স্বল্প মেয়াদে সাজাপ্রাপ্ত মাদক মামলার আসামিদের মুক্তির প্রস্তাব

দেশের ৬৮টি কারাগারে প্রায় ৮৭ হাজার বন্দি রয়েছে। এরমধ্যে প্রায় ২২ শতাংশই মাদক মামলার বন্দি। এরমধ্যে সাড়ে ৩ হাজার নারী মাদক মামলায় বন্দি রয়েছে।

স্বল্প মেয়াদে সাজাপ্রাপ্ত মাদক মামলার আসামিদের মুক্তির প্রস্তাব
স্বল্প মেয়াদে সাজাপ্রাপ্ত মাদক মামলার আসামিদের মুক্তির প্রস্তাব

প্রথম নিউজ, ডেস্ক : মাদক মামলায় যে সব আসামি আদালত থেকে স্বল্প মেয়াদে সাজা পেয়েছে তাদের ভালো কাজের শর্তে ছেড়ে দেয়ার অনুরোধ করেছে মাদকদ্রব্য নিয়ন্ত্রণ অধিদপ্তর। জাতীয় শুদ্ধাচার কৌশলের আওতায় অপরাধী ব্যক্তিকে একবার সংশোধনের সুযোগ দিতে এই প্রস্তাব অধিদপ্তরের। এ ছাড়া শুদ্ধাচার কৌশলের অংশ হিসেবে রাষ্ট্রে স্থায়ীভাবে মাদক বন্ধ, মাদক বন্ধে পুরনো ব্যবসায়ীদের সোর্স করে সহযোগিতা নেয়া, মাদক বন্ধে দীর্ঘমেয়াদি পরিকল্পনা বাস্তবায়ন ও সামাজিক দৃষ্টান্ত স্থাপনসহ কর্তৃপক্ষ স্বরাষ্ট্র মন্ত্রণালয়ের সুরক্ষা সেবা বিভাগকে প্রস্তাব দেয়া হয়েছে। ইতিমধ্যে মাদকদ্রব্য নিয়ন্ত্রণ অধিদপ্তর এ বিষয়ে একটি খসড়া প্রস্তুত করেছে। খসড়ায় কোনো আইনগত জটিলতা আছে কিনা সেগুলো কর্তৃপক্ষ খুঁটিয়ে দেখছে। মাদক দ্রব্য নিয়ন্ত্রণ অধিদপ্তর সূত্রে এসব তথ্য জানা গেছে।

খসড়ায় ভালো কাজের শর্তে ১২টি কাজের কথা বলা হয়েছে। এর মধ্যে রয়েছে- মাদক দমনে আইনশৃঙ্খলা বাহিনীকে সহযোগিতা করা, সামাজিক কাজে নিঃস্বার্থভাবে অংশগ্রহণ, রাষ্ট্রের কাজে জনপ্রতিনিধিদের সহযোগিতা করা, সামাজিক বনায়নে অংশ নেয়া ও বই পড়া। সূত্র জানায়, দেশের ৬৮টি কারাগারে প্রায় ৮৭ হাজার বন্দি রয়েছে। এরমধ্যে প্রায় ২২ শতাংশই মাদক মামলার বন্দি। এরমধ্যে সাড়ে ৩ হাজার নারী মাদক মামলায় বন্দি রয়েছে। পুলিশের হাতে মাদক নিয়ে ধরা পড়ে এবং ব্যবসার সঙ্গে জড়িত হওয়ার পর তাদের ঠাঁই হয়েছে কারাগারের বন্দিশালায়।  এরমধ্যে অনেকের আদালত থেকে সাজা ঘোষণা করা হয়েছে। কারাগারের মধ্যে থাকা এই কয়েদি ও হাজতিদের নিয়ে সব সময় বেকায়দায় থাকে কারা কর্তৃপক্ষ এবং কারারক্ষীরা। কারণ এইসব বন্দিদের আচরণ সব সময় স্বাভাবিক থাকে না। মাদকের নেশা যখন উঠে তখন তারা কারাগারের মধ্যে বিশৃঙ্খলা সৃষ্টি করে। এতে  এই সব আসামিদের নিয়ে কারা কর্তৃপক্ষ উদ্বেগ উৎকণ্ঠায় থাকেন। মাদকদ্রব্য নিয়ন্ত্রণ অধিদপ্তর মনে করছে, পাইলট কর্মসূচির আওতায় স্বল্প মেয়াদে সাজাপ্রাপ্তদের মুক্তির উদ্যোগ বাস্তবায়ন হলে দ্রুতই কারাগারে বন্দির সংখ্যা কমবে। পাশাপাশি মাদক ব্যবসাও কমবে।

