শীতে কাবু দেশ
সর্বনিম্ন তাপমাত্রা মৌলভীবাজারে
প্রথম নিউজ, অনলাইন : কুয়াশায় ঘেরা রাজধানী। কুয়াশায় আচ্ছন্ন দেশ। সূর্যের দেখা নেই। সারা দেশে বেড়েছে শীতের তীব্রতা। জবুথবু জনজীবন। বিশেষ করে খেটে খাওয়া মানুষকে বেশ ভোগাচ্ছে শীত। আবহাওয়া অধিদপ্তর বলছে, এমন কুয়াশা আরও দু-তিনদিন থাকবে। একটানা হয়তো নাও থাকতে পারে। তবে তাপমাত্রার পারদ নিম্নমুখী থাকবে। সর্বোচ্চ ও সর্বনিম্ন তাপমাত্রার দূরত্ব কমায় শীত বাড়ছে। এদিকে ঘন কুয়াশার কারণে ঢাকার হযরত শাহজালাল আন্তর্জাতিক বিমানবন্দরে একটি আন্তর্জাতিক ফ্লাইট অবতরণ করতে পারেনি। পাশাপাশি আরও ৭টি ফ্লাইটে বিলম্ব হয়েছে বলে জানায় বিমানবন্দর কর্তৃপক্ষ। এছাড়া দেশব্যাপী বিভিন্ন নৌ-রুটেও নৌযান চলাচলে বিঘ্ন ঘটে কুয়াশার কারণে। তাপমাত্রার তুলনায় শীত বেশি অনুভূত হওয়ার কারণ উত্তরের হিমেল বাতাস। দেশজুড়ে এমন বাতাস বইতে পারে আরও কয়েক দিন। গত ২৪ ঘণ্টায় সর্বোচ্চ ২৮ দশমিক ৬ ডিগ্রি সেলসিয়াস তাপমাত্রা ছিল কক্সবাজারের টেকনাফে। আর মৌলভীবাজারের শ্রীমঙ্গলে সর্বনিম্ন ৯ ডিগ্রি সেলসিয়ায় তাপমাত্রা ছিল। কুয়াশা না কমার কারণ- দুটি কাঙ্ক্ষিত লক্ষ্য পূরণ না হওয়া বলে জানান ঢাকার আবহাওয়া অধিদপ্তরের আবহাওয়াবিদ মো. বজলুর রশীদ।
তিনি বলেন, প্রথমত, পশ্চিমা লঘুচাপের ফলে বৃষ্টি হচ্ছে না। আরব সাগর থেকে আর্দ্রতা বহন করে নিয়ে এসে এ বৃষ্টি হয়। হালকা গুঁড়ি গুঁড়ি বৃষ্টি হলে তাতে জলীয় বাষ্প চলে যায় এবং কুয়াশা দূর করতে পারে। এতে রাতের তাপমাত্রা কমে গেলেও দিনের তাপ বাড়ে। দ্বিতীয়ত, ওপরের বাতাসের (জেট উইন্ড) নিম্নগামী হওয়া। সাধারণত ভূপৃষ্ঠ থেকে ১২ থেকে ১৮ হাজার ফুট ওপর দিয়ে এ হাওয়া বয়ে যায়। ঘণ্টায় এটি ৭০ থেকে ৮০ কিলোমিটার বেগে বয়ে যায়। এটি নিচে নেমে এসে প্রচণ্ড বাতাস সৃষ্টি করলে তার ধাক্কায় জলীয় বাষ্প সরে যায়। কিন্তু সেটিও এখন হচ্ছে না। তাই কুয়াশাও কাটছে না। গতকাল রাজধানীসহ সারাদেশে তীব্র শীত অনুভূত হয়। শীতের কারণে মানুষ প্রয়োজন ছাড়া বের হয়নি। যারা বের হয়েছেন তারাও যথেষ্ট শীত নিরাময় কাপড় পরে বেরিয়েছেন। রাজধানীর মালিবাগের বাসিন্দা শেখ আমানুর বলেন, গত দুইদিন ধরেই শীতের তীব্রতা বেশি অনুভব হচ্ছে। আজ আরও বেড়েছে শীত। এছাড়া সূর্যের দেখাও মেলেনি বলে জানান তিনি।
