রাজপথেই জবাব দেবে আওয়ামী লীগ
বঙ্গবন্ধু এভিনিউয়ে আওয়ামী লীগের কেন্দ্রীয় কার্যালয়ে অনুষ্ঠিত যৌথসভায় সূচনা বক্তব্যে ওবায়দুল কাদের
প্রথম নিউজ, অনলাইন: রাজপথের কর্মসূচি নিয়ে ফের নামছে আওয়ামী লীগ। এর অংশ হিসেবে বিএনপি’র রাজপথের আন্দোলন রাজপথেই জবাব দিতে চায় আওয়োমী লীগ। নির্বাচনের পর শ্রমিক সমাবেশ ও বিক্ষোভ সমাবেশ করেছে বিরোধী রাজনৈতিক দল বিএনপি। বিপরীতে আওয়ামী লীগও কর্মসূচি পালন করেছে। ক্ষমতাসীন দলটির নেতারা মনে করছেন, নেতা-কর্মীদের চাঙ্গা রাখতে সরকার বিরোধী আন্দোলনে গতি বাড়াতে পারে বিএনপি। এজন্য তারা রাজপথে কর্মসূচি দেবে। তাদের কর্মসূচি মানেই জনগণের জানমালের ক্ষয়ক্ষতি। আওয়ামী লীগের কেন্দ্রীয় নেতারা জানান, আন্দোলনের নামে রাজপথ উত্তপ্ত রাখতে চায় বিএনপি। বিভিন্ন ইস্যুকে সামনে রেখে তারা একের পর এক কর্মসূচি দেয়ার চেষ্টা করবে। তাদের এ ধরনের কর্মসূচির বিপরীতে আওয়ামী লীগ বসে থাকবে না।
রাজপথের আন্দোলন রাজপথেই জবাব দেয়া হবে। এজন্য দলীয় নেতাকর্মীদের সতর্ক থাকতে বলা হয়েছে। একাদশ জাতীয় নির্বাচনের আগে বিএনপি যত কর্মসূচি পালন করেছে বিপরীতে একই দিন শান্তি সমাবেশের নামে কর্মসূচি পালন করে ক্ষমতাসীন আওয়ামী লীগ। নির্বাচনের পরে এ পর্যন্ত দু’টি কর্মসূচি পালন করে বিরোধী রাজনৈতিক দল বিএনপি। ১লা মে বিএনপি’র প্রথম কর্মসূচির বিপরীতে পাল্টা কর্মসূচি পালন করে আওয়ামী লীগ। বিএনপি’র ওই কর্মসুচির নাম ছিল শ্রমিক সমাবেশ ও র্যালী। রাজধানীর নয়াপল্টনে বিএনপি কার্যালয়ের সামনে ওই কর্মসূচি পালন করে দলটি। এতে প্রধান অতিথি ছিলেন বিএনপি মহাসচিব মির্জা ফখরুল ইসলাম আলমগীর। বিপরীতে একই দিন বঙ্গবন্ধু এভিনিউয়ে আওয়ামী লীগের কেন্দ্রীয় কার্যালয়ের সামনে শ্রমিক সমাবেশ করে আওয়ামী লীগ। এতে প্রধান অতিথি ছিলেন আওয়ামী লীগ সাধারণ সম্পাদক ওবায়দুল কাদের।
সমাবেশে দুই দলই পাল্টাপাল্টি রাজনৈতিক বক্তব্য রাখে। সর্বশেষ গতকাল রাজধানীর নয়াপল্টনে দলের কেন্দ্রীয় কার্যালয়ের সামনে ঢাকা মহানগর দক্ষিণ বিএনপি’র উদ্যোগে বিএনপি চেয়ারপারসন বেগম খালেদা জিয়ার সুচিকিৎসাসহ নিঃশর্ত মুক্তি, ভারপ্রাপ্ত চেয়ারম্যান তারেক রহমানের মিথ্যা মামলা প্রত্যাহার, মহানগর দক্ষিণের সিনিয়র যুগ্ম-আহ্বায়ক নবী উল্লাহ নবীসহ সকল রাজবন্দির মুক্তির দাবিতে সমাবেশ করে দলটি। কিন্তু কৌশল পাল্টে এদিন কর্মসূচি থেকে বিরত থাকে আওয়ামী লীগ। বিপরীতে রাজধানীর বঙ্গবন্ধু এভিনিউয়ে আওয়ামী লীগের কেন্দ্রীয় কার্যালয়ে জরুরি যৌথসভা করে দলটি। এতে রাজপথে থেকেই বিএনপি’র আন্দোলন ও সংগ্রামের জবাব দেয়ার সিদ্ধান্ত নেয়া হয়। এজন্য রাজধানীর মহানগর উত্তর ও দক্ষিণ আওয়ামী লীগকে প্রস্তুত থাকতে বলা হয়েছে। দলের পক্ষ থেকে দেয়া নির্দেশনায় বলা হয়, আগামীতে বিএনপি রাজপথে আন্দোলন করার চেষ্টা করবে। নির্বাচনের পর এরইমধ্যে তারা কয়েকটি কর্মসূচি পালন করেছে। সামনে আরও কর্মসূচির পরিকল্পনা রয়েছে। তাদের আন্দোলন মানেই জানমালের ক্ষয়ক্ষতি। তাই রাজধানীতে যেন কোনো ধরনের বিশৃঙ্খলা তৈরি না হয় সেজন্য সবাইকে সতর্ক থাকতে হবে। এ প্রসঙ্গে যৌথসভার শুরুতে আওয়ামী লীগ সাধারণ সম্পাদক ওবায়দুল কাদের তার বক্তব্যে বলেন, বিএনপি ভোটারদের ভয় পায়, তাই নির্বাচনে আসে না। এই ভয় থেকে নির্বাচন বয়কট করে। আন্দোলন ও নির্বাচন ঠেকাতে ব্যর্থতা, এই ব্যর্থতার পর বিএনপি আবারো আন্দোলনের নামে বিশৃঙ্খলা, সন্ত্রাস সৃষ্টির পাঁয়তারা করছে। অনেকে বলেন পাল্টাপাল্টি সমাবেশ করছি। আজ কিন্তু আমরা কোনো সমাবেশ করিনি। সমাবেশ আমরা করবো, কারণ বিএনপি’র সমাবেশ মানেই অগ্নিসন্ত্রাস, বিশৃঙ্খলা, রক্তপাত।
বিএনপি’র কাছে গোটা রাজধানীকে যদি ছেড়ে দিই, তাহলে জনগণের জানমাল সুরক্ষায় সমস্যা হতে পারে। এ কারণে আমাদের থাকতে হয়। সমাবেশ থেকে এ পর্যন্ত পাল্টাপাল্টি মারামারি, সংঘর্ষ, বিরোধ কিছু হয়নি মন্তব্য করে তিনি বলেন, আমরা নাম দিয়েছি শান্তি সমাবেশ, আমরা সেভাবেই শুরু ও শেষ করেছি। আমরা যদি মাঠে না থাকি তাহলে অতীতের অভিজ্ঞতা বলে বিএনপি’র সমাবেশ মানেই নৈরাজ্য, পুলিশ হত্যা, সাংবাদিকদের ওপর নির্যাতন, হাসপাতালে হামলা। এটা ২৮শে অক্টোবর লক্ষ্য করেছি। আন্দোলন করেছে, আমরা নাকি পালানোর পথ পাবো না। আর সেদিন দেখলাম কতো যে দ্রুত মঞ্চ থেকে নেমে অলিগলি খুঁজে পাচ্ছিল না, পালাচ্ছিল। পালায় বিএনপি। বিএনপি আবারো আন্দোলনের নামে দেশে বিশৃঙ্খলা ও সন্ত্রাস সৃষ্টির পাঁয়তারা করছে। এ নিয়ে সবাইকে সতর্ক থাকার আহ্বান জানিয়ে ওবায়দুল কাদের বলেন, যারা বেগম খালেদা জিয়ার চিকিৎসা নিয়ে রাজনীতি করতে পারে তারা দেশের বিরুদ্ধে অনেক কিছুই করতে পারে। উপজেলা নির্বাচন নিয়ে ষড়যন্ত্র আছে জানিয়ে ওবায়দুল কাদের বলেন, সবাইকে সতর্ক থাকতে হবে। আমরা কোনো সংঘাতে জড়াবো না। এদিকে আজ বিকাল ৩টায় নয়াপল্টনে কেন্দ্রীয় যুবদলের পক্ষ থেকে বিক্ষোভ সমাবেশের ডাক দেয়া হয়েছে। একইদিন পাল্টা কর্মসূচির ঘোষণা দিয়েছে আওয়ামী লীগ। রাজধানীর মোহাম্মদপুরে বিকাল সাড়ে ৩টায় শান্তি উন্নয়ন সমাবেশ করবে দলটি। গতকাল যৌথসভা থেকে এ সিদ্ধান্ত নেয়া হয়েছে। যৌথসভায় উপস্থিত ছিলেন আওয়ামী লীগের সভাপতিমণ্ডলীর সদস্য ডক্টর আব্দুর রাজ্জাক, মোফাজ্জল হোসেন চৌধুরী মায়া, কামরুল ইসলাম, জাহাঙ্গীর কবির নানক, যুগ্ম সাধারণ সম্পাদক ড. হাছান মাহমুদ, মাহবুব উল আলম হানিফ, ডাক্তার দীপুমনিসহ কেন্দ্রীয় আওয়ামী লীগ, ঢাকা মহানগর উত্তর ও দক্ষিণ আওয়ামী লীগসহ সহযোগী ও ভাতৃপ্রতিম সংগঠনের নেতৃবৃন্দ।
