সংকট উত্তরণে সরকারের পদত্যাগ ছাড়া আর কোনো পথ নেই: মির্জা ফখরুল
সোমবার বিকালে বিক্ষোভ মিছিলপূর্ব এক সমাবেশে তিনি এই মন্তব্য করেন।
প্রথম নিউজ, ঢাকা : সংকট উত্তরণে সরকারের পদত্যাগ ছাড়া আর কোনো পথ নেই বলে মন্তব্য করেছেন বিএনপি মহাসচিব মির্জা ফখরুল ইসলাম আলমগীর। আজ সোমবার বিকালে বিক্ষোভ মিছিলপূর্ব এক সমাবেশে তিনি এই মন্তব্য করেন। নয়া পল্টনের কেন্দ্রীয় কার্যালয়ের সামনে মহানগর দক্ষিন বিএনপিসহ অঙ্গসংগঠনের উদ্যোগে মহানগর পূর্ব ছাত্র দলের সভাপতি খালিদ হোসেন জ্যাকীসহ নেতা-কর্মীদের গ্রেফতারের প্রতিবাদে এই বিক্ষোভ মিছিল হয়। এতে ছাত্র দল ছাড়াও যুব দল, স্বেচ্ছাসেবক দল, কৃষক দলসহ বিভিন্ন অঙ্গসংগঠনের কয়েক হাজার নেতা-কর্মী অংশ নেন। নয়া পল্টনে থেকে মিছিলটি কাকরাইল, শান্তিনগর মোড় ঘুরে আবার নয়া পল্টনে এসে শেষ হয়।
মির্জা ফখরুল ইসলাম আলমগীর বলেন, কথা খুব পরিস্কার… অবিলম্বে পদত্যাগ করেন এবং সংসদ বিলুপ্ত করেন। যত দিন যাবে ততই দেশের ক্ষতি হবে, মানুষের ক্ষতি হবে, ততই গণতন্ত্রের ক্ষতি হচ্ছে। তত্ত্বাবধায়ক বা নিরপেক্ষ সরকার যে নামেই বলেন না কেনো নির্বাচনকালীন নিরপেক্ষ সরকার গঠন করে তাদের হাতে ক্ষমতা দেন, তারা নতুন নির্বাচন কমিশন করে নির্বাচন করবে…. এটাই একমাত্র পথ, আর কোনো পথ নাই। সুতরাং যত দ্রুত পারেন ওই জায়গায় যান।তা না হলে সালাম(আবদুস সালাম) সাহেব যেটা বলেছেন তখন পালাবারও পথ খুঁজে পাবেন না। কারণ এর আগে বলেছি, সময় আর নাই, সময় শেষ হয়ে গেছে। সরকার পতনের চলমান আন্দোলনে ‘জনগনকে সম্পৃক্ত করে সরকারকে পদত্যাগে বাধ্য করা হবে’ বলেও হুশিয়ারি দেন বিএনপি মহাসচিব।
নেতা-কর্মীদের গ্রেফতারের বিষয়টি তুলে ধরে মির্জা ফখরুল বলেন, ‘‘ আমাদের শুধু এরকম খালিদ হোসেন জ্যাকি, মজনু(রফিকুল আলম মজুন,) মুন্না(আবদুল মোনায়েম মুন্না), শাহীন(গোলাম মাওলা শাহীন) নয়… গত এক মাসে ৩৮৬ জনকে গ্রেফতার করেছে। তাহলে বুঝতে পারছেন তারা কি করতে যাচ্ছে? ‘সুতরাং প্রতিরোধ ছাড়া আমাদের কোনো বিকল্প নেই। প্রতিরোধ গড়ে তুলতে হবে। আজকে আমাদের বয়স হয়েছে, অসুস্থ শরীর নিয়েও দেশনেত্রী বেগম খালেদা জিয়াও এখনো কারাগারে লড়াই করে চলেছেন। আমাদের ভারপ্রাপ্ত চেয়ারম্যান তারেক রহমান সাহেব তিনি বিদেশ থেকে নেতৃত্ব দিচ্ছেন। আমাদেরকে আরো ত্যাগ স্বীকার করতে হবে।”
মির্জা ফখরুল বলেন, ‘‘আজকে এতো ভয় পেয়েছে এখন এজন্যে ২০১৪ সালে যে কাজ করেছিলো, ২০১৮তে নির্বাচনের আগে দেশনেত্রী বেগম খালেদা জিয়াকে কারাগারে আটক করেছে… এখনো আটকাবস্থায় তিনি আছেন। সেদিনও গায়েবী মামলা দিয়ে আমাদের হাজার হাজার নেতাকর্মীকে জেলে পুরে দিয়েছিলো। আজকে আবার অনেক আগে থেকেই নির্বাচনের কাজ শুরু করেছে … নৌকা ভোট দেন, নৌকায় ভোট দেন বলে যাচ্ছে। এখন