Ad0111

পেশা ছাড়ছেন বঙ্গবাজারের দোভাষীরা

ইংরেজি, আরবি, ফারসি, রাশিয়ান, নাইজেরিয়ান, ফিলিপাইন, জার্মানসহ অনেকগুলো ভাষা রপ্ত তাদের।

পেশা ছাড়ছেন বঙ্গবাজারের দোভাষীরা

প্রথম নিউজ, ঢাকা: পাঁচ-সাতটি ভাষা জানেন। এক সময় এ বিদ্যার বলে আয় করেছেন ঢের। কিন্তু এখন যতই দিন যাচ্ছে ততই কঠিন হচ্ছে জীবিকা। কোনো কোনো দিন বিনা উপার্জনে খালি হাতে ফিরতে হচ্ছে ঘরে।

এ কঠিন বাস্তবতার ভেতর দিয়ে যাচ্ছেন রাজধানীর বঙ্গবাজারের দোভাষীরা। ইংরেজি, আরবি, ফারসি, রাশিয়ান, নাইজেরিয়ান, ফিলিপাইন, জার্মানসহ অনেকগুলো ভাষা রপ্ত তাদের। প্রাতিষ্ঠানিক ভাষাশিক্ষা নয়। শুনতে শুনতে, বলতে বলতে দোভাষী হওয়া এ লোকদের দেখা মেলে বঙ্গবাজারে গেলে।

কয়েক দশক ধরে রাজধানীর এ বাজারে বিদেশিদের কেনাকাটায় সহায়তা করছেন তারা। বিদেশিদের কথা শুনতে শুনতে, বলতে বলতে একেকজন রপ্ত করেছেন পাঁচ-সাতটি ভাষা। প্রতিদিন উপার্জন করেছেন ভালো অঙ্কের টাকা।

কিন্তু সেদিন আর নেই। বঙ্গবাজারে বিদেশিদের ভিড় কমেছে। সেই সঙ্গে ভাটা পড়েছে দোভাষীদের আয়ে। ইতোমধ্যে অনেকেই পেশা ছেড়েছেন। এখনও যারা সাধের পেশাটি ছাড়েননি, তারা কাজ না পেয়ে মাঝেমধ্যে ঘরে ফিরছেন খালি হাতে। ফলে বঙ্গবাজারে আগে যেখানে ৩০-৩৫ জন দোভাষী কাজ করতেন, এখন সেখানে আছেন ১০ জনেরও কম।

সরেজমিনে বঙ্গবাজারে গিয়ে দেখা যায়, সেখানে বাবুলের চায়ের দোকানের সামনে অপেক্ষা করছেন চার-পাঁচজন দোভাষী। দৃষ্টি তাদের সামনের সড়কে। কোনো বিদেশি ক্রেতা এলেই তারা ছুটে যান। প্রথমে তিনি (বিদেশি) কোন দেশের সেটা জেনে নেন। ভাষা জানা দোভাষী ওই বিদেশির সঙ্গে ঘুরে ঘুরে কেনাকাটায় সহযোগিতা করেন।

দোভাষী হিসেবে আয় কেমন— জানতে চাইলে আল আমিন নামের এক দোভাষী বলেন, বিদেশি ক্রেতারা ৩০০ থেকে এক হাজার টাকা পর্যন্ত পারিশ্রমিক দেন। তবে এখন তাদের সংখ্যা অনেক কমেছে। ফলে সবদিন আয়ও হয় না।

এক সময় দোভাষীরা প্রচুর আয় করেছেন উল্লেখ করে তিনি বলেন, বেশিদিন আগের কথা নয়। বঙ্গবাজার তখন খুবই জমজমাট। নানান দেশের কাস্টমার আসত। আমাদের বাপ-চাচা, মা-খালারা দোভাষীর কাজ করে ‘তেলেঝোলে’ ছিলেন। ছোট বেলায় তাদের সঙ্গে চলতে চলতে পাঁচ-সাতটা ভাষা শেখা হয়ে যায়। তাদের দেখাদেখি আমরাও দোভাষী হয়ে যাই। এখন মনে হয় ‘ফাইসা’ গেছি।

