সাগর-রুনি হত্যার বিচার নিশ্চিত নাহওয়া পর্যন্ত রাজপথে থাকার ঘোষণা :  সাংবাদিক নেতৃবৃন্দ

সাগর-রুনি হত্যার বিচার নিশ্চিত নাহওয়া পর্যন্ত রাজপথে থাকার ঘোষণা :  সাংবাদিক নেতৃবৃন্দ

প্রথম নিউজ, ঢাকা : সাগর-রুনিসহ সকল সাংবদিক হত্যার বিচার নিশ্চিত না হওয়া পর্যন্ত রাজপথে থাকার ঘোষণা দিয়েছেন সাংবাদিক নেতৃবৃন্দ। তারা বলেন, অদৃশ্য শক্তির ইশারায় সাগর-রুনি হত্যার বিচার হচ্ছে না।

আজ বৃহস্পতিবার জাতীয় প্রেসক্লাবের সামনে বাংলাদেশ ফেডারেল সাংবাদিক ইউনিয়ন-বিএফইউজে ও ঢাকা সাংবাদিক ইউনিয়ন-ডিইউজে'র উদ্যোগে আয়োজিত বিক্ষোভ সমাবেশে সাংবাদিক নেতৃবৃন্দ এ কথা করেন। 
সভাপতির বক্তব্যে রুহুল আমিন গাজী বলেন, একটি ডামি নির্বাচনের মাধ্যমে গঠিত সরকারের আইনমন্ত্রী বলেছেন ৫০বছর লাগলেও তদন্ত চলবে। এটা শুধুমাত্র উপহাস। সরকার সাগর-রুনি হত্যার বিচার করতে চায় না। এটা আইনমন্ত্রীর বক্তব্যে প্রমাণিত। যদি এই হত্যার বিচার না হয় তবে সাংবাদিক হত্যা-নির্যাতন বন্ধ হবে না।

আইনমন্ত্রীর উদ্দেশ্য তিনি বলেন, আপনি কত বছর আইনমন্ত্রী থাকবেন? তবে এই বাংলার মাটিতে সকল সাংবাদিক হত্যার বিচার হবে। 

সাগর-রুনির সন্তান মেঘের উদ্দেশ্য এই শীর্ষ সাংবাদিক নেতা বলেন, তোমার বাবা-মায়ের  হত্যার বিচার এই বাংলার মাটিতে হবেই। এ সরকারের আমলে না হোক অন্য সরকার এই হত্যার বিচার করবে। বিচার হতেই হবে। এদেশের সাংবাদিক সমাজ সকল সাংবদিক হত্যার বিচার নিশ্চিত করেই রাজপথ ছাড়বে।

বিএফইউজের মহাসচিব কাদের গনি চৌধুরী বলেন, বিদ্যুৎ সেক্টরের নানা অনিয়মের তথ্য  উপাত্তসহ সাগর-রুনি অনেক রিপোর্ট করেছিলেন। যখন বিদ্যুৎ সেক্টর দুর্নীতিবাজদের আখড়া হয়ে গেলো তখন তাদের হত্যা করা হলো। তাদের হত্যার পর তাদের ল্যাপটপটা চুরি করা হলো। যে ল্যাপটপে বিদ্যুৎ সেক্ট্রের অনেক তথ্য ছিল।সাগর-রুনিকে হত্যার পর এই সেক্টর দূর্নীতিবাজ ও লুটেরাদের দখলে চলে গেল। এখন কেউ এই সেক্টরের নিউজ করে না। 
এক যুগেও খুনি ধরা না পড়ায় চরম হতাশা ব্যক্ত করে সাংবাদিকদের এনেতা বলেন, এতে বুঝতে কারো অসুবিধে হচ্ছে না এর পেছনে ক্ষমতাধররা রয়েছেন।

অবিলম্বে আইনমন্ত্রীর বক্তব্য প্রত্যাহার ও ক্ষমা প্রার্থনার দাবি জানিয়ে তিনি বলেন, বলেন, ‘এক যুগ আগে নৃশংসভাবে সাগর-রুনি খুন হয়ে গেলেন। অথচ খুনের প্রকৃত কারণ বের করা গেল না, সেটি অগ্রহণযোগ্য।তিনি বলেন, র‍্যাব পারছে না এটা আমি বিশ্বাস করতে চাই না। অদৃশ্য শক্তির ইশারায় তারা তদন্ত প্রতিবেদন দুচ্ছে ন্স।খুনিদের শনাক্ত না করা গেলে আইনশৃঙ্খলা রক্ষাকারী বাহিনীর তদন্তের সক্ষমতা নিয়ে প্রশ্ন উঠবে এটাই স্বাভাবিক। তিনি ক্ষোভ প্রকাশ করে বলেন,১২বছরেও যদি তদন্ত প্রতিবেদন দিতে না পারে তবে এই এলিটফোর্স রেখে লাভ কি? রাষ্ট্রের কোন স্পর্শকাতর ব্যক্তি এই হত্যার সাথে জড়িত তা জনগণ জানতে চায়। নোবেল বিজয়ী ড.ইউনুস,বিরোধী দলের নেতা-নেতা-কর্মীদের বিচার হয় বিদ্যুৎগতিতে আর সাগর- রুনি হত্যার তদন্ত প্রতিবেদনও দেয়া হয় না ১২ বছরে, এটা মেনে নেয়া যায় না। এসময় তিনি এই সরকারের পতনের মাধ্যমে সকল সাংবাদিক হত্যার বিচার করা হবে বলে উল্লেখ করেন।

