রাষ্ট্রীয় পদক একজন শিল্পীর আত্মবিশ্বাস বাড়িয়ে দেয়,ফেরদৌস আরা
![রাষ্ট্রীয় পদক একজন শিল্পীর আত্মবিশ্বাস বাড়িয়ে দেয়,ফেরদৌস আরা](https://prothom.news/uploads/images/2025/02/image_750x_67a6ced123870.jpg)
প্রথম নিউজ, অনলাইন: দেশের নজরুলসংগীত শিল্পীদের মধ্যে যে কজন প্রথিতযশা পেশাদার নজরুলসংগীত শিল্পী রয়েছেন, তাদের অন্যতম ফেরদৌস আরা। সব ধরনের গান গাইলেও নজরুলসংগীত শিল্পী হিসেবে জনপ্রিয়তা পেয়েছেন তিনি। চার যুগেরও বেশি সময় ধরে সংগীতচর্চা করছেন এই শিল্পী। বৃহস্পতিবার ঘোষণা করা হয়েছে একুশে পদক-২০২৫।
এবার সংগীতে পদকটি পাচ্ছেন ফেরদৌস আরা। দীর্ঘ পাঁচ দশকের পথচলায় এ প্রাপ্তিতে যেন পূর্ণতা পেলেন নজরুলসংগীতের নন্দিত এই শিল্পী।
সংগীতাঙ্গনের অনেকেই মনে করেন, বহু আগেই এ পদকে ভূষিত হওয়ার যোগ্য ফেরদৌস আরা।
এমনকি একাধিকবার তাঁর নামটিও প্রাথমিক তালিকায় এসেছিল। তবে শেষ পর্যন্ত কোনো অজ্ঞাত কারণে বাদ পড়ে গেছে। এ ছাড়া আওয়ামী আমলে জাতীয় প্রতিষ্ঠানগুলোতে গান করার সুযোগ পাননি তিনি। এসব কারণে বিশ্বাসও কিছুটা নড়বড়ে হয়ে গিয়েছিল তাঁর।
ফেরদৌস আরা বলেন, “যখন কানে আসত যে আমার নাম রয়েছে পদকের তালিকায়, তখন বিশ্বাস করতাম না। জানতাম, পরে বাদ যাবে। গত ১৬ বছরে তো অনেক কিছুই দেখলাম! আজ (বৃহস্পতিবার) এক সংবাদকর্মী ফোন করে জানতে চান, ‘আপনি তো একুশে পদক পাচ্ছেন। প্রতিক্রিয়া কী?’ আমি বললাম, আপনি হয়তো কারো কাছে শুনে বলছেন। তখন তিনি নিশ্চিত করলেন।
তবু আমার বিশ্বাসই হচ্ছিল না।”
ভালোবাসা নাকি স্বীকৃতি
পাঁচ দশকের সংগীতজীবনে মানুষের অসামান্য ভালোবাসা পেয়েছেন ফেরদৌস আরা। তাঁর কাছে গানের দীক্ষা নিয়ে অনেকে হয়েছেন আলোকিত। তবে এসব ভালোবাসার পাশাপাশি স্বীকৃতিও গুরুত্বপূর্ণ বলে মনে করেন তিনি। তাঁর ভাষ্য, ‘সরকারি স্বীকৃতি ও মানুষের ভালোবাসা—দুইটা প্রাপ্তিতে আকাশ-পাতাল তফাত। মানুষের ভালোবাসা কখনো ম্যানেজ করে পাওয়া যায় না। এটা আল্লাহর তরফ থেকে আসে। তবে হ্যাঁ, সরকারি স্বীকৃতি একজন শিল্পীর জীবনে অত্যন্ত প্রয়োজন। আমার সমসাময়িক শিল্পীদের অনেকে পেয়েছেন। তাঁদের সঙ্গে বসে যখন গল্প করতাম, নিজেকে অনাহুত মনে হতো। অবাক করার বিষয় হলো, অনেকেই মনে করতেন, আমি আগেই এই পদক পেয়ে গেছি!’
