Ad0111

সভাপতি জয়ের অতীত ঘিরে বিভক্তি: ছাত্রলীগে কাদা ছোড়াছুড়ি

সভাপতি জয়ের অতীত ঘিরে বিভক্তি: ছাত্রলীগে কাদা ছোড়াছুড়ি
ছাত্রলীগের বর্তমান সভাপতির বিরুদ্ধে অভিযোগ তোলা হয়েছে একসময় ছাত্রদলের রাজনীতির সঙ্গে সম্পৃক্ত ছিলেন তিনি (ডানে)। বাঁয়ে অভিযোগ উত্থাপনকারী ছাত্রলীগের সহ-সভাপতি ইয়াজ আল রিয়াদ।

প্রথম নিউজ, ঢাকা: আওয়ামী লীগের ভ্রাতৃপ্রতীম সংগঠন বাংলাদেশ ছাত্রলীগের বর্তমান কেন্দ্রীয় কমিটির সভাপতি আল নাহিয়ান খান জয়ের অতীত নিয়ে দু’ভাগে বিভক্ত হয়ে পড়েছেন সংগঠনের নেতাকর্মীরা। মেয়াদোত্তীর্ণ কমিটির সভাপতিকে নিয়ে চলমান এই বিতর্কের সূত্রপাত একই কমিটির সহ-সভাপতি ইয়াজ আল রিয়াদের একটি বক্তব্যে। 

রিয়াদের বক্তব্য ঘিরে দু’ভাগ হওয়া নেতাকর্মীদের মধ্যে যারা জয়ের পক্ষ নিয়েছেন তারা বলছেন, জয় ভেসে আসেননি, সবসময় ছাত্রলীগের রাজনীতি করেছেন। আর রিয়াদের সঙ্গে সুর মিলিয়ে অন্য অংশের নেতাকর্মীরা বলছেন, এক সময় ছাত্রদলের রাজনীতির সঙ্গে জড়িত ছিলেন জয়। 

ছাত্রলীগের সাবেক সভাপতি রেজওয়ানুল হক চৌধুরী শোভন এবং সাধারণ সম্পাদক গোলাম রাব্বানীর বিরুদ্ধে চাঁদাবাজির অভিযোগ ওঠার পর ২০১৯ সালের সেপ্টেম্বরে তাদের কমিটি থেকে সরিয়ে দেওয়া হয়। ওই বিশেষ পরিস্থিতিতে ছাত্রলীগের নেতৃত্বে এসেছিলেন সভাপতি আল নাহিয়ান খান জয় ও সাধারণ সম্পাদক লেখক ভট্টাচার্য। তখন তারা ভারপ্রাপ্ত হিসেবে দায়িত্ব পালন শুরু করেন। এরপর ২০২০ সালের জানুয়ারিতে ছাত্রলীগের ৭২তম প্রতিষ্ঠাবার্ষিকীর অনুষ্ঠানে তাদের আনুষ্ঠানিকভাবে সভাপতি-সম্পাদকের পূর্ণ দায়িত্ব দেওয়া হয়। 

দু’বছর কেটে যাওয়ার পর এখন সভাপতিকে নিয়ে বিতর্ক তুলে সহ-সভাপতি ইয়াজ আল রিয়াদ বলছেন, ২০০৮ সালের জাতীয় সংসদ নির্বাচনে আল নাহিয়ান খান জয় ছাত্রদলের হয়ে ধানের শীষে ভোট চেয়েছেন। আর ১৯৯৬ সালের ১৫ ফেব্রুয়ারির নির্বাচনে জয়ের বাবা বিএনপির ‘ডামি প্রার্থী’ ছিলেন। 

এতদিন পর কেন এসব অভিযোগ তোলা হচ্ছে জানতে চাইলে ইয়াজ আল রিয়াদ বলেন, আগে আমি জানতাম শুধু তার পরিবার বিএনপি করে। তার বিষয়ে জানতাম না। দায়িত্বশীল জায়গায় থাকলে মানুষের অনেক কিছু বের হয়ে আসে। আগে তেমন খোঁজ-খবর নেওয়া হয় না। জয় যেহেতু এখন দায়িত্বে রয়েছেন, তাই এগুলো বের হয়ে এসেছে। দায়িত্ব পালন করতে গেলে ভুল হতে পারে, অনেক অভিযোগ উঠতে পারে। তার দায়িত্ব অভিযোগগুলো খণ্ডন করা। 