এ বিষয়ে মাদকদ্রব্য নিয়ন্ত্রণ অধিদপ্তরের অতিরিক্ত মহাপরিচালক  (প্রশাসন) মো. আজিজুল ইসলাম বলেন, মাদকবন্ধে আমাদের দীর্ঘ পরিকল্পনা আছে। কারাগারে যে সব মাদক মামলার বন্দি আছে তাদের বিষয়টি ভাবা হচ্ছে। এখানে আইনের কিছু ম্যারপ্যাঁচ আছে। সেগুলো খুঁটিয়ে দেখা হচ্ছে।’  অধিদপ্তর সূত্রে জানা গেছে, গত দুই বছর ধরে দেশের বিভিন্ন আদালত ভালো কাজের শর্তে তরুণ বন্দিদের মুক্তি দিয়ে আসছে। গত বছরের জুন মাসে অসুস্থ মায়ের সেবা করার শর্তে মেহেদি নামে একজনকে মুক্তি দেন বরিশালের একটি আদালত। তিনি মাদকের একটি মামলায় ছয় বছরের সাজা পেয়েছিলেন। 

সূত্র জানায়, কারাগারগুলোতে প্রতিদিনই নতুন নতুন করে যুক্ত হচ্ছে মাদক মামলার আসামি। তারা কারাগারে আসার পরও মাদক সেবনের চাহিদা থাকে। এজন্য তারা আদালতে হাজিরা দেয়ার সময় তাদের স্বজন বা বন্ধুদের কাছ থেকে শরীরের কোমরে করে এমন কী পায়ুপথেও মাদক নিয়ে আসে কারাগারের মধ্যে। তাদের কারাগারে প্রবেশের সময় শরীর তল্লাশি করার পর কারাগারে ঢোকানো হয়। ঢাকা কেন্দ্রীয় কারাগারসহ দেশের ৬৮টি কারাগারে মাদক কেনাবেচা নিষিদ্ধ। এমনকি কারাগারের মধ্যে প্রকাশ্যে ধূমপান করার ব্যাপারেও বিধি-নিষেধ রয়েছে। কারাগারে মাদকের ব্যবহার বেড়ে যাওয়ায় বিপাকে রয়েছে কারা কর্তৃপক্ষ। 

জানা যায়, বিষয়টি কারিগরিভাবে বিবেচনায় আনার জন্য একাধিক কারাগার পরিদর্শন করেছে মাদকদ্রব্য নিয়ন্ত্রণ কর্তৃপক্ষের ঊর্ধ্বতন কর্মকর্তাবৃন্দ। তারা কারাগারের অভ্যন্তরে কথা বলেছেন বন্দি ও তাদের সেখানে দেখতে আসা স্বজনদের সঙ্গে। শর্তসাপেক্ষে এসব বন্দিকে মুক্তি দিলে সামাজিকভাবে ভালো ফলাফল পাওয়া যাবে।  কারাগারে মাদকের আসামি বরাবরই বেশি থাকে। গত ২ বছর ধরে মাদকের বিরুদ্ধে আইনশৃঙ্খলা বাহিনীর সাঁড়াশি অভিযানের কারণে কারাগারের মধ্যে মাদক মামলার আসামির সংখ্যা বেড়ে গেছে। তবে বেশি মেয়াদি যাদের সাজা হয়েছে তাদের বিষয়ে অনুরোধ করবে না মাদকদ্রব্য নিয়ন্ত্রণ অধিদপ্তর। বিশেষ করে যারা দেশের মাদকের বড় ডিলার এবং খুচরা ব্যবসায়ী তাদের জন্য এই বিষয়টি বিবেচনায় আনা হবে না। যারা শর্ত অনুযায়ী মুক্তি পাবে তারা ভালো কাজগুলো করছে কিনা তার জন্য জনপ্রতিনিধিদের দিয়ে সার্বক্ষণিক পর্যবেক্ষণ করা হবে। যে সব তরুণ অল্প মেয়াদে সাজা পেয়েছে কিন্তু, মাদকের প্রভাব তাদের শরীর ও মনে বিশাল আকারে বিস্তার লাভ করেছে তাদের জন্য মাদকদ্রব্য নিয়ন্ত্রণ কর্তৃপক্ষের নিয়ন্ত্রিত হাসপাতালগুলোতে  সুচিকিৎসা ও কাউন্সেলিং ব্যবস্থা করা হবে। মাদকাসক্ত এসব বন্দিকে নেশার জগৎ থেকে ফিরিয়ে আনতে বিশেষ ব্যবস্থা নেয়া হবে। যাতে তারা মাদকের ছোবল থেকে মুক্তি পায়।

Download করুন আমাদের App এবং Subscribe করুন আমাদের YouTube Channel: