প্রথম নিউজ, অনলাইন ডেস্ক : মায়ানমারে সাইবার অপরাধ চক্রের হাতে জিম্মি রয়েছেন ১৭ বাংলাদেশি। তাদের মধ্যে রয়েছেন রাজবাড়ীর রাশিদুল ইসলাম রিফাত। একমাত্র ছেলের ছবি দেখে দিন কাটছে তার মা-বাবার। ২০২৩ সালে সংযুক্ত আরব আমিরাতে পারি জমান পাংশা উপজেলার বাহাদুরপুর ইউনিয়নের পাটিকাবাড়ি গ্রামের মো. হাকিম সরদারের ছেলে রিফাত। দুবাই গিয়ে ভালোই চলছিল তার দিন। কিন্তু হঠাৎ করে তার কোম্পানিটি বন্ধ হয়ে গেলে অন্য আরেকটি কোম্পানিতে কাজ শুরু করেন রিফাত।
সেই সময় ফেনী জেলার ইফতেখারুল আলম নামের এক দালালের সঙ্গে পরিচয় হয় রিফাতের। বেশি বেতনে চাকরির প্রলোভন দেখিয়ে তাকে প্রথমে থাইল্যান্ড নিয়ে যান ইফতেখারুল। এরপর মায়ানমারের একটি সাইবার অপরাধ চক্রের কাছে বিক্রি করে দিয়েছে বলে অভিযোগ সিফাতের পরিবারের।
ছেলেকে উদ্ধার চেয়ে পররাষ্ট্র মন্ত্রণালয়ে আবেদন করেছেন উল্লেখ করে রিফাতের বাবা হাকিম সরদার বলেন, দালাল আমার ছেলেকে বেশি বেতনের চাকরির প্রলোভন দেখিয়ে প্রথমে থাইল্যান্ড নেন। তারপর তাকে মিয়ানমারে জিম্মি করে রেখেছে তারা (দালাল)। সেখানে টাকা উপার্জনের টার্গেট দেওয়া হয়। শর্ত পূরণে ব্যর্থ হলে নির্যাতন করে তারা।
রিফাতের বোন মৌসুমী আক্তার বলেন, 'আমার ছোট ভাই রিফাত ২০২৩ সালে ফ্রি ভিসায় দুবাই গিয়েছিল। সেখানে আট মাস একই কোম্পানিতে কাজ করার পর ওই কোম্পানিটি বন্ধ হয়ে যায়। তারপর অন্য এক জায়গায় কাজ শুরু করে সিফাত। মাসে দুই লাখ টাকা বেতনের চাকরির প্রলোভন দেখিয়ে রিফাতকে প্রথমে থাইল্যান্ড নিয়ে যান ইফতেখারুল। এরপর তাকে মিয়ানমারের একটি সাইবার অপরাধ চক্রের কাছে বিক্রি করে দিয়েছে দালালরা। এরপর থেকে আমাদের সঙ্গে রিফাতের যোগাযোগও বন্ধ করে দেয় চক্রটি।
তিনি আরো জানান, ১৩ নভেম্বর রিফাত গোপনে আমাকে ফোন দিয়ে বিষয়গুলো জানায়। তখন আমি ও বাবা বাংলাদেশের মিয়ানমার অ্যামবাসি ও পররাষ্ট্র মন্ত্রণালয়ে আমার ভাইকে উদ্ধার চেয়ে আবেদন করি। কিন্তু এখন পর্যন্ত কোনো সন্ধান মেলেনি। তিনি জানান, শুধু রিফাত নয়, সেখানে আরো ১৭ জন বাংলাদেশি রয়েছেন।
নরসিংদীর জুনায়েদ মিয়ানমার সাইবার অপরাধ চক্রের কাছে দীর্ঘদিন আটক থাকার পর ১৪ নভেম্বর পালিয়ে দেশে ফিরে আসেন। দেশে এসে সেখানকার নির্যাতনের ভয়াবহ তথ্য তুলে ধরে তিনি বলেন, 'আমরা পাঁচ বন্ধু মিলে থাইল্যান্ডে ঘুরতে গিয়েছিলাম। আমাদের এক বন্ধু কায়সারের সঙ্গে ফেনী জেলার রোমান ও রনির সঙ্গে পরিচয় ছিল। তারা দুবাইতে একসঙ্গে কাজ করতেন।'
তিনি আরো বলেন, 'তখন কায়সারকে বেশি বেতনের চাকরির অফার করে রোমান ও রনি। আমাদেরকে বলে, তারা কম্পিউটার অপারেটরের কাজ, আগে কম্পানিটি দেখ, ভালো লাগলে কাজ করবা। তখন আমরা কম্পানিটি দেখতে যাই।
তিনি বলেন, তখন আমাদের ওখান থেকে আটক করে বার্মায় নিয়ে যাওয়া হয়। ওইখানে আমি চার মাস আটক ছিলাম। সেখান থেকে চলে আসতে চাইলে আমাদের কারেন্টের শক দিয়ে নির্যাতন করত। একদিন আমাদের সঙ্গে থাকা এক পাকিস্তানি অসুস্থ হয়ে পড়েন। ওই পাকিস্তানির সঙ্গে আমাকে হাসপাতালে নিয়ে যায় তারা। ওই হাসপাতাল থেকে পালিয়ে নদীতে ঝাঁপ দিলে চারটি গুলি করে তারা। আল্লাহর রহমতে আমার গায়ে একটি গুলিও লাগেনি। পরে জঙ্গলের মধ্য দিয়ে ব্যাংককের এম্বাসির সঙ্গে যোগাযোগ করি। পরে তারা আমাকে ১৫ দিন পরে দেশে পাঠিয়ে দেয়।
পররাষ্ট্র মন্ত্রণালয়ের মহাপরিচালক শাহ মোহাম্মদ তানভীর মনসুর বলেন, এ বিষয়ে এখনো আমি অবগত নই। তদন্ত করে বিষয়টি জানতে হবে।