বাংলাদেশের মানুষ বলছে, আগে জানলে তোর ভাঙা নৌকায় উঠতাম না। এই ভাঙা নৌকায় মানুষ আর উঠবে না। তিনি বলেন, অবশ্যই বাংলাদেশের মানুষ নির্বাচন চায়। সেই নির্বাচনে তারা ভোট দিতে চায়। সেই নির্বাচনে অবাধ নিরপেক্ষ সরকারের অধীনে হতে হবে। এটা প্রমাণিত হয়ে গেছে যে, হাসিনা সরকার থাকলে এবং তার সরকার থাকলে কোনো নির্বাচনই সুষ্ঠু অবাধ গ্রহনযোগ্য হবে না।”
মির্জা ফখরুল বলেন, এখন আবার ফায়ার শুরু করছে। এরা পুলিশ ভাইদেরকে বদলি করে, এসপি বদলি করে, ডিআইজি বদলি করে, টিএনও বদলি করে, ম্যাজিস্ট্রেট বদলি করে, ওসি বদলি করে কোনটা তার নিজের সেটাও বুঝতে পারে না। সব নিজের লোক বুঝাতে চায়। এটাই হয়। যখন পতনের সময় আসে তখন কেউ নিজের লোক থাকে না। নেতাকর্মীদের উদ্দেশ্যে বলেন, মির্জা ফখরুল বলেন, আজকে আমাদের বয়স হয়েছে, বাংলাদেশের জনপ্রিয় নেত্রী অসুস্থ শরীর নিয়ে দেশনেত্রী বেগম খালেদা জিয়া কিন্তু এখনো কারাগারে লড়াই করে চলেছেন। আমাদের ভারপ্রাপ্ত চেয়ারম্যান তারেক রহমান তিনি বিদেশ থেকে নেতৃত্ব দিচ্ছেন। আমাদেরকে আরো ত্যাগ স্বীকার করতে হবে।
মির্জা ফখরুল বলেন, ‘‘ কাঁচা মরিচের কেজি হাজার টাকায় উঠেছে… তাই না। কাঁচা মরিচের খুব ঝাঁজ থাকে… এই ঝাঁজ আর এখন সহ্য করতে পারছেন না….। সারাদেশে মানুষ শান্তিপূর্ণ বলছে, আপনার আর প্রয়োজন নাই। গত ১৫ বছর ধরে আপনি আপনার দল নিয়ে যেভাবে শোষন করেছে, মানুষের সম্পত্তি লুট করে পাচার করেছেন, যেভাবে বিরোধী নেতা-কর্মীদের হত্যা করেছেন…. আমাদের প্রায় ৪০ লক্ষ মানুষের বিরুদ্ধে মিথ্যা মামলা দিয়েছেন তাতে কি আন্দোলন ঠেকানো যাচ্ছে, ৬‘শ মানুষকে গুম করেছে, সহাস্রাধিক মানুষকে হত্যা করেছে তাতে কি আন্দোলন বন্ধ করা যাচ্ছে। এই আন্দোলন মানুষের প্রাণের দাবি। আজকে বিএনপিকে ক্ষমতা নেয়ার জন্য নয়… দেশের মানুষ তার অধিকার ফিরে পেতে চায়। সেই অধিকারটা কি ভোটের অধিকার, বাঁচার অধিকার, কথা বলার অধিকার,মানু্ষের সংগঠন করবার অধিকার, এক হাজার টাকার কাঁচা মরিচ এক‘শ টাকায় খাওয়ার অধিকার। শুধু কাঁচা মরিচ নয়, চাল-ডাল-তেল-লবন প্রত্যেকটা জিনিসের দাম অস্বাভাবিক বেড়ে গেছে। এই যে সমাবেশে রিকশাচালকরা এখানে দাঁড়িয়ে গেছে… তাদেরকে জিজ্ঞাসা করেন তারা কেমন আছে? আমি আজকে অবৈধ প্রধানমন্ত্রীকে বলতে চাই, আপনি আসুন দেখুন এই সাধারণ মানুষরা কি বলেন, দেখুন কৃষক ভাইয়েরা কি বলে?
ঢাকা মহানগর দক্ষিন বিএনপির আহ্বায়ক আবদুস সালামের সভাপতিত্বে যুগ্ম আহ্বায়ক ইউনুস মৃধা ও লিটন মাহমুদের সঞ্চালনায় সংক্ষিপ্ত সমাবেশে বিএনপি শামসুর রহমান শিমূল বিশ্বাস, রকিবুল ইসলাম বকুল, যুব দলের সুলতান সালাহউদ্দিন টুকু, স্বেচ্ছাসেবক দলের এসএম জিলানী, ছাত্র দলের সভাপতি কাজী রওনকুল ইসলাম শ্রাবণ প্রমূখ বক্তব্য রাখেন।