মোবাইল দিতে অস্বীকৃতি জানানোয় রাকিবকে ছুরিকাঘাতে হত্যা
প্রথম নিউজ, ঢাকা : রাজধানীর আইডিয়াল স্কুল অ্যান্ড কলেজের শিক্ষার্থী আদনান সাঈদ রাকিব (১৭) নিজের মোবাইল ফোন দিয়ে দিতে অস্বীকৃতি জানালে তাকে সুইচ গিয়ার চাকু দিয়ে জখম করে ছিনতাইকারীরা। এতে রাকিবের মৃত্যু হয়।
এ ঘটনায় সোমবার (১৭ জুলাই) রাতে নিহত রাকিবের পরিবার বাদী হয়ে ধানমন্ডি মডেল থানার একটি মামলা (নং-১৬) দায়ের করেন। পরে মামলার পরিপ্রেক্ষিতে অভিযান চালিয়ে এ ঘটনার সঙ্গে জড়িত তিন ছিনতাইকারীকে গ্রেপ্তার করে ঢাকা মহানগর গোয়েন্দা (ডিবি) পুলিশ। সোমবার রায়েরবাগ বস্তি এলাকা থেকে তাদের গ্রেপ্তার করা হয়।
গ্রেপ্তাররা হলেন মো. ইকবাল (১৬), মো. সুমন ভুইয়া ওরফে বড় সুমন (২৫) ও মো. সুমন ওরফে কালু সুমন ওরফে ছোট সুমন (১৪)। গ্রেপ্তারের সময় তাদের কাছ থেকে হত্যাকাণ্ডে ব্যবহৃত ব্যাটারিচালি একটি রিকশা ও একটি সুইচ গিয়ার চাকু জব্দ করা হয়।
ডিবি পুলিশ জানায়, রোববার (১৬ জুলাই) রাত সাড়ে ৯টার দিকে রাকিব ও তার বন্ধু রাইয়ান চা পান করতে যায়। চা পান করে মিরপুর রোড সংলগ্ন শেখ জামাল মাঠের পূর্বপাশে নার্সারির সামনে ফুটপাতের ওপর দিয়ে হেঁটে বাসায় ফিরছিল রাকিব। এমন সময় কয়েকজন ছিনতাইকারী রাকিব ও রাইয়ানের ওপর হামলা করে।
তারা প্রথমেই রাকিবের বন্ধু রাইয়ানকে মারধর করে মোবাইল ফোন কেড়ে নেয়। রাইয়ান সেখান থেকে দৌড়ে পালিয়ে যায়। পরে রাকিবের মোবাইল ফোন চাইলে সে দিতে রাজি হয়নি। আর এতেই ছিনতাইকারীরা রাকিবকে সুইচ গিয়ার চাকু দিয়ে ডান পাশের কাঁধের নিচে ও বাম পায়ের হাঁটুর উরুতে আঘাত করে। পরে মোবাইল ফোন ও মানিব্যাগ নিয়ে পালিয়ে যায়।
মঙ্গলবার (১৮ জুলাই) দুপুরে ডিএমপি মিডিয়া সেন্টারে আয়োজিত এক সংবাদ সম্মেলনে এ তথ্য জানান ডিএমপির অতিরিক্ত কমিশনার (গোয়েন্দা) মোহাম্মদ হারুন অর রশীদ।
তিনি বলেন, রাকিব হত্যাকাণ্ডের ১২ ঘণ্টার মধ্যে রহস্য উদঘাটন এবং মূল আসামিসহ তিনজনকে গ্রেপ্তার করা হয়েছে। হত্যাকাণ্ডে ব্যবহৃত চাকুও জব্দ করা হয়। সেই সঙ্গে লুণ্ঠিত মালামাল উদ্ধার করেছি।
রাকিব কলাবাগানের গ্রিনরোড স্টাফ কোয়াটারে ৪/বি/২ বাসায় পরিবারের সঙ্গে থাকত। রোববার রাত সাড়ে ৯টার দিকে বন্ধু রাইয়ানসহ ধানমন্ডি রবীন্দ্র সরোবরে চা পানের কথা বলে সে বাসা থেকে বের হয়ে যায়। চা পান শেষে তারা শেখ জামাল মাঠের পূর্বপাশে নার্সারির সামনে ফুটপাত দিয়ে হেঁটে বাসায় ফিরছিল। রাত ১০টা ৫৫ মিনিটে অজ্ঞাত চারজন ছিনতাইকারী তাদের গতিরোধ করে।
পরে ভয়ভীতি দেখিয়ে মোবাইল ও মানিব্যাগ দিয়ে দিতে বলে। পরে রাইয়ান তার কালো রঙের পুরোনো সিমফোনি বাটন মোবাইল দিয়ে দৌড়ে পালিয়ে যায়। কিন্তু রাকিব মোবাইল দিতে অস্বীকৃতি জানানোয় ছিনতাইকারীরা ধারালো চাকু দিয়ে রাকিবের ডান পাশের কাঁধের নিচে ও বাম পায়ের উরুতে আঘাত করে। পরে তার কাছে থাকা মোবাইল দুটি নিয়ে নেয়।
এরপর রাকিব চিৎকার করলে আশপাশের কোনো লোকজন এগিয়ে না আসায় সে রাস্তা পার হয়। পরে গ্রিন রোড স্টাফ কোয়ার্টারের ১ নম্বর গেট দিয়ে ৫০ গজ সামনে এসে একটি বাড়ির সামনে পড়ে যায়। রাকিব যে কোয়ার্টারে থাকত সেখানকার এক বাসিন্দা আবু বক্কর সিদ্দিক রাকিবের বাবাকে মোবাইলে বিষয়টি জানান। সেই সঙ্গে রাকিবের বড় ভাই আরমান সজিব হৃদয়কে ডাকেন।
খবর পেয়ে রাকিবের বড় ভাই দ্রুত ঘটনাস্থলে গিয়ে তাকে রক্তাক্ত অবস্থায় দেখতে পায়। এরপর রাকিবকে কাছের একটি হাসপাতালে নিয়ে গেলে কর্তব্যরত চিকিৎসক তাকে মৃত ঘোষণা করেন। পরে পুলিশ ময়নাতদন্তের জন্য মরদেহটি ঢাকা মেডিকেল কলেজ (ঢামেক) হাসপাতাল মর্গে নিয়ে যায়।
ডিবি কর্মকর্তা হারুন অর রশীদ বলেন, ঈদের পর ছিনতাইয়ের ঘটনা কিছুটা বেড়েছিল। এরপর ডিবি ও থানা পুলিশ ছিনতাইকারীদের বিরুদ্ধে অভিযান পরিচালনা করেছে। অভিযানে আমরাই (ডিবি) প্রায় ১০০ জনের মতো ছিনতাইকারীকে গ্রেপ্তার করেছি। কারওয়ান বাজার, ফার্মগেট ও রমনা এলাকার সবচেয়ে বড় যে ছিনতাইকারী চক্রের সর্দার কামরুলসহ অনেককে গ্রেপ্তার করেছি।
তিনি বলেন, ছিনতাইকারীদের হামলায় পুলিশ সদস্য নিহত ও একজন সাংবাদিক আহত হওয়ার পর ডিএমপি কমিশনারের নির্দেশে ছিনতাইকারীদের বিরুদ্ধে বিশেষ অভিযান পরিচালনা করা হয়।
ধানমন্ডির ঘটনায় অভিযুক্তরা এর আগে গ্রেপ্তার হয়েছিল কিনা বা তারা জামিনে বের হওয়া ছিনতাইকারী কিনা এ প্রশ্নের জবাবে তিনি বলেন, ঘটনা ঘটার ১২ ঘণ্টার মধ্যে আমরা অভিযুক্তদের গ্রেপ্তার করেছি। এ বিষয়ে আমাদের থানা পুলিশ ও ডিবি পুলিশের সবার একটা গতিবিধি ছিল। অভিযুক্তরা রায়ের বাজার বস্তি এলাকায় থাকত। সেখানে আমাদের নজরদারি ছিল। অভিযুক্তরা এর আগে গ্রেপ্তার হয়েছিল কিনা বা তারা জামিনে বের হওয়া কিনা সে বিষয়ে তদন্ত করছি।
তিনি আরও বলেন, যেসব এলাকায় ফুটপাতে আলো কম থাকে সেসব এলাকায় ছিনতাইয়ের ঘটনা বেশি ঘটে। যেহেতু ফুটপাতে বাতি লাগানোর কাজ সিটি কর্পোরেশনের সেক্ষেত্রে তাদের সঙ্গে ডিবির কোনো কথা হয়েছে কিনা, এ বিষয়ে প্রশ্ন করা হলে তিনি বলেন, আমার মনে হয় এ প্রশ্নটি আপনারা (সাংবাদিক) মেয়রদের করলে ভালো হয়। তবে অন্ধকার জায়গাগুলোতে আলোর ব্যবস্থা থাকলে এ ধরনের ঘটনা কমতে পারে।