বিপুর কার্যালয়ে অভিযান চালিয়ে কোটি টাকা ও অস্ত্র উদ্ধার
মঙ্গলবার দিবাগত মধ্যরাত থেকে বুধবার দুপুর দুইটা পর্যন্ত অভিযান চালিয়েছে আইনশৃঙ্খলা বাহিনী।
প্রথম নিউজ, অনলাইন ডেস্ক: রাজধানীর বনানীতে অবস্থিত সাবেক বিদ্যুৎ ও জ্বালানি প্রতিমন্ত্রী নসরুল হামিদ বিপুর মালিকানাধীন ‘প্রিয়প্র্রাঙ্গণ’ ভবনে গত মঙ্গলবার দিবাগত মধ্যরাত থেকে বুধবার দুপুর দুইটা পর্যন্ত অভিযান চালিয়েছে আইনশৃঙ্খলা বাহিনী। এ সময় ভবনটিতে থাকা বিপুর ব্যক্তিগত অফিস ও তার ভাই বাংলাদেশ শুটিং স্পোর্প্টস ফেডারেশনের মহাসচিব ইন্তেখাবুল হামিদের ‘হামিদ রিয়েল এস্টেট কনস্ট্রাকশন লি.’ অফিস থেকে বেশকিছু ভোল্ট জব্দ করা হয়। এসব ভোল্ট থেকে ১ কোটি ৫১ হাজার ৩শ’ বাংলাদেশি টাকা, ৫শ’ ১০ তুর্কি লিরা, ২শ’ বৃটিশ পাউন্ড, ১টি পিস্তল, ২টি ম্যাগাজিন ও ৫০ রাউন্ড গুলি উদ্ধার করা হয়। এর আগে মঙ্গলবার মধ্যরাত থেকেই ভবনটি ঘিরে রাখে সেনাবাহিনী, পুলিশ ও র?্যাব সদস্যরা। রাত আড়াইটা থেকে শুরু হওয়া অভিযানটি চলে বুধবার দুপুর ২টা পর্যন্ত।
অভিযান পরিচালনাকারী আইনশৃঙ্খলা বাহিনীর পক্ষ থেকে জানানো হয়, প্রিয়প্রাঙ্গণ ভবনের তিনতলায় হামিদ গ্রুপের অফিসে ফাইন্যান্স অ্যান্ড অ্যাকাউন্টসের রুমে বড় ভল্টের পাশের টেবিলের ড্রয়ার থেকে ৫শ’ টাকার ৪শ’টি নোট, ১ হাজার টাকার ৭৫টি, ২শ’ টাকার ১শ’টি নোট, ৫শ’ টাকার ২২টি, ১শ’ টাকার ২৭টি নোটসহ সবমিলিয়ে ৩ লাখ ৮ হাজার ৭০০ টাকা জব্দ করা হয়। ওই একই রুমের বামদিকের আরেকটি ড্রয়ার থেকে ৫শ’ টাকার ১শ’টি নোট, ৫শ’ টাকার ৩০টি নোট, ১শ’ টাকার ১শ’টি নোট, ১শ’ টাকার ৪৬টি নোট, ৫শ’ টাকার ৪টি নোট, ১শ’ টাকার ৪০টি নোটসহ ৮৫ হাজার ৬শ’ টাকা জব্দ করা হয়। সবমিলিয়ে ফাইন্যান্স অ্যান্ড অ্যাকাউন্টস রুমের দু’টি ড্রয়ার থেকে ৩ লাখ ৯৪ হাজার ৩০০ টাকা জব্দ করা হয়। ভবনটির ৬ তলার হামিদ গ্রুপের অফিসে ১ হাজার টাকার ২০টি বান্ডেল পাওয়া যায়। প্রতি বান্ডেলে ১শ’টি করে নোট ছিল। এ ছাড়াও ৫শ’ টাকার ১২০টি নোট, ১শ’ টাকার ৩টি বান্ডেল, ১শ’ টাকার নোট ২০টি, ১ হাজার টাকার নোট ১টিসহ সর্বমোট ২০ লাখ ৯৩ হাজার টাকা জব্দ করা হয়েছে।
ওই অফিস থেকে ৫০ পাউন্ডের ৪টি নোট, যার একটি ছেড়া, তুর্কি মুদ্রা (লিরা) ২০০ লিরার একটি নোট, ১০০ লিরার মোট ২টি, ৫০ লিরার নোট ১টি, ২০ লিরার নোট ১টি, ১০ লিরার নোট ৪টিসহ সর্বমোট ৫১০ লিরা জব্দ করা হয়। দুপুর ২টা পর্যন্ত চলা অভিযানে ভবনটির বিভিন্ন ফ্লোর থেকে মোট ১ কোটি ৫১ হাজার ৩শ’ বাংলাদেশি টাকা, ৫শ’ ১০টি তুর্কি লিরা, ২শ’ বৃটিশ পাউন্ড, ১টি পিস্তল, ২টি ম্যাগাজিন ও ৫০ রাউন্ড গুলি উদ্ধার করা হয়। অভিযান চলাকালে ভবনটিতে যুব ও ক্রীড়া মন্ত্রণালয় এবং শ্রম ও কর্মসংস্থান মন্ত্রণালয়ের উপদেষ্টা আসিফ মাহমুদ সজীব ভূঁইয়া, বৈষম্যবিরোধী ছাত্র আন্দোলনের সমন্বয়ক সারজিস আলম, হাসনাত আব্দুল্লাহ ও গণঅধিকার পরিষদের সভাপতি নুরুল হক নুর উপস্থিত ছিলেন। এ সময় নুরুল হক নুর অভিযোগ করেন, ছাত্র-জনতার আন্দোলন দমাতে বিপুলসংখ্যক অর্থায়ন এ ভবনটি থেকেই যায়। এ ঘটনার তথ্য ও প্রমাণ জোগাড় করতেই অভিযান চালানো হয়েছে ভবনের ফ্লোরগুলোতে। আর এই ভবনের নিরাপত্তাকর্মীরাই আমাদেরকে এই ভবনে অবৈধ লেনদেনের তথ্য জানিয়েছে। অভিযানের শুরুতে পুলিশের বিরুদ্ধে গড়িমসি করার অভিযোগও তোলেন নুর।
অভিযানের বিষয়টি নিশ্চিত করে ঢাকা মেট্রোপলিটন পুলিশের গুলশান বিভাগের উপ-কমিশনার রিয়াজুল হক বলেন, অভিযানে নগদ বাংলাদেশি টাকা ১ কোটি ৫১ হাজার ৩শ’ ও বিদেশি মুদ্রা ৫শ’ ১০ তুর্কি লিরা ও ২শ’ বৃটিশ পাউন্ড উদ্ধার করা হয়েছে। এ ছাড়াও ১টি পিস্তল, ২টি ম্যাগাজিন ও ৫০ রাউন্ড গুলি ভবনটি থেকে উদ্ধার করা হয়েছে। এ বিষয়ে মামলা প্রক্রিয়াধীন।