বিএনপি চলে রিমোট কন্ট্রোলে: ওবায়দুল কাদের- রাজধানীর বঙ্গবন্ধু এভিনিউয়ে আওয়ামী লীগের কেন্দ্রীয় কার্যালয়ে অনুষ্ঠিত যৌথসভায় সূচনা বক্তব্যে ওবায়দুল কাদের বলেন, বিএনপি’র সমাবেশ মানেই অগ্নিসন্ত্রাস, বিশৃঙ্খলা ও রক্তপাত। কাজেই বিএনপি’র কাছে গোটা রাজধানীকে যদি তাদের ওপর ছেড়ে দিই তাহলে জনগণের জানমাল সুরক্ষায় সমস্যা হয়। সেজন্য আমাদের মাঠে থাকতে হয়। ওবায়দুল কাদের বলেন, কারা পালায় আবারো তা প্রমাণিত হয়েছে, বিএনপি পালায়, তাদের নেতা রাজনীতি করবে না এমন মুচলেকা দিয়ে লন্ডনে পালিয়ে গেছে, দেশে ফেরার সাহস নেই। বিএনপি চলে রিমোট কন্ট্রোলে। এই রিমোট কন্ট্রোলে আন্দোলন সফল হয় না। বিএনপি আমলে কোনো স্থানীয় নির্বাচন শান্তিপূর্ণ হয়েছে, কোন ধরনের ক্যাজুয়্যালিটি ছাড়া? এমন প্রশ্ন রেখে তিনি বলেন, এবারের উপজেলা নির্বাচনের প্রথম ধাপ শান্তিপূর্ণভাবে সম্পন্ন হয়েছে, কোনো ধরনের সংঘাত হয়নি। এর কৃতিত্ব সরকার ও নির্বাচন কমিশনকে দিতে হবে। ওবায়দুল কাদের বলেন, এবারে যে ভোট পড়ছে খুব ভালো ভোট পড়েছে বলবো না, মোটামুটি পড়েছে। এই নির্বাচনে বিএনপি’র ভোট বর্জনকে প্রত্যাখ্যান করে দলটির অনেকে নির্বাচনে অংশ নিয়েছে। দলটির কারও কথা কেউ শোনে না। ভুল আর ব্যর্থতার চোরাবালিতে আটকে থাকা বিএনপি কোনোকিছু আদায় করতে পারবে না। মুখে ফুলঝুরি ছড়ালেও ভেতরে তারা হতাশ।
যতদিন তারা ইতিবাচক রাজনীতির ধারায় ফিরে না আসবে ততদিন তারা জনবিচ্ছিন্ন থাকবে। ওবায়দুল কাদের জানান, বিএনপি নেতা গয়েশ্বর বলে দেশের জনগণকে নয়, পার্শবর্তী দেশকে খুশি করে টিকে আছে আওয়ামী লীগ। ভারত আমাদের প্রতিবেশী পরীক্ষিত বন্ধু। নির্বাচনের সময় তারা কোনো হস্তক্ষেপ করেনি। ভারতকে খুশি করে নয়, জনগণের শক্তিতেই টিকে আছি। ভারতের দয়ায় নয়। পচাত্তরের পর কতো বছর ক্ষমতায় ছিলাম না, তখন কি ভারত আমাদের ক্ষমতায় বসিয়েছিল? আগামী ১৭ই মে বঙ্গবন্ধুকন্যা আওয়ামী লীগ সভাপতি শেখ হাসিনার ঐতিহাসিক স্বদেশ প্রত্যাবর্তন দিবস। দিবসটিকে ঘিরে সারা দেশে কর্মসূচি পালন করবে আওয়ামী লীগ এবং তার সহযোগী এবং ভ্রাতৃপ্রতীম সংগঠনগুলো। বক্তব্যে আওয়ামী লীগ সাধারণ সম্পাদক বলেন, শেখ হাসিনা ফিরে না এলে দেশে গণতন্ত্র থাকতো না। যুদ্ধাপরাধী ও বঙ্গবন্ধু হত্যার বিচার হতো না। পদ্মা সেতু, মেট্রোরেল, রূপপুর পারমাণবিক বিদুৎ কেন্দ্র, মহাকাশে বঙ্গবন্ধু স্যাটেলাইট হতো না। আওয়ামী লীগ সরকার মূল্যস্ফীতি নিয়ন্ত্রণে অনেকটাই সফল উল্লেখ করে সড়ক পরিবহন ও সেতু মন্ত্রী বলেন, বিএনপি’র সময় মূল্যস্ফীতি হু হু করে বেড়েছিল। ফিলিস্তিনে ইসরাইলের গণহত্যা নিয়ে ওবায়দুল কাদের বলেন, জাতিসংঘের নিরাপত্তা পরিষদের যুদ্ধবিরতির প্রস্তাবকে বৃদ্ধাঙ্গলি দেখিয়ে যুদ্ধাংদেহী ইসরাইল ফিলিস্তিনের রাফায় যুদ্ধ চালিয়ে যাওয়ার ঘোষণা দিয়েছে। এই ইসরাইল সারাবিশ্বের জন্য আতঙ্কের বিষয় হয়ে দাঁড়িয়েছে।