সম্মানী নয়, মর্যাদা
শিল্পীরা মূলত আত্মিক প্রশান্তির জন্য শিল্পকর্ম করে যান। সৃজনের মধ্য দিয়ে মানুষের মাঝে কল্যাণ ও শান্তির বাণী ছড়িয়ে দেওয়া তাঁদের ব্রত। এর বাইরে রাষ্ট্রীয় পদক একজন শিল্পীর জীবনে কতখানি ভূমিকা রাখে? “রাষ্ট্রীয় পদক একজন শিল্পীকে এগিয়ে যাওয়ার পথ ও সাহস দেখায়। তাঁর আত্মবিশ্বাস অনেক বাড়িয়ে দেয়। বিদেশে গেলে কিন্তু অনেকে জানতে চায়, দেশের জাতীয় পদক পাওয়া শিল্পী কি না। বিভিন্ন অনুষ্ঠানের সম্মানীর ক্ষেত্রেও পদকপ্রাপ্তদের অগ্রাধিকার দেওয়া হয়। টাকার কথা বলছি না আমি, সম্মান ও মর্যাদার দিকটা বলছি। তা ছাড়া আমার সুরসপ্তকের (শিল্পীর সংগীত প্রতিষ্ঠান) বাচ্চাদের সামনেও এখন আদর্শ হয়েছি। তাদের মনেও আশা জাগবে। এটা ভালো দিক”—বললেন ফেরদৌস আরা।
আনন্দের দিনে মহানন্দ
বৃহস্পতিবার ছিল ফেরদৌস আরার স্বামী ড. রফিকুল মুহাম্মেদের জন্মদিন। আর সেই দিনেই পেলেন একুশে পদকপ্রাপ্তির খবর। উচ্ছ্বাস প্রকাশ করে শিল্পী বলেন, ‘খুব সুন্দর সময়ে খবরটা পেলাম। যেদিন আমার স্বামীর জন্মদিন। আমার মেয়েটা অনেক বছর পর মাত্র দুই সপ্তাহের জন্য দেশে এসেছে। ছেলেটাও দেশে আছে। এমন ভরা পরিবারে, আনন্দের মধ্যেই খবরটা পেলাম। সবার মনেই এখন পূর্ণতা। আমার ছেলেমেয়েরা প্রায়ই অন্যদের কাছ থেকে শুনত, ‘তোমার মা এখনো একুশে পদক পাননি?’ ওদের ইচ্ছাটাও অবশেষে পূর্ণতা পেল। এই সময়ে আমার সংগীতগুরু সুধীন দাশকে মনে পড়ছে। বাবা, আমার বড় আপা জান্নাত আরা সবাইকে খুব মনে পড়ছে।’
সংগীতেই ব্যস্ততা
জীবনের অনেকটা পথ পাড়ি দিয়েছেন। এখন যদিও আগের মতো হরদম গানের অনুষ্ঠান করেন না কিংবা নতুন গানেও তাঁকে পাওয়া যায় না। তবে ফেরদৌস আরা এখনো ব্যস্ত সংগীত নিয়েই। কিছুদিন আগেই হয়েছেন নজরুল ইনস্টিটিউটের ট্রাস্টি বোর্ডের সদস্য। শিল্পী বলেন, ‘ট্রাস্টি বোর্ডের সদস্য হিসেবে নজরুল ইনস্টিটিউটের উন্নতির জন্য যা যা করণীয়, সেগুলো করার চেষ্টা করছি। সঙ্গে স্বরলিপি নিয়ে গবেষণার কাজ চলছে। অরজিনাল স্বরলিপিগুলো খুঁজে খুঁজে সংরক্ষণ করছি। এসব নিয়েই আমার এখন ব্যস্ততা। এ ছাড়া সুরসপ্তক পরিচালনার দিকটাও সামলাচ্ছি।’