শান্তর উপলব্ধি ‘গোড়ায় গলদ’

শান্তর উপলব্ধি ‘গোড়ায় গলদ’

প্রথম নিউজ, খেলা ডেস্ক: দিল্লি থেকে মাত্র ৩৫১ কিলোমিটার পাড়ি দিলেই গোয়ালিয়র। ভারতের রাজধানীর বেশ কাছে হলেও এখানে এখনো লাগেনি আধুনিকতার ছোঁয়া। এক সময় প্রতাপশালী রাজা-বাদশাহদের পদচারণা থাকলেও এখনো আলোর মুখ দেখতে পারেনি এই শহর। ভারতের প্রাচীন নগরী এখনো প্রাচীন আদলের! কিন্তু ক্রিকেটের জন্য ভালোবাসা সারা ভারতের মতোই সমান। ১৫ বছর পর এই মাঠে আন্তর্জাতিক ম্যাচ, তাই ৩০ হাজার ধারণ ক্ষমতার স্টেডিয়ামের এক কোনাও খালি নেই। তিনদিন আগেই সব টিকিট বিক্রি হয়ে গেছে। দর্শকরাও মাঠ ছেড়েছেন নিজ দলের জয়ের প্রশান্তি নিয়ে। তারপরও এই ম্যাচ দেখে তারা যেন খুশি হতে পারেননি। টি-টোয়েন্টি সিরিজের রঙিন ম্যাচটা বিবর্ণ হয়েছে বাংলাদেশের হতশ্রী পারফরম্যান্সে।

আগে ব্যাট করতে নেমে সেই ভীষণ অদ্ভুতুরে ব্যাটিং। শেষ পর্যন্ত  টেনেটুনে স্কোর বোর্ডে ১২৭ রান! যা কিনা ভারত টপকে গেছে মাত্র ১১.৫ ওভারেই, তাও ৭ উইকেট হাতে রেখে। এমন একপেশে ম্যাচ ভারতীয়রাও আশা করেনি। প্রেসবক্সে তাদের সংবাদকর্মীদের আলোচনায়ও তা স্পষ্ট। তবে এটি যে বাংলাদেশ দলের প্রায় নিয়মিত চিত্র তা তো পরিসংখ্যান দেখলেই বোঝা যায়। টেস্ট থেকে টি-টোয়েন্টি- সব জায়গাতেই হারের অন্যতম কারণ ব্যাটিং ব্যর্থতা। সমস্যাটা কোথায়! ব্যাটিং কৌশলে, মানসিক নাকি সামর্থ্য নেই? প্রশ্নটা শুনে টাইগার অধিনায়ক কোন রাখঢাক রাখলেন না। জানিয়ে দিলেন তার উপলব্ধির কথা। এমন ব্যর্থতার কারণটা যে তার মতে ‘গোড়ায় গলদ’। তিনি বলেন, ‘সামর্থ্য অবশ্যই আছে, তা আমি বিশ্বাস করি। কিন্তু স্কিলের উন্নতিটা কিভাবে হবে? স্কিলেও সমস্যা আছে। দেখেন শেষ ১০ বছর ধরে আমরা এরকমই ব্যাটিং করি। মাঝে মধ্যে হয়তো ভালো ব্যাটিং হচ্ছে। আমরা হোমে যখন অনুশীলন করি সেখানে উইকেটের পরিবর্তন আনতে হবে। আর মানসিকতা ও স্কিলেও পরিবর্তন আনতে হবে।’ 

