বরগুনা বাস টার্মিনালের কাউন্টারে মেলে না টিকিট, সিন্ডিকেটে জিম্মি যাত্রী

বরগুনা বাস টার্মিনালের কাউন্টারে মেলে না টিকিট, সিন্ডিকেটে জিম্মি যাত্রী

প্রথম নিউজ, বরগুনা: বরগুনার কেন্দ্রীয় পৌর বাস টার্মিনালে টিকিট কাউন্টার থাকলেও তা ব্যবহার হচ্ছে না। পৌর শহর থেকে এক কিলোমিটার দূরে নতুন বাস টার্মিনাল উদ্বোধনের দুই বছর পার হলেও ব্যবহার হয়নি সেখানকার কাউন্টারগুলো। আগের মতোই শহরের বিভিন্ন জায়গায় ছড়িয়ে ছিটিয়ে থাকা কাউন্টারে টিকিট বিক্রি হচ্ছে। এতে চরম ভোগান্তির শিকার হচ্ছেন যাত্রীরা। আর এ দুর্ভোগের কারণ হিসেবে বাস মালিকদের সিন্ডিকেটকে দায়ী করা হচ্ছে।

বরগুনা পৌরসভা সূত্রে জানা যায়, ২০১৮ সালের জুনে বরগুনা সদরের খেজুরতলা এলাকায় চার একর জমি নিয়ে বরগুনা পৌর বাস টার্মিনালটির নির্মাণকাজ শুরু হয়। বাংলাদেশ সরকার ও এশিয়ান ডেভেলপমেন্ট ব্যাংকের (এডিবি) যৌথ অর্থায়নে টার্মিনালটি নির্মাণ করা হয়। এতে ব্যয় হয় ১৪ কোটি ৩৪ লাখ টাকা। নির্মাণকাজ শেষে ২০২১ সালে পৌরসভা কর্তৃপক্ষের কাছে টার্মিনালটি হস্তান্তর করে ঠিকাদারি প্রতিষ্ঠান। নবনির্মিত এই বাস টার্মিনালটি ছাড়া বরগুনায় আর কোনো বাস টার্মিনাল নেই।

টার্মিনালটিতে রয়েছে, শতাধিক বাস পার্কিংয়ের সুবিধা। এছাড়া ১৬টি টিকিট কাউন্টার, দুটি ওয়েটিং রুম, একটি অফিস রুম, একটি লেয়ার রুম, ছয়টি টয়লেট, একটি কমার্শিয়াল রেস্টুরেন্ট, নামাজ পড়ার রুমসহ আধুনিক সব সুযোগ-সুবিধা। চারদিকে রয়েছে নানা প্রজাতির সৌন্দর্যবর্ধক গাছের সমারোহসহ দৃষ্টিনন্দন ফুটপাত। তবে এই দৃষ্টিনন্দন বাস টার্মিনালে এসে যাত্রীদের হয়রানির শিকার হতে হচ্ছে।

যাত্রীরা বলছেন, টিকিট কাউন্টারগুলো শহরের বিভিন্ন জায়গায় ছড়িড়ে ছিটিয়ে থাকায় হয়রানির শিকার হচ্ছেন তারা। আবার বাস টার্মিনালে এলে একদল লোক দৌড়ে চারদিক থেকে ঘিরে অতিরিক্ত দামে টিকিট বিক্রির জন্য খোলা আকাশের নিচে টানাহেঁচড়া করতে থাকেন। ফলে বাধ্য হয়ে দূরের সেই কাউন্টারগুলো থেকেই টিকিট কিনতে হয় যাত্রীদের। তাই বাস টার্মিনালে থাকা কাউন্টারগুলো চালু হলে এ হয়রানি থেকে তাদের মুক্তি মিলতো।

অপরদিকে বাস মালিক সমিতির নেতাদের দাবি, এখানে যে কয়টি কোম্পানির বাস চলে তাদের প্রত্যেককে একটি কাউন্টার দিলে এ সমস্যা আর থকবে না। কিন্তু এখনো কাউন্টারগুলো বাস মালিকদের বুঝিয়ে দেওয়া হয়নি। ভোগান্তির শিকার নুরুল ইসলাম নামে এক যাত্রী বলেন, নতুন বাসস্ট্যান্ডে গিয়ে দেখি টিকিট কাউন্টারে তালা ঝুলছে। কিন্তু বাইরে দাঁড়িয়ে থাকা কিছু লোক বলছেন, তাদের কাছে টিকিট আছে। তবে কথা বলে জানা যায় তার দাম বেশি। আবার সেখান থেকে টিকিট না নিলে শহরে গিয়ে কাউন্টার থেকে টিকিট নিতে হবে। ততক্ষণে বাস ছেড়ে দেবে। তাই বাধ্য হয়েই ওই লোকদের থেকে টিকিট নিতে হয়েছে।

বরগুনা পাবলিক পলিসি ফোরামের আহ্বায়ক হাসানুর রহমান ঝন্টু বলেন, কাউন্টার থাকতেও চরম ভোগান্তিতে পড়তে হচ্ছে। সিন্ডিকেট বন্ধ করে সবাই মিলে টার্মিনালের কাউন্টারে টিকিট বিক্রি করলে এক জায়গা থেকে কিনতে পেরে যাত্রীরা উপকৃত হবেন। বরগুনা যাত্রী অধিকার সংরক্ষণ কমিটির সাধারণ সম্পাদক রেজাউল ইসলাম টিটু বলেন, স্থানীয় বাস মালিক সমিতির সিন্ডিকেটের কারণে উদ্বোধনের দুই বছর অতিবাহিত হলেও এখন পর্যন্ত নতুন বাসস্ট্যান্ডের যাত্রীদের টিকিট কাউন্টার চালু করা সম্ভব হয়নি। এজন্য বাস মালিক সমিতি এবং পৌরসভাকে দায়ী করবো। এতদিনে পৌরসভা যথাযথ পদক্ষেপ নিলে কাউন্টারগুলো চালু করা যেত। অবিলম্বে এখানের কাউন্টারগুলো চালুর দাবি জানাচ্ছি।

জেলা বাস মিনিবাস মালিক সমিতির সভাপতি গোলাম মোস্তফা কিসলু বলেন, এ বিষয়ে সমিতির সবাই বসে একটা সিদ্ধান্ত নেব। সদর উপজেলা চেয়ারম্যান মনিরুল ইসলাম বলেন, বাস মালিকদের সিন্ডিকেটে যাত্রীরা অস্থির। জেলার বিভিন্ন প্রান্ত থেকে মানুষ এসে বাসস্ট্যান্ডের টিকিট কাউন্টার থেকে টিকিট পায় না। টিকিট পেতে হলে পৌর শহরের বিভিন্ন স্থানে ঘুরতে হয়। এর একটা সুরাহা হওয়া জরুরি। বরগুনা পৌরসভার মেয়র অ্যাডভোকেট কামরুল আহসান মহারাজ বলেন, কাউন্টারগুলো বাস মালিক সমিতিতে বুঝিয়ে দিলেও তারা এগুলো ব্যবহার না করে ছড়িয়ে ছিটিয়ে বিভিন্ন স্থানে টিকিট বিক্রি করছে। বাস মালিক সমিতির সঙ্গে কথা বলে বিষয়টি সমাধান করার চেষ্টা করবো।