শাটল থামিয়ে সমন্বয়ককে তুলে নিল চবি ছাত্রলীগ
সোমবার (১৫ জুলাই) বিকাল সাড়ে ৩টার দিকে বিশ্ববিদ্যালয়ের শহিদ মিনার ও কাটাপাহাড় সড়কে আন্দোলনকারীদের ওপর হামলার ঘটনা ঘটে।
প্রথম নিউজ, ডিজিটাল: সকল গ্রেডে অযৌক্তিক ও বৈষম্যমূলক কোটা বাতিল করে পদ্ধতি সংস্কারের দাবিতে আন্দোলনরত শিক্ষার্থীদের ওপর দুই দফায় হামলা চালিয়েছে চট্টগ্রাম বিশ্ববিদ্যালয় (চবি) শাখা ছাত্রলীগের নেতাকর্মীরা। এ ঘটনায় অন্তত ৬ জন শিক্ষার্থী আহত হয়েছেন, যাদের মধ্যে দুজনের অবস্থা গুরুতর। সোমবার (১৫ জুলাই) বিকাল সাড়ে ৩টার দিকে বিশ্ববিদ্যালয়ের শহিদ মিনার ও কাটাপাহাড় সড়কে আন্দোলনকারীদের ওপর হামলার ঘটনা ঘটে। এছাড়া নগরীর ষোলশহর রেল স্টেশনেও শিক্ষার্থীদের ওপর হামলা চালায় ছাত্রলীগ।
এদিন ছাত্রলীগের নেতাকর্মীরা শহরগামী বিশ্ববিদ্যালয়ের বেলা আড়াইটার শাটল ট্রেন আটকে দেয়। শাটল ট্রেন থেকে কোটা সংস্কার আন্দোলনের চবির সমন্বয়ক খান তালাত মাহমুদ রাফিকে তুলে নিয়ে যায় ছাত্রলীগের নেতাকর্মীরা। পরে জোরপূর্বক ছাত্রলীগের মিছিলে তাকে যুক্ত করে প্রক্টর অফিসে নিয়ে যাওয়া হয়। এ সময় রাফির ছাত্রত্ব বাতিলের জন্য প্রক্টরের সঙ্গে উচ্চবাচ্য করতে দেখা যায় ছাত্রলীগের অনুসারীদের। এতে বেশ উত্তেজনা সৃষ্টি হয়।
নারী শিক্ষার্থীসহ কোটা সংস্কার আন্দোলনকারীদের একটা অংশ প্রক্টর অফিসে যাওয়ার পথে ছাত্রলীগের নেতাকর্মীদের বাধার মুখে পড়ে। এ সময় উপস্থিত ছাত্রলীগ কর্মীরা চারদিক থেকে শিক্ষার্থীদের ওপর চড়াও হয়। এ সময় ছাত্রলীগের নেতাকর্মীরা বাঁশ ও লাঠিসোঁটা নিয়ে শিক্ষার্থীদের ওপর হামলা চালায়।
প্রত্যক্ষদর্শীরা জানান, বিশ্ববিদ্যালয়ের কম্পিউটার সায়েন্স বিভাগের ২০২০-২১ সেশনের মাহবুব রহমান নামে এক শিক্ষার্থীকে বাঁশ দিয়ে বেধড়ক মারধর করা হয়। এতে মাহবুব গুরুতর আহত হয়। প্রত্যক্ষদর্শীরা জানান, মাহবুবের ওপর হামলা চালায় ছাত্রলীগ কর্মী নাইম আরাফাত। উদ্ভিদ বিজ্ঞান বিভাগের ২০২০-২১ সেশনের নাইম আরাফাত ছাত্রলীগের সিক্সটি নাইন গ্রুপের অনুসারী।
এদিকে আহত শিক্ষার্থীকে উদ্ধার করে চবি মেডিকেল সেন্টারে নেওয়া হলে অবস্থা গুরুতর দেখে তাকে চট্টগ্রাম মেডিকেল কলেজ হাসপাতালে পাঠানো হয়। চবি মেডিকেল সেন্টারের প্রধান চিকিৎসক ডা. আবু তৈয়ব বলেন, মাথায় আঘাতের কারণে অনেক বেশি রক্তক্ষরণ হয়েছে। তাকে চমেক হাসপাতালে পাঠানো হয়েছে।
