ভাস্কর্য-মূর্তি তৈরির কারিগর থেকে অস্ত্র তৈরির কারিগর
গ্রেফতাররা হলেন- মো. মোখলেছুর রহমান সাগর (৪২), তার প্রধান সহযোগী মো. তানভির আহম্মেদ (৩২), অনিক হাসান (২৮), মো. আবু ইউসুফ সৈকত (২৮), রাজু হোসেন (৩৮) ও মো. আমির হোসেন।
প্রথম নিউজ, ঢাকা: রাজধানীর বাড্ডা এলাকা থেকে চারটি পিস্তল ও অস্ত্র তৈরির বিপুল সরঞ্জামসহ ছয় অবৈধ অস্ত্র ব্যবসায়ীকে গ্রেফতার করেছে র্যাব-১০। গ্রেফতাররা হলেন- মো. মোখলেছুর রহমান সাগর (৪২), তার প্রধান সহযোগী মো. তানভির আহম্মেদ (৩২), অনিক হাসান (২৮), মো. আবু ইউসুফ সৈকত (২৮), রাজু হোসেন (৩৮) ও মো. আমির হোসেন।
আজ মঙ্গলবার (১২ মার্চ) দুপুরে রাজধানীর কারওয়ান বাজার র্যাব মিডিয়া সেন্টারে আয়োজিত সংবাদ সম্মেলনে র্যাব-১০ এর অধিনায়ক অতিরিক্ত ডিআইজি মোহাম্মদ ফরীদ উদ্দীন এসব তথ্য জানান।
তিনি বলেন, সম্প্রতি র্যাব গোয়েন্দা তথ্যের ভিত্তিতে জানতে পারে, কিছু অবৈধ অস্ত্র ব্যবসায়ী বেশ কিছুদিন ধরে অবৈধভাবে পিস্তলসহ বিভিন্ন অস্ত্র তৈরি করে রাজধানী ঢাকাসহ দেশের বিভিন্ন এলাকায় সন্ত্রাসী, চাঁদাবাজ, মাদককারবারি ও বিভিন্ন নাশকতাকারীর কাছে অর্থের বিনিময়ে অস্ত্র সরবরাহ করে আসছে।
র্যাব এ অবৈধ অস্ত্র ব্যবসায়ীদের গ্রেফতার করে আইনের আওতায় নিয়ে আসার লক্ষ্যে গোয়েন্দা নজরদারি বৃদ্ধি করে। এরই ধারাবাহিকতায় সোমবার (১১ মার্চ) গভীর রাতে ও মঙ্গলবার (১২ মার্চ) ভোররাতে র্যাব-১০ এর একটি আভিযানিক দল গোয়েন্দা তথ্যের ভিত্তিতে রাজধানীর উত্তর বাড্ডা এলাকায় একটি অভিযান পরিচালনা করে।
র্যাব-১০ এর অধিনায়ক আরও বলেন, অভিযানে প্রথমে অবৈধ অস্ত্র ব্যবসায়ী চক্রটির মূলহোতা অস্ত্র তৈরির কারিগর মোখলেছুর ও তানভিরকে গ্রেফতার করে। তাদের দেওয়া তথ্যে র্যাব-১০ এর একটি আভিযানিক দল মঙ্গলবার ভোরে রাজধানীর বাড্ডা থানাধীন হাজী আব্দুল হামিদ রোডস্থ পূর্ব-পদরদিয়া এলাকায় আরেকটি অভিযান পরিচালনা করে অবৈধ অস্ত্র তৈরি ও ব্যবসায়ী চক্রের অপর চার সদস্যকে গ্রেফতার করে।
যেভাবে ভাস্কর্য-মূর্তি তৈরির কারিগর থেকে অস্ত্র তৈরির কারিগর
অতিরিক্ত ডিআইজি ফরীদ উদ্দীন বলেন, গ্রেফতার মো. মোখলেছুর রহমান সাগর অবৈধ অস্ত্র তৈরি ও অস্ত্র ব্যবসায়ী চক্রটির মূলহোতা। তিনি পেশায় একজন ভাস্কর্য/মূর্তি তৈরির কারিগর। ভাস্কর্য/মূর্তি তৈরির দক্ষতার সুবাদে মোখলেছুর রহমান সাগর ভারতের কলকাতায় এবং আসামের শিলিগুঁড়িতে প্রায় ১২ বছর ভাস্কর্য/মূর্তি তৈরির কারিগর হিসেবে কাজ করতেন।