তবে রিয়াদের এসব বক্তব্য মানতে নারাজ অনেকে। তারা উল্টো আঙুল তুলছেন রিয়াদের দিকেই। বলছেন, ভারপ্রাপ্ত সভাপতি হতে না পারা, অনৈতিক আবদার আর তদবির পূরণ না করায় এসব মিথ্যা অভিযোগ তুলছেন ইয়াজ আল রিয়াদ।  আবার ইয়াজ আল রিয়াদের পক্ষে অবস্থান নেওয়া নেতাকর্মীরা বলছেন, জয়ের বিরুদ্ধে আনা অভিযোগ সত্য। যদি তা না হতো, তবে তিনি আত্মপক্ষ সমর্থন করতেন। যেহেতু এ বিষয়ে তিনি কিছুই বলেননি, তাই অভিযোগ সত্য বলে প্রমাণিত। 

ইয়াজ আল রিয়াদের পক্ষে যারা অবস্থান নিয়েছেন তাদের মধ্যে রয়েছেন- ছাত্রলীগের সহ-সভাপতি সোহান খান, মাজহারুল ইসলাম শামীম, সৈয়দ আরিফ হোসেন, যুগ্ম সাধারণ সম্পাদক আরিফুজ্জামান আল ইমরান, মাহবুব খান, সাবেক আন্তর্জাতিক বিষয়ক উপ-সম্পাদক ইমদাদ হোসেন সোহাগ, সাবেক দফতর বিষয়ক উপ-সম্পাদক শেখ নকিবুল ইসলাম সুমন, সাবেক সহ-সম্পাদক এস এম মামুন।

অন্যদিকে সভাপতি জয়ের পক্ষে অবস্থান নিয়েছেন ছাত্রলীগের সহ-সভাপতি রেজাউল করিম সুমন, তিলোত্তমা শিকদার, রাকিব হোসেন, সাইফ বাবু, তানজিদুল ইসলাম শিমুল, রাকিবুল ইসলাম ঐতিহ্য, উপ-সাহিত্য সম্পাদক এস এম রিয়াদ। 

ছাত্রলীগ সহ-সভাপতি সোহান খান বলছেন, ইয়াজ আল রিয়াদ ছাত্রলীগ সভাপতি জয়ের এলাকার ছেলে; তারা দীর্ঘদিনের বন্ধুও বটে। তাছাড়া ইয়াজ আওয়ামী পরিবারের সন্তান হয়ে এত বড় মিথ্যা বলার কথা নয়। জয় যখন হলের সাধারণ সম্পাদক হন, তখন এ নিয়ে একটু আলোচনা হয়েছিল, কোনো কারণে সেটা ধামাচাপা পড়ে যায়। অভিযোগ মিথ্যা হলে ছাত্রলীগ সভাপতির উচিত নৈতিক জায়গা থেকে জবাব দেওয়া। 

জয়ের চুপ থাকা মানে অভিযোগ মেনে নেওয়া— উল্লেখ করে আরেক সহ-সভাপতি সৈয়দ আরিফ হোসেন বলেন, অভিযোগ উঠতেই পারে, এটা স্বাভাবিক বিষয়। সে অভিযোগের পরিপ্রেক্ষিতে ছাত্রলীগ সভাপতি যেহেতু চুপ রয়েছেন, তার মানে অভিযোগ সত্য। জবাব না দিয়ে উল্টো তিনি তার অনুসারীদের দিয়ে অভিযোগকারীদের বিরুদ্ধে নানা অপপ্রচার চালাচ্ছেন এবং ছাত্রলীগ নেতাদের একে অপরের মুখোমুখি দাঁড় করাচ্ছেন। যার ফল মোটেও ভালো হবে না। 

অভিযোগের বিষয়ে বক্তব্য জানতে ছাত্রলীগ সভাপতি আল নাহিয়ান খান জয়ের সঙ্গে কথা বলার চেষ্টা করা হলেও  তিনি ফোন রিসিভ করেননি। 

