সিরাজগঞ্জে আওয়ামী লীগের দু’গ্রুপে সংঘর্ষ, সাংবাদিকসহ আহত ১৫

সংঘর্ষের ঘটনায় আওয়ামী লীগ নেতা আল আমিন বাদী হয়ে একটি মামলা দায়ের করেছে।

সিরাজগঞ্জে আওয়ামী লীগের দু’গ্রুপে সংঘর্ষ, সাংবাদিকসহ আহত ১৫

প্রথম নিউজ, সিরাজগঞ্জ: সিরাজগঞ্জে আওয়ামী লীগের অন্তর্কোন্দলকে কেন্দ্র দু’গ্রুপের সংঘর্ষে দুই সাংবাদিকসহ ১৫ জন আহত হয়েছে। শনিবার বিকেলে বেলকুচি উপজেলা আওয়ামী লীগের কার্যালয়ে এ ঘটনা ঘটে। সংঘর্ষের ঘটনায় আওয়ামী লীগ নেতা আল আমিন বাদী হয়ে একটি মামলা দায়ের করেছে। সেই মামলায় একজনকে আটক করেছে পুলিশ।

সংঘর্ষ চলাকালে সাংবাদিকরা সংবাদ সংগ্রহে গেলে সাংবাদিক উজ্জ্বল অধিকারীকে মারপিট ও আব্দুর রাজ্জাক বাবুকে লাঞ্ছিত করে। 
আহতরা হলো, আওয়ামী লীগ নেতা আলমাসুর রহমান শিকদার, ওয়ার্ড আওয়ামী লীগের সাধারণ সম্পাদক পাভেল শেখ, যুব মহিলা লীগের সভাপতি সুমা খাতুন, সাধারণ সম্পাদক শিরিন আক্তার, অর্থ সম্পাদক আন্না খাতুন, সাবেক মহিলা ভাইস চেয়ারম্যান সুলতানা রাজিয়া মিলন, সাবেক শ্রমিকলীগ নেতা মোতালেব সরকার। সাবেক ছাত্রলীগ নেতা শিপন আহাম্মেদ, যুবলীগ নেতা রিপন বাবু, মনসুর আহাম্মেদ, সাব্বির হোসেন, নাবিন মন্ডল, আব্দুস সালাম, রতন, ওমর ফারুকসহ অন্যান্যরা। আহতদের মধ্যে বেলকুচি কলেজ ছাত্রলীগের সাবেক সভাপতি শিপন আহমেদকে আশংকাজনক অবস্থায় সিরাজগঞ্জ ২৫০ শয্যা বিশিষ্ট বঙ্গমাতা শেখ ফজিলাতুন্নেছা মুজিব জেনারেল হাসপাতালে ভর্তি করা হয়েছে।

রোববার (১৪ মে) সকালে বেলকুচি থানা অফিসার ইনচার্জ (ওসি) আসলাম হোসেন বিষয়টি নিশ্চিত করেছেন। তিনি জানান, উপজেলা আওয়ামী লীগ কার্যালয়ে সংঘর্ষের ঘটনার খবর পেয়ে পুলিশ ঘটনাস্থলে গিয়ে পরিস্থিতি নিয়ন্ত্রণে আনে। তিনি আরো জানান, শনিবার বিকেল থেকে সন্ধ্যা পর্যন্ত দফায় দফায় হামলা ও সংঘর্ষের ঘটনা ঘটে। বর্তমানে পরিস্থিতি নিয়ন্ত্রণে রয়েছে।

বেলকুচি পৌর ছাত্রলীগের সভাপতি আক্তার হামিদ জানান, উপজেলা আওয়ামী লীগ কার্যালয়ে বাংলাদেশ কেন্দ্রীয় ছাত্রলীগের নেতৃবৃন্দের নির্দেশনা অনুযায়ী ঘূর্ণিঝড় মোখা মোকাবেলায় ভূমিকা ও স্থানীয় পৌর মেয়রের সামাজিক যোগাযোগ মাধ্যমে তোরণ নিয়ে অপপ্রচার চালানোর প্রতিবাদ জানিয়ে শান্তিপূর্ণ ভাবে পৌর ছাত্রলীগ সামাবেশ ডাক দেয়। কিন্তু  সমাবেশ শুরুর আগেই মেয়র রেজা ও তার সমর্থকেরা আওয়ামী লীগ কার্যালয়ে এসে আওয়ামী লীগ ও সহযোগী সংগঠনের নেতাকর্মীদের অকর্থ্য ভাষায় গালিগালাজ করে।