সেখানে সুকুমার নামে অস্ত্র তৈরির এক কারিগরের সঙ্গে তার পরিচয় হয় এবং সুকুমারের কাছ থেকে মোখলেছুর রহমান সাগর অস্ত্র তৈরির দক্ষতা অর্জন করেন। এরপর মোখলেছুর রহমান সাগর দেশে এসে অস্ত্র তৈরি করে স্বল্পদিনে কোটিপতি হওয়ার আশায় অবৈধ অস্ত্র তৈরি করে মোটা অংকের অর্থের বিনিময়ে সরবরাহের পরিকল্পনা করেন। এরই অংশ হিসেবে প্রথমে তিনি গ্রেফতার তানভির, অনিক ও সৈকতদের নিয়ে অস্ত্র তৈরি ও সরবরাহের জন্য একটি সিন্ডিকেট গড়ে তোলেন।
ফরীদ উদ্দীন বলেন বলেন, গ্রেফতার তানভির পেশায় একজন লেজার সিএনসি ডিজাইনার। লেজার সিএনসি ডিজাইনার হওয়ায় তিনি যেকোনো কিছু কম্পিউটারে টু-ডি নকশা অনুযায়ী অত্যন্ত সূক্ষ্মভাবে কাটিং করার দক্ষতা অর্জন করেন।
র্যাব-১০ এর অধিনায়ক আরও বলেন, এ দক্ষতাকে কাজে লাগিয়ে তানভির সাগরের দেওয়া নকশা অনুযায়ী বিভিন্ন অস্ত্রের যন্ত্রাংশ তৈরির মাধ্যমে সাগরের অস্ত্র তৈরির প্রধান সহযোগী হিসেবে কাজ করতেন। সাগর ও তানভির অস্ত্র তৈরি করে সেগুলো অনিক ও সৈকতের কাছে হস্তান্তর করতেন। পরে অনিক ও সৈকত এসব অস্ত্র বিভিন্ন ক্রেতার কাছে বিক্রি করতেন। এক্ষেত্রে প্রতিটি পিস্তল/অস্ত্র তিন লাখ টাকার বিনিময়ে বিক্রি করতেন। তারা সবাই স্বল্পসময়ে অধিক অর্থ উপার্জনের উদ্দেশ্যে এই ব্যবসার সঙ্গে নিজেদের সম্পৃক্ত করেন।
ফরীদ উদ্দীন বলেন, গ্রেফতার আমির ও রাজু তাদের অন্যতম অস্ত্রের ক্রেতা। আমির ও রাজু এসব অস্ত্র ক্রয় করে বিভিন্ন সন্ত্রাসী, চাঁদাবাজ, মাদককারবারি ও বিভিন্ন নাশকতাকারীদের কাছে বেশি মূল্যে বিক্রি করতেন। তারা উভয়ই অস্ত্র কেনার উদ্দেশ্যে অনিক ও সৈকতের কাছে আসেন এবং অস্ত্র ক্রয়-বিক্রয় করাকালীন হাতেনাতে র্যাবের হাতে গ্রেফতার হন।
অভিযানে তাদের কাছ থেকে চারটি পিস্তল, চার রাউন্ড কার্তুজ সাতটি পিস্তলের কাঠের ফর্মা, ১০টি ফায়ারিং ম্যাকানিজম, চারটি ট্রিগার, দুটি পিস্তলের হ্যান্ডগ্রিপ, দুটি ড্রিল বিট, পাঁচটি রেত, ৫০টি স্প্রিং, ৪০টি পিস্তলের নাট বল্টু, দুটি কম্পাস, তিনটি গাজ, চারটি ক্লাম, দুটি ড্রিল মেশিন, দুটি বাইস, একটি বার্নি স্কেল, একটি মুগুর, চারটি ক্লাম, ২০টি হেস্কো ফ্রেম, দুটি গোল্ড এলএস ফ্লাম, একটি টুল বক্স, একটি গ্যারেন্ডার মেশিন, একটি কাঠের যোগান ও একটি হাতুড়ি উদ্ধার করা হয়।