Ad0111

বাসায় ডেকে যৌন সম্পর্ক, টাকা চাওয়ায় খুন করে জব্বার

গুড়ার সোনাতলার বামুনিয়ার আব্দুস কুদ্দুসের মেয়ে মোছা. শিপন আক্তার

বাসায় ডেকে যৌন সম্পর্ক, টাকা চাওয়ায় খুন করে জব্বার
হত্যাকারী আব্দুল জব্বার

প্রথম নিউজ, ঢাকা: ৮ অক্টোবর বিকেলে পাঞ্জাবি পরা এক তরুণ ও বোরকা পরা এক নারী রাজধানীর যমুনা ফিউচার পার্কে একসঙ্গে ঘুরে বেড়ালেন। ফুটপাতের টং দোকানে দাঁড়িয়ে ফুচকা খেলেন। রাতে ওই নারী তরুণের বাসায় গেলেন।

১০ অক্টোবর রাজধানীর ভাটারা থানার কোকাকোলা ঢালীবাড়ি সড়কের পাশে ফাঁকা একটি প্লট থেকে হাত-পা বাঁধা অবস্থায় ওই নারীর মরদেহ উদ্ধার করা হয়। দুর্গন্ধ ছড়িয়ে পড়ায় স্থানীয়রা পুলিশ ও র‍্যাপিড অ্যাকশন ব্যাটালিয়নে (র‍্যাব) খবর দেয়। র‍্যাব ও পুলিশ এসে মরদেহ উদ্ধার করে।

বিকেলে র‌্যাব অজ্ঞাত ওই নারীর মরদেহের পরিচয় শনাক্ত করার তথ্য জানায়। র‌্যাব জানায়, নিহত ওই নারীর নাম মোছা. শিপন আক্তার (৩৪)। তিনি বগুড়ার সোনাতলার বামুনিয়ার আব্দুস কুদ্দুসের মেয়ে। হত্যার পর কেউ তার হাত-পা বাঁধা মরদেহ বস্তাবন্দি করে ঘটনাস্থলে ফেলে যায়। 

হত্যার রহস্য উদঘাটনে নামে গোয়েন্দা পুলিশ। ঘটনার সঙ্গে জড়িত মোহাম্মদ সুমন, মুক্তার হোসেন হিরা ও রকি রায় নামে তিনজনকে আটক করা সম্ভব হলেও মূল আসামি থেকে যায় অধরা। অবশেষে গতকাল ধরা পড়েন তিনি। 

মূল আসামির নাম আব্দুল জব্বার। ঢাকা মেট্রোপলিটন পুলিশের (ডিএমপি) গোয়েন্দা গুলশান বিভাগের একটি দল গাইবান্ধার গোবিন্দগঞ্জ থেকে তাকে গ্রেফতার করে। গ্রেফতারের পর ডিবি গুলশান জানায়, যমুনা ফিউচার পার্কের ওই বোরকা পরা নারীই হচ্ছেন নিহত শিপন। আর ওই পাঞ্জাবি পরা তরুণ হচ্ছেন আব্দুল জব্বার। তাকে গ্রেফতারের পরই বেরিয়ে আসে হত্যার আসল রহস্য। মাত্র এক হাজার টাকার জন্য শিপনকে হত্যা করেন জব্বার।

গ্রেফতারের পর আব্দুল জব্বার গুলশান গোয়েন্দা পুলিশের জিজ্ঞাসাবাদে স্বীকার করেন, নিজেদের যৌন লালসা মেটাতে নিহত শিপনকে নিজ বাসায় নিয়ে যান জব্বার। এরপর টাকা দেওয়া-নেওয়া নিয়ে তাদের মধ্যে মনোমালিন্য হয়। রাতেই শিপনের অ্যান্ড্রয়েড ফোন অন্যত্র বিক্রি করে কেনা হয় ইয়াবা। তা সেবন করে রাতে ঠান্ডা মাথায় শিপনকে গলা টিপে হত্যা করে অন্য যুবকের সহায়তায় বস্তাবন্দি করে ফাঁকা প্লটে ফেলে পালিয়ে যান জব্বার।

এ বিষয়ে যোগাযোগ করা হলে গুলশান গোয়েন্দা পুলিশের উপ-কমিশনার (ডিসি) মশিউর রহমান  বলেন, অজ্ঞাত ব্যক্তিরা ওই নারীকে হত্যা করে হত্যার দায় থেকে নিজেদের আড়াল করতে মরদেহ বস্তায় ভরে ভাটারা থানার ছোলমাইদ ঢালীবাড়ী এলাকায় এভারকেয়ার হাসপাতালগামী রোডের পাশে ফেলে দেন। 

