ব্রিটেনে দ্রব্যমূল্যের ঊর্ধ্বগতিতে বিপাকে বাংলাদেশিরা
বিদ্যুৎ ও গ্যাস বিল বেড়ে যাওয়ায় অনেক হোটেল-রেস্টুরেন্ট বন্ধ হওয়ার উপক্রম দেখা দিয়েছে। পাশাপাশি ব্রিটেনের স্থানীয় বাসিন্দাদের মধ্যেও ক্ষোভ বিরাজ করছে। অনেকেই তাদের নিত্যদিনের ব্যয় তালিকা সংকুচিত করছেন।

প্রথম নিউজ, লন্ডন: বেড়েই চলছে ব্রিটেনের মূল্যস্ফীতি। প্রভাব পড়ছে নিত্যপ্রয়োজনীয় দ্রব্যের বাজারে। জীবনযাত্রায় ব্যয় নিয়ন্ত্রণে হিমসিম খাচ্ছে বাসিন্দারা। এতে বাংলাদেশি কমিউনিটিতে দেখা দিয়েছে নাভিশ্বাস। বিদ্যুৎ ও গ্যাস বিল বেড়ে যাওয়ায় অনেক হোটেল-রেস্টুরেন্ট বন্ধ হওয়ার উপক্রম দেখা দিয়েছে। পাশাপাশি ব্রিটেনের স্থানীয় বাসিন্দাদের মধ্যেও ক্ষোভ বিরাজ করছে। অনেকেই তাদের নিত্যদিনের ব্যয় তালিকা সংকুচিত করছেন।
সম্প্রতি যুক্তরাজ্যভিত্তিক দাতব্য সংস্থা ফুড ফাউন্ডেশন ব্রিটেনের ওপর একটি জরিপ পরিচালনা করে। এতে দেখা যায়, প্রতিদিন যুক্তরাজ্যের লক্ষাধিক মানুষ তিন বেলা খেতে পারছেন না। বছরের প্রথম তিন মাসে প্রতি সাতজনের একজন প্রাপ্তবয়স্ক মানুষ কোনো না কোনো বেলা খাবার পাননি বা তাদের খাবার কেনার সামর্থ্য ছিল না। আর এমনটা হয়েছে দ্রব্যমূল্যের ঊর্ধ্বগতির কারণে।
ব্রিটেনের বাজারে টেসকো, আজদা বা সেইন্সবারির মতো বড় চেইনশপগুলোতে নিত্যপণ্যের দাম অন্যান্য দোকানপাটের চেয়ে তুলনামূলক কম থাকে। কিন্তু এসব সুপারশপেও এখন দাম ঊর্ধ্বমুখী। বছরের ব্যবধানে প্রতিটি পণ্যের দাম বেড়েছে দেড় থেকে দুই গুণ। কিংসক্রস এলাকার টেসকোর একজন সেলস প্রতিনিধি বলেন, প্রতিটি পণ্যের দাম বেড়েছে। মানুষ আগে যে পরিমাণ কেনাকাটা করতো এখন তারচেয়ে কম পরিমাণে কিনছে। সবাই ব্যয়ের তালিকা সংকোচন করছে। আমাদের বিক্রিও অন্যান্য সময়ের তুলনায় কিছুটা কমেছে।
জীবনযাত্রার ব্যয় বেড়ে যাওয়ায় বাংলাদেশ থেকে লন্ডনে পড়তে আসা বিপুল সংখ্যক শিক্ষার্থীও প্রতিকূল পরিস্থিতি মোকাবিলা করতে হচ্ছে। তারা জানিয়েছেন, সপ্তাহে অনুমোদিত মাত্র ২০ ঘণ্টা কাজ করে তাদের জীবন পরিচালনা কঠিন। এ জন্য অনেকেই অপ্রদর্শিতভাবে হোটেল ও রেস্তোরাঁয় কাজ করছেন। কিন্তু তাতেও ন্যূনতম মজুরি পাওয়া যাচ্ছে না। পরিশ্রমও করতে হচ্ছে অনেক বেশি।
