সরকার বিজিবি’র মানোন্নয়নে বিভিন্ন পদক্ষেপ নিয়েছে: প্রধানমন্ত্রী

বর্ডার গার্ড বাংলাদেশ (বিজিবি) দিবস-২০২১” উদযাপন উপলক্ষে এক ভিডিও কনফারেন্সে তিনি এ কথা বলেন।

সরকার বিজিবি’র মানোন্নয়নে বিভিন্ন পদক্ষেপ নিয়েছে: প্রধানমন্ত্রী
প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা

প্রথম নিউজ, ঢাকা: প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা বলেছেন, বর্তমান সরকার বিজিবি’র আভিযানিক সক্ষমতা বৃদ্ধির পাশাপাশি সৈনিকদের জীবনমান উন্নয়নের জন্য ইতিমধ্যে বিভিন্ন ধরণের কল্যাণমূখী পদক্ষেপ গ্রহণ করেছে। 

এসময় প্রধানমন্ত্রী বিজিবি’র প্রশিক্ষণের উপর গুরুত্বারোপ করে বলেন, যেকোন পেশাদার বাহিনীর জন্য প্রশিক্ষণ অত্যন্ত গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা পালন করে। বিজিবি’র একটি মাত্র ট্রেনিং সেন্টার। বর্তমানে বিজিবি’র সাংগঠনিক কাঠামোতে জনবল বৃদ্ধি পাওয়ায় একটি ট্রেনিং সেন্টার অপর্যাপ্ত। এজন্য বিজিবি সদস্যদের প্রশিক্ষণ পরিচালনার সুবিধার্থে চুয়াডাঙ্গা জেলায় নতুনভাবে আরও একটি বর্ডার গার্ড ট্রেনিং সেন্টার এন্ড কলেজ সৃজনের কার্যক্রম চলমান রয়েছে। 

‘দিন-রাত নিরবিচ্ছিন্ন আভিযানিক কার্যক্রম পরিচালনা এবং নজরদারীর মাধ্যমে দেশের সার্বভৌমত্ব ও সীমান্তের নিরাপত্তা রক্ষাসহ চোরাচালান প্রতিরোধ, মাদক, নারী ও শিশু পাচাররোধের পাশাপাশি বিভিন্ন জাতীয় ও স্থানীয় নির্বাচনে আইন-শৃঙ্খলা পরিস্থিতি নিয়ন্ত্রণ, সম্প্রতি দূর্গাপুজাকে কেন্দ্র করে সাম্প্রদায়িক সম্প্রীতি বিনষ্টকারীদের বিরুদ্ধে পরিচালিত অভিযানে তারা বিশেষ ভূমিকা পালন করছে।’

আজ রবিবার (১৯ ডিসেম্বর) বর্ডার গার্ড বাংলাদেশ (বিজিবি) দিবস-২০২১” উদযাপন উপলক্ষে এক ভিডিও কনফারেন্সে প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা এ কথা বলেন।

এসময় মাননীয় প্রধানমন্ত্রী ভিডিও কনফারেন্সে আরো বলেন, জাতির পিতা বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমান ১৯৭৩ সালের ৮ জানুয়ারি পিলখানায় তৎকালীন বাংলাদেশ রাইফেন্স এর ১ম ব্যাচের শিক্ষা সমাপনী কুচকাওয়াজ পরিদর্শন ও অভিবাদন গ্রহণ করেন। তিনি এ বাহিনীকে যুযোপযোগী করে গড়ে তুলতে এর
পুনর্গঠন ও আধুনিকায়নের কাজ শুরু করেন। জাতির পিতার পদাঙ্ক অনুসরণ করে বর্তমান আওয়ামী লীগ সরকার ২০০৯ সাল থেকে এ বাহিনীকে যুযোপযোগী সীমান্তরক্ষী বাহিনী হিসেবে গড়ে তোলার লক্ষ্যে বর্ডার গার্ড বাংলাদেশ আইন-২০১০' প্রণয়নসহ ‘বর্ডার গার্ড বাংলাদেশ ভিশন-২০৪১' এর পরিকল্পনা গ্রহণ করে। 

