মৃত্যুর ২১ বছর পর খালাস পেলেন সাজাপ্রাপ্ত ইউপি চেয়ারম্যান
২০২২ সালের ২৭ জানুয়ারি সে আপিল নিষ্পত্তি করে রায় দেন হাইকোর্ট। সম্প্রতি রায়ের পূর্ণাঙ্গ অনুলিপি প্রকাশ করা হয়েছে।
প্রথম নিউজ,ঢাকা: দীর্ঘ ৪০ বছর আগে অর্থ ও গম আত্মসাতের অভিযোগে মামলা হয়েছিল আব্দুস সোবহান সরকার নামে তৎকালীন এক ইউপি চেয়ারম্যানের বিরুদ্ধে। এর পাঁচ বছর পর বিচারিক আদালতে আসামির পাঁচ বছরের সাজা হয়। সে রায়ের বিরুদ্ধে উচ্চ আদালতে আপিল করেন ওই চেয়ারম্যান। কিন্তু সে আপিল নিষ্পত্তি হওয়ার ২১ বছর আগেই মারা গেছেন সেই চেয়ারম্যান।
২০২২ সালের ২৭ জানুয়ারি সে আপিল নিষ্পত্তি করে রায় দেন হাইকোর্ট। সম্প্রতি রায়ের পূর্ণাঙ্গ অনুলিপি প্রকাশ করা হয়েছে।
মামলার তথ্যে জানা গেছে, ১৯৮২ সালে রাজশাহীর চারঘাট থানার বাজুবাঘা ইউনিয়নের একটি স্কুলের জন্য দেওয়া কয়েকটি হাটের ইজারার টাকা, বিভিন্ন প্রজেক্টের অর্থসহ ট্যাক্সের ৪০ হাজারের বেশি টাকা আত্মসাতের অভিযোগ ওঠে চেয়ারম্যান আব্দুস সোবহান সরকারের বিরুদ্ধে। এ ঘটনায় তৎকালীন সহকারী কমিশনার মো. ইছাহাক আলীর অভিযোগের পরিপ্রেক্ষিতে মামলা করা হয়। তদন্ত কর্মকর্তা ১৯৮২ সালের ২৯ মার্চ প্রতিবেদন দেন।
বিচারিক কার্যক্রম শেষে ১৯৮৭ সালের ২৬ সেপ্টেম্বর রায় দেন রাজশাহী বিভাগীয় স্পেশাল জজ মো. আব্দুল কাদের খান। রায়ে আসামিকে পাঁচ বছরের কারাদণ্ড এবং ৪২ হাজার টাকা জরিমানা করা হয়। অনাদায়ে আরও এক বছরের দণ্ড দেন বিচারক। পরে এ রায়ের বিরুদ্ধে হাইকোর্টে আপিল করেন আসামিপক্ষ। কিন্তু দীর্ঘদিন এ আপিল আবেদনটিতে শুনানিতে আসেনি। পরবর্তীকালে প্রধান বিচারপতি হাসান ফয়েজ সিদ্দিকী এসব পুরোনো আপিল মামলার শুনানির উদ্যোগ নিলে এ মামলাটিও কার্যতালিকাভুক্ত হয়।
এরপর শুনানি শেষে বিচারপতি মো. আবু জাফর সিদ্দিকী ও বিচারপতি মো. সোহরাওয়ার্দীর সমন্বয়ে গঠিত হাইকোর্ট বেঞ্চ ২০২২ সালের ২৭ জানুয়ারি রায় দেন। এর আগে ২০২১ সালের ৮ ডিসেম্বর ও পরের বছরের ১৯ জানুয়ারি আপিল শুনানি হয়।
হাইকোর্টের রায়ে বলা হয়েছে, এ মামলার আপিল বিচারাধীন থাকা অবস্থায় ২৪ জানুয়ারি দুদকের আইনজীবী একটি হলফনামা জমা দেন। সেখানে বলা হয়, বাজুবাঘা ইউনিয়নের বর্তমান চেয়ারম্যান ১২ জানুয়ারি আপিলকারী ২০০১ সালের ১৩ জুন মারা যান। সুতরাং ফৌজদারি কার্যবিধি ৪৩১ ধারা অনুসারে অন মেরিটে দণ্ড ও সাজার বিষয়ে আপিল নিষ্পত্তির সুযোগ নেই।
তবে প্রসিকিউশন সংশ্লিষ্ট স্কুলের প্রধান শিক্ষককে এক্সামিন করতে ব্যর্থ হয়েছে। এছাড়া অর্থ আত্মসাতের অভিযোগ প্রসিকিউশন সন্দেহতীতভাবে প্রমাণ করতে পারেনি। তাই এসব অভিযোগ থেকে খালাস পেতে পারেন আপিলকারী। তার বিরুদ্ধে দেওয়া রায় এবং দণ্ডাদেশ ও জরিমানার আদেশ বাতিল করা হলো। ফলে আপিল মঞ্জুর করা হলো।
আদালতে রাষ্ট্রপক্ষে ছিলেন ডেপুটি অ্যাটর্নি জেনারেল সামিরা তারান্নুম রাবেয়া মিতি, সহকারী অ্যাটর্নি জেনারেল আন্জুম আরা বেগম ও কাজী শামসুন নাহার কণা। দুদকের পক্ষে ছিলেন আইনজীবী শাহীন আহমেদ। তবে আপিলকারীর পক্ষে কোনো আইনজীবী ছিলেন না।
এ বিষয়ে দুর্নীতি দমন কমিশনের আইনজীবী শাহীন আহমেদ বলেন, এ মামলার আপিলের পর আর কেউ খোঁজ রাখেনি। না রাষ্ট্রপক্ষ, না দুর্নীতি দমন ব্যুরো। আসামিপক্ষও না। এরমধ্যে ২০০৪ সালের আইনে দুর্নীতি দমন কমিশন গঠন করা হয়। তখন হয়ত পুরোনো মামলার আর খোঁজ রাখতে পারেনি দুদক। ২০১৯ সালে তৎকালীন প্রধান বিচারপতি সৈয়দ মাহমুদ হোসেন পুরোনো মামলা নিষ্পত্তির উদ্যোগ নেন। এরপর এ ধরনের মামলাগুলো শুনানির জন্য কার্যতালিকাভুক্ত হয়। এরমধ্যে দুদক জানতে পারে ওই চেয়ারম্যান ২০০১ সালে মারা গেছেন। বিষয়টি হাইকোর্টকে অবহিত করার পর আপিলটি নিষ্পত্তি করে দেন আদালত।