আবহাওয়া অধিদপ্তর জানায়, স্থানীয়ভাবে সৃষ্টি ও তা তাপমাত্রার তারতম্যের জন্যই এমন কুয়াশা। আবহাওয়াবিদ মো. আবদুর রহমান খান বলেন, এর আরেকটি উৎস হচ্ছে হিমালয়ের পাদদেশ থেকে বয়ে আসা কুয়াশা। এটি পুরো গঙ্গা অববাহিকা দিয়ে বয়ে বেড়াচ্ছে। এদিকে রাজধানীসহ দেশের বিভিন্ন এলাকার কোথাও কোথাও আগুন জ্বালিয়ে আগুন পোহাতে দেখা যায় শীতার্থ মানুষকে। জীবিকার তাগিদে খেটে খাওয়া মানুষ বের হয়েছিল কাজের সন্ধানে কিন্তু শীতে বিপর্যস্থ তাদের জীবন। আব্দুল মজিদ নামে এক রিক্সাচালক বলেন, হিমেল হাওয়ায় রিক্সা চালানো কঠিন হয়ে পড়েছে। তীব্র শীতের কারণে অনেকেই বাসা থেকে বের হচ্ছে না। এজন্য আমাদের আয় অনেক কমে গেছে। উত্তরে বইছে শীতের তীব্রতা। তার সঙ্গে ঠাণ্ডা বাতাস মানুষের জীবনকে করছে দুর্বিষহ। গতকাল সর্বনিম্ন তাপমাত্রা রেকর্ড করা হয়েছে ১১ দশমিক ২ ডিগ্রি সেলসিয়াস। অন্যদিকে গোপালগঞ্জে গতকালকের তাপমাত্রা ছিল ১০ ডিগ্রি সেলসিয়াস। গতকাল রাজধানীতে সর্বোচ্চ তাপমাত্রা ছিল ১৯.৬ ডিগ্রি সেলসিয়াস।
আর সর্বনিম্ন ১৪.১ ডিগ্রি সেলসিয়াস। এখানে দেখা যাচ্ছে সর্বোচ্চ তাপমাত্রার সাথে সর্বনিম্ন তাপমাত্রার ফারাক মাত্র ৫.৫ ডিগ্রি সেলসিয়াস। অর্থাৎ প্রতিদিনই সর্বোচ্চর সাথে সর্বনিম্নর দূরত্ব কমছে। সর্বোচ্চ তাপমাত্রা আর সর্বনিম্ন তাপমাত্রার দূরত্ব যত কমবে শীতও ততই প্রকট হবে। আপাতত ঢাকা, খুলনা ও রাজশাহীতে প্রতিদিনই সর্বোচ্চ তাপমাত্রার সাথে সর্বনিম্ন তাপমাত্রা দূরত্ব কমছে। অন্যদিকে ঘন কুয়াশার কারণে গতকাল ঢাকার হজরত শাহজালাল আন্তর্জাতিক বিমানবন্দরে একটি আন্তর্জাতিক ফ্লাইট অবতরণ করতে পারেনি। বিলম্ব হয়েছে আরও ৭টি ফ্লাইট। বিমানবন্দরের নির্বাহী পরিচালক গ্রুপ ক্যাপ্টেন কামরুল ইসলাম এ তথ্য নিশ্চিত করেছেন। তিনি বলেন, রানওয়ের ভিজিবিলিটি কম হওয়ায় রিয়াদ থেকে সৌদিয়ার একটি ফ্লাইট হায়দরাবাদ আন্তর্জাতিক বিমানবন্দরে ঘুরিয়ে দেয়া হয়েছে। পরপর চারদিন ঢাকার বিমানবন্দরে ফ্লাইট চলাচলে বিঘ্ন ঘটে।
Download করুন আমাদের App এবং Subscribe করুন আমাদের YouTube Channel:
https://apps.apple.com/de/app/prothomnews/id1588984606?l=en
https://play.google.com/store/apps/details?id=com.prothomnews