বন্যার কথা মনে পড়লে আজও বুক কাঁপে সুনামগঞ্জবাসীর  

আকস্মিক বন্যায় তলিয়ে যায় জেলার হাজার হাজার ঘরবাড়ি। শহরের প্রত্যেক বাড়ির নিচতলায় কোমর থেকে বুক সমান পানি ছিল। গ্রামের অবস্থা ছিল আরও ভয়াবহ। কোথাও কোথাও টিনের চালার উপর দিয়ে পানি বয়ে গেছে।

বন্যার কথা মনে পড়লে আজও বুক কাঁপে সুনামগঞ্জবাসীর  

প্রথম নিউজ, সুনামগঞ্জ : গত বছরের এই দিনে (১৬ জুন) স্মরণকালের ভয়াবহ বন্যার কবলে পড়ে সুনামগঞ্জ। হঠাৎ করে মাত্র ৪৮ ঘণ্টার ব্যবধানে ভারী বর্ষণ ও উজানের ঢলে ডুবে যায় পুরো সুনামগঞ্জ।

আকস্মিক বন্যায় তলিয়ে যায় জেলার হাজার হাজার ঘরবাড়ি। শহরের প্রত্যেক বাড়ির নিচতলায় কোমর থেকে বুক সমান পানি ছিল। গ্রামের অবস্থা ছিল আরও ভয়াবহ। কোথাও কোথাও টিনের চালার উপর দিয়ে পানি বয়ে গেছে। অনেক ঘরবাড়ির অস্তিত্ব পর্যন্ত ছিল না। বিদ্যুৎহীন হয়ে পড়েছিল ২৪ লাখ মানুষ। বিদ্যুৎ না থাকায় ছিল না মোবাইল নেটওয়ার্কও। স্রোতের তোড়ে ভেসে গিয়েছিল যোগাযোগ সড়ক। যার কারণে পুরো দেশ থেকে এক প্রকার বিচ্ছিন্ন হয়ে পড়েছিল সুনামগঞ্জ।

ঘরে বুক সমান পানি, মুখে নেই খাবার। দেখা দিয়েছিল খাবার, বিশুদ্ধ পানি, মোমবাতি, দিয়াশলাইসহ জরুরি পণ্যের সংকট। চলাচলের জন্য পাওয়া যাচ্ছিল না নৌকাও। প্রাণ বাঁচাতে রীতিমতো সংগ্রাম করতে হয়েছে সুনামগঞ্জের প্রতিটি মানুষকে।

শতাব্দীর ভয়াবহ এই বন্যায় হতাহতের সংখ্যা কম হলেও বন্যার পানিতে ভেসে গিয়েছে বহু হতদরিদ্রের ঘরবাড়ি, কৃষকের গরু-ছাগল, ভেড়া, হাঁস-মুরগি, ধান। ক্ষতিগ্রস্ত হয়েছে ঘরের আসবাবপত্রসহ গৃহস্থালি অন্যান্য মালামাল। শহরের মানুষ দ্বিতল বিশিষ্ট বাসা, অফিস, হাসপাতাল, নির্মাণাধীন ভবন, উঁচু সেতুসহ যে যেখানে পেরেছে সেখানে আশ্রয় নিয়েছে। গ্রামের মানুষদের দিন কেটেছে স্কুল বা উঁচু টিলায় খুপরি ঘর বানিয়ে। সব মিলিয়ে ভয়াবহ এক পরিস্থিতি তৈরি হয়েছিল সুনামগঞ্জে। এখনও সেই ভয়াল বন্যার ক্ষত চিহ্ন রয়ে গেছে অনেক জায়গায়। সেই দৃশ্য মনে হলে আজও বুক কাঁপে বলে জানান সুনামগঞ্জবাসী।

সুনামগঞ্জ সদর উপজেলার লক্ষণশ্রী ইউনিয়নের ইসলামপুর গ্রামের আবু সুফিয়ান  বলেন, গত বছরের বন্যার কথা মনে হলে এখনও গায়ের লোম দাঁড়িয়ে যায়। ভাই গেছে একদিকে, বোন আরেক দিকে, গরু বাছুর অন্যদিকে। এই বছরও যদি এরকম বন্যা হয় তাহলে আমাদের অবস্থা একেবারে খারাপ হয়ে যাবে। গোয়াচূরা গ্রামের আব্দুল বাতেন  বলেন, গত বছর বন্যায় আমার যে ক্ষতি হয়েছে সেই ক্ষতি এখনও কাটিয়ে উঠতে পারিনি। এ বছর আবার বন্যা হলে আমাদের অবস্থা কী হবে কিচ্ছু জানি না।

প্রবীণ মুরুব্বি ফায়েজা বেগম  বলেন, ‘গত বন্যার সময় মানুষ, গরু- বাছুর নিয়ে যে কষ্ট করেছি এরকম বন্যা আমি আর জীবনেও দেখিনি। হাঁস-মুরগি সব ভেসে গেছে। সড়কে আশ্রয় নিয়ে কোনোভাবে জীবন বাঁচিয়েছি। এবার পানি এলেও আল্লাহ ভরসা।’ 

এদিকে গত বছরের মতো এই বছরের একই সময়ে ব্যাপক হারে বৃদ্ধি পাচ্ছে নদ-নদীর পানি। গত কয়েক দিনের ভারী বৃষ্টি আর পাহাড়ি ঢলে ফুলে উঠেছে নদী। তবে এ বছর সুনামগঞ্জের হাওরগুলো পানিশূন্য থাকায় বন্যা হওয়ার আশঙ্কা অনেকটাই কম। তবে গত বছরের অভিজ্ঞতাকে বিবেচনায় নিয়ে এ বছর বন্যা মোকাবিলায় অগ্রিম ব্যাপক প্রস্তুতি নেওয়া হয়েছে বলে জানিয়েছে জেলা প্রশাসন। বন্যা মোকাবিলার প্রস্তুতি হিসেবে মজুদ রাখা হয়েছে শুকনা খাবার, নগদ টাকা। বণ্টন করে দেওয়া হয়েছে সকল দায়িত্ব। প্রস্তুত করে রাখা হয়েছে নৌকা ও স্বেচ্ছাসেবক।

জেলা প্রশাসক দিদারে আলম মোহাম্মদ মাকসুদ চৌধুরী  বলেন, সুনামগঞ্জে আকস্মিক বন্যায় গত বছর ব্যাপক ক্ষয়ক্ষতি হয়। সেই অভিজ্ঞতা নিয়ে এ বছর দুর্যোগ ব্যবস্থাপনা কমিটির সভা করে অনেক আগেই আমরা অগ্রিম প্রস্তুতি নিয়ে রেখেছি। কে কোন দায়িত্বে থাকবে তা ভাগ করে দেওয়া হয়েছে। এছাড়া মাননীয়  প্রধানমন্ত্রীর তহবিলের নগদ টাকা, চাল এবং ত্রাণ মজুদ করে রাখা আছে। এ বছর যদি আকস্মিক বন্যা সৃষ্টি হয় তার জন্য আমাদের পর্যাপ্ত প্রস্তুতি আছে। আশা করি আমরা মোকাবিলা করতে পারব।