অবশ্যই উদ্দেশ্যপ্রণোদিত: জয়ের পক্ষ নিয়ে ছাত্রলীগ সহ-সভাপতি রেজাউল করিম সুমন বলেন, আমরা ব্যক্তিগত চাওয়া-পাওয়াগুলো রাজনীতির মাধ্যমে হাসিল করতে চাই। যখন চাওয়া-পাওয়ার অমিল হয়, তখন দোষ-ত্রুটি খুঁজে প্রচার করি। জয় তো আর নতুন করে কোনো পদে নেই, তিনি আগে হলের উপ-সম্পাদক, সাধারণ সম্পাদক, সহ-সভাপতি, তারপর ভারপ্রাপ্ত সভাপতি হয়েছেন। বর্তমানে তার মেয়াদও শেষের দিকে। এই সময়ে এসে এসব কথা বলা অবশ্যই উদ্দেশ্যপ্রণোদিত। 

তিনি আরও বলেন, আমি যতটুকু জানি, ইয়াজ আল রিয়াদের এক ভাইয়ের নামে অনেকগুলো মামলা আছে, জেলও হয়েছে। ওই বিষয়ে রিয়াদ জয়কে খুব করে অনুরোধ করেন আইনমন্ত্রী বা কোনো মাধ্যমে তাকে জেল থেকে মুক্ত করা যায় কি না দেখতে। কিন্তু এই কাজটা জয় করেননি। এরপর থেকে জয়ের বিরুদ্ধে তিনি কথা বলা শুরু করেছেন। 

এতদিন গোপন করেছেন কেন: আরেক সহ-সভাপতি সাইফ বাবু বলেন, আমি জয়কে ১০ বছর ধরে চিনি। কিন্তু ইয়াজ তাকে আমার চেয়েও বেশি চেনে। এতদিন একসাথে রাজনীতি করেছে, ভালো বন্ধুত্ব ছিল। যদি জয় ছাত্রদল করত তাহলে সে এতদিন গোপন করেছে কেন? ইয়াজ লাইভে বলল, আদর্শ ও নৈতিক জায়গা থেকে এই অভিযোগগুলো তুলেছে। তাহলে এতদিন তার আদর্শ কোথায় ছিল? এটা সম্পূর্ণ তার ব্যক্তিগত স্বার্থের বিষয়, স্বার্থের কারণেই সে এমন করছে। এখানে যতটা না আদর্শ, তার চেয়ে বেশি ব্যক্তি জয়ের চরিত্র হনন করা তার উদ্দেশ্য। কারো চরিত্র হনন করে ছাত্রলীগের নেতৃত্বে যাওয়া সম্ভব নয়।

উপ-সাহিত্য সম্পাদক এস এম রিয়াদ বলেন, কেউ চাইলে যেকোনো সময় অভিযোগ দিতে পারেন। কিন্তু অভিযোগ কতটা সত্য, কতটা গ্রহণযোগ্য সেটা বিচার করতে হবে। এর আগে জয় যখন প্রার্থী হয়েছিলেন, সেসময়ও অনেক বানোয়াট অভিযোগ এসেছিল। এটা নতুন কিছু নয়। অভিযোগগুলো প্রধানমন্ত্রীর দফতর থেকে শুরু করে গোয়েন্দা সংস্থাসহ সব জায়গা থেকে যাচাই-বাছাই করা হয়েছে। 

স্বার্থের দ্বন্দ্বে ইয়াজ আল রিয়াদ এমন করছেন উল্লেখ করে তিনি বলেন, এক সময় জয়ের পক্ষ নিয়ে এসব অভিযোগের প্রতিবাদ করেছিলেন ইয়াজ আল রিয়াদ। কিন্তু এখন স্বার্থের দ্বন্দ্ব; ভারপ্রাপ্ত সভাপতি হতে না পারায় ক্ষোভ থেকে ব্যক্তিগত আক্রমণ করছেন। এছাড়া চাকরি ও কমিটিসহ বিভিন্ন অনৈতিক তদবিরে জয় সাড়া না পাওয়ায় তার সঙ্গে স্বার্থের দ্বন্দ্ব শুরু হয়েছে। 