ঢাকা সাংবাদিক ইউনিয়নের সভাপতি শহিদুল ইসলাম বলেন, সাগর-রুনি হত্যার এক যুগ পরেও আমাদের রাস্তায় দাঁড়িয়ে বিচার চাইতে হচ্ছে। রাষ্ট্রের প্রধান দায়িত্ব হলো নাগরিকের জান-মালের নিরাপত্তা নিশ্চিত করা। কিন্তু গত ১৫বছরে ৬০জন সাংবাদিক হত্যার শিকার হয়েছে। কোনো হত্যার বিচার হয়নি।

তিনি বলেন, আইনমন্ত্রীর বক্তব্য প্রমানণ করে তারা এই বিচার করতে অনিচ্ছুক। তাই আমরা এই সরকারের কাছে বিচার চাই না। কোনো জালিম সরকার চিরজীবন ক্ষমতায় থাকে না। আপনাদের পতন হবে। সাগর-রুনিসহ সকল সাংবাদিক হত্যার বিচার হবে।

ঢাকা সাংবাদিক ইউনিয়নের সাধারণ সম্পাদক খুরশিদ আলম বলেন, সাগর-রুনি হত্যাকাণ্ডের পর সুষ্ষ্ঠু বিচারের প্রতিশ্রুতি দিয়েছিলো। কিন্তু দেড় দশক হয়ে গেছে বিচার পাওয়া যায় নি। সাগর-রুনি হত্যাকাণ্ডের পর সাংবাদিক সমাজ ঐক্যবদ্ধ আন্দোলন শুরু করেছিল। কিন্তু এক অদৃশ্য শক্তির ইশারায় একটি অংশ এই আন্দোলন থেকে ছিটকে পড়ে।

তিনি বলেন, কোনো শুনানি ছাড়া তড়িঘড়ি করে ১৫দিনের মধ্যে জাতীয় নেতাদের অন্যায়ভাবে ১০বছর ২০বছর সাজা দেয়া হয়েছে। তাহলে দেড় দশকেও সাগর-রুনির হত্যার বিচার হচ্ছে না কেনো? যদি সাগর-রুনির হত্যার বিচার হতো তাহলে গত ১৫বছরে ৬০জন সাংবাদিক হত্যার শিকার হতেন না।

জাতীয় প্রেসক্লাবের সাবেক সাধারণ সম্পাদক সৈয়দ আবদাল আহমেদ বলেন, আজ পর্যন্ত সাংবাদিক সমাজ সাগর-রুনি হত্যার মোটিভটি পর্যন্ত জানতে পারেনি। এই হত্যাকাণ্ডের পর আমরা সবাই ঐক্যবদ্ধ হয়েছিলাম। কিন্তু সরকারের চক্রান্তে একটা অংশ এই বিচারের দাবিতে সোচ্চার না। ফলে এরা অনেকে লাভবানও হয়েছেন। 

তিনি বলেন, ১২বছর ধরে হত্যাকাণ্ডের তদন্ত চলছে কিন্তু আমরা মোটিভ জানতে পারিনি। এর মধ্যেই আইনমন্ত্রী উপহাস করে বলেছেন, প্রয়োজনে ৫০বছর তদন্ত চলবে। তার এই বক্তব্যে স্পষ্ট, এই অবৈধ সরকারের আমলে এই হত্যার বিচার হবে না। তাই আমরা চলমান গণতান্ত্রিক আন্দোলন সফলের মাধ্যমে গণতান্ত্রিক সরকার প্রতিষ্ঠা করে এর বিচার করবো।

বিএফইউজে সভাপতি রুহুল আমিন গাজীর সভাপতিত্বে ও ডিইউজের সাংগঠনিক সম্পাদক সাঈদ খানের সঞ্চলনায় সমাবেশে আরো বক্তব্য রাখেন, বিএফইউজের সিনিয়র সহকারী মহাসচিব বাছির  জামাল, ডিইউজের সহ সভাপতি রাশেদুল হক, যুগ্ম সম্পাদক দিদারুল আলম দিদার, বিএফইউজের প্রচার সম্পাদক শাহজাহান সাজু, ডিইউজের দফতর সম্পাদক ইকবাল মজুমদার তৌহিদ, বিএফইউজের নির্বাহী সদস্য হামিদুল হক মানিক, ডিআরইউ'র সাবেক সহ সভাপতি মাহমুদুল হাসান, আবু হানিফ, মফস্বল সাংবাদিক এসোসিয়েশনের চেয়ারম্যান শাখওয়াত ইবনে মঈন চৌধুরী প্রমুখ।