ভারতের বিপক্ষে দুই টেস্টে হারের অন্যতম কারণ ব্যাটিং ব্যর্থতা। টি-টোয়েন্টি সিরিজের শুরুতেও  সেই ব্যর্থতার শিকলেই বাঁধা পড়ে রইলো টাইগার ব্যাটাররা। সিরিজের প্রথম ম্যাচে ১৪ রানে ২ উইকেট হারিয়ে বসে শান্তর দল। প্রথম ৬ ওভারে মাত্র ৩৯, ব্যাটিংয়ের গতি নেই বললেই চলে। শুধু এই ম্যাচেই নয়, সর্বশেষ ৭ টি-টোয়েন্টি ইনিংসের পাওয়ারপ্লেও অনেকটা এমনই ছিল বাংলাদেশের। গড় রানরেট মাত্র ৬.৬৭। আগের ম্যাচগুলোর সঙ্গে আজকের পার্থক্য বাংলাদেশের ব্যাটিং ধরন। টপ অর্ডার ব্যাটসম্যানদের বেশির ভাগই আউট হয়েছেন আক্রমণাত্মক শট খেলতে গিয়ে। এখনো দেশের উইকেটকে দোষ দিলেন শান্ত। তিনি বলেন, ‘কারণ আমরা যখন হোমে খেলি তখন ১৪০-৫০ এরই উইকেট হয়। সো ব্যাটাররা ওইটা জানে কিভাবে ১৫০ করতে হবে কিন্তু ওইটা জানে না যে কিভাবে ১৮০ করা যাবে। তো আমাদের ওই ধরনের উইকেটে অনুশীলনের করলে আরেকটু উন্নতি হবে। কিন্তু শুধু উইকেটের দোষ দিব না এখানে মানসিকতার ব্যাপারও থাকে, স্কিলের ব্যাপারও থাকে। আমি বিশ্বাস করি সামনের ম্যাচে ইতিবাচক ক্রিকেট খেলবো। জয়ের জন্য খেলবো। এটা অবশ্যই চ্যালেঞ্জিং হবে কিন্তু আমরা বিশ্বাস করি আমরা এর চেয়ে ভালো পারফর্ম করা দল।’ 
বাংলাদেশ দলে একের পর এক ব্যাটিং কোচের নাম যুক্ত হয়েছে। দেশি-বিদেশি প্রায় সবাই চেষ্টাই করে গেছেন। আর বাংলাদেশ ক্রিকেট বোর্ড (বিসিবি) কোটি কোটি টাকা খচর করেছে। কিন্তু ব্যাটিংয়ের যে বেহালদশা তা থেকে বের করা যায়নি টাইগারদের।  টেস্টে তাদের কথনো দেখা যায় টি-টোয়েন্টির মতো ব্যাটিং করতে আবার টি-টোয়েন্টিতে টেস্টের মতো। শুধুমাত্র ওয়ানডে ফরম্যাটেই কিছু ধারাবাহিকতা নজরে আসে। তাহলে এত এত কোচ এনে লাভটা কোথায়!  কোচদের ব্যর্থতার জন্যও একই অভিযোগ- বাংলাদেশের উইকেটে সমস্যা। কিন্তু বিসিবি তাতে যে খুব বেশি কিছু করতে পেরেছে তাও নয়। টেস্ট আর টি-টোয়েন্টি দুই জায়গায় ব্যর্থ হলেই শুধু উইকেট বদলে ফেলার জন্য বিসিবি’র কর্তারা নড়েচড়ে বসেন। এরপর ফের যা ছিল তাই। তবে এখন সময়ে এসেছে দিন বদলের। বিসিবি চলছে নতুন নেতৃত্বে। নয়া সভাপতি ফারুক আহমেদ তার দায়িত্ব শেষ পর্যন্ত কতটা পালন করতে পারবেন তা নিয়ে প্রশ্ন থাকলেও তার ক্রিকেট মেধা নিয়ে সন্দেহ নেই কারো। তাই এই উইকেট বদলে দেয়ার কাজটা আরো দ্রুততার সঙ্গে করবেন তিনি এমনটাই আশা সবার। এটি না হলে যে গোড়ায় গলদ থেকেই যাবে। নয়তো ব্যাটিং ব্যর্থতায় অধিনায়করা যেমন আগেও উইকেটকে দোষ দিয়েছেন তেমনি ১০ বছর পরেও দিবেন, এমনটা অনুমান করা কঠিন কিছু নয়।