রাকিবুল ইসলাম ঐতিহ্য বলেন, রিয়াদ যে অভিযোগগুলো তুলেছেন এগুলো সম্পূর্ণ মনগড়া। তিনি হয়তো ছাত্রলীগ সভাপতি থেকে সুযোগ-সুবিধা লাভ থেকে বঞ্চিত হয়েছেন, যতটা তিনি প্রত্যাশা করেছিলেন। আমরা দেখেছি, কিছুদিন আগে ছাত্রলীগের ভারপ্রাপ্ত সভাপতি হওয়ার জন্য জয় ভাইয়ের কাছে আবদার করেছিলেন তিনি। কিন্তু সফল হননি। 

যা বলেছিলেন ইয়াজ আল রিয়াদ : গেল শনিবার (১৫ জানুয়ারি) ফেসবুক লাইভে এসে ইয়াজ আল রিয়াদ বলেন, ২০০৮ সালের নির্বাচনের আগে ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ে ভর্তি পরীক্ষা দিয়েছিলেন ছাত্রলীগ সভাপতি আল নাহিয়ান খান জয়। তখন তিনি সলিমুল্লাহ মুসলিম হলে থেকে ভর্তি কোচিং করেছিলেন। এস এম হলে তখন জয়ের আপন ফুফাতো ভাই আদনান আলম বাবু (সরপো বাবু) ছাত্রদলের সভাপতি ছিলেন। তার রুমে থেকে পড়াশোনা করতেন জয়। ২০০৮ সালের ২৯ ডিসেম্বর নির্বাচনে জয় ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ে ধানের শীষে ভোট চেয়েছিলেন। 

ছাত্রলীগের এ সহ-সভাপতি আরও অভিযোগ করেন, ১৯৯১ সালের নির্বাচনে বরিশালের উজিরপুর থেকে বিএনপির হয়ে এমপি পদে মনোনয়ন চেয়েছিলেন জয়ের বাবা আব্দুল আলী খান। তাকে মনোনয়ন দেওয়া হয়নি। বিএনপি ক্ষমতায় আসার পর তার বাবা বিএনপি নেতা আব্দুল আউয়াল মিন্টুর বিমা কোম্পানিতে চাকরি করেন। এরপর বিএনপি নেতা ব্যারিস্টার নাজমুল হুদার পিএ হিসেবেও দায়িত্ব পালন করেন তিনি। ১৯৯৬ সালের ১৫ফেব্রুয়ারির নির্বাচনে জয়ের বাবা বিএনপি থেকে আবারও মনোনয়ন চান। এ নির্বাচন আওয়ামী লীগ বর্জন করে। জামায়াত-বিএনপির সাথে ফ্রিডম পার্টি এ নির্বাচনে অংশ নিয়েছিল। সেই নির্বাচনে জয়ের বাবা এমপি পদে বিএনপি-জামায়াতের ডামি ক্যান্ডিডেট ছিলেন। 

তিনি আরও বলেন, জয়ের আপন চাচাতো ভাই কামরুল হাসান হিমু জাহাঙ্গীরনগর ইউনিয়নে ২০০১ সালে নির্বাচনের পর আওয়ামী লীগের নেতাকর্মীদের বাড়ি-ঘরে হামলা করেন। নেতাকর্মীদের মারধর করেন। বেগম খালেদা জিয়াকে গ্রেফতার করে জেলে নেওয়ার পর তার চাচাতো ভাইয়ের নেতৃত্বে বিএনপির মিছিল হয়েছিল। তখন শেখ হাসিনাকে নিয়ে কটূক্তি করেন তার নিজের ভাই। পরে তার (জয়) ক্ষমতাবলে নৌকাকে হারিয়ে বিএনপিপ্রার্থী হিসেবে তার চাচাতো ভাইকে ইউপি নির্বাচনে জয়লাভে সহায়তা করেছেন। 

Download করুন আমাদের App এবং Subscribe করুন আমাদের YouTube Channel:

https://apps.apple.com/de/app/prothomnews/id1588984606?l=en

https://play.google.com/store/apps/details?id=com.prothomnews

https://youtube.com/prothom

What's Your Reaction?

like

dislike

love

funny

angry

sad

wow

This site uses cookies. By continuing to browse the site you are agreeing to our use of cookies & privacy Policy from www.prothom.news