ছাত্রলীগ নেতাকর্মীদের দাবি, তালাত মাহমুদ রাফি মুক্তিযোদ্ধা কোটায় বিশ্ববিদ্যালয়ে ভর্তি হয়েছে। এরপরও যেহেতু তিনি কোটা আন্দোলনে যুক্ত হয়েছে, তাই তার বিশ্ববিদ্যালয়ে পড়ার অধিকার নেই। তাকে চবি থেকে বহিষ্কার করতে হবে, তার ছাত্রত্ব বাতিল করতে হবে।
এ সময় চবি ছাত্রলীগের সাবেক সাংগঠনিক সম্পাদক পার্থ প্রতিম বড়ুয়া বলেন, শাটল ট্রেন আমরা আটকাই নাই। এটা হয়ত যান্ত্রিক ত্রুটির কারণে হয়েছে। আন্দোলনকারীদের ওপর হামলার বিষয়ে তিনি বলেন, আমাদের অজান্তে কিছু বিষয় ঘটেছে, আমরা খোঁজ নিয়ে দেখব কারা এসব করেছে।
কোটা আন্দোলন চবির সমন্বয়ক খান তালাত মাহমুদ রাফি বলেন, আমাকে জোর করে শাটল ট্রেন থেকে তুলে নিয়ে যায় ছাত্রলীগের নেতাকর্মীরা। আমাকে জোরপূর্বক মিছিলে যুক্ত করে নিয়ে আসা হয়। আমার সঙ্গে কেমন ব্যবহার করা হয়েছে, আপনারা সবাই দেখেছেন। বিশ্ববিদ্যালয় প্রশাসন আমার নিরাপত্তা দিতে ব্যর্থ হয়েছে। আজ বিকাল সাড়ে ৩টায় আমাদের আন্দোলন বন্ধ করতে ট্রেন আটকে দেওয়া হয়েছে।
এদিকে পূর্বঘোষিত কর্মসূচি অনুযায়ী চবিসহ চট্টগ্রামের বিভিন্ন বেসরকারি বিশ্ববিদ্যালয় ও কলেজের শিক্ষার্থীরা নগরীর ষোল শহর রেলস্টেশনে সমাবেশ করে। এ সময় হঠাৎ নগর ছাত্রলীগের নেতাকর্মীরা তাদের ওপর হামলা চালায়। তাদের মাঝে ধাওয়া পাল্টা ধাওয়া ও পাথর নিক্ষেপের ঘটনা ঘটে। পরে শিক্ষার্থীরা নগরীর ষোল শহর রেললাইন ও মহাসড়ক অবরোধ করে। এ সময় তাদের দুই নম্বর গেটে অবরোধ করতে দেখা যায়। এর আগে রোববার (১৪ জুলাই) রাত ১১টায় কোটা নিয়ে প্রধানমন্ত্রীর বক্তব্যের প্রতিবাদে আন্দোলনকারীরা বিক্ষোভ মিছিল বের করলে তাদের ওপর হামলা চালায় ছাত্রলীগ।
শিক্ষার্থীরা জানান, চবির শিক্ষা ও গবেষণা ইনস্টিটিউটের তৃতীয় শ্রেণির কর্মচারী ও শাখা ছাত্রলীগের সাবেক সহ-সভাপতি শরিফ উদ্দিন ও কনকর্ড গ্রুপের অনুসারী আবিরার শাহরিয়ার নেতৃত্বে সুমন নামের রাজনীতি বিজ্ঞান বিভাগের এক শিক্ষার্থীকে মারধর করা হয়। পরে তাকে শাহ আমানত হলে নিয়ে যান ছাত্রলীগের নেতাকর্মীরা।
জানতে চাইলে শরিফ উদ্দিন হামলার বিষয়টি অস্বীকার করে বলেন, এক ছোট ভাইকে মারধর করা হয়েছে শুনে তাকে বাঁচাতে গিয়েছিলাম। এটা কি অপরাধ হয়েছে আমার?
এদিকে সার্বিক বিষয়ে জানতে চাইলে চবি প্রক্টর ড. অহিদুল আলম বলেন, আন্দোলনকারীরা যদি আদালতের রায় না মানে, তাহলে তাদের বিষয়ে আমাদের কোনো বক্তব্য নেই। আমরা আদালতে বাইরে যেতে পারব না। আর আহত শিক্ষার্থীরা অভিযোগ দিলে আমরা ব্যবস্থা নেব।