প্রধানমন্ত্রী বলেন, এরই ধারাবাহিকতায় বাহিনীকে আরও গতিশীল করার লক্ষ্যে সমগ্র বাংলাদেশের দায়িত্বপূর্ণ এলাকা পুনর্বিন্যাস করে বিজিবি'র সাংগঠনিক কাঠামোতে ৫টি রিজিয়ন, সেক্টর এবং ইউনিট সৃজন করে
কমান্ডস্তরে ভারসাম্য সৃষ্টি করা হয়েছে। এ লক্ষ্যে ২০০৯ সাল হতে চলতি বছর পর্যন্ত ৩৩ হাজারের অধিক জনবল নিয়োগ করা হয়েছে। নতুন ১৫ হাজার জনবল নিয়েগের কার্যক্রম চলমান রয়েছে।

তিনি বলেন, বিশ্বব্যাপী নারীর ক্ষমতায়ন ও লিঙ্গ বৈষম্য দূরীকরণের লক্ষ্যে এবং কর্মক্ষেত্রে পুরুষের পাশাপাশি নারীদের অংশগ্রহণ নিশ্চিতকল্পে ২০১৫ সাল হতে অদ্যাবধি সর্বমোট ৮৬৮ জন মহিলা সৈনিক ভর্তি করা হয়েছে। আগামী ২০৪১ সাল নাগাদ এ বাহিনীর জনবল ৯২ হাজারে উন্নীত করার পরিকল্পনা গ্রহণ করা হয়েছে।

‘একুশ শতকের চ্যালেঞ্জ মোকাবিলায় বিজিবিকে একটি আধুনিক ও বিশ্বের অন্যতম শ্রেষ্ঠ সীমান্তরক্ষী বাহিনী হিসেবে গড়ে তোলার লক্ষ্যে ইতোমধ্যে বিজিবিতে ২টি অত্যাধুনিক Mi-171E হেলিকপ্টার সংযােজনের মাধ্যমে এ বাহিনীকে একটি ত্রিমাত্রিক বাহিনী' হিসেবে গড়ে তোলা হয়েছে। বিজিবি এখন জল, স্থল ও আকাশ পথে দায়িত্ব পালনে সক্ষম। এ বাহিনীকে আধুনিকায়নের লক্ষ্যে। এবং দেশের সীমান্ত এলাকায় নিচ্ছিদ্র নজরদারি ও আন্তঃসীমান্ত অপরাধ দমনে ঝুঁকিপূর্ণ সীমান্তে 'স্মার্ট ডিজিটাল সার্ভেইল্যান্স এন্ড ট্যাকটিকাল বর্ডার রেসপন্স সিস্টেম স্থাপন করা হয়েছে।’

প্রধানমন্ত্রী আরো বলেন, বিজিবির সাংগঠনিক কাঠামোতে ১২টি আর্মাড পার্সোনেল ক্যারিয়ার (এপিসি),
১০টি রায়ট কন্ট্রোল ভেহিক্যাল, ২৪৭টি A|| Terrain Vehicle (ATV), উচ্চ ক্ষমতাসম্পন্ন বিভিন্ন সিরিজের ১২টি হাইস্পীড বোট, ২টিভেহিক্যাল এক্সরে স্ক্যানার মেশিন সংযোজন করা হয়েছে। এছাড়াও বিজিবির সাংগঠনিক কাঠামো হতে অতি পুরাতন ট্যাংক বিধ্বংসী অস্ত্র বিলুপ্ত করে তদস্থলে ১৪টি আধুনিক ও যুযোপযোগী এন্টি ট্যাংক গাইডেড উইপন্স সংযোজন করা হয়েছে।