শুধু দ্রব্যমূল্যে নয়, ব্যয় বেড়েছে বাড়ি ভাড়াতেও। এক হাজার পাউন্ডের বাসা ভাড়া এখন বেড়ে দাঁড়িয়েছে দেড় হাজারের বেশিতে। ক্ষেত্র বিশেষে এর পরিমাণও আরও বেশি। গত আট বছর ধরে ব্রিটেনের ইলফোর্ড এলাকায় পরিবার নিয়ে বসবাস করেন মুনতাহা ইয়াসিন। তিনি বলেন, বিগত সময়ে কখনো এমন পরিস্থিতি মোকাবিলা করিনি। জিনিসপত্রের যে হারে দাম বেড়েছে তাতে শহরে টেকা কঠিন। যা আয় হয় তার সিংহভাগই ব্যয় হয়ে যায়। সঞ্চয় তো দূরের কথা ভালো মানের খাবারও কেনা যায় না।
ব্রিটেনের লিডস শহরে বসবাসকারী সাংবাদিক এমজেড মিডিয়ার পরিচালক মুহাম্মদ জাকারিয়া বলেন, লিডসে আমার একটি ব্যবসা প্রতিষ্ঠান রয়েছে। আগে যেখানে প্রতিটি মানুষকে হাস্যোজ্জল দেখতাম সেখানে এখন অনেকের মুখ মলিন দেখা যায়। কারণ, আগে ৫০ পাউন্ড দিয়ে যে কেনাকাটা করা যেতো সেটিতে এখন লাগছে ৭০ থেকে ৭৫ পাউন্ড। অপ্রত্যাশিতভাবে প্রত্যেক জিনিসের দাম বেড়েছে। মানুষের ক্রয় ক্ষমতা নাগালের বাইরে চলে গেছে। অপরদিকে মানুষের আয় কমে গেছে।
তিনি বলেন, আগে যেখানে ৫ পাউন্ড দিয়ে ৩টি চিকেন পাওয়া যেতো সেখানে এখন লাগছে ১০ পাউন্ড। ৬ পাউন্ডের মাংস গিয়ে দাঁড়িয়েছে ১০-১১ পাউন্ডে। গ্যাস, বিদ্যুৎ ও পেট্রলের দামও বেড়েছে প্রায় দ্বিগুণ। আগে যেখানে আমার এই বিল আসত ১৫০ পাউন্ড সেখানে এখন সেটা আসছে ৩০০ পাউন্ডের বেশি। যে কারণে মানুষের কষ্ট হচ্ছে।
এদিকে বিদ্যুৎ ও গ্যাসের লাগামহীন দাম বৃদ্ধির কারণে পূর্ব লন্ডনের ব্রিকলেইন এলাকার বাংলাদেশি অনেক রেস্টুরেন্ট বন্ধ হয়ে গেছে। ফেডারেশন অব স্মল বিজনেসের (এফএসবি) তথ্য বলছে, ২০২১ সাল থেকে ফার্মগুলোর গ্যাস ৪২৪ ও বিদ্যুৎ খরচ ৩৪৯ শতাংশ বৃদ্ধি পেয়েছে। গত দুই বছরের স্থির-মূল্য সরবরাহ চুক্তি শেষ হওয়ার কারণে হাজার হাজার ব্যবসায়ী অক্টোবরে মেয়াদ শেষ হতে চলা বিদ্যুৎ ও গ্যাস চুক্তির পুনর্নিবেদন করতে চাইছেন। সরকারের পক্ষ থেকে বিদ্যুৎ ও গ্যাস বিলের ওপর অনেক প্রণোদনা দেওয়া হলেও ব্যবসা টিকিয়ে রাখতে পারছেন না তারা। এতে বিরাট ক্ষতির মুখে পড়েছেন বাংলাদেশি কমিউনিটির ব্যবসায়ীরা।
ব্রিটিশ রিটেইল কনসোর্টিয়ামের (বিআরসি) এক সমীক্ষায় দেখা গেছে, ব্রিটেনে তাজা খাবারের দাম বেড়েছে ১২ শতাংশ। স্মরণকালের সর্বোচ্চ পর্যায়ে পৌঁছেছে খাদ্য মুদ্রাস্ফীতি। আগস্টে খাদ্য মুদ্রাস্ফীতি ১০ দশমিক ৫ শতাংশ থাকলেও সেপ্টেম্বরে তা বেড়ে দাঁড়িয়েছে ১২ দশমিক ১ শতাংশে।
Download করুন আমাদের App এবং Subscribe করুন আমাদের YouTube Channel:
https://apps.apple.com/de/app/prothomnews/id1588984606?l=en
https://play.google.com/store/apps/details?id=com.prothomnews