মরদেহ উদ্ধারের পর ডিবি গুলশান বিভাগ তথ্য-প্রযুক্তির সহায়তায় ও অপরাধ সংশ্লিষ্ট এলাকার সিসিটিভির ফুটেজ সংগ্রহ এবং সেসব পর্যালোচনার মাধ্যমে হত্যাকারী জব্বারকে শনাক্ত করে। ডিজিটাল মাধ্যম ও তথ্য-প্রযুক্তির ব্যবহার এবং ভাটারা থানা পুলিশের সহায়তায় বস্তাবন্দি মরদেহের রহস্য উদঘাটন ও হত্যাকাণ্ডের মূলহোতা আব্দুল জব্বারকে গ্রেফতার করা হয়।

জিজ্ঞাসাবাদে গ্রেফতার জব্বার ডিবি পুলিশকে জানায়, শিপন আক্তার ছিলেন একজন গার্মেন্টসকর্মী। মাঝেমধ্যে পরিচিতজনদের সঙ্গে টাকার বিনিময়ে সময় কাটাতেন তিনি। ৮ অক্টোবর শিপনের সঙ্গে যোগাযোগ হয় তার। শিপনকে নিয়ে যমুনা ফিউচার পার্ক এবং ফুটপাতের ফুসকার দোকানে ঘোরাঘুরি শেষে সন্ধ্যার পরে ছোলমাইদ ঢালীবাড়ীর ভাড়া বাসায় আসেন গাড়ির গ্যারেজের কর্মী জব্বার। এ সময় জব্বারের স্ত্রী এবং সন্তান ছিল শ্বশুরবাড়ি চাঁদপুরে।

ডিসি মশিউর রহমান বলেন, জব্বারের বাসায় যৌন সম্পর্ক শেষে টাকা দাবি করেন শিপন। টাকা দিতে রাজি হলেও সারারাতের জন্য থাকতে বলায় শিপনের সঙ্গে কথা কাটাকাটি হয় জব্বারের। টাকা না দিলে সব কর্মকাণ্ড জনসম্মুখে ফাঁস করে দেওয়ার হুমকি দিলে ক্ষিপ্ত হন জব্বার।

জব্বার আত্মসম্মান রক্ষার ভয়ে শিপনকে রাত ১০টার দিকে গলা টিপে হত্যা করেন। ইয়াবা আসক্ত জব্বার নিহত শিপনের ফোন রাতেই একজনের কাছে এক হাজার টাকায় বিক্রি করেন। আর সে অর্থে তিনটি ইয়াবা কিনে বন্ধু হীরাকে নিয়ে বাসায় চলে আসেন। 

হীরার সঙ্গে ইয়াবা সেবন শেষে গুম করার উদ্দেশ্যে দুজনে মরদেহটি প্রথমে হাত-পা বেঁধে একটি কার্টনের মধ্যে রাখেন এবং পরে ভাঙারির দোকান থেকে আনা বড় বস্তায় ভর্তি করেন। রাত ৩টার দিকে জব্বার বন্ধু হীরার সহায়তায় মাথায় করে বস্তাটি তিনতলা থেকে নামান। একশ টাকায় রিকশা ভাড়া করে মরদেহের বস্তাটি ফেলে আসেন। 

জব্বারের দেওয়া তথ্য অনুযায়ী গোয়েন্দা গুলশান বিভাগের গাড়ি চুরি প্রতিরোধ টিম নিহত শিপনের মোবাইল ফোন, বোরকা ও স্যান্ডেলসহ হত্যাকাণ্ডের অন্যান্য আলামত উদ্ধার করে। হত্যাকারী জব্বার ইতোমধ্যে আদালতে সমস্ত ঘটনার বর্ণনা দিয়ে স্বীকারোক্তিমূলক জবানবন্দি দিয়েছেন।  

গুলশান গোয়েন্দা প্রধান মশিউর বলেন, মোবাইল ফোন ও ফেসবুকের অত্যধিক ব্যবহার, নিম্নআয়ের মানুষের মধ্যেও ব্যাপক বিকৃত আকাঙ্ক্ষার জন্ম দিচ্ছে। নীতি-নৈতিকতা হারিয়ে, পারিবারিক মূল্যবোধের প্রতি বৃদ্ধাঙ্গুলি দেখিয়ে প্রায়ই তারা যৌনতায় অন্ধ হয়ে যায়। তার কারণে কখনও আত্মহনন, কখনো নির্মম খুনের ঘটনা ঘটে যাচ্ছে। কোনো অপরাধমূলক ঘটনা ঘটলে জড়িতদের আইনের আওতায় আনতে ঢাকা মহানগর পুলিশ তৎপর। এছাড়া পুলিশ সচেতনতা সৃষ্টিতে কাজ করছে। 

Download করুন আমাদের App এবং Subscribe করুন আমাদের YouTube Channel:

https://play.google.com/store/apps/details?id=com.prothomnews

https://youtube.com/prothom

What's Your Reaction?

like

dislike

love

funny

angry

sad

wow

This site uses cookies. By continuing to browse the site you are agreeing to our use of cookies & privacy Policy from www.prothom.news