বাজেট ধনিক লুটেরাদের সুবিধার্থে, দরিদ্র-মজুর-শ্রমিকদের স্বার্থ রক্ষা হয়নি : সিপিবি(এম)

এই বাজেটে ভ্যাট—ট্যাক্সের বোঝা তো জনগণেরই বহন করতে হবে। বড় বাজেট দিয়ে সরকারের উচ্ছ্বসিত হওয়ার কোন কারণ নেই।

বাজেট ধনিক লুটেরাদের সুবিধার্থে, দরিদ্র-মজুর-শ্রমিকদের স্বার্থ রক্ষা হয়নি : সিপিবি(এম)

প্রথম নিউজ, অনলাইন: বাংলাদেশের কমিউনিস্ট পার্টি (মার্কসবাদী)র কেন্দ্রীয় কমিটির সভাপতি কমরেড ডাঃ এম এ সামাদ ও  সাধারণ সম্পাদক কমরেড সাহিদুর রহমান বাজেটের প্রতিক্রিয়ায় বলেছেন, বিশাল বাজেট ধনিক লুটেরাদের সুবিধার্থে, এতে দরিদ্র কৃষক শ্রমিক মেহনতি মানুষের স্বার্থ রক্ষা হয়নি। এই বাজেটে ভ্যাট—ট্যাক্সের বোঝা তো জনগণেরই বহন করতে হবে। বড় বাজেট দিয়ে সরকারের উচ্ছ্বসিত হওয়ার কোন কারণ নেই।

নেতৃদ্বয়  বলেন, প্রতি বছরই বাজেটের আকার বড় করা হয় এবারের বাজেটও তাঁর ব্যতিক্রম নয়। ৭ লাখ ৬১ হাজার ৭৮৫ কোটি টাকার এবারের বাজেটে যা জিডিপির ১৫ শতাংশ। সরকার মনে করছে বাজেটের ৫ লাখ কোটি টাকা রাজস্ব আয় আসবে। এর মধ্য  ৪ লাখ ৩০ হাজার কোটি টাকা  আসবে জাতীয় রাজস্ব বোর্ডের মাধ্যমে বাকি ৭০ হাজার কোটি টাকা সংগ্রহের প্রস্তাব করা হয়েছে। ২ লাখ ৬১ হাজার ৭৮৫ কোটি টাকা ঘাটতি থাকছে যার পরিমান  জিডিপির ৫.২ শতাংশ।

নেতৃদ্বয় বলেন, ঘাটতি পূরণ (অর্থসংস্থান) করা হবে দুইভাবে—দৈশিক ঋণ ও অভ্যন্তরীণ ঋণ নিয়ে। কারণ খরচ তো সরকারকে করতেই হবে।  বৈদেশিক ঋণ নেওয়া হবে  মোট ১ লাখ ২ হাজার ৪৯০ কোটি টাকা এবং  অভ্যন্তরীণ ঋণ নেওয়া হবে ১ লাখ ৫৫ হাজার ৩৯৫ কোটি টাকা। অভ্যন্তরীণ ঋণের মধ্যে ব্যাংক ব্যবস্থা থেকে নেওয়া হবে ১ লাখ ৩২ হাজার ৩৯৫ কোটি টাকা, আর সঞ্চয়পত্র বিক্রিসহ ব্যাংক বহির্ভূত ঋণ নেওয়া হবে ২৩ হাজার কোটি টাকা।  

সিপিবি(এম) নেতৃদ্বয় আরও বলেন, ২০২২—২৩ অর্থবছরে ব্যাংক ব্যবস্থা থেকে ঋণ নেওয়ার লক্ষ্যমাত্রা ছিল ১ লাখ ৬ হাজার কোটি টাকা। গত অর্থবছরে  ব্যাংক ঋণের সংশোধিত লক্ষ্যমাত্রা নির্ধারণ করা হয়েছিল ১ লাখ ১৫ হাজার কোটি টাকা। এর মধ্যে ব্যাংক ঋণ নেয়ার পরিকল্পনা ১ লাখ ৩২ হাজার ৩৯৫  কোটি টাকা যা বর্তমান অর্থবছরের ১ লাখ ৬ হাজার ৩৩৪ কোটি টাকার তুলনায় ২৬ হাজার কোটি বা ২৪ শতাংশ বেশি। এবারও ঘাটতি থাকবে নতুন লক্ষমাত্রা নির্ধারন করতে হবে।

নেতৃদ্বয় বলেন, স্বাস্থ্য খাতে বরাদ্দ প্রস্তাব ৩৮ হাজার ৫২ কোটি টাকা যা গত বাজেটে ছিল ৩৬ হাজার ৮৬৩ কোটি টাকা। চিকিৎসা খাতের বেহাল দশা চিকিৎসা ব্যায়ের ৭৫ শতাংশ জনগণের নিজেদের পকেট থেকে ব্যয় হয়  তারপরও স্বাস্থ্য খাতে  বরাদ্দ বাড়লো না উল্লেখযোগ্য পরিমাণে। বাজেটে প্রাথমিক ও গণশিক্ষায় ৩৪ হাজার ৭২২ কোটি টাকা বরাদ্দ করা হয়েছে যা গত বাজেটে ছিল ৩১ হাজার ৭৬১ কোটি টাকা। মাধ্যমিক ও উচ্চ শিক্ষা খাতে ৪২ হাজার ৮৩৮ কোটি টাকা বরাদ্দ করা হয়েছে যা গত অর্থবছরে ছিল ৩৯ হাজার ৯৬১ কোটি টাকা।

কারিগরি ও মাদ্রাসা শিক্ষা বিভাগের জন্য ১০ হাজার ৬০২ কোটি টাকা বরাদ্দ হয়েছে, যা গত বছরে ছিল ৯ হাজার ৭২৭ কোটি টাকা। সব মিলিয়ে শিক্ষাখাতে বরাদ্দ দাঁড়ালো ১১.৫৮ শতাংশ। কৃষি খাতে বরাদ্দ রাখা হয়েছে ৩৫ হাজার ৩৭৪ কোটি টাকা যা গত বছরে ৩৩ হাজার ৬৯৮ কোটি টাকা বরাদ্দ করা হয়েছিল। মোট বাজেটের ৪.৬৪ শতাংশ। স্বাস্থ্য  কৃষি ও শিক্ষাখাতে বরাদ্দ অপ্রতুল। ২০ লাখ কর্ম প্রত্যাশী প্রতিবছর কর্মসংস্থানের জন্য শ্রম বাজারে আসে। চতুর্থ শিল্প বিপ্লবের উপযোগী দক্ষ শ্রমিকের  অভাব আছে সেই চ্যালেঞ্জ মোকাবিলায় বাজেটের বরাদ্দ নেই।

নেতৃদ্বয় বলেন, এই বাজেট পুঁজিবাদী অর্থনৈতিক শোষণমূলক ব্যবস্থাকে আরও সম্প্রসারিত করবে, দরিদ্র জনগোষ্ঠীকে আরও দরিদ্র করবে।