বাজার মূলধন কমলো একদিনে ৫০০০ কোটি টাকা

চলমান রাশিয়া-ইউক্রেন যুদ্ধের প্রভাবে ভয়াবহ দরপতনের মধ্যে পড়েছে দেশের শেয়ারবাজার।

বাজার মূলধন কমলো একদিনে ৫০০০ কোটি টাকা
বাজার মূলধন কমলো একদিনে ৫০০০ কোটি টাকা

প্রথম নিউজ, ঢাকা: চলমান রাশিয়া-ইউক্রেন যুদ্ধের প্রভাবে ভয়াবহ দরপতনের মধ্যে পড়েছে দেশের শেয়ারবাজার। ফলে প্রতিদিনই পুঁজি হারাচ্ছেন বিনিয়োগকারীরা। নিয়মিত পুঁজি হারানো এসব বিনিয়োগকারীদের নীরব রক্তক্ষরণ বেড়েই চলেছে। এ পরিস্থিতিতে সপ্তাহের প্রথম কার্যদিবসে আগের ধারাবাহিক পতনের ধারা অব্যাহত রয়েছে। রোববার শেয়ারবাজারের সব ধরনের সূচক কমেছে। সূচকের সঙ্গে বেশির ভাগ শেয়ারের দর ও বাজার মূলধনও কমেছে। এদিন প্রধান শেয়ারবাজার ঢাকা স্টক এক্সচেঞ্জের (ডিএসই) বাজার মূলধন ৫০০০ কোটি টাকার বেশি কমেছে। ৬৩ শতাংশ কোম্পানিরই শেয়ারের দর কমেছে। তবে টাকার পরিমাণে লেনদেন আগের কার্যদিবস থেকে কিছুটা বেড়েছে।

বাজার সংশ্লিষ্টরা জানান, এভাবে বাজার ক্রমাগতভাবে দরপতন হওয়ায় হাজার হাজার বিনিয়োগকারী দুশ্চিন্তায় পড়েছেন। এ ছাড়া আতঙ্কে বিনিয়োগকারীদের মধ্যে শেয়ার বিক্রির প্রবণতাও আগের চেয়ে বেড়েছে। চলমান রাশিয়া-ইউক্রেন যুদ্ধের মনস্তাত্ত্বিক প্রভাব কিনা তাও বলা যাচ্ছে না। তাই যুদ্ধ দ্রুত শেষ হবে, বাজার আবার আগের মতো চাঙ্গা হবে- এমনটাই আশা করছেন তারা।

জানা গেছে, শেয়ারবাজারে এ দরপতনের ধারা শুরু হয় গত বছরের অক্টোবর থেকে, যা চলে ডিসেম্বর পর্যন্ত। এরপর চলতি বছরের শুরুর দিকে পতনের মাত্রা কিছুটা কমে আসে। কিন্তু এর মধ্যেই গত ২৪শে ফেব্রুয়ারি ইউক্রেনে আগ্রাসন শুরু করে রাশিয়া। রাশিয়া ইউক্রেনে আক্রমণ করা নিয়ে বাজারে নানা গুজব ছড়িয়ে পড়ে। যার পরিপ্রেক্ষিতে আবারো টানা বড় দরপতনের মধ্যে পড়েছে শেয়ারবাজার। রাশিয়া ইউক্রেনে আক্রমণ শুরু করার পর দেশের শেয়ারবাজারে এখনো পর্যন্ত সাত কার্যদিবস লেনদেন হয়েছে। এ সাত কার্যদিবসে ডিএসই’র প্রধান মূল্যসূচক কমেছে ৩১০ পয়েন্ট। বাজার মূলধন কমেছে ২৪ হাজার ৬৩০ কোটি টাকা। এর সঙ্গে ১১ মাসের মধ্যে ডিএসইতে সর্বনিম্ন লেনদেন হওয়ার ঘটনাও ঘটেছে।