‘বিজিবিতে এসব অত্যাধুনিক ও যুযোপযোগী অস্ত্র-সরঞ্জামাদি যুক্ত হওয়ায় এ বাহিনীর আভিযানিক সক্ষমতা বৃদ্ধির পাশাপাশি সৈনিকদের মনোবল ও কর্মউদ্দীপনা বহুগুণ বৃদ্ধি পেয়েছে। বর্তমান সরকার পার্বত্য সীমান্তের নিরাপত্তা বৃদ্ধি, দুর্গম এলাকায় বসবাসকারী জনসাধারণের আর্থ সামাজিক উন্নয়নের প্রয়োজনে সর্বমোট ১,০৩৬ কিঃ মিঃ সীমান্ত সড়ক নির্মাণের পরিকল্পনা গ্রহণ করে ১ম পর্বে বাংলাদেশ সেনাবাহিনী কর্তৃক পার্বত্য সীমান্ত এলাকায় ৩১৭ কিঃ মিঃ রাস্তা নির্মাণের কাজ চলমান রয়েছে। সীমান্ত সড়ক নির্মাণের সাথে পার্বত্য অঞ্চলের দূরবর্তী বিওপিসমূহ সীমান্তের কাছাকাছি নেয়ার পরিকল্পনা গ্রহণ করা হয়েছে। ফলে সীমান্ত সুরক্ষার পাশাপাশি পার্বত্য অঞ্চলে স্থিতিশীলতা বজায় রাখার ক্ষেত্রে বিজিবি’র আভিযানিক কর্মকাণ্ড সহজতর হবে।’

শেখ হাসিনা বলেন, ভারত এবং মায়ানমার সীমান্তে1 ৪টি ব্যাটালিয়ন এবং সুন্দরবন এলাকায় ২টি ভাসমান বিওপিসহ মোট ৬২টি বিওপি সৃজনের মাধ্যমে প্রায় সাড়ে ৫শত কিলোমিটার অরক্ষিত সীমান্তের মধ্যে ৪ শতাধিক কিলোমিটার সীমান্তই ইতোমধ্যে নজরদারীর আওতায় আনা হয়েছে। খুব শীঘ্রই অবশিষ্ট প্রায় দেড় শত কিলোমিটার অরক্ষিত সীমান্তকে নজরদারির আওতায় আনা হবে।

অভ্যন্তরীণ আইন-শৃঙ্খলা রক্ষায় বেসামরিক প্রশাসনকে সহায়তা প্রদান এবং বাংলাদেশে আশ্রয় গ্রহণকারী বলপূর্বক বাস্তুচ্যুত মায়ানমার নাগরিকদের (FDMN) ক্যাম্পের নিরাপত্তা ও শৃঙ্খলা রক্ষা এবং অবৈধ মায়ানমার নাগরিকদের বাংলাদেশে অনুপ্রবেশ রোধে বিজিবি’র ভূমিকার ভূয়সী প্রশংসা করে, মাননীয় প্রধানমন্ত্রী সকল বিজিবি সদস্যের প্রতি ধন্যবাদ জ্ঞাপন করেন এবং ভবিষ্যতে এই সফলতা আরও বৃদ্ধির লক্ষ্যে বিজিবি সর্বাত্মক প্রচেষ্টা অব্যাহত রাখবে বলে তিনি আশা করেন।

প্রধানমন্ত্রী আরো বলেন, বর্তমান সরকার বিজিবি’র আভিযানিক সক্ষমতা বৃদ্ধির পাশাপাশি সৈনিকদের জীবনমান উন্নয়নে। বিভিন্ন ধরণের কল্যাণমূখী পদক্ষেপ গ্রহণ করেছে। বিজিবি সদর দপ্তর পিলখানা, ঢাকায় একটি অত্যাধুনিক সীমান্ত সম্মেলন কেন্দ্র নির্মাণসহ ৪টি সৈনিক ব্যারাক এবং সকল রিজিয়ন/প্রতিষ্ঠান/সেক্টর/ব্যাটালিয়নের আবাসন ও অন্যান্য সুবিধা বৃদ্ধিকল্পে সর্বমোট ১১৩টি স্থাপনা নির্মাণ করা হয়েছে।

ডিজিটালাইজেশনের মাধ্যমে বর্ডার গার্ড হাসপাতালসমূহের কার্যক্রমকে শক্তিশালীকরণ শীর্ষক প্রকল্পের
আওতায় বিজিবি হাসপাতাল সমূহে অত্যাধুনিক চিকিৎসা সরঞ্জমাদি সংযোজন করে বিজিবি সদস্য ও তাদের পরিবারবর্গের পাশাপাশি সাধারণ জনগণকে চিকিৎসা সেবা প্রদান করা হচ্ছে। ২০০৯ সাল হতে এ যাবৎ ৪৫,৩৮৩ জন বিজিবি সদস্যকে পদোন্নতি প্রদান করা হয়েছে। এ যাবৎ ১১ জন বিজিবি সদস্যকে
এসটিএমকে/মেহেনী মিশনে কুয়েত প্রেরণ করা হয়েছে এবং আরও ১৬ জনকে পর্যায়ক্রমে মিশনে প্রেরণের কার্যক্রম চলমান রয়েছে।

