আগে সরকারকে পদত্যাগ করতে হবে।
সমাবেশে আরো বক্তব্য রাখেন, জাতীয়তাবাদী আইনজীবী ফোরামের সাধারণ সম্পাদক অ্যাডভোকেট ফজলুর রহমান, গাজীপুর জেলা বিএনপির আহবায়ক আলহাজ্ব সালাউদ্দিন সরকার, কেন্দ্রীয় বিএনপির সহ সম্পাদক কামরুজ্জামান রতন, বিএনপি'র কেন্দ্রীয় সহ-সাংগঠনিক সম্পাদক এডভোকেট সালাম আজাদ, বিএনপি'র কেন্দ্রীয় নির্বাহী কমিটির সদস্য আলহাজ্ব হাসান উদ্দিন সরকার, জাতীয়তাবাদী যুবদলের কেন্দ্রীয় সভাপতি সাইফুল আলম নীরব, কেন্দ্রীয় কৃষক দলের সাধারণ সম্পাদক শহিদুল ইসলাম বাবুল, কেন্দ্রীয় বিএনপি'র শ্রমবিষয়ক সহ-সম্পাদক হুমায়ুন কবির, বিএনপি'র কেন্দ্রীয় স্বাস্থ্য বিষয়ক সম্পাদক রফিকুল ইসলাম বাচ্চু, বিএনপি'র কেন্দ্রীয় সহ দপ্তর সম্পাদক তাইফুল ইসলাম টিপু, মরহুম সাদেক হোসেন খোকার ছেলে ইশরাক হোসেন, বিএনপি'র কেন্দ্রীয় নির্বাহী কমিটির সদস্য ডা: মাজহারুল আলম, কেন্দ্রীয় স্বেচ্ছাসেবক দলের সভাপতি আবদুল কাদের ভূইয়া জুয়েল, গাজীপুরের কালিয়াকৈর পৌরসভার মেয়র মোঃ মজিবুর রহমান, কেন্দ্রীয় কৃষক দলের সহসভাপতি ওমর ফারুক, জাতীয়তাবাদী আইনজীবী ফোরাম গাজীপুরের সভাপতি অ্যাডভোকেট সিদ্দিকুর রহমান, কেন্দ্রীয় জাতীয়তাবাদী যুবদলের সহ-সভাপতি জাকির হোসেন নান্নু, কেন্দ্রীয় মৎস্যজীবী দলের সদস্য সচিব আব্দুর রহিম, কেন্দ্রীয় স্বেচ্ছাসেবক দলের যুগ্ম সাধারণ সম্পাদক সাইফুল ইসলাম ফিরোজ, কাপাসিয়া উপজেলা বিএনপি'র আহবায়ক শাহ রিয়াজুল হান্নান, শ্রীপুর উপজেলা বিএনপি'র আহবায়ক শাহজাহান ফকির প্রমুখ।

Download করুন আমাদের App এবং Subscribe করুন আমাদের YouTube Channel:

https://apps.apple.com/de/app/prothomnews/id1588984606?l=en

https://play.google.com/store/apps/details?id=com.prothomnews

https://youtube.com/prothom

What's Your Reaction?

like

dislike

love

funny

angry

sad

wow

This site uses cookies. By continuing to browse the site you are agreeing to our use of cookies & privacy Policy from www.prothom.news