এতগুলো ভাষা রপ্তের বিষয়ে আল আমিন বলেন, বিভিন্ন ভাষার নির্দিষ্ট কিছু শব্দ ও বাক্য জানলেই বিদেশিদের সঙ্গে কেনাকাটার বিষয়ে কথা বলা যায়। ধীরে ধীরে আমরা সেগুলো আয়ত্ত করে ফেলি। বলতে পারেন, গাইতে গাইতে গায়েনের মতো অবস্থা। শুনতে শুনতে, বলতে বলতে দোভাষী হয়ে যাওয়া।

বিদেশি ক্রেতার সংখ্যা কমে যাওয়ার কারণ সম্পর্কে দোভাষী ইসমাইল হোসেন বলেন, এক সময় বিদেশি ক্রেতাদের পোশাক কেনার নামকরা স্থান ছিল বঙ্গবাজার। তখন রাজধানীতে ভালো মানের হোটেল বলতে ছিল শেরাটন আর সোনারগাঁও। হোটেল দুটি বঙ্গবাজারের কাছাকাছি। ফলে বিদেশিরা বঙ্গবাজারে কেনাকাটা করতে আসতেন। এখানে পোশাকের দামও ছিল তুলনামূলক কম।

‘এখন ঢাকার বিভিন্ন প্রান্তে নামীদামি হোটেল হয়েছে। হোটেলের পাশেই আছে আধুনিক সব শপিং মল। এখন আর কেউ কষ্ট করে বঙ্গবাজারে আসতে চান না। এছাড়া নিরাপত্তার বিষয়টিও জড়িত এখানে।’

রেবেকা খাতুন নামের আরেক দোভাষী বলেন, বঙ্গবাজারে আগে খুবই ব্যস্ত সময় পার করতাম। একের পর এক বিদেশি ক্রেতা আসত। তাদের নিয়ে বাজারে ঘুরতাম, কেনাকাটা করে দিতাম। তারা ভালো বকশিস দিত। এখন সকাল-সন্ধ্যা বসে থেকেও তাদের দেখা পাওয়া যায় না।

বঙ্গবাজারে এক্সপোর্ট কোয়ালিটির পোশাক বিক্রি করেন আব্দুল বারেক মিয়া। বলেন, আগে প্রচুর বিদেশি ক্রেতা আসত। দিনে গড়ে ৩০-৩৫ জন দোভাষী কেনাকাটায় তাদের সহযোগিতা করত। এখন ৭-৮ জনকে দেখা যায়। সারাদিন অপেক্ষা করেও বিদেশি ক্রেতাদের দেখা পায় না তারা। ফলে তাদের আয় হয় না, আমাদের বেচাবিক্রিও মন্দা যায়।

এ দোকানির ভাষায়, দোভাষীরা কেউই প্রাতিষ্ঠানিকভাবে ভাষা শেখেনি। ছোট বেলা থেকেই বিদেশি ক্রেতাদের সঙ্গে ঘুরতে ঘুরতে তারা ৮-১০টি করে ভাষা রপ্ত করে ফেলেছে। এখানকার অনেকেই বংশানুক্রমে দোভাষী। অন্যকোনো দক্ষতা না থাকায় এখন তারা তাদের ভবিষ্যৎ নিয়ে চিন্তিত।

প্রসঙ্গত, রাজধানীর গুলিস্তানে অবস্থিত বঙ্গবাজার মার্কেট তৈরিপোশাক বিক্রির জন্য প্রসিদ্ধ। এ মার্কেটে আছে প্রায় চার হাজার ছোট-বড় দোকান। এসব দোকানে কম দামে জামা, শাড়ি, লুঙ্গি, পাঞ্জাবি, ফতুয়া, পায়জামা, শার্ট-প্যান্ট, সালোয়ার-কামিজ, শিশুদের পোশাক; এমনকি এক্সপোর্ট কোয়ালিটির পোশাক সুলভ মূল্যে বিক্রি হয়। দেশের বিভিন্ন প্রান্ত থেকে প্রতিদিন সাধারণ ক্রেতা ও ব্যবসায়ীরা এখানে পণ্য কিনতে আসেন। আসেন বিদেশিরাও। তবে দিন যত যাচ্ছে ততই বিদেশি ক্রেতার সংখ্যা কমছে বঙ্গবাজারে।

Download করুন আমাদের App এবং Subscribe করুন আমাদের YouTube Channel:

https://play.google.com/store/apps/details?id=com.prothomnews

https://youtube.com/prothom

What's Your Reaction?

like

dislike

love

funny

angry

sad

wow

This site uses cookies. By continuing to browse the site you are agreeing to our use of cookies & privacy Policy from www.prothom.news