Ad0111

বিমুখ ই-কমার্সে আস্থা ফেরানোই বড় চ্যালেঞ্জ

বিতর্কিত প্রতিষ্ঠানে কোটি কোটি টাকা হারিয়ে পথে বসেছেন হাজারো গ্রাহক।

বিমুখ ই-কমার্সে আস্থা ফেরানোই বড় চ্যালেঞ্জ
ফাইল ফটো

প্রথম নিউজ, ঢাকা: দ্রুত বাড়তে থাকা দেশের ই-কমার্স খাত মুদ্রার উল্টো পিঠও দেখে ফেলেছে গত বছর। ২০২০ সালে একদিকে যেমন ই-কমার্সে রেকর্ড পরিমাণ প্রবৃদ্ধি হয়েছে, অন্যদিকে বিতর্কিত প্রতিষ্ঠানে কোটি কোটি টাকা হারিয়ে পথে বসেছেন হাজারো গ্রাহক।

প্রতারণা ও প্রলোভনের ফাঁদে ফেলে গ্রাহকের হাজার কোটি টাকা হাতিয়ে  নেওয়ার অভিযোগে গ্রেফতার ও পলাতক আছেন একাধিক ই-কমার্স প্রতিষ্ঠানের সিইও। ৩০টির বেশি ই-কমার্স প্রতিষ্ঠান গ্রাহক ও মার্চেন্টের কাছ থেকে লোপাট করেছে তিন হাজার কোটি টাকারও বেশি। এমন অবস্থায়ও এ খাতে নতুন নতুন বিনিয়োগ আসছে। তবে নতুন উদ্যোক্তারা এ খাতে কতটা আস্থা ফেরাতে পারবেন- সেটাই এখন মূল বিষয় বলে মনে করছেন সংশ্লিষ্টরা।

গত কয়েক মাসে ওয়ালকার্ট, ই-বাংলাদেশ, দুর্বারডট লাইভ, বাংলা মার্ট, লেটসগো মার্টসহ ডজনখানেক নতুন ই-কমার্স  প্রতিষ্ঠান তাদের কার্যক্রম চালু করেছে। চালুর অপেক্ষায় আছে আরও নতুন কিছু ই-কমার্স প্রতিষ্ঠান।

খাতসংশ্লিষ্টরা বলছেন, বর্তমান পরিস্থিতিতে খুব বেশি সুবিধা করতে পারছেন না নতুন উদ্যোক্তরা। কেননা, এখাতে যে আস্থার সংকট তৈরি হয়েছে তা সহসাই ঠিক হবে না।

পরিস্থিতি সামাল দিতে ক্যাশ অন ডেলিভারি বা পণ্য পাওয়া মাত্রই টাকা পরিশোধে ঝুঁকছেন নতুন উদ্যোক্তারা । তারা বলছেন, বাংলাদেশে ই-কমার্সের বড় সম্ভাবনা আছে। কিছু বিছিন্ন ঘটনায় প্রভাব পড়লেও শিগগির আগের ধারায় ফিরবে এই খাত।

ই-কমার্স খাতের অভিভাবক সংগঠন ই-ক্যাব ও বাণিজ্য মন্ত্রণালয়ের  তথ্য মতে, দেশে আড়াই হাজারের বেশি ই-কমার্স সাইট আছে। এছাড়া ফেসবুক পেজভিত্তিক ব্যবসা বা এফ-কমার্সের মাধ্যমে ব্যবসা করছেন প্রায় দুই লাখ উদ্যোক্তা। সম্মিলিতভাবে এই দুই খাতের পরিধি প্রায় সাড়ে ২২ হাজার কোটি টাকা।

ই-ক্যাব সংশ্লিষ্টরা বলছেন, জামা-কাপড়, কসমেটিক্সসহ ফ্যাশন আইটেমের বিকাশ দ্রুত ঘটছে ই-কমার্সে। বর্তমানে এসব পণ্যের সাত হাজার কোটি টাকার বাজার আছে। এছাড়া মুদিপণ্য, ইলেকট্রনিক্স, রেডিমেড খাবারের বাজারের প্রসারও দ্রুত বাড়ছে। এ অবস্থায় কিছু প্রতিষ্ঠানের খামখেয়ালিপনায় তৈরি হয়েছে আস্থার সংকট। বাজার ঠিক হতে আরও ছয় মাস থেকে এক বছর পর্যন্ত লেগে যেতে পারে বলে মত বিশেষজ্ঞদের। তারা বলছেন, ই-কমার্সে আটকে থাকা টাকা ফেরত ও প্রতারণাহীন সেবা পেলে ঘুরে দাঁড়াতে বেশি সময় নেবে না এই খাত।

নতুন ই-কমার্স প্রতিষ্ঠান দুর্বারডট লাইভের হেড অব বিজনেস এস এম তাহসিন রহমান বলেন, কিছু প্রতিষ্ঠানের বিতর্কিত কর্মকাণ্ডের জন্য মানুষ এখন কিছুটা ই-কমার্সবিমুখ হয়ে পড়েছে। আমরা মানুষের আস্থা ফেরাতে কাজ করছি। গ্রাহকদের ক্যাশ অন ডেলিভারিতে পণ্য কেনার সুবিধা দিচ্ছি। আমরা চাচ্ছি গ্রাহকদের দ্রুত ই-কমার্সে ফেরাতে। গত বছরের নভেম্বরে আত্মপ্রকাশ করেছে প্রতিষ্ঠানটি। ক্রেতাদের ই-কমার্স সেবা দ্বারপ্রান্তে পৌঁছে দিতে বিপুল সংখ্যক পণ্যের সমাহার নিয়ে দৃঢ়প্রতিজ্ঞ তারা।

তাহসিন রহমান বলেন, ওমিক্রন যেভাবে ছড়াচ্ছে, তাতে ফের যদি লকডাউনের মতো পরিস্থিতি হয়- তাহলে গ্রাহক ই-কমার্সমুখী হবেন। আমার মনে হয়, ই-কমার্স খাতের ঘুরে দাঁড়ানোর একটা সুযোগ আছে। এজন্য আমরা গ্রোসারি আইটেম নিয়েও কাজ করছি। তিনি বলেন, লকডাউনের মতো অবস্থা হলে ক্রেতারা ঘরে বসেই পণ্য পেতে চাইবেন। এতে ই-কমার্স খাতে ফিরবেন গ্রাহক। ফলে আমাদের ধারণা ছয় মাসের মধ্যেই পুরো ইন্ডাস্ট্রি আবার ঘুরে দাঁড়াবে। তবে এটাও ঠিক, কয়েকটি প্রতিষ্ঠানের কর্মকাণ্ডে পুরো ই-কমার্স খাত ক্ষতিগ্রস্ত হয়েছে।

ই-বাংলাদেশের ম্যানেজিং ডিরেক্টর সুশান্ত দাসগুপ্ত বলেন, যেসব প্রতিষ্ঠান ই-কমার্স খাতকে নষ্ট করে দিলো তারা আসলে প্রকৃত মার্কেটপ্লেস ছিল না। কোনো ই-কমার্স মাসের পর মাস পণ্য আটকে রেখে ব্যবসা করে না। তাদের এসব কর্মকাণ্ডে বাজারে অনেক বড় প্রভাব পড়েছে। মানুষ এখন ই-কমার্সকে বিশ্বাস করতে পারছে না। অর্ডার দেওয়ার আগে তারা ভাবেন, পণ্যটা আদৌ পাবো কি না। এ অবস্থায় ক্যাশ অন ডেলিভারি দিয়ে আস্থার সংকট কাটানোর চেষ্টা করছি।

মানুষ ধীরে ধীরে আবার ই-কমার্সমুখী হবে। তবে ই-কমার্সের আগের বাজার ফিরতে আরও এক বছর লেগে যাবে বলে মনে করেন তিনি।

গত বছরের ১৬ ডিসেম্বর যাত্রা শুরু করে ই-বাংলাদেশ। সুশান্ত বলেন, বাজারে অনেক ই-কমার্স প্রতিষ্ঠান এসেছে, আবার অনকে প্রতিষ্ঠান ঝরে পড়েছে। সোশ্যাল ইনফ্লুয়েন্স বা রোল মডেলের অভাবে ই-কমার্সগুলো ভালো করতে পারছে না। মালিক বা প্রতিষ্ঠানের ইমেজ বা সোশ্যাল ভ্যালু দেখে একজন গ্রাহক ই-কমার্সে আসে মূলত। সেখানে যারা আস্থা ও প্রতিযোগিতামূলক কৌশল নিতে পেরেছে তারাই টিকে আছে।

অন্যদিকে ই-ক্যাবের জেনারেল ম্যানেজার জাহাঙ্গীর আলম শোভন মনে করেন, দ্রুতই দেশের ই-কমার্স খাত ঘুরে দাঁড়াবে। তিনি বলেন, সংকট সব খাতেই আছে। ই-কমার্স ভাইব্রান্ট একটা ইন্ডাস্ট্রি। এখানে উদ্যোক্তা হিসেবে অনেক তরুণ জড়িত থাকায় আমরা সমস্যাটা বেশি ফেস করেছি। ই-কমার্সের স্বল্প ও দীর্ঘমেয়াদি দুই ধরনের সমস্যা নিয়ে কাজ করছে ই-ক্যাব। ই-কমার্সে আটকে থাকা টাকা ফেরত পেলে গ্রাহকের আস্থা আবার ফিরবে। বাণিজ্য মন্ত্রণালয়ের সঙ্গে আমরা একসঙ্গে কাজ করছি। এছাড়া প্রতিষ্ঠানগুলোকে জবাবদিহির মধ্যে আনতে সিস্টেম ডেভেলপ করা হচ্ছে। আশা করছি দ্রুত সমস্যাগুলোর স্থায়ী সমাধান হবে।

বিশেষজ্ঞরা বলছেন, ভোক্তা অধিকার, প্রতিযোগিতা কমিশনসহ তদারকি প্রতিষ্ঠানে ব্যর্থতায় ই-কমার্স খাতে অনিয়ম হয়েছে। প্রযুক্তির উৎকর্ষতার সঙ্গে তাল মিলিয়ে সংস্থাগুলোর সক্ষমতা না বাড়ালে এমন ঘটনা আরও ঘটবে। তাই সম্ভাবনাময় এ খাতটির ভবিষ্যৎ বিবেচনায় তদারকি প্রতিষ্ঠানগুলোর সক্ষমতা বাড়ানোর কথা বলছেন তারা।

Download করুন আমাদের App এবং Subscribe করুন আমাদের YouTube Channel:

https://apps.apple.com/de/app/prothomnews/id1588984606?l=en

https://play.google.com/store/apps/details?id=com.prothomnews

https://youtube.com/prothom

What's Your Reaction?

like

dislike

love

funny

angry

sad

wow

This site uses cookies. By continuing to browse the site you are agreeing to our use of cookies & privacy Policy from www.prothom.news