পরে এটি এক পর্যায়ে সংঘর্ষে রুপ নেয়। তাতে বেশকিছু নেতাকর্মী আহত হয়। বেলকুচি পৌরসভার মেয়র সাজ্জাদুল হক রেজা বলেন, দুপুর তিনটায় বেলকুচি উপজেলা আওয়ামী লীগ কার্যালয়ে দলীয় নেতাকর্মী নিয়ে চা চক্র ও রাজনৈতিক আলোচনা করতেছিলাম। এমন সময় এমপি আব্দুল মোমিন মন্ডলের অনুসারীরা পরিকল্পিতভাবে পিএস সেলিমের নেতৃত্বে আমাদের নেতা কর্মীর উপরে হামলা চালায়।

উপজেলা আওয়ামী লীগের সাবেক সাধারণ সম্পাদক ফজলুল হক সরকার বলেন, এমপিকে তোরণ সরাতে মেয়র নোটিশ দিয়েছে। এর আগে বেশ কয়েকটা ঘটনা ঘটেছে। এসব ঘটনার প্রতিবাদে প্রতিবাদ সভা ডাকা হয়। দলের নারী কর্মীরা সাড়ে তিনটায় আসে। কিন্তু আগেই মেয়রের লোকজন এসে তাদের ঢুকতে বাঁধা দেয়। এ সময় তাদের মধ্যে কথা কাটাকাটি হয়। এ অবস্থায় এমপির লোকজন এলে উভয়পক্ষের সংঘর্ষ হয়। এতে উভয়পক্ষের কয়েকজন আহত হয়। এরপর পুলিশ এসে তাদের সরিয়ে দেয়ার পর আমরা প্রতিবাদ সভা করেছি।

দৈনিক ইনকিলাব পত্রিকার বেলকুচি প্রতিনিধি আব্দুর রাজ্জাক বাবু বলেন, আমিসহ চার সাংবাদিক দলীয় কার্যালয়ের সামনে পুলিশের পাশে দাঁড়িয়ে আছি। হঠাৎ করে রিজন ও হোসেন অকথ্য ভাষায় গালিগালাজ শুরু করে। এক পর্যায়ে রিজন আমার উপর হামলা চালায়। পরে পুলিশের হস্তক্ষেপে তারা চলে যায়। মিছিল নিয়ে বের হয়ে তারা সাংবাদিক উজ্জল অধিকারীকে মারপিট করে।

বেলকুচি উপজেলা আওয়ামী লীগের সাধারণ সম্পাদক আশানুর বিশ্বাস বলেন, দলের সাবেক সেক্রেটারী ফজলুল হক সরকার বিভিন্ন ওয়ার্ড নেতৃবৃন্দকে তিনি ফোন করে পার্টি অফিসে মিটিংয়ের জন্য ডাকছিলেন। বিষয়টি আমি জানতে পেরে তাকে ফোন দিয়ে বললাম দলের সভাপতি এমপি মমিন মন্ডল দেশের বাইরে, আমিও ঢাকায় রয়েছি। আপনি তো দলের কোন নেতা না, তবে মিটিং ডাকছেন কেন। তিনি বলেন সভাপতির নির্দেশে প্রতিবাদে সভা ডেকেছেন। আমি তাকে বললাম প্রতিবাদ সভা পার্টি অফিসে না করে রাস্তায় করেন। কিন্তু তারপরও তারা পার্টি অফিসে গিয়ে মারামারি করেছে। বিষয়টি জেলা আওয়ামীলীগের সাধারণ সম্পাদককে জানানো হয়েছে।

জেলা আওয়ামী লীগের সাধারণ সম্পাদক আব্দুস সামাদ তালুকদার বলেন, বেলকুচিতে দু’পক্ষের সংঘর্ষে বেশ কজন আহত হওয়ার কথা শুনেছি। তবে কি কারণে দুই পক্ষের সংঘর্ষ হয়েছে এখনো জানি না।