রোববার শেয়ারবাজারে লেনদেন শুরু হয় বেশির ভাগ প্রতিষ্ঠানের শেয়ার ও ইউনিটের দাম বাড়ার মাধ্যমে। ফলে লেনদেন শুরুর ৬ মিনিটের মাথায় ডিএসই’র প্রধান মূল্যসূচক ১৫ পয়েন্ট বেড়ে যায়। লেনদেনের শুরুতে দেখা দেয়া এ ঊর্ধ্বমুখী প্রবণতা বেশি সময় স্থায়ী হয়নি। লেনদেনের সময় ২০ মিনিট পার হওয়ার আগেই সূচক ঋণাত্মক হয়ে পড়ে। আর প্রথম ঘণ্টার লেনদেন শেষ হওয়ার পর বাড়তে থাকে পতনের মাত্রা। যা অব্যাহত থাকে লেনদেনের শেষ পর্যন্ত। ফলে সবক’টি সূচকের বড় পতন দিয়ে লেনদেন শেষ হয়। রোববার বেশির ভাগ খাতের কোম্পানিগুলোর শেয়ার ও ইউনিটের দরপতন হয়েছে। এর মধ্যে ফার্মাসিউটিক্যালস খাতে ৬৭ শতাংশ, টেক্সটাইলে ৭১ শতাংশ, ট্যানারিতে ৬৬ শতাংশ, প্রকৌশলে ৬৯ শতাংশ, ব্যাংক খাতে ৬৯ শতাংশ, তেল ও বিদ্যুৎ খাতে ৬৯ শতাংশ, বীমা খাতে ৯০ শতাংশ কোম্পানির শেয়ারের দর কমেছে। অবশ্য, এদিন কেবল পাট খাতের ৩টি কোম্পানির সবক’টির দামই বেড়েছে।

বাজার পর্যালোচনায় দেখা গেছে, ঢাকা স্টক এক্সচেঞ্জে গত সপ্তাহের শুরুতে বাজার মূলধন ছিল ৫ লাখ ৩৮ হাজার ৪২৭ কোটি ৪১ লাখ ৯৩ হাজার ৫৩৪ টাকা। আর রোববার দিন শেষে বাজার মূলধন দাঁড়িয়েছে ৫ লাখ ৩৩ হাজার ১৭৩ কোটি ৩৮ লাখ ৯ হাজার টাকা। একদিনের ব্যবধানে বাজার মূলধন কমেছে ৫ হাজার ২৫৪ কোটি টাকার বেশি। এর আগের সপ্তাহে ডিএসইতে বাজার মূলধন কমেছিল ১০ হাজার ৫৭৩ কোটি ৮৯ লাখ ৮৯ হাজার টাকা। ফলে গত দুই সপ্তাহের ব্যবধানে বাজার মূলধন কমেছিল ২২ হাজার কোটি টাকার উপরে।

গতকাল ডিএসই’র প্রধান সূচক ডিএসইএক্স ৫৭.৮৮ পয়েন্ট বা ০.৮৬ শতাংশ কমে দাঁড়িয়েছে ৬ হাজার ৬৩৮.৬৩ পয়েন্টে। ডিএসই’র অপর সূচকগুলোর মধ্যে শরিয়াহ সূচক ১০.৯৬ পয়েন্ট বা ০.৭৬ শতাংশ এবং ডিএসই-৩০ সূচক ২৪ পয়েন্ট বা ০.৯৭ শতাংশ কমে দাঁড়িয়েছে এক হাজার ৪৩১.০২ পয়েন্টে এবং দুই হাজার ৪৩৮.৯৪ পয়েন্টে।