বিজিবিতে কর্মরত পোশাকধারী সদস্যদের চুলকাটা ও পোশাক ধোলাই ভাতা ১১৫/- টাকার পরিবর্তে ৩০০/- টাকা নির্ধারণ করা হয়েছে। এছাড়াও বিজিবি সদস্যদের রেশন সুবিধা বৃদ্ধি করা হয়েছে এবং অবসরপ্রাপ্ত বিজিবি সদস্যদের আজীবন রেশন সুবিধা প্রদানের ব্যবস্থা করা হচ্ছে।

এসময় মাননীয় প্রধানমন্ত্রী বলেন, বঙ্গবন্ধু একটি সুখী-সমৃদ্ধ, ক্ষুধা ও দারিদ্রমুক্ত সােনার বাংলা গড়ার স্বপ্ন দেখেছিলেন। বঙ্গবন্ধুর সেই স্বপ্ন বাস্তবায়নের মাধ্যমে এ দেশের মানুষের ভাগ্য উন্নয়নে বর্তমান সরকার নিরলসভাবে কাজ করে যাচ্ছে। করোনার এই মহামারির মধ্যেও উন্নয়নের রোল মডেল হিসেবে বাংলাদেশ আজ বিশ্বে সমাদৃত। ২০৪১ সালের মধ্যে উন্নত সমৃদ্ধ বাংলাদেশ গঠনে বর্তমান। সরকার বদ্ধ পরিকর। এই বিশাল দায়িত্ব পালন শুধু সরকারের একার পক্ষে সম্ভব নয়, এজন্য সকলের আন্তরিক সহযোগিতা প্রয়োজন।
এজন্য সকলকে মহান মুক্তিযুদ্ধের চেতনায়, দেশপ্রেম, সততা ও শৃঙ্খলার সাথে নিজ নিজ দায়িত্ব পালন করার জন্য আহবান জানান।

তিনি বলেন, বর্ডার গার্ড বাংলাদেশ (বিজিবি)-এর উন্নয়নের ধারাবাহিকতা বজায় রাখতে বর্তমান সরকারের আন্তরিক প্রচেষ্টা এবং সহযোগিতা সবসময়ই অব্যাহত থাকবে। জাতির পিতার প্রত্যাশিত আধুনিক সীমান্তরক্ষী বাহিনী হিসেবে বর্ডার গার্ড বাংলাদেশ তার অভীষ্ট লক্ষ্যে এগিয়ে যাবে এবং বাংলাদেশের মানুষের আস্থার প্রতীক হয়ে সীমান্তের অতন্দ্র প্রহরী হিসেবে বিজিবি।

একদিন বিশ্বের শ্রেষ্ঠতম সীমান্তরক্ষী বাহিনী হিসেবে আত্মপ্রকাশ করবে বলে তিনি প্রত্যাশা ব্যক্ত করেন।

ভাষণ প্রদান শেষে মাননীয় প্রধানমন্ত্রী সদর দপ্তর বিজিবি, পিলখানায় নব নির্মিত সীমান্ত সম্মেলন কেন্দ্র’ এর শুভ উদ্বোধন ঘোষণা করেন।

এরপর ডগ মার্চ, ট্রিক ড্রিল, বর্ণাঢ্য মোটর শোভাযাত্রা এবং স্বাধীনতার সূবর্ণ জয়ন্তী ও মুজিব শতবর্ষ উদযাপন উপলক্ষে বীরশ্রেষ্ঠ নুর মোহাম্মদ শেখ পাবলিক স্কুল এন্ড কলেজ ও বীরশ্রেষ্ঠ মুন্সী আব্দুর রউফ পাবলিক কলেজের শিক্ষার্থীদের পরিবেশনায় সম্মিলিত প্রদর্শনী অনুষ্ঠিত হয়।