‘বাবা, তুই আমাকে মারিস না, আমি তোর মা’

মাদারীপুর সদর থানা পুলিশের ভারপ্রাপ্ত কর্মকর্তা (ওসি) মনোয়ার হোসেন চৌধুরী সোমবার (১৯ জুন) বিষয়টি নিশ্চিত করেন।

‘বাবা, তুই আমাকে মারিস না, আমি তোর মা’

প্রথম নিউজ, মাদারীপুর: জমি লিখে না দেওয়ায় মাকে নির্যাতন করে হাত ভেঙে দেওয়ার অভিযোগ উঠেছে ছেলে ইউপি সদস্য দবির মালতের বিরুদ্ধে। হাত-পা, মাথাসহ ওই বৃদ্ধার শরীরের বিভিন্ন জায়গায় আঘাতের চিহ্ন রয়েছে। 

ঘটনাটি ঘটেছে মাদারীপুর সদর উপজেলা খোয়াজপুর ইউনিয়নের মধ্যচক এলাকায়। পরে ওই ভুক্তভোগী মা আলফাতুন নেছা (৭৫) থানায় একটি লিখিত অভিযোগ দায়ের করেছেন। মাদারীপুর সদর থানা পুলিশের ভারপ্রাপ্ত কর্মকর্তা (ওসি) মনোয়ার হোসেন চৌধুরী সোমবার (১৯ জুন) বিষয়টি নিশ্চিত করেন। ভুক্তভোগী মা আলফাতুন নেছা সদর উপজেলার খোয়াজপুর ইউনিয়নের মধ্যচক এলাকার মৃত রশিদ মালতের স্ত্রী। অভিযুক্ত ছেলে দবির মালত খোয়াজপুর ইউনিয়নের সাত নম্বর ওয়ার্ডের ইউপি সদস্য।

ভুক্তভোগীর অভিযোগ ও পুলিশ সূত্রে জানা যায়, বেশ কিছুদিন থেকে দবির মালত তার মায়ের কাছে বসতবাড়ির ২২ শতাংশ জমি লিখে নিতে চাচ্ছিলেন। কিন্তু মা তাতে রাজি হচ্ছিলেন না। আলফাতুন নেছা ওই সম্পত্তি লিখে না দেওয়ায় গত শনিবার সকালে তার মেজো ছেলে দবির মালত, ছেলের স্ত্রী নাজমা আক্তার তার নাতি নাজমুল মালত ঘরে ঢুকে তাকে কোদাল ও বেলচা দিয়ে মারধর ও নির্যাতন করেন। এসময় তার ডাক চিৎকারে সেজো ছেলে মাসুদ মালত এগিয়ে এলে তার ওপরও হামলা চালান। পরে মা ও ছেলের ডাক চিৎকারে স্থানীয়রা এগিয়ে এলে পালিয়ে যান দবির মালত, তার স্ত্রী ও ছেলে।পরে আলফাতুন নেছাকে আহত অবস্থায় স্থানীয়রা মাদারীপুর সদর হাসপাতালে নিয়ে ভর্তি করেন। পরবর্তীতে তিনি ছেলে দবির মালতের বিরুদ্ধে থানায় একটি লিখিত অভিযোগ দায়ের করেন। এদিকে মায়ের অভিযোগে পত্রে সেজো ছেলে মাসুদ মালত সাক্ষী হওয়ায় রোববার রাতে বাজার থেকে বাড়ি ফেরার পথে হামলা করেন দবির মালতের ছেলে নাজমুল মালত ও তার গ্যাংয়েরা।

ভুক্তভোগী আলফাতুন নেছা বলেন, ‘আমার নিজ নামে কিছু সম্পত্তি রয়েছে। সেই সম্পত্তিটুকু আমার মেজো ছেলে দবির ও তার স্ত্রী জোর করে লিখে নিতে চায়। আমি না দেওয়ায় আমার ঘরে ঢুকে হামলা চালায়। আমাকে মারার সময় আমি বারবার বলছিলাম, বাবা, তুই আমাকে মারিস না, আমি তোর মা। তারপরেও থামেনি। আমি এর বিচার চাই।’ 

আহত সেজো ছেলে মাসুদ মালত বলেন, আমার মেজো ভাই দবির মালত, ছেলের স্ত্রী নাজমা আক্তার ওই বৃদ্ধা মাকে জমি লিখে দিতে চাপ দেন। এতে রাজি না হওয়ায় তারা অমানবিক নির্যাতন শুরু করেন। যে লাঠির ওপর ভর করে মা চলাফেরা করেন, সেই লাঠি কেড়ে নিয়ে ও লোহার রড দিয়ে নির্যাতন শুরু করেন আমার ভাই ও পরিবার। ফলে,মায়ের দুই হাত ভেঙে যায়। মাথায় আঘাত পান, পায়ে তৈরি হয় প্রচুর ব্যাথা। এর মধ্যে মেজো ভাইয়ের স্ত্রী নাজমা বেগম আমার মায়ের  বুকের ওপর চেপে বসে গলা চেপে ধরেন। এ সময় আমি মাকে বাঁচাতে গেলে তারা আমাকেও পিটিয়ে আহত করেন।পরে স্হায়ীরা আমাদেরকে উদ্ধার করে হাসপাতালে নিয়ে ভর্তি করেন।

তিনি আরও বলেন, আমার ভাই ইউপি সদস্য হওয়ায় অনেক ক্ষমতা দেখায়। আমার মায়ের ওপর হামলা চালালে আমি গিয়ে তাদের বাঁধা দিলে আমাকেও মারধর করেন তারা। এ ঘটনায় মা তার অভিযোগপত্রের সাক্ষীতে আমার নাম দেওয়ায় ক্ষিপ্ত হয়ে আবারও তার ছেলে নাজমুল ও সিফাতকে দিয়ে আমার ওপর হামলা চালায়। আমি আইনের কাছে এ ঘটনার সুষ্ঠু বিচার চাই।

এদিকে হামলার কথা অস্বীকার করেছেন ইউপি সদস্য দবির মালত। তিনি বলেন, এসব বানোয়াট ও ভিত্তিহীন। আমার বিরুদ্ধে মা, ভাইয়েরা ও বোনেরা একজোট হয়ে ষড়যন্ত্র শুরু করেছে। আমার ছেলে নাজমুল নিজ যোগ্যতায় সরকারি চাকরি পেয়েছে যা ওদের সহ্য হচ্ছে না। তাই এই মিথ্যা অভিযোগগুলো করছে। ওসি মনোয়ার হোসেন চৌধুরী বলেন, মা ও ভাইকে নির্যাতনের আলাদা দুটি লিখিত অভিযোগ হাতে পেয়েছি। বিষয়টি খতিয়ে দেখে আইনি পদক্ষেপ গ্রহণ করা হবে।