ডিএসইতে গতকাল টাকার পরিমাণে লেনদেন হয়েছে ৬৪৪ কোটি ৫৫ লাখ টাকার শেয়ার ও ইউনিট। যা আগের দিন থেকে ৬০ কোটি ১০ লাখ টাকা বেশি। আগের দিন লেনদেন হয়েছিল ৬৪৪ কোটি ৫৫ লাখ টাকার।
ডিএসইতে গতকাল ৩৭৯টি প্রতিষ্ঠানের শেয়ার ও ইউনিট লেনদেন হয়েছে। এসব প্রতিষ্ঠানের মধ্যে ৯৮টির বা ২৫.৮৬ শতাংশের শেয়ার ও ইউনিট দর বেড়েছে। দর কমেছে ২৪৭টির বা ৬৫.১৭ শতাংশের এবং ৩৪টি বা ৮.৯৭ শতাংশ প্রতিষ্ঠানের শেয়ার ও ইউনিট দর অপরিবর্তিত রয়েছে।

ডিএসইতে টাকার অঙ্কে সব থেকে বেশি লেনদেন হয়েছে বেক্সিমকোর শেয়ার। কোম্পানিটির ৭০ কোটি ৮৭ লাখ টাকার শেয়ার লেনদেন হয়েছে। দ্বিতীয় স্থানে থাকা ফরচুন সুজের ৬৭ কোটি ৯৬ লাখ টাকার লেনদেন হয়েছে। ২১ কোটি ৮৭ টাকার শেয়ার লেনদেনের মাধ্যমে তৃতীয় স্থানে রয়েছে বৃটিশ আমেরিকান টোবাকো। এ ছাড়া ডিএসইতে লেনদেনের দিক থেকে শীর্ষ দশ প্রতিষ্ঠানের তালিকায় রয়েছে- বাংলাদেশ শিপিং করপোরেশন, সোনালী পেপার, কেয়া কসমেটিকস, রেনেটা লিমিডেট, ফারইস্ট ইসলামী লাইফ ইন্স্যুরেন্স, ওরিয়ন ফার্মা এবং কুইন সাউথ টেক্সটাইল।

অপর শেয়ারবাজার চট্টগ্রাম স্টক এক্সচেঞ্জের (সিএসই) সার্বিক সূচক সিএএসপিআই এদিন ১৩৫.১৪ পয়েন্ট বা ০.৬৯ শতাংশ কমে দাঁড়িয়েছে ১৯ হাজার ৪৩৬.৮৮ পয়েন্টে। এদিন সিএসইতে হাত বদল হওয়া ২৭৪টি প্রতিষ্ঠানের মধ্যে শেয়ার দর বেড়েছে ৮৬টির, কমেছে ১৫২টির এবং অপরিবর্তিত রয়েছে ৩৬টির দর। গতকাল সিএসইতে ১৭ কোটি ৮১ লাখ টাকার শেয়ার ও ইউনিট লেনদেন হয়েছে।

পুঁজিবাজার বিশ্লেষক অধ্যাপক আবু আহমেদ বলেন, শেয়ারবাজারে এখন যে দরপতন হচ্ছে তার যুক্তিসংগত কোনো কারণ নেই। কিন্তু এটাও সত্য আমাদের শেয়ারবাজার কোনো ব্যাকরণ মেনে চলে না। তিনি বলেন, রাশিয়া-ইউক্রেন যুদ্ধের প্রভাব আমাদের শেয়ারবাজার খুব একটা পড়ার কথা না। তবে মনস্তাত্ত্বিক একটা প্রভাব আছে। এ পরিস্থিতিতে কেউ পরিকল্পিতভাবে শেয়ারবাজারে দরপতন ঘটানোর চেষ্টা করছে কি না, তা নিয়ন্ত্রক সংস্থা বিএসইসি’র খতিয়ে দেখা উচিত।

Download করুন আমাদের App এবং Subscribe করুন আমাদের YouTube Channel:

news.google.com

https://apps.apple.com/de/app/prothomnews/id1588984606?l=en

https://play.google.com/store/apps/details?id=com.prothomnews

https://youtube.com/prothom