মাছ শিকারি 'জেলে'
সপ্তম শ্রেণিতে বাংলাদেশ ও বিশ্বপরিচয় বইয়ের দ্বিতীয় অধ্যায়ে তোমরা জেলে সম্পর্কে জেনেছ। জেলেরা মাছ শিকারের সঙ্গে জড়িত—

প্রথম নিউজ, অনলাইন: মাছ শিকার মানুষের বহু পুরনো পেশা। সিন্ধু সভ্যতা, বৈদিক ও মৌর্য যুগের অসংখ্য নিদর্শনে মানবসভ্যতার উন্নতির সঙ্গে সঙ্গে মাছ শিকারের বিভিন্ন চিত্র ফুটে ওঠে। মাছ শিকার যাঁদের পেশা, তাঁদের আমরা জেলে নামে চিনি। সাধারণত জেলেরা মাছ ধরার ওপর নির্ভর করে জীবিকা নির্বাহ করেন।
এই দেশের নদী, হাওর-বাঁওড় আর উপকূলজুড়ে ছড়িয়ে আছেন লাখ লাখ জেলে। জীবিকার জন্য প্রতিদিন ঝড়-জল উপেক্ষা করে তাঁরা নেমে পড়েন নদী, সাগর বা খালের বুকে। জেলেদের বসবাসকৃত এলাকাকে বলা হয় ‘জেলেপল্লী’ বা ‘জেলেপাড়া’। সকাল হওয়ার আগেই জেলেপাড়া থেকে শুরু হয় জেলেদের দিন।
কঠিন এই জীবনে জেলেরা বর্ষায় নদীর স্রোত, জোয়ার-ভাটা সামলে টিকে থাকেন আবার শীতে মাছ কমে গেলে খেয়ে না খেয়ে দিন গুজরান করেন। তবে তাঁদের বড় বিপদ হয় প্রাকৃতিক দুর্যোগের সময়। প্রায়ই তাঁরা ঝড়, সাইক্লোন কিংবা প্রবল ঢেউয়ের মুখে থেকেও জীবন বাজি রেখে পাড়ি দেন উত্তাল সাগর বা নদীতে। জেলেদের প্রধান সমস্যা অর্থনৈতিক।
মাছ পাওয়া না গেলে দিনশেষে খালি হাতে ফিরতে হয়। তা ছাড়া দাদন বা ঋণের বোঝা তাঁদের দমিয়ে রাখে। মহাজনদের কাছ থেকে আগেভাগে টাকা নিয়ে জাল, নৌকা বা ইঞ্জিন কিনতে হয়। কিন্তু মাছ কম ধরা পড়লে ঋণ শোধ করা হয়ে পড়ে কঠিন। এদিকে সরকার নির্দিষ্ট সময়ের জন্য ইলিশ মাছ ধরা নিষিদ্ধ করে, যেন মাছের উৎপাদন বাড়ে।
তবে এই সময়টায় বিকল্প আয়ের সুযোগ না থাকায় অনেক জেলে পরিবার দুর্দশায় পতিত হয়। সরকারি সাহায্য এলেও তা সুষমভাবে সবার কাছে না পৌঁছানোর অভিযোগ আছে। সমুদ্র বা নদীতে মাছ ধরতে গিয়ে অনেক জেলে জলদস্যুদের কবলে পড়েন। উপকূলীয় অঞ্চলে জলদস্যুদের হাতে অপহরণ, মুক্তিপণ দাবি, এমনকি হত্যার ঘটনাও ঘটে।
দেশে ভোক্তাদের মাছের চাহিদার বড় অংশ মেটায় জেলেরা। বর্তমানে দেশে প্রায় ১৫ লাখ জেলে রয়েছেন। জেলেদের মাছ ধরার কাজে নতুন নতুন প্রযুক্তির সংযোজন হচ্ছে। আধুনিক নৌকা, ইকো সাউন্ডার, উন্নত মানের জাল ব্যবহারের ফলে মাছ ধরার সুযোগ বাড়ছে। তা ছাড়া কিছু জায়গায় জেলেদের নিয়ে সমবায় সমিতি গঠন করা হচ্ছে, যাতে তাঁরা আর্থিকভাবে আরো শক